- সাক্ষাৎকার
- মেয়র থাকতে কাউকে তোয়াক্কা করেননি জাহাঙ্গীর
সাক্ষাৎকার : আজমত উল্লা
মেয়র থাকতে কাউকে তোয়াক্কা করেননি জাহাঙ্গীর
ভাসমান ভোটার নিয়ে বিভাজনের চেষ্টা করছে স্বার্থান্বেষীরা

দেশের সবচেয়ে বড় নগরী গাজীপুর সিটি করপোরেশনে আগামী ২৫ মে নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খানসহ আরও আটজন প্রার্থী রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন সমকালের বিশেষ প্রতিনিধি মসিউর রহমান খান ও গাজীপুর প্রতিনিধি ইজাজ আহ্মেদ মিলন
আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতা আজমত উল্লা খান নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনের কর ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, আগের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম দল মনোনীত হলেও করপোরেশন চালিয়েছেন ব্যক্তিগত খেয়ালখুশিতে। কারও পরামর্শ ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে তাঁর পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, মহানগরের বাসিন্দাদের অবশ্যই হোল্ডিং ট্যাক্সের আওতায় আসতে হবে। ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট রুল অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পর অ্যাসেসমেন্টের বিধান রয়েছে। গাজীপুর সিটিতে অ্যাসেসমেন্ট রুল ফলো না করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। কর ব্যবস্থাপনায় অ্যাসেসমেন্টের পরে যদি কোনো নাগরিকের আপত্তি থাকে, তবে তিনি ৩০ দিনের মধ্যে আপত্তি করবেন। একটি রিভিউ বোর্ড গঠিত হবে। ওই বোর্ড আবেদন যথাযথভাবে বিবেচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আগের মেয়রের আমলে কোনো রিভিউ বোর্ড হয়নি। মেয়রের কাছে আবেদন জমা নেওয়া হয়। তিনি ব্যক্তিগত খেয়ালখুশি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেন। এটা পুরোপুরি বেআইনি।
এক প্রশ্নের জবাবে আজমত উল্লা বলেন, সাবেক মেয়র সিটি করপোরেশনের কোনো ব্যাপারে দলীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতেন না। করপোরেশন পরিচালনায় দল থেকে তাঁকে নিয়ম-কানুনের কথা বললেও তিনি আমলে নিতেন না। দলীয় নেতৃত্বের প্রতি তাঁর ছিল চরম অশ্রদ্ধাবোধ। কেউ কোনো পরামর্শ দিলে তিনি তা অসম্মানজনকভাবে এড়িয়ে যেতেন। শুরুতে তিনি নিজেসহ জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মেয়রকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু এসব পরামর্শ তিনি পাত্তাই দেননি। গাজীপুরে সিটি করপোরেশন হওয়ার পর এ পর্যন্ত দু’জন মেয়র নির্বাচিত হলেও পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। এর আগে বিএনপি মনোনীত মেয়র অধ্যক্ষ এম এ মান্নান ও আওয়ামী লীগ মনোনীত জাহাঙ্গীর আলম– উভয়কেই মাঝপথে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, দু’জনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে এবং এই তৎপরতার সঙ্গে আপনি জড়িত ছিলেন বলে জাহাঙ্গীর অভিযোগ তুলেছেন।
জবাবে আওয়ামী লীগের এ প্রার্থী বলেন, জাহাঙ্গীর আলম সবসময়ই নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে অভ্যস্ত। সিটি করপোরেশন আইনের আওতায় তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে আইনেই অসদাচরণ, দুর্নীতি ও তাঁর অপকর্মের জন্যই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এটা কোনো দল বা ব্যক্তি করেনি। সাসপেনশন পুরোপুরি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় করেছে এবং আইন মেনেই করা হয়েছে। তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিলের জন্য অন্যকে দোষারোপ করেন। অন্যকে দোষারোপ করা তাঁর মজ্জাগত দোষ। তাঁর মনোনয়ন টিকবে না, এটা তিনি আগেই জানতেন। যে কারণে তিনি বিকল্প হিসেবে আগেই তাঁর মাকেও প্রার্থী করে রেখেছেন। মানুষের সহানুভূতি আদায়ের জন্য তিনি এসব করেছেন। তাঁর মনোনয়নপত্র শুধু নির্বাচন কমিশনে নয়, আদালতেও বাতিল হয়েছে।
আজমত উল্লা বলেন, জাহাঙ্গীর আলম দল থেকে বহিষ্কারের সময়েও অনেক কান্নাকাটি করেছেন। পরে দলীয় সভাপতির কাছে দরখাস্ত দিয়ে সব অতীত অপরাধ স্বীকার করে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।
জাহাঙ্গীর আলম দলীয় ও মেয়র পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পর গাজীপুরের অত্যন্ত আলোচিত গার্মেন্ট কারখানার ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রভাবশালীদের ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও জড়িত হয়ে পড়ছেন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
মেয়র হতে পারলে এ বিষয়ে আপনার ভূমিকা কী হবে– এমন প্রশ্নের জবাবে টঙ্গীর এ সাবেক মেয়র বলেন, টঙ্গীর পৌর চেয়ারম্যান বা মেয়র থাকাকালে তাঁর বিরুদ্ধে এসব বিষয়ে কেউ অভিযোগ তুলতে পারেননি। তাঁর কোনো আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ নেই। পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে তাঁর ভূমিকা আগের মতোই থাকবে। তিনি বলেন, এই বিশাল শিল্প এলাকার মালিক-শ্রমিক এবং এই এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে এই অবস্থাটাকে স্থিতিশীল রাখার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হবে। আগেও এ কাজ তিনি যেভাবে করেছেন, আগামীতেও একই ভূমিকা থাকবে বলে তিনি অঙ্গীকার করেন। নিজে পরিষ্কার থাকলে অন্যকেও পরিষ্কার থাকার পরামর্শ দেওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন এ প্রার্থী।
দলীয় নেতাকর্মী, সংগঠন এবং সুশীল সমাজকে সঙ্গে নিয়ে সব ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে অতীতের মতো আগামীতেও তিনি সোচ্চার থাকবেন এবং সাবেক মেয়রের আমলে সংঘটিত অপকর্ম অবশ্যই রোধ করা হবে। সময় এলেই তিনি কাজের মাধ্যমে জনমনের এসব আশঙ্কা দূর করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আজমত উল্লা বলেন, গাজীপুরে ভাসমান ভোটার বলতে কিছু নেই। অর্থনৈতিক কারণে দেশের অন্য অঞ্চল থেকে মানুষ এসে এখানে বসবাস শুরু করছেন। যে কারণে এখন জনবসতি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এসব মানুষও ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছেন এবং তাঁরা এই নগরীর ভোটার হয়েছেন। তাই তাদের কোনো ধরনের বিভাজনের আওতায় আনার সুযোগ নেই। স্বার্থান্বেষী মহল এমন বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে।
নৌকার প্রার্থী আরও বলেন, তিনি নির্বাচিত হতে পারলে এই বিশাল শিল্প এলাকার শ্রমিকদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা তাঁর রয়েছে। কারণ তৈরি পোশাক কারখানাই এই এলাকায় বেশি এবং এখানকার শ্রমিকদের বড় অংশই নারী। একটি পরিবারের নারী ও পুরুষ শ্রমিক যখন একই সঙ্গে কাজে বের হয়, তখন তার বাচ্চার পরিপূর্ণ নার্সিং পাওয়ার বিষয়টি একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। তাই জোনভিত্তিক ডে-কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা তাঁর রয়েছে।
নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরে আজমত উল্লা খান বলেন, প্রতিটি সড়ক সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি গড়ে তোলা হবে। সামাজিক অপরাধ ঠেকাতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন