
লোক সাধক লোক সংস্কৃতি, লেখক :সুমনকুমার দাশ, প্রকাশনী :শ্রীহট্ট প্রকাশ, প্রচ্ছদ :অরূপ বাউল
লোক সংস্কৃতি লোকসম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক বিশ্বাস এবং আচার-আচরণ, জীবন-যাপন প্রণালি, চিত্তবিনোদনের উপায় ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা সংস্কৃতি। এটা সম্পূর্ণ তাদের নিজস্ব সংস্কৃৃতি। দীর্ঘকাল ধরে গড়ে ওঠা এই সংস্কৃতি তাদের প্রকৃত পরিচয় বহন করে। লোক সংস্কৃতির নানা দিকপাল তুলে এনেছেন লেখক সুমনকুমার দাশ তার 'লোক সাধক লোক সংস্কৃতি' বইটিতে। বাউল, ফকির, সহজিয়া ও দেহসাধকদের তত্ত্ব ও দর্শন উপস্থাপনের পাশাপাশি লেখক এ গ্রন্থে উন্মোচন করেছেন বাংলার লোক ঐতিহ্যের বিচিত্র ভুবনের অন্দর-বাহির আর আলোচনার বাইরে থাকা বিষয়াদি। এ ছাড়াও গ্রন্থটিতে লেখক গ্রামীণ গীতিকার আর লোক সাধকদের সৃষ্টি ও জীবনদর্শন নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা করেছেন। 'লোক সাধক লোক সংস্কৃতি' এমনই অনবদ্য সংগ্রহ। শ্রীহট্ট প্রকাশ থেকে বের হওয়া এ বইটির নির্ধারিত মূল্য ৬৫০ টাকা। অরূপ বাউলের করা প্রচ্ছদের এ বইটিকে লেখক উৎসর্গ করেছেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনকে। ৩৮৪ পৃষ্ঠার এ বইটি অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮-তে প্রকাশিত হয়। ঐতিহ্যবাহী বাংলা গানের নিবিষ্ট অনুসন্ধায়ক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক সুমনকুমার দাশের 'লোক সংস্কৃতি লোক সাধক' গ্রন্থটি বাংলার নানা ধারা-উপধারার লোকগান ও লোকনাট্যের সমৃদ্ধ অধ্যায়ের যেন এক অপূর্ব ইতিহাস।
সুমনকুমার দাশ প্রাকৃতজনদের আচার-কৃষ্টি-সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করে ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। হাওরাঞ্চলসহ দেশের নানা প্রান্ত ঘুরে সংগ্রহ করেছেন অসংখ্য লোকগান, লোকনাট্য ও পাঁচালির পাণ্ডুলিপি। তার সংগ্রহে ৫০ সহস্রাধিক লোকগান রয়েছে।
বেদে-বাইদ্যানিদের গান, ভিক্ষুক-সংগীত, ধামাইল গান, জারি-সারি-মর্সিয়া, পল্লিগীতি, মাজার-সংগীত, ঢপযাত্রা থেকে শুরু করে বাউল-ফকির পদাবলি- কোনোটাই তার চোখ এড়ায়নি। বাংলার বিচিত্র লোকগান ও লোক সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করে বিশিষ্টতা অর্জন করেছেন এ লেখক। গ্রামীণ মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনযাপনকে নাগরিক সমাজে নিরন্তর পরিচয় করিয়ে চলেছেন। তার রচিত ও সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। লোক গান লোক সংস্কৃতি বইয়ের সংকলিত প্রবন্ধে বাংলার লোকজ সংস্কৃতির অনালোকিত উপাদান মননশীল, কৌতূহলী ও স্বাদু গদ্য ভাষায় প্রকাশ করেছেন সুমনকুমার দাশ।
হাওরাঞ্চল বাংলাদেশের এক অনন্য জনপদ। দেশের অন্যান্য এলাকার সঙ্গে এখানকার সমাজ-সংস্কৃতি একেবারে মেলে না। শুস্ক ও বর্ষা মৌসুমে এখানকার দৃশ্য দুই রকম। এখানকার মানুষ শিশু অবস্থায় শিখে যায় সাঁতার কাটতে আর গান গাইতে। কালেভদ্রে এলাকার কেউ কেউ নিজের অঞ্চল ছাড়িয়ে ছড়িয়ে যায় পুরো দেশে; এমনকি পুরো বিশ্বের মানুষের কাছে।
লেখক তার গ্রন্থে সুরের সাধকদের তুলে ধরেছেন। লোকঐতিহ্যের নানা বিষয় নিয়ে পরম মমতায় লিখে চলেছেন লোক সংস্কৃতি গবেষক ও প্রাবন্ধিক সুমনকুমার দাশ। গ্রন্থে 'রামকানাই দাশ :লোকগানের সর্বশেষ কিংবদন্তি' অংশে রামকানাইয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। রামকানাই দাশ প্রাচীন গানগুলো সরাসরি তার পূর্বপ্রজন্মের কাছ থেকে সুর সমেত সংগ্রহ করে একইভাবে গেয়েছিলেন। এ জন্যই তার কণ্ঠ মাটিঘেঁষা। এ জন্যই তার কণ্ঠ আদি ও অকৃত্রিম। প্রাচীন গানের সুর ও কথার কোনো অদল-বদল তিনি সহ্য করতে পারতেন না। তিনি নিজেও করেননি, কাউকে করতে দেখলে দুঃখ-ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। রামকানাই প্রাচীন লোকগানের একটি পা ছিলেন। প্রাচীন লোকগানের আদলে নিজেও অনেক গান রচনা করেছেন। তাই রামকানাই দাশের কাছে বাংলা লোকগীতির কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। শাস্ত্রীয় সংগীত ও লোকগীতি উভয় ধারাতে তার নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হতো।
রামকানাই দাশকে বাংলাদেশের লোকগানের অগ্রগণ্য সাধকদের একজন বলে অভিহিত করেছেন লোক সংস্কৃতি গবেষক ও প্রাবন্ধিক সুমনকুমার দাশ। তিনি এক লেখায় বলেছেন, "যাত্রাগানে তবলা বাদক সংগীত জীবন শুরু করায় লোকগানের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা আগে থেকেই ছিল। তবলা বাজিয়েছেন উকিল মুনশি, শাহ আবদুল করিম, আবদুল সরকারসহ প্রখ্যাত বাউল সাধকদের সঙ্গেও। এ ছাড়া শুরুর দিকে তিনি কীর্তন ও কবিগান গাইতেন। হারিয়ে যেতে বসা অজ্ঞাত গীতিকারদের রচিত প্রাচীন লোকগান পরিবেশনের পাশাপাশি শিতালং শাহ, রাধারমণ, দুর্বিন শাহ, আজম ফকির, হরি আচার্য, দেবেন্দ্র বাইন প্রমুখ লোক সাধক রচিত গানও গেয়েছেন রামকানাই দাশ। যাত্রাপালায় 'মুখ্য বাইন'-এর পাশাপাশি 'বিবেক' চরিত্রে অভিনয় করে গান গেয়েছেন এক সময়। গেয়েছেন বাউল, কবি, ফকিরালি, গ্যেষ্ঠ, কীর্তন, ঘাটুসহ নানা ধারার গান। প্রাচীন গানের বৈচিত্র্যময় রূপটিই তিনি শেষ বয়সে দেশে-বিদেশে অকৃত্রিমভাবে তুলে ধরেছিলেন।"
রামকানাই দাশ ছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীতের গুরু। সংগীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হক লিখেছিলেন, 'আমাকে কেউ যদি বলেন, দেশের সবচেয়ে ভালো খেয়াল গাইয়ে কে? উত্তর দেওয়ার আগে সঠিক-বেঠিক না জেনেই আমার মনে পড়বে একটি নাম- রামকানাই, সিলেটের রামকানাই।' এভাবেই আমরা এই গ্রন্থটি থেকে লোক সংস্কৃতি লোক সাধক নিয়ে বিস্তর আলোচনা পাই নানা অংশে।
সুমনকুমার দাশ প্রাকৃতজনদের আচার-কৃষ্টি-সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করে ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। হাওরাঞ্চলসহ দেশের নানা প্রান্ত ঘুরে সংগ্রহ করেছেন অসংখ্য লোকগান, লোকনাট্য ও পাঁচালির পাণ্ডুলিপি। তার সংগ্রহে ৫০ সহস্রাধিক লোকগান রয়েছে।
বেদে-বাইদ্যানিদের গান, ভিক্ষুক-সংগীত, ধামাইল গান, জারি-সারি-মর্সিয়া, পল্লিগীতি, মাজার-সংগীত, ঢপযাত্রা থেকে শুরু করে বাউল-ফকির পদাবলি- কোনোটাই তার চোখ এড়ায়নি। বাংলার বিচিত্র লোকগান ও লোক সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করে বিশিষ্টতা অর্জন করেছেন এ লেখক। গ্রামীণ মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনযাপনকে নাগরিক সমাজে নিরন্তর পরিচয় করিয়ে চলেছেন। তার রচিত ও সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। লোক গান লোক সংস্কৃতি বইয়ের সংকলিত প্রবন্ধে বাংলার লোকজ সংস্কৃতির অনালোকিত উপাদান মননশীল, কৌতূহলী ও স্বাদু গদ্য ভাষায় প্রকাশ করেছেন সুমনকুমার দাশ।
হাওরাঞ্চল বাংলাদেশের এক অনন্য জনপদ। দেশের অন্যান্য এলাকার সঙ্গে এখানকার সমাজ-সংস্কৃতি একেবারে মেলে না। শুস্ক ও বর্ষা মৌসুমে এখানকার দৃশ্য দুই রকম। এখানকার মানুষ শিশু অবস্থায় শিখে যায় সাঁতার কাটতে আর গান গাইতে। কালেভদ্রে এলাকার কেউ কেউ নিজের অঞ্চল ছাড়িয়ে ছড়িয়ে যায় পুরো দেশে; এমনকি পুরো বিশ্বের মানুষের কাছে।
লেখক তার গ্রন্থে সুরের সাধকদের তুলে ধরেছেন। লোকঐতিহ্যের নানা বিষয় নিয়ে পরম মমতায় লিখে চলেছেন লোক সংস্কৃতি গবেষক ও প্রাবন্ধিক সুমনকুমার দাশ। গ্রন্থে 'রামকানাই দাশ :লোকগানের সর্বশেষ কিংবদন্তি' অংশে রামকানাইয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। রামকানাই দাশ প্রাচীন গানগুলো সরাসরি তার পূর্বপ্রজন্মের কাছ থেকে সুর সমেত সংগ্রহ করে একইভাবে গেয়েছিলেন। এ জন্যই তার কণ্ঠ মাটিঘেঁষা। এ জন্যই তার কণ্ঠ আদি ও অকৃত্রিম। প্রাচীন গানের সুর ও কথার কোনো অদল-বদল তিনি সহ্য করতে পারতেন না। তিনি নিজেও করেননি, কাউকে করতে দেখলে দুঃখ-ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। রামকানাই প্রাচীন লোকগানের একটি পা ছিলেন। প্রাচীন লোকগানের আদলে নিজেও অনেক গান রচনা করেছেন। তাই রামকানাই দাশের কাছে বাংলা লোকগীতির কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। শাস্ত্রীয় সংগীত ও লোকগীতি উভয় ধারাতে তার নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হতো।
রামকানাই দাশকে বাংলাদেশের লোকগানের অগ্রগণ্য সাধকদের একজন বলে অভিহিত করেছেন লোক সংস্কৃতি গবেষক ও প্রাবন্ধিক সুমনকুমার দাশ। তিনি এক লেখায় বলেছেন, "যাত্রাগানে তবলা বাদক সংগীত জীবন শুরু করায় লোকগানের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা আগে থেকেই ছিল। তবলা বাজিয়েছেন উকিল মুনশি, শাহ আবদুল করিম, আবদুল সরকারসহ প্রখ্যাত বাউল সাধকদের সঙ্গেও। এ ছাড়া শুরুর দিকে তিনি কীর্তন ও কবিগান গাইতেন। হারিয়ে যেতে বসা অজ্ঞাত গীতিকারদের রচিত প্রাচীন লোকগান পরিবেশনের পাশাপাশি শিতালং শাহ, রাধারমণ, দুর্বিন শাহ, আজম ফকির, হরি আচার্য, দেবেন্দ্র বাইন প্রমুখ লোক সাধক রচিত গানও গেয়েছেন রামকানাই দাশ। যাত্রাপালায় 'মুখ্য বাইন'-এর পাশাপাশি 'বিবেক' চরিত্রে অভিনয় করে গান গেয়েছেন এক সময়। গেয়েছেন বাউল, কবি, ফকিরালি, গ্যেষ্ঠ, কীর্তন, ঘাটুসহ নানা ধারার গান। প্রাচীন গানের বৈচিত্র্যময় রূপটিই তিনি শেষ বয়সে দেশে-বিদেশে অকৃত্রিমভাবে তুলে ধরেছিলেন।"
রামকানাই দাশ ছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীতের গুরু। সংগীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হক লিখেছিলেন, 'আমাকে কেউ যদি বলেন, দেশের সবচেয়ে ভালো খেয়াল গাইয়ে কে? উত্তর দেওয়ার আগে সঠিক-বেঠিক না জেনেই আমার মনে পড়বে একটি নাম- রামকানাই, সিলেটের রামকানাই।' এভাবেই আমরা এই গ্রন্থটি থেকে লোক সংস্কৃতি লোক সাধক নিয়ে বিস্তর আলোচনা পাই নানা অংশে।
মন্তব্য করুন