
অলঙ্করণ ::ধ্রুব এষ
রেললাইনের পূর্ব পাশে বিহারি কলোনির পরের চত্বরেই শেকলঘেরা কুড়ি ফুট উঁচু শিবলিঙ্গের সদৃশ সাদা চুনকাম করা সিমেন্টের গায়ে আলকাতরা-কালো কালিতে 'ঈমান-একতা-শৃঙ্খলা' লেখা জিন্নাস্মারক থেকে শুরু হয়ে মোটামুটি সরলরেখার মতো আইয়ুব খানের উন্নয়ন-দশকে বানানো ষাট ফুটি সড়কটিই আমাদের লোকালয়ের রাজপথ। এলোপাতাড়ি গড়ে ওঠা জমাটি রিকশাস্ট্যান্ড আর এক ঘোড়ার প্রায় উচ্ছন্নের পথে যাওয়া টমটম স্ট্যান্ডের সামনে-পেছনে ভাতের হোটেল, হোলসেল ওষুধের দোকানের সারি, মাড়োয়ারিদের ডাল-খোল-ভুসির গুদাম এবং গদি দেখতে দেখতে পূর্ব দিকে এগিয়ে চলে সড়ক। তারপর জেলার সবচেয়ে বড় কলেজ, টুকটাক কিছু অফিস-দোকান আর নোয়াখালীপাড়ার কসাইদের গোশতের দোকানের দেখা পাওয়া যায় শহরের প্রাণকেন্দ্রের সিনেমা হলের আগপর্যন্ত। তার পাঁচশ' গজ আগেই মুসলিম ইনস্টিটিউটের পুরোনো দালান। সেখানে অস্থায়ী আস্তানা গেড়েছে সরকারি পাবলিক লাইব্রেরি। দায়সারা চাকরি করা একজন লাইব্রেরিয়ান আর একজন পিয়ন। কোনো বই চাইতে গেলে আলমারি খুলতে হবে বলে নিতান্তই বিরক্ত বোধ করে। সেখানেই ছাতাপড়া হতচ্ছিরি বইগুলোর মধ্যেই রোদ্দুর খুঁজতে যায় ১৭-১৮ বছরের কয়েকজন তরুণ। এই ছোট্ট জনপদের বাইরে যে বিরাট বিশাল অকল্পনীয় বিস্তারের জগৎ আছে, বই সে কথা জানায় তাদের। আর দিনের পর দিন নিজেদের মধ্যে কথোপকথন থেকে, বইয়ের পর বই পড়ে, আলোচনা করে তারা জেনে যায় কিছু অমোঘ সত্য। তাদের উপলব্ধিতে আসতে থাকে যে, এই দেশে মানুষে মানুষে যে বৈষম্য, ধনী-গরিবে যে বৈষম্য, তা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় ঘটেনি; ঘটেছে মানুষের দ্বারাই। আর এই বৈষম্য টিকিয়ে রেখেছে মানুষই। তারা এটাও বুঝতে পারে যে, এই ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখেছে যে প্রতিষ্ঠান, তার নাম রাষ্ট্র। আর পৃথিবীকে শাসন করে যে বস্তু, তার নাম পুঁজি। তরুণরা প্রচলিত রাজনীতির ওপর আস্থা হারায়। তারা ততদিনে এ কথা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে যে, মানুষকে অমানুষ করে রেখেছে এই প্রচলিত রাজনীতি।
তারা বিকেলে বিকেলে হাঁটতে যায় ডোমপাড়া মাঠ পেরিয়ে, জলকল পেরিয়ে, তরমুজের প্ল্যানটেশন পেরিয়ে পাগলা রাজার ইটবাঁধানো রাস্তা ধরে। গ্রীষ্ফ্মের নিদাঘ বিকেলে, যখন কোনো গাছের একটা পাতার মধ্যেও বিন্দুমাত্র কম্পন দেখা যায় না, তখনও দু'পাশের গগনশিরীষ গাছ থেকে যেন অলৌকিকভাবে ভেসে আসে না দেখা ঝিরঝির বাতাস। তারা নিজেদের জামা খুলে রাস্তার পাশে বসে। পড়ে নিকোলাই অস্ত্রভস্কির 'ইস্পাত', অনিল মুখার্জীর 'সাম্যবাদের ভূমিকা', নীহার সরকারের 'ছোটদের রাজনীতি', 'ছোটদের অর্থনীতি'। একদিন হঠাৎ করাতিদের দেখা যায় সেই রাজার আমলের শিরীষ গাছগুলোকে কাটার জন্য জমায়েত হতে। তারা তো হতভম্ব। এসব মহাপ্রাণকে কাটা হবে কেন? কারও কাছে কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। কারও কাছ থেকে কোনো প্রতিবাদ আসে না। তারা তখন নিজেরাই প্রতিবাদে উদ্যত হয়। বাড়ি বাড়ি ঘুরে স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে থাকে। সেই সময় দেখা যায় একজন শীর্ণকান্তি, দুর্বল, মাঝবয়সী মানুষ এগিয়ে এসেছে কয়েকগ া সঙ্গী নিয়ে। তারা গাছগুলোর সামনে অবস্থান নিয়েছে নিজেদের শরীরকে ব্যারিকেড বানিয়ে। তখন শহরের মধ্যে একধরনের ছোট আলোড়ন বয়ে যায়। কমিউনিস্ট সন্তোষ মৈত্র শহরের গাছ কাটার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে। তরুণরা হতচকিত হয়ে যায়। কমিউনিস্ট কেউ আছে! তাদের এই ছোট্ট শহরেই! সন্তোষ মৈত্রকে দেখে তাদের চোখ কপালে ওঠে। এই লোক কমিউনিস্ট! লোকটাকে না রোজ বিকেলে দেখা যায় গোপাল ডাক্তারের হোমিওপ্যাথির দোকানে বসে বসে দৈনিক সংবাদ পড়তে। 'ইস্পাত' উপন্যাসটি পড়ে, আর মাও সে তুংয়ের লংমার্চের বিবরণ পড়ে তরুণদের ধারণা হয়েছিল যে, কমিউনিস্টদের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে গায়ে আগুনের আঁচ টের পাওয়া যায়। কিন্তু এই লোক তো নেহায়েতই নিরীহদর্শন, চালশে পড়া বুড়োটে। শেষ পর্যন্ত কিন্তু সেই আধাবুড়ো মানুষটাই ঠেকিয়ে দিল গাছকাটার ষড়যন্ত্র।
তরুণদের তখন চুম্বকের মতো টানছে সন্তোষ মৈত্র। কিন্তু বাধা একটা যে রয়েছে মনের কোণে- কমিউনিস্ট হওয়া চলবে না। কারণ তারা আল্লাহ-খোদা মানে না। কিন্তু তরুণরা সবাই প্রায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি। আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব কল্পনা করাও তাদের সম্ভব নয় তখন। এদিকে যে আবার সন্তোষ মৈত্রের কাছে না গেলেও চলছে না। সাক্ষাতের প্রথমেই প্রশ্ন তোলা হলো ঈশ্বর বিষয়ে। হো হো করে হেসে এক নিমেষেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিলেন তিনি- ধর্ম ব্যক্তিগত ব্যাপার। কে পালন করবে, আর কে করবে না, সেটা তার সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। আমরা কখনো কাউকে ধর্ম ত্যাগ করতে বলি না। আমাদের এক প্রতিষ্ঠাতা নেতা ছিলেন মওলানা হাসরত মোহানী। নাম শুনেছ তাঁর? না, তরুণরা শোনেনি। কিন্তু তারা শুনেছে ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাপারে কমিউনিস্টরা কট্টর। আর অব্যাহত প্রচারণা তো রয়েছেই যে, ধর্মনিরপেক্ষতা আর ধর্মহীনতা একই কথা। তাহলে? উত্তর যেটা পাওয়া যায় তা এতদিনের ধারণার সাথে কিছুতেই মেলে না। তিনি জানালেন ইংরেজি মূল শব্দটা হচ্ছে সেক্যুলারিজম। যার বাংলা ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, ইহজাগতিকতা। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে আসলে একটা জগাখিচুড়ি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। রাষ্ট্র বা সরকার এর ফলে ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা দেখায়। তা দেখাতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই কোনো না-কোনো ধর্মের প্রতি বেশি পৃষ্ঠপোষকতা দেখাতে হয়। এতে অন্য ধর্মকে অপমানও করা হয় কিছুটা। আবার ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের সুযোগও সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে সেক্যুলারিজম যেমন কোনো ধর্মের বিরোধিতাও করবে না, তেমনি কোনো ধর্মকে সহায়তাও করবে না। রাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়াই ধর্ম বিকশিত হতে পারে, মানুষ ধর্ম পালন করতে পারে। রাষ্ট্রের প্রধান কাজ ইহজাগতিক। সকল মানুষের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। কমিউনিস্টরা সেই রাষ্ট্রই তৈরি করতে চায়।
তরুণদের তখন ছাড়া ছাড়া হয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। ছোট মফস্বল শহর তার মেধাবী সন্তানদের এইচএসসি পাসের পর আর ধরে রাখতে পারে না। উচ্চশিক্ষার জন্য তাদের পাড়ি জমাতে হয় অন্য কোনো শহরে, অন্য কোনো অঞ্চলে।
গগনশিরীষতলার বৈঠকে তখন ভাঙনের সুর। কিন্তু তারা প্রতিজ্ঞা করেছে গণমানুষের পক্ষে থাকবে, ন্যায়ের পক্ষে কাজ করবে, সত্যের পক্ষে কাজ করবে, সংগঠন করবে। তারা নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে তো বটেই, কিন্তু আত্মকেন্দ্রিক হবে না। শুধু একজন, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী, সব পরীক্ষায় খুব বেশি বেশি নম্বর পেয়ে পাস করে, দেশের অভিজাত প্রতিষ্ঠানগুলোয় যে অবলীলায় ভর্তি পরীক্ষায় উতরে গেছে, সে-ই কেবল বলতে পারে না যে, সে কোন পেশায় আত্মনিয়োগ করবে। কেননা সে তখন ভেতরে ভেতরে শিল্প-আক্রান্ত, এবং সাহিত্য-আক্রান্ত। তার পরেও সে পড়তে চলে যায় দূরশহরের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
দূরে দূরে থাকলেও তারা আকূল হয়ে খোঁজ রাখে পরস্পরের। একজনের সাফল্যের কথা শুনলে আরেকজনের বুক ফুলে ওঠে আনন্দে। তাদের একজন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিতে তরতর করে ওপরে উঠে যাচ্ছে। অচিরেই সংবাদ আসে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্র সংগঠনের প্রধান পদগুলোর একটি দখল করে ফেলেছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সে অবশ্যম্ভাবী বড় দুই পদের একটির দাবিদার। তার বাগ্মিতা, কর্মীদের ওপর তার প্রভাব, কেন্দ্রীয় পরিষদের সাথে তার লিয়াজোঁ- এইসব মিলিয়ে সে দক্ষ ডিপ্লোম্যাটের মতো ওপরে উঠছে তরতর করে। পরবর্তী সময়ে দেখা যাবে সে সত্যই ছাত্র সংসদে বড় পদে নির্বাচিত হয়েছে, তারপরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা হয়েছে, তারপর জোটের রাজনীতিতে তার ক্ষয়িষ্ণু দলটিকে নিয়েই দাবার ছক কেটে কেটে এগিয়েছে, এবং শেষ পর্যন্ত দেশের সবচাইতে বড় আদালতের হাকিম হয়েছে।
এদিকে মেধাবী সাহিত্যকর্মী কিন্তু সংগঠনের সাথে মেলাতে পারছে না আদর্শকে। পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে সে। দেখছে আদর্শের সাথে কর্মপন্থার কত ভিন্নতা! শুধু নিবেদিত কর্মকা ই সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ নয়, পদধারীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ না রাখলে কাজের কোনো মূল্যায়ন নেই। রাষ্ট্রীয় আমলাতন্ত্রকে যে কত গালি দেয় তারা শতমুখে, কিন্তু পার্টির মধ্যে আমলাতন্ত্র প্রবল আর প্রচ। দেখা গেল আদর্শের প্রতি আনুগত্য থাকলেই চলে না, পার্টি নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য দেখাতে না পারলে ওপরে জায়গা পাওয়া যায় না। আর ওপরে জায়গা না পেলে নীতি-নির্ধারণে, কৌশল নির্ধারণে ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিপদেই হোঁচট খেতে থাকে সে। যত হোঁচট খাচ্ছে তত বাড়ছে তার জেদ। তত বেশি আঁকড়ে ধরছে সাহিত্যকে। একুশ বছর বয়সে সে শহীদ মিনারে একাকী দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছে যে, অন্যরা সবাই যা করে- নারী ও অর্থের পেছনে ছোটাকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ- সে তা থেকে দূরে থাকবে। পার্টি থেকেও দূরে সরছে সে।
কিন্তু আদর্শ থেকে দূরে সরা হলো না তার। ১৯৯২ সালে ভেঙে গেল বার্লিন প্রাচীর। বিলুপ্ত হয়ে গেল সোভিয়েত ইউনিয়ন। তখন সে দেখল মানুষকে পুঁজির শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার শপথদৃপ্ত মানুষগুলোর দল ত্যাগের হিড়িক। কেউ কোনো পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে যেতে পর্যন্ত রাজি না। তখন সমাজতন্ত্র এই দেশে সবচাইতে অচ্ছুৎ একটা শব্দ। সে তখন পেশায় ঢুকেছে। কিন্তু পেশাকে ফেলে সে ঘুরে বেড়ায়। ঘুরে বেড়ায় শাহবাগে, টিএসসিতে, পল্টনে, মিরপুরে, জাহাঙ্গীরনগরে। কোহিনুর রেস্টুরেন্টে দু'জন এক টেবিলে বসে জোরে জোরে উচ্চারণ করে সমাজতন্ত্র শব্দটি। অন্য টেবিলের খদ্দেররা শব্দটি শুনলেই ঘুরে তাকায় তাদের দিকে। কারও চোখে বিস্ময়, কারও চোখে সহানুভূতি, কারও চোখে বিদ্রুপ। কিন্তু পরোয়া না করে সে কথায় কথায় শব্দটি উচ্চারণ করে চলে।
তারা যায় তাত্ত্বিকদের কাছে, পুরোনো নেতাদের কাছে, সাহিত্যের অঙ্গনের অল্প দুই-একজন যারা প্রগতিশীল মনোভঙ্গি থেকে তখনও সরে যাননি, তাদের কাছে- কিন্তু কোথাও প্রার্থিত উত্তর মেলে না। উত্তর তখন নিজেকেই খুঁজতে হয়। মানুষের জীবনযাপনের মধ্যে, মানুষের চিন্তাচর্চার মধ্যে, মূল মার্কস-অ্যাঙ্গেলস রচনাবলি পাঠের মধ্যে সে উত্তর খুঁজতে চায়। বিপর্যয়ের ব্যাখ্যা খুঁজতে চায়, আর উত্তরণের পথ খুঁজতে চায়। একে একে পাঠ্যতালিকায় স্থান করে নিতে থাকেন আন্তোনিও গ্রামসি, টেরি ইগলটন, ফুকো, দেরিদা, ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল, উত্তর-আধুনিকরা এবং অতি অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ। এই জ্বলন্ত কয়লার ওপর দিয়ে খালি পায়ে হেঁটে চলার পর্যায়ে তার সত্যিকারের উপশম হয়ে দাঁড়ান রবীন্দ্রনাথ। আর তার আত্মাকে বাঁচিয়ে রাখার পথ্য জোগায় লেখালেখি। সে চাকরি নিয়ে চলে যায় একেবারে গ্রামে, মঙ্গাপীড়িত গ্রামে। বছরের পর বছর ধরে খুঁজে বেড়ায় সেই সূত্রটিকে, যে সূত্রটি বেঁচে থাকার দার্শনিক ভিত্তি জোগায় এই প্রান্তিক মানুষগুলোকে। খুঁজে পায় সেই গ্রামীণ সামাজিক আধ্যাত্মিকতা। এই আধ্যাত্মিকতার সাথে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের তেমন কোনো সম্পর্ক সেই। প্রথাসিদ্ধ ধর্মের নিজেদের মতো করে নেওয়া অংশ, বিভিন্ন লোকজ ধর্মের মিশেল, আংশিক বৈরাগ্য আংশিক বাস্তবমুখিনতা, বংশপরম্পরা বাহিত সামাজিক উপদেশমালা, কিছু মূল্যবোধ, দীর্ঘদিনের যোগাযোগ এবং আদান-প্রদানের মাধ্যমে গড়ে ওঠা পারস্পরিক মমত্ববোধ- এইসব উপাদান মিলে তৈরি হয় গ্রামীণ সামাজিক আধ্যাত্মিকতা। দুই দশক পরে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই যখন নিশ্চিত হয়েছে যে, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প একটি গড়ে তুলতেই হবে, সবাই নতুন করে উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, পুঁজিবাদই ইতিহাসের শেষ কথা নয়, তখন সে নগরে ফিরেছে।
তার সেই তারুণ্যের বন্ধুরা তাকে দেখে বিমর্ষ মাথা নাড়ে- সবাই নিজ নিজ পেশাগত জীবনে দাঁড়িয়ে গেছে, শুধু শুধু তুই নিজের জীবনটা নষ্ট করলি। সবারই গাড়ি-বাড়ি-ব্যাংক ব্যালান্স হয়েছে, শুধু তোরই এখনও পেশার স্থিরতা নেই।
সে মৃদু হাসে। আবদুল মান্নান সৈয়দকে আদর্শ লেখক মনে করে না সে। কিন্তু তার কিছু কিছু কথার সাথে একমত হয়। তেমনি এক অন্তর্ভেদ্য বাক্য হচ্ছে- বাড়ি-গাড়ি-টাকা-নারী তো বয়স্কদের খেলনা। তা নিয়ে মত্ত থাকে প্রাপ্তবয়স্ক বালকরা। লেখক ওপথে পা বাড়াবেন কেন?
সে বন্ধুদের মুখের ওপর বলতে পারে না কথাগুলো। কারণ বন্ধুরা সত্যিকারের দরদ, শুভেচ্ছা আর বেদনাবোধ থেকেই কথাগুলো বলছে তাকে।
কিন্তু তার পক্ষে তো অন্যকিছু হওয়া সম্ভবই ছিল না।
অমলকান্তির মতো কেউ কেউ এখনো কেবল রোদ্দুরই হতে চায়।
তারা বিকেলে বিকেলে হাঁটতে যায় ডোমপাড়া মাঠ পেরিয়ে, জলকল পেরিয়ে, তরমুজের প্ল্যানটেশন পেরিয়ে পাগলা রাজার ইটবাঁধানো রাস্তা ধরে। গ্রীষ্ফ্মের নিদাঘ বিকেলে, যখন কোনো গাছের একটা পাতার মধ্যেও বিন্দুমাত্র কম্পন দেখা যায় না, তখনও দু'পাশের গগনশিরীষ গাছ থেকে যেন অলৌকিকভাবে ভেসে আসে না দেখা ঝিরঝির বাতাস। তারা নিজেদের জামা খুলে রাস্তার পাশে বসে। পড়ে নিকোলাই অস্ত্রভস্কির 'ইস্পাত', অনিল মুখার্জীর 'সাম্যবাদের ভূমিকা', নীহার সরকারের 'ছোটদের রাজনীতি', 'ছোটদের অর্থনীতি'। একদিন হঠাৎ করাতিদের দেখা যায় সেই রাজার আমলের শিরীষ গাছগুলোকে কাটার জন্য জমায়েত হতে। তারা তো হতভম্ব। এসব মহাপ্রাণকে কাটা হবে কেন? কারও কাছে কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। কারও কাছ থেকে কোনো প্রতিবাদ আসে না। তারা তখন নিজেরাই প্রতিবাদে উদ্যত হয়। বাড়ি বাড়ি ঘুরে স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে থাকে। সেই সময় দেখা যায় একজন শীর্ণকান্তি, দুর্বল, মাঝবয়সী মানুষ এগিয়ে এসেছে কয়েকগ া সঙ্গী নিয়ে। তারা গাছগুলোর সামনে অবস্থান নিয়েছে নিজেদের শরীরকে ব্যারিকেড বানিয়ে। তখন শহরের মধ্যে একধরনের ছোট আলোড়ন বয়ে যায়। কমিউনিস্ট সন্তোষ মৈত্র শহরের গাছ কাটার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে। তরুণরা হতচকিত হয়ে যায়। কমিউনিস্ট কেউ আছে! তাদের এই ছোট্ট শহরেই! সন্তোষ মৈত্রকে দেখে তাদের চোখ কপালে ওঠে। এই লোক কমিউনিস্ট! লোকটাকে না রোজ বিকেলে দেখা যায় গোপাল ডাক্তারের হোমিওপ্যাথির দোকানে বসে বসে দৈনিক সংবাদ পড়তে। 'ইস্পাত' উপন্যাসটি পড়ে, আর মাও সে তুংয়ের লংমার্চের বিবরণ পড়ে তরুণদের ধারণা হয়েছিল যে, কমিউনিস্টদের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে গায়ে আগুনের আঁচ টের পাওয়া যায়। কিন্তু এই লোক তো নেহায়েতই নিরীহদর্শন, চালশে পড়া বুড়োটে। শেষ পর্যন্ত কিন্তু সেই আধাবুড়ো মানুষটাই ঠেকিয়ে দিল গাছকাটার ষড়যন্ত্র।
তরুণদের তখন চুম্বকের মতো টানছে সন্তোষ মৈত্র। কিন্তু বাধা একটা যে রয়েছে মনের কোণে- কমিউনিস্ট হওয়া চলবে না। কারণ তারা আল্লাহ-খোদা মানে না। কিন্তু তরুণরা সবাই প্রায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি। আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব কল্পনা করাও তাদের সম্ভব নয় তখন। এদিকে যে আবার সন্তোষ মৈত্রের কাছে না গেলেও চলছে না। সাক্ষাতের প্রথমেই প্রশ্ন তোলা হলো ঈশ্বর বিষয়ে। হো হো করে হেসে এক নিমেষেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিলেন তিনি- ধর্ম ব্যক্তিগত ব্যাপার। কে পালন করবে, আর কে করবে না, সেটা তার সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। আমরা কখনো কাউকে ধর্ম ত্যাগ করতে বলি না। আমাদের এক প্রতিষ্ঠাতা নেতা ছিলেন মওলানা হাসরত মোহানী। নাম শুনেছ তাঁর? না, তরুণরা শোনেনি। কিন্তু তারা শুনেছে ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাপারে কমিউনিস্টরা কট্টর। আর অব্যাহত প্রচারণা তো রয়েছেই যে, ধর্মনিরপেক্ষতা আর ধর্মহীনতা একই কথা। তাহলে? উত্তর যেটা পাওয়া যায় তা এতদিনের ধারণার সাথে কিছুতেই মেলে না। তিনি জানালেন ইংরেজি মূল শব্দটা হচ্ছে সেক্যুলারিজম। যার বাংলা ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, ইহজাগতিকতা। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে আসলে একটা জগাখিচুড়ি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। রাষ্ট্র বা সরকার এর ফলে ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা দেখায়। তা দেখাতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই কোনো না-কোনো ধর্মের প্রতি বেশি পৃষ্ঠপোষকতা দেখাতে হয়। এতে অন্য ধর্মকে অপমানও করা হয় কিছুটা। আবার ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের সুযোগও সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে সেক্যুলারিজম যেমন কোনো ধর্মের বিরোধিতাও করবে না, তেমনি কোনো ধর্মকে সহায়তাও করবে না। রাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়াই ধর্ম বিকশিত হতে পারে, মানুষ ধর্ম পালন করতে পারে। রাষ্ট্রের প্রধান কাজ ইহজাগতিক। সকল মানুষের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। কমিউনিস্টরা সেই রাষ্ট্রই তৈরি করতে চায়।
তরুণদের তখন ছাড়া ছাড়া হয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। ছোট মফস্বল শহর তার মেধাবী সন্তানদের এইচএসসি পাসের পর আর ধরে রাখতে পারে না। উচ্চশিক্ষার জন্য তাদের পাড়ি জমাতে হয় অন্য কোনো শহরে, অন্য কোনো অঞ্চলে।
গগনশিরীষতলার বৈঠকে তখন ভাঙনের সুর। কিন্তু তারা প্রতিজ্ঞা করেছে গণমানুষের পক্ষে থাকবে, ন্যায়ের পক্ষে কাজ করবে, সত্যের পক্ষে কাজ করবে, সংগঠন করবে। তারা নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে তো বটেই, কিন্তু আত্মকেন্দ্রিক হবে না। শুধু একজন, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী, সব পরীক্ষায় খুব বেশি বেশি নম্বর পেয়ে পাস করে, দেশের অভিজাত প্রতিষ্ঠানগুলোয় যে অবলীলায় ভর্তি পরীক্ষায় উতরে গেছে, সে-ই কেবল বলতে পারে না যে, সে কোন পেশায় আত্মনিয়োগ করবে। কেননা সে তখন ভেতরে ভেতরে শিল্প-আক্রান্ত, এবং সাহিত্য-আক্রান্ত। তার পরেও সে পড়তে চলে যায় দূরশহরের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
দূরে দূরে থাকলেও তারা আকূল হয়ে খোঁজ রাখে পরস্পরের। একজনের সাফল্যের কথা শুনলে আরেকজনের বুক ফুলে ওঠে আনন্দে। তাদের একজন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিতে তরতর করে ওপরে উঠে যাচ্ছে। অচিরেই সংবাদ আসে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্র সংগঠনের প্রধান পদগুলোর একটি দখল করে ফেলেছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সে অবশ্যম্ভাবী বড় দুই পদের একটির দাবিদার। তার বাগ্মিতা, কর্মীদের ওপর তার প্রভাব, কেন্দ্রীয় পরিষদের সাথে তার লিয়াজোঁ- এইসব মিলিয়ে সে দক্ষ ডিপ্লোম্যাটের মতো ওপরে উঠছে তরতর করে। পরবর্তী সময়ে দেখা যাবে সে সত্যই ছাত্র সংসদে বড় পদে নির্বাচিত হয়েছে, তারপরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা হয়েছে, তারপর জোটের রাজনীতিতে তার ক্ষয়িষ্ণু দলটিকে নিয়েই দাবার ছক কেটে কেটে এগিয়েছে, এবং শেষ পর্যন্ত দেশের সবচাইতে বড় আদালতের হাকিম হয়েছে।
এদিকে মেধাবী সাহিত্যকর্মী কিন্তু সংগঠনের সাথে মেলাতে পারছে না আদর্শকে। পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে সে। দেখছে আদর্শের সাথে কর্মপন্থার কত ভিন্নতা! শুধু নিবেদিত কর্মকা ই সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ নয়, পদধারীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ না রাখলে কাজের কোনো মূল্যায়ন নেই। রাষ্ট্রীয় আমলাতন্ত্রকে যে কত গালি দেয় তারা শতমুখে, কিন্তু পার্টির মধ্যে আমলাতন্ত্র প্রবল আর প্রচ। দেখা গেল আদর্শের প্রতি আনুগত্য থাকলেই চলে না, পার্টি নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য দেখাতে না পারলে ওপরে জায়গা পাওয়া যায় না। আর ওপরে জায়গা না পেলে নীতি-নির্ধারণে, কৌশল নির্ধারণে ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিপদেই হোঁচট খেতে থাকে সে। যত হোঁচট খাচ্ছে তত বাড়ছে তার জেদ। তত বেশি আঁকড়ে ধরছে সাহিত্যকে। একুশ বছর বয়সে সে শহীদ মিনারে একাকী দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছে যে, অন্যরা সবাই যা করে- নারী ও অর্থের পেছনে ছোটাকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ- সে তা থেকে দূরে থাকবে। পার্টি থেকেও দূরে সরছে সে।
কিন্তু আদর্শ থেকে দূরে সরা হলো না তার। ১৯৯২ সালে ভেঙে গেল বার্লিন প্রাচীর। বিলুপ্ত হয়ে গেল সোভিয়েত ইউনিয়ন। তখন সে দেখল মানুষকে পুঁজির শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার শপথদৃপ্ত মানুষগুলোর দল ত্যাগের হিড়িক। কেউ কোনো পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে যেতে পর্যন্ত রাজি না। তখন সমাজতন্ত্র এই দেশে সবচাইতে অচ্ছুৎ একটা শব্দ। সে তখন পেশায় ঢুকেছে। কিন্তু পেশাকে ফেলে সে ঘুরে বেড়ায়। ঘুরে বেড়ায় শাহবাগে, টিএসসিতে, পল্টনে, মিরপুরে, জাহাঙ্গীরনগরে। কোহিনুর রেস্টুরেন্টে দু'জন এক টেবিলে বসে জোরে জোরে উচ্চারণ করে সমাজতন্ত্র শব্দটি। অন্য টেবিলের খদ্দেররা শব্দটি শুনলেই ঘুরে তাকায় তাদের দিকে। কারও চোখে বিস্ময়, কারও চোখে সহানুভূতি, কারও চোখে বিদ্রুপ। কিন্তু পরোয়া না করে সে কথায় কথায় শব্দটি উচ্চারণ করে চলে।
তারা যায় তাত্ত্বিকদের কাছে, পুরোনো নেতাদের কাছে, সাহিত্যের অঙ্গনের অল্প দুই-একজন যারা প্রগতিশীল মনোভঙ্গি থেকে তখনও সরে যাননি, তাদের কাছে- কিন্তু কোথাও প্রার্থিত উত্তর মেলে না। উত্তর তখন নিজেকেই খুঁজতে হয়। মানুষের জীবনযাপনের মধ্যে, মানুষের চিন্তাচর্চার মধ্যে, মূল মার্কস-অ্যাঙ্গেলস রচনাবলি পাঠের মধ্যে সে উত্তর খুঁজতে চায়। বিপর্যয়ের ব্যাখ্যা খুঁজতে চায়, আর উত্তরণের পথ খুঁজতে চায়। একে একে পাঠ্যতালিকায় স্থান করে নিতে থাকেন আন্তোনিও গ্রামসি, টেরি ইগলটন, ফুকো, দেরিদা, ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল, উত্তর-আধুনিকরা এবং অতি অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ। এই জ্বলন্ত কয়লার ওপর দিয়ে খালি পায়ে হেঁটে চলার পর্যায়ে তার সত্যিকারের উপশম হয়ে দাঁড়ান রবীন্দ্রনাথ। আর তার আত্মাকে বাঁচিয়ে রাখার পথ্য জোগায় লেখালেখি। সে চাকরি নিয়ে চলে যায় একেবারে গ্রামে, মঙ্গাপীড়িত গ্রামে। বছরের পর বছর ধরে খুঁজে বেড়ায় সেই সূত্রটিকে, যে সূত্রটি বেঁচে থাকার দার্শনিক ভিত্তি জোগায় এই প্রান্তিক মানুষগুলোকে। খুঁজে পায় সেই গ্রামীণ সামাজিক আধ্যাত্মিকতা। এই আধ্যাত্মিকতার সাথে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের তেমন কোনো সম্পর্ক সেই। প্রথাসিদ্ধ ধর্মের নিজেদের মতো করে নেওয়া অংশ, বিভিন্ন লোকজ ধর্মের মিশেল, আংশিক বৈরাগ্য আংশিক বাস্তবমুখিনতা, বংশপরম্পরা বাহিত সামাজিক উপদেশমালা, কিছু মূল্যবোধ, দীর্ঘদিনের যোগাযোগ এবং আদান-প্রদানের মাধ্যমে গড়ে ওঠা পারস্পরিক মমত্ববোধ- এইসব উপাদান মিলে তৈরি হয় গ্রামীণ সামাজিক আধ্যাত্মিকতা। দুই দশক পরে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই যখন নিশ্চিত হয়েছে যে, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প একটি গড়ে তুলতেই হবে, সবাই নতুন করে উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, পুঁজিবাদই ইতিহাসের শেষ কথা নয়, তখন সে নগরে ফিরেছে।
তার সেই তারুণ্যের বন্ধুরা তাকে দেখে বিমর্ষ মাথা নাড়ে- সবাই নিজ নিজ পেশাগত জীবনে দাঁড়িয়ে গেছে, শুধু শুধু তুই নিজের জীবনটা নষ্ট করলি। সবারই গাড়ি-বাড়ি-ব্যাংক ব্যালান্স হয়েছে, শুধু তোরই এখনও পেশার স্থিরতা নেই।
সে মৃদু হাসে। আবদুল মান্নান সৈয়দকে আদর্শ লেখক মনে করে না সে। কিন্তু তার কিছু কিছু কথার সাথে একমত হয়। তেমনি এক অন্তর্ভেদ্য বাক্য হচ্ছে- বাড়ি-গাড়ি-টাকা-নারী তো বয়স্কদের খেলনা। তা নিয়ে মত্ত থাকে প্রাপ্তবয়স্ক বালকরা। লেখক ওপথে পা বাড়াবেন কেন?
সে বন্ধুদের মুখের ওপর বলতে পারে না কথাগুলো। কারণ বন্ধুরা সত্যিকারের দরদ, শুভেচ্ছা আর বেদনাবোধ থেকেই কথাগুলো বলছে তাকে।
কিন্তু তার পক্ষে তো অন্যকিছু হওয়া সম্ভবই ছিল না।
অমলকান্তির মতো কেউ কেউ এখনো কেবল রোদ্দুরই হতে চায়।
বিষয় : কালের খেয়া
মন্তব্য করুন