কারাগারে অস্থির পায়চারি,
রোজকার দিনলিপি টুকে টুকে রাখা।
আত্মজীবনীর পূর্ণতা পাবে বলে
রোজ একটু একটু করে সেখানে জমা হয়
অযুত নিযুত ইতিহাস, মানবীয় জীবনাচরণ।
গারদের শিক ছোট ছোট রেখা হয়ে আঁকে
বাংলার মানচিত্র।
চির বিচ্ছেদের তিলক চিহ্ন এঁকে
কারাজীবন হয় জীবনের অধিক
মুজিব, সে তো অপ্রতিরোধ্য, আপসহীন।

স্বাধীনতা কনসার্টে জড়ো হয়
সাড়ে সাত কোটি মানুষের দ্রোহ, আর মুক্তিস্পৃহা
রেসকোর্সের প্রতিটি ধূলিকণা সাক্ষী হয় তার
অনন্য সে গায়কি, স্টম্ফুলিঙ্গ ছড়ায় টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া।
৪৮ থেকে ৭১, দাবি আদায়ের সংগ্রামে ঝাণ্ডা হাতে সে বিশ্বস্তমুখ,
তর্জনীর ইশারায় উদ্বেলিত জনসমুদ্র
ঝাঁপিয়ে পড়ে সমস্ত বৈষম্যের বিরুদ্ধে।

জেলের পাশেই রচিত হয় কবর
তাঁর দৃঢ়তার কাছে নত হয় সময়
আত্মজীবনীর কলেবর বাড়তে থাকে
ঋদ্ধ হয় নেতৃত্বে, সোনার অক্ষরে লেখা হয় বাংলার স্বাধীনতা।

ভিনদেশি নয় তারা, এদেশীয়
ক্ষমতালিপ্সু একদল বিপথগামী,
রক্তস্রোত নামে ৩২-এর সিঁড়ি বেয়ে
একে একে খুন হয় মায়ার সংসার
'আমি মায়ের কাছে যাবো'- মৃত্যুভয়ে আতঙ্কিত ছোট্ট রাসেল!
স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গর্জন
তবু মৃত্যুর চোখে চোখ রেখে চললো তুমুল তর্ক
সাড়ে সাত কোটি বাঙালির বর্ম হয়েছে যে পাঁজর
হলো রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত....
তিনি লুটিয়ে পড়লেন, ছিটকে পড়লো চশমা, প্রিয় পাইপ।

বাতাস থেমে গেল, নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যায়
এমন অসহ্য নিস্তব্ধতা নেমে এলো চারদিকে
দৃশ্যের আড়ালে চলে গেলো হায়েনারা
ভোরের আলো ফোটার আগেই।
চারদিকে বীভৎস নীরবতায়
তারস্বরে প্রতিবাদী হয়ে উঠলো কাকেরা
যখন মানুষেরা আতঙ্কিত, শোকে স্তব্ধ....
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট
ধানমন্ডি ৩২-এর রক্তস্নাত সকাল।

আত্মজীবনীটা অসমাপ্তই থেকে যায়
বঙ্গবন্ধু তবু বেঁচে থাকে
বীরের জীবন তবু অবিনশ্বর।