সংসদ সদস্যের পদ হারিয়ে কি ইতি ঘটল রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনে? লোকসভায় অযোগ্য হবার পর রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক জীবন কোন পথে যাচ্ছে তা নিয়ে হিসাবনিকাশ শুরু হয়েছে। 

নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকলে ভারতের জনপ্রতিনিধি আইন অনুযায়ী মোট ৮ বছর ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল। দুই বছর জেলে কাটানোর পরও ৬ বছরের জন্য ভোটে লড়তে পারবেন না। অর্থাৎ ২০৩৪ সালের আগে নির্বাচনে লড়তে পারবেন না তিনি। ততদিনে তাঁর বয়সও হবে প্রায় ৬৫ বছর। বতর্মানে ৫২।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একবার সদস্যপদ চলে যাওয়ার পর তা ফেরানোর কোনো রাস্তা সম্ভবত স্পিকারের কাছেও নেই। তাই উচ্চ আদালতে সাজার মেয়াদ কমে গেলে বা সাজার ওপর স্থগিতাদেশ জারি হলে তৈরি হবে এক অভূতপূর্ব আইনি প্রশ্ন। কারণ রাহুল গান্ধী হলেন পঞ্চম সংসদ সদস্য,  যার আদালতে দোষ প্রমাণিত হওয়ায় লোকসভার সদস্যপদ খারিজ হয়ে গেল। 

২০১৩ সালের সংশোধিত জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী রাহুল গান্ধীর আগে আদালতের মাধ্যমে সংসদ সদস্য পদ হারিয়েছেন- উত্তরপ্রদেশের মুজফফরপুরের বিজেপি বিধায়ক বিক্রম সৈনি, বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আরজেডি নেতা ও ভারতের সাবেক রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব, উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির নেতা আজম খাঁ এবং লাক্ষাদ্বীপের এনসিপির সংসদ সদস্য মহম্মদ ফয়জল।

বিক্রম সৈনির বিরুদ্ধে মুজফফরপুরের দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। আজম খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ঘৃণাত্মক ভাষণের। দুটি মামলা আদালতে এখনো বিচারাধীন। অন্যদিকে পশু খাদ্য কেলেঙ্কারিতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েও কারাবাস এড়াতে না পেরে বর্তমানে রাজনৈতিক বৃত্তের বাইরে লালু প্রসাদ যাদব। তাই সংসদ সদস্য পথ ফিরিয়ে দেওয়ার মত পরিস্থিতি এদের ক্ষেত্রে তৈরি হয়নি।
চারজনের মধ্যে একমাত্র এনসিপি নেতা মোহাম্মদ ফয়জল উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে খুনের মামলায় লাক্ষাদ্বীপের নিম্ন আদালতে অভিযুক্ত হন ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া ফয়জল। তাকে দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছরের বেশি সাজা ঘোষণা করে লাক্ষাদ্বীপে নিম্ন আদালত। ফলে বাতিল হয় ফয়জলের সংসদ সদস্য পদ। 

গত ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট তাকে জামিনে মুক্তি দেয়। এদিকে ততক্ষণে ১৮ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায় লাক্ষাদ্বীপের শূন্য আসনে ভোট নেওয়া হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু হাইকোর্টের রায় জানার পর উপনির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি করেও তা স্থগিত করে দিতে বাধ্য হয় নির্বাচন কমিশন।

এদিকে উচ্চ আদালতের রায়ের পর নিজের পদ ফেরাতে তৎপর হয় ফয়জল। কিন্তু লোকসভার স্পিকার এখনও ফয়জলের সদস্যপদ ফেরাননি। ফলে লাক্ষাদ্বীপ আসনটি এখনও শূন্য। ফয়জল ইতোমধ্যে একাধিকবার স্পিকারের কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু স্পিকারের অফিস থেকে মেলেনি কোনওরকম সাড়া। ফলে হাইকোর্টের রায়ের পর লোকসভার স্পিকারের অফিস উচ্চবাচ্য না করায় নির্বাচন কমিশনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না লাক্ষাদ্বীপের ভোটের বিষয়ে। 
ফয়জলের দৃষ্টান্ত টেনে আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, একবার সদস্যপদ চলে যাওয়ার পর তা ফেরানোর কোনো রাস্তা সম্ভবত স্পিকারের কাছেও নেই। তাই রাহুল গান্ধীর ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতের রায়ের ওপর হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ মিললে তৈরি হবে এক অভূতপূর্ব সাংবিধানিক সংকট। ছোট দলের ছোট কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের সংসদ সদস্য ফয়জলের ক্ষেত্রে তেমন রাজনৈতিক বিতর্ক দেখা না দিলেও রাহুল গান্ধীর ক্ষেত্রে বিষয়টা হতে পারে রাজনৈতিক উত্তেজনাপূর্ণ। 

রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ভারতের সাবেক সংসদ সদস্য ও সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না। উচ্চ আদালতের রায়ের দিকে আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে। রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে রাজ্যসভা থেকে জিতে আসতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন উচ্চ আদালত সাজার মেয়াদ না কমালে বা সাজার উপর স্থগিতাদেশ জারি না করলে কোনো নির্বাচনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না তিনি।