ঢাকা শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

সাত বোনের রূপকথা

সাত বোনের রূপকথা

বাবা ফ্লিচার সুদারল্যান্ডের সঙ্গে সাত বোন সারাহ, ভিক্টোরিয়া, ইসাবেলা, গ্রেইস, নাওমি, ডোরা ও ম্যারি

আকেল হায়দার

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২২ | ২৩:২৮

এ যেন রূপকথার আদলে গড়া সত্যিকারের জীবনকাহিনি। সাত বোন সারাহ, ভিক্টোরিয়া, ইসাবেলা, গ্রেইস, নাওমি, ডোরা ও ম্যারি নামক সাত বোনের জীবন ইতিহাস ও উত্থান-পতনের বর্ণিল গল্পগাথা। তাদের জন্ম হয়েছিল নিউইয়র্কের নায়াগ্রা কাউন্টি নামক ছোট্ট শহরে এক সাধারণ পরিবারে। দরিদ্র বাবা ফ্লিচার সুদারল্যান্ড আর সংসার-নিবেদিতা মা ম্যারি সুদারল্যান্ড এক সময় পরামর্শ করে চুল দীর্ঘকরণের একটি টনিক তৈরির চেষ্টায় নিজেদের নিয়োজিত করেন। চেষ্টা সফল হলে তারা 'দ্য সেভেন সুদারল্যান্ড সিস্টার্স হেয়ার গ্রোয়ার' টনিকের নাম দেন।

১৮৬৭ সালে স্ত্রীর মৃত্যু হলে ফ্লিচার সুদারল্যান্ড তার সাত মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে আশপাশ্ন অঞ্চলে ভ্রমণ শুরু করেন। ফ্লিচার পাশে থেকে তার সাত মেয়ে ও এক ছেলের সবকিছু দেখভাল করতেন। প্রাথমিকভাবে তারা বিভিন্ন রকম বাদ্যযন্ত্র বাজাত ও নিউইয়র্ক শহরের আশপাশে মেলা বা চার্চে গান পরিবেশন করত। জনসমক্ষে তাদের প্রথম আবির্ভাব হয়েছিল 'সুদারল্যান্ড কনসার্ট অব সেভেন সিস্টার্স অ্যান্ড ওয়ান ব্রাদার' নাম নিয়ে। সংগীত দল গঠনের অল্প দিনের মধ্যে নায়াগ্রা কাউন্টিতে বেশ পরিচিতি লাভ করে এবং আর্থিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে থাকে।

১৮৮০ সালের দিকে একমাত্র ভাই দল ত্যাগ করলে তারা 'সেভেন সুদারল্যান্ড সিস্টার্স' নামে দর্শকদের মাঝে নতুনভাবে আবির্ভূত হয়। দর্শকরা তাদের সংগীতের জন্য যতটা না আকৃষ্ট হতো, তার চেয়ে বেশি আকর্ষিত হতো দীঘল ঘন চুলের প্রদর্শনী দেখে। তাদের সবার চুলের সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৩৭ ফুট, যাকে তারা চুল বৃদ্ধি ও চুল পরিচর্যা টনিকের প্রচারণা ও বাজারজাতকরণের কাজে লাগাত। ১৮৮০ সালের দিকে 'সুদারল্যান্ড সিস্টার্স' তাদের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করার উদ্যোগ নেয়।

সাত বোনের একজন নাওমি হ্যারি নামক এক তরুণকে বিয়ে করে। হ্যারির সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল জেমস বেইলি নামক আরেক তরুণ ব্যবসায়ীর। যার অংশীদারিত্ব ছিল প্রখ্যাত সার্কাস কোম্পানি 'বার্নাম অ্যান্ড বেইলি'র সঙ্গে। হ্যারির সুবাদে 'বার্নাম অ্যান্ড বেইলি'র সঙ্গে যৌথ কাজ করার সুযোগ হয় সেভেন সুদারল্যান্ড সিস্টার্সের। ১৮৮০-১৯০০ সাল পর্যন্ত সেভেন সিস্টার্স তাদের সঙ্গে কাজ করে।

ইতোমধ্যে সাত বোনের দীর্ঘ কেশরাশির কথা ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের জর্জিয়া, লুসিয়ানা, আলাবামা এবং ফ্লোরিডা অঞ্চলে। অতি দ্রুত 'সেভেন সুদারল্যান্ড সিস্টার্স হেয়ার গ্রোয়ার' বাজারে বেস্ট সেলার হয়ে ওঠে। হেয়ার গ্রোয়ারের পাশাপাশি তারা হেয়ার ক্লিনজার, ব্রাশ, চিরুনি, চুলের রং প্রস্তুত ও বাজারজাতকরণ শুরু করে। ১৮৮২ সালে তাদের বাবা এই তেলের বাণিজ্যিক উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ শুরু করেন।

১৮৮৪ সালেই প্রায় ৯০ হাজার ডলার মূল্যমানের হেয়ার টনিক বিক্রি হয়। ১৮৯০ সালের মধ্যে বিক্রি হয় প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার।
সেভেন সিস্টার্স ভগ্নিদ্বয়ের হেয়ার প্রোডাক্টস তাদের বেশ বিত্তশালী ও অর্থসমৃদ্ধ করেছিল। সেই অর্থে তাদের জন্মস্থান নায়াগ্রা কাউন্টিতে একটি সুবৃহৎ অট্টালিকাও নির্মাণ করেছিল তারা। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এসে মেয়েদের মাঝে ববকাট চুলের প্রচলন শুরু হলে সেভেন সিস্টার্স হেয়ার গ্রোয়ারের চাহিদায় ভাটা পড়তে থাকে। ১৯০৭ সালের দিকে তাদের ব্যবসা নিম্নগামী হতে শুরু করে। ১৯৩৬ সালে দুই বোন তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ক্রমেই অন্যদের বিয়ে, অসুস্থতা, মৃত্যু তাদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ১৯৩৮ সালে আক্ষরিকভাবে 'সেভেন সুদারল্যান্ড সিস্টার্স' অধ্যায়ের যবনিকা ঘটে। ধীরে ধীরে মানুষ সেভেন সিস্টার্স ভগ্নিদের কথা ভুলে যায়। ১৯৪৬ সালে নিভৃতে অগোচরে সুদারল্যান্ড সিস্টার্সের শেষ বোনটির যখন মৃত্যু হয়, ততদিনে তাদের সব কীর্তি, জৌলুস, নামডাক বিলীন হয়ে গেছে সময়ের নিষ্ঠুর চাবুকে।

আরও পড়ুন

×