জন্মদিনে আমার ছেলের দাবি নতুন নতুন
জুতো জামা চাই,
টেবিল থাকবে কলা, কেক, রসগোল্লা আরো কত কী যে,
আত্মীয়স্বজন এসে রেখে যাবে
দু'একটা পোঁটলা-পুঁটলি সাজানো টেবিলে।

এ কেমন জন্মদিন, খাঁ খাঁ বুক বেলুন-ফুটকা নাই,
লাল-নীল বাত্তি নাই,
কোনোখানে উৎসবের চিহ্নমাত্র নাই।
হে পিতা, আমার জন্মদিনে
তোমার ও বাঙালির এ কেমন ভিন্ন আচরণ?
কেউ কেউ চোখ মোছে, কারো চোখে প্রতিশোধ নাচে,
মীরজাফরের মতো আড়চোখে কারবালা দ্যাখে,
তুমি নাই, তবুও তোমার কাছে
কী প্রবল প্রত্যাশায় ভিড় করে বাংলার মানুষ।

তোমাকে দেবার মতো কিছু নাই, তবু চায় তোমার আশ্বাস।
আমরণ তুমি বলেছো, আমরাতো শুনেছি কেবল,
কেউ কেউ আছে, তারা কোনোদিন কিছুই শোনে না-
এখন কি ভিন্ন কিছু হবে?
তোমার বেলায় জানি সবকিছু একটু-আধটু ভিন্ন ধরনের
যেমন তোমার জন্মদিনে
জন্ম নয়, আনন্দ উল্লাস নয়-
মধ্যযুগ থেকে উঠে আসা একটি করুণ মৃত্যু
চেতনায়, বোধে, দেখো
কী প্রবল নাড়া দিয়ে যায়।
আমাদের সমবেত পাপ, ভয়
কাপুরুষ অপরাধ-বোধ দিয়ে
তোমার ফটোর দিকে আজো তাই তাকাতে পারি না।
আমাদের পিতার নামের সাথে
পৃথিবীর নির্যাতিত মানুষের শুভাকাঙ্ক্ষা মিশে আছে, জেনো ...

নিপীড়িত লজ্জিত যারা,
তারা পায় সংগ্রামের, বিপ্লবের বিপুল প্রেরণার।
অন্যায়ের প্রতিবাদে মানব-ভাষার শ্রেষ্ঠ নাম
মুজিবুর রহমান
প্রগতি ও শান্তির নির্ভুল নাম
মুজিবুর রহমান
শক্তিকামী মানুষের আশীর্বাদের ধন্য এক নাম
মুজিবুর রহমান
পিতার অধিক স্নেহ ও ঘাতকের প্রতি তারো নাম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

এ কেমন জন্মদিন মৃত্যুদৃশ্য ভেসে ওঠে শুধু
পদ্মা-মেঘনা-যমুনার পলি দিয়ে গড়া
সাগরের লোনা মুখ থেকে কেড়ে নেওয়া মাটি,
ভাটার পানিটা স'রে গেলে
বাঘের থাবার চিহ্ন
হরিণের ধাবমান খুর-রেখা,
পিতামহদের দীঘল দীর্ঘশ্বাস ও শতাব্দীর অপমান
তুমি তো সেখানে পিতা, পেতেছ বিশাল সিংহাসন-
যে ঘাতক তোমার সুবিশাল নিঃশ্বাস
শিশুঘাতী নারীঘাতী ঘাতকের যে করিবে ক্ষমা
তার ক্ষমা নাই
আমরণ অনুগত,
তোমারই অবাধ্য হবো আজ,
পিতা, অনুমতি দাও।

বিষয় : এ কেমন জন্মদিন

মন্তব্য করুন