- কালের খেয়া
- বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র: বাহাত্তরের সংবিধান ও সমতামুখী সমাজের আকাঙ্ক্ষা
তুমুল গাঢ় সমাচার
বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র: বাহাত্তরের সংবিধান ও সমতামুখী সমাজের আকাঙ্ক্ষা
ধারাবাহিক

পর্ব ::৫৯
পূর্বে প্রকাশিতের পর
প্রমথ চৌধুরীর 'রায়তের কথা' ও 'বাঙালি-পেট্রিয়াটিজম' প্রবন্ধ দুটি পাঠে বোঝা যায় প্রথাগত সমাজতন্ত্রী না হয়েও কী করে সমাজতন্ত্রী হওয়া যায়। সাধারণ মানুষের গণতন্ত্রের কথা বলেও কী করে সামাজিক সাম্য ও অর্থনৈতিক সুষম বণ্টনের পক্ষে দাঁড়ানো যায়। যেমনটা ছিলেন বঙ্গবন্ধু- তার সমাজতন্ত্র ছিল কৃষক-শ্রমিক সাধারণ মানুষের গণতন্ত্র, যাকে তিনি একপর্যায়ে 'শোষিতের গণতন্ত্র' বলে অভিহিত করেছিলেন। এটা তার গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের প্যারাডাইমের একটি মৌলিক ধারণা। এটি স্পষ্টতই বিলেতের 'লেবার পার্টির সমাজতন্ত্র' থেকে মৌলিকভাবে পৃথক একটি নিজস্ব উদ্ভাবন। এ নিয়ে পরবর্তীকালে আরো কিছু কথা যোগ করব। কিন্তু আপাতত এটুকু বলব যে, পাকিস্তানের বৃহৎ ভূস্বামী-জমিদার-জায়গিরদারদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু যেমন প্রকাশ্যেই উচ্চকণ্ঠ ছিলেন- সেই সামন্তবাদবিরোধী অবস্থানটি বাঙালির সাম্যচিন্তায় পূর্বাপর এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ছিল। বঙ্কিমের সাম্যচিন্তার প্রসঙ্গ এ ক্ষেত্রে পূর্বেই উল্লেখ করেছি। রমেশচন্দ্র দত্তের 'দ্য পেজেন্ট্রি অব বেংগল' বইটির কথাও বড় করে উল্লেখ করতে হয়। এর কিছুকাল আগে বঙ্কিম-ভ্রাতা সঞ্জীবচন্দ্র 'দ্য বেঙ্গল রায়তস' গ্রন্থটি লিখেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন পল্লীসমাজ পুনর্গঠনবিষয়ক তার অসংখ্য রচনা ও চিঠিপত্র। 'রায়তের কথা' প্রবন্ধে প্রমথ চৌধুরী কৃষকের স্বার্থ-রক্ষার প্রশ্ন তোলাতেই তাকে 'বলশেভিক জুজুর' ভয় দেখানো হয়েছিল। প্রমথ চৌধুরী যেখানে ছিলেন Peasant Proprietorship-র পক্ষে, রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আরো এক ধাপ এগিয়ে। অর্থনৈতিক বিচারে সমবায়ী মালিকানার কার্যকারিতা নিয়ে অনেক তর্ক উঠতে পারে। কিন্তু এটা সত্য যে, রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একধরনের 'যৌথ খামারের' পক্ষে। এ ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের চিন্তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর 'মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ' চিন্তার মৌলিক মিল দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়ার নয়। বাকশালের সেন্ট্রাল কমিটির প্রথম বৈঠকে কৃষিতে দ্বিতীয় বিপ্লব সম্পর্ক বলতে গিয়ে তিনি বললেন যে, অন্তত নিরীক্ষামূলকভাবে হলেও ৬০ থেকে ১০০টা কো-অপারেটিভ করে দেখা হবে যে এই সিস্টেম আদৌ কাজ করে কিনা :
'আমি জাম্প করতে চাই না। আমি জাম্প করবার মানুষ নই ...। আমি অ্যাডভেঞ্চারিস্ট নই। ... সেই জন্য আমি বলে দিয়েছি, ৬০টা ৭৫ কি ১০০টা কো-অপারেটিভ করবো। এই কো-অপারেটিভ যদি দরকার হয়, সেন্ট্রাল কমিটির এক একজন মেম্বার এক একটা চার্জে থাকবেন। ... ওয়ান্স ইউ আর সাকসেসফুল অ্যাবাউট দিস মাল্টিপারপাস সোসাইটি, দেশের মানুষকে একতাবদ্ধ করা যাবে। বদমায়েশ একদল লোক, জমি সব শেখ সাহেব নিয়ে যাবে বলে তারা প্রপাগান্ডা করে। জমি নেবো না। তোমরা চেষ্টা করবে, একসঙ্গে ফসল উৎপাদন করবে, তোমার শেয়ার তুমি নেবে। ... জমি নেবো না, জমি থাকবে। কিন্তু জমির একটা লিমিট আছে তোমাদের রাখার। আইন হয়েছে, ১০০ বিঘার বেশি রাখতে পারবে না। সেটা আমরা ফলো করবার চেষ্টা করবো এবং আস্তে আস্তে যদি ফ্লাড বন্ধ করতে পারি, সেচের ব্যবস্থা করতে পারি, ফার্টিলাইজার দিতে পারি, নিশ্চয়ই আমরা চিন্তা করবো, আরো কতদূর কী করতে পারি। কেননা, আমার দেশের জমির মধ্যে পার্থক্য আছে। এখন আমি যদি সুনামগঞ্জের জমি যেখানে তিনবার বছরে বন্যা হয়, এক বছর ফসল হয়- নর্থ বেঙ্গলের জমি আর বরিশালের জমি, চিটাগাং হিল ট্রাক্টের জমি। আর অন্য সব জমি এক পর্যায়ে দেখতে চাই তাহলে অসুবিধা হবে। আমার স্টাডির প্রয়োজন আছে। কোন জায়গায় কত পরিমাণে ফসল হতে পারে।' এ ধরনের নিরীক্ষামূলক সমবায়ের চিন্তা রবীন্দ্রনাথের লেখাতেও পাই। ১৯০৮ সালে পাবনা প্রাদেশিক সম্মিলনীর সভাপতির ভাষণে তিনি যৌথ চাষাবাদের প্রস্তাব রেখেছিলেন এবং এই যৌথ পরিচালনায় সাহায্য করার জন্য দেশের গ্রামাঞ্চলকে একেকটা অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র রূপে প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব করেছিলেন। প্রথমে দেবো যৌথ চাষাচাদের ভিত্তিতে সমবায় প্রতিষ্ঠার উদ্ৃব্দতি এবং পরে দেবো গ্রামকে ঘিরে অর্থনৈতিক জীবন সক্রিয় করার বিবরণী। যৌথতা ছাড়া যে সার্বিক গ্রামীণ পশ্চাৎপদতা থেকে মুক্তি নেই এটা ভেবেছিলেন রবীন্দ্রনাথ :
'জোতদার ও চাষা রায়ত যতদিন প্রত্যেকে স্বতন্ত্র থাকিয়া চাষাবাস করিবে ততদিন তাহাদের অসচ্ছল অবস্থা কিছুতেই ঘুচিবে না। পৃথিবীতে চারিদিকে সকলেই জোট বাঁধিয়া প্রবল হইয়া উঠিতেছে; এমন অবস্থায় যাহারাই বিচ্ছিন্ন এককভাবে থাকিবে, তাহাদিগকে চিরদিনই অন্যের গোলামি ও মজুরি করিয়া মরিতেই হইবে। ... অদ্যকার দিনে যাহার যতটুকু ক্ষমতা আছে সমস্ত একত্র মিলাইয়া বাঁধ বাঁধিবার সময় আসিয়াছে। এ না হইলে ঢালু পথ দিয়া আমাদের ছোটো ছোটো সামর্থ্য ও সম্বলের ধারা বাহির হইয়া গিয়া অন্যের জলাশয় পূর্ণ করিবে। ... য়ুরোপে আমেরিকার কৃষির নানা প্রকার মিতশ্রমিক যন্ত্র বাহির হইয়াছে- নিতান্ত দারিদ্র্যবশত সে সমস্ত আমাদের কোনো কাজেই লাগিতেছে না- অল্প জমি ও অল্প শক্তি লইয়া সে সমস্ত যন্ত্রের ব্যবহার সম্ভব নহে। যদি এক-একটি মণ্ডলী অথবা এক-একটি গ্রামের সকলে সমবেত হইয়া নিজেদের সমস্ত জমি একত্র মিলাইয়া দিয়া কৃষিকার্যে প্রবৃত্ত হয়, তবে আধুনিক যন্ত্রাদির সাহায্যে অনেক খরচ বাঁচিয়া ও কাজের সুবিধা লইয়া তাহারা লাভবান হইতে পারে। ... পাটের ক্ষেত সমস্ত এক করিয়া লইলে প্রেসের সাহায্যে তাহারা নিজেরাই পাট বাঁধাই করিয়া লইতে পারে। গোয়ালারা একত্র হইয়া জোট করিলে গো-পালন ও মাখন, ঘৃত প্রভৃতি প্রস্তুত করা সস্তায় ও ভালোমতো সম্পন্ন হয়।'
রবীন্দ্রনাথের দ্বিতীয় উদ্ধৃতিটি গোটা গ্রামজীবনের বিকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাকে ঘিরে। সেখানে তিনি বলছেন যে, প্রতিটি গ্রাম বা কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গড়ে ওঠা 'মণ্ডলী' হবে এক ধরনের Local State. মনে রাখতে হবে, ১৯১৯ সালের মন্টেগু-চেমসফোর্ডের সংস্কারের অধীন প্রস্তাবিত ইউনিয়ন বোর্ডের ১১ বছর আগে রবীন্দ্রনাথ এই প্রস্তাব রাখছেন। পাঠকই বিবেচনা করে দেখুন :
'দেশের সমস্ত গ্রামকে নিজের সর্বপ্রকার প্রয়োজন সাধনক্ষম করিয়া গড়িয়া তুলিতে হইবে। কতগুলো পল্লী লইয়া এক-একটি মণ্ডলী স্থাপিত হইবে। সেই মণ্ডলীর প্রধানগণ যদি গ্রামের সমস্ত কর্মের এবং অভাবমোচনের ব্যবস্থা করিয়া মণ্ডলীকে নিজের মধ্যে পর্যাপ্ত করিয়া তুলিতে পারে, তবেই স্বায়ত্তশাসনের চর্চা সর্বত্র সত্য হইয়া উঠিবে।'
একে Local Self Government না বলে Local Self Governance-এর মডেলই বলা অধিকতর যুক্তিসঙ্গত। কেননা, পরাধীন ভারতবর্ষে রবীন্দ্রনাথ চাননি গ্রামের স্ব-শাসনের ব্যবস্থার মধ্যে সরকার বাহাদুরের অনুপ্রবেশ ঘটুক। Governmentalization বা সর্বত্র সরকারীকরণের বিরুদ্ধে ছিলেন ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো। সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথ Governmentalization-র বিরোধী ছিলেন : পঞ্চায়েতের মধ্যে সরকারের বেনো জল একবার 'ঢুকিলে পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েতত্ব ঘুচিল'- এ রকম সতর্কবাণী তিনি একাধিকবার উচ্চারণ করেছেন তার 'স্বদেশী সমাজ' ও অন্যান্য রচনায়। যা হোক, পাবনা সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে রবীন্দ্রনাথ আরও বলেছিলেন :
'নিজের পাঠশালা, শিল্পশিক্ষালয়, ধর্মগোলা, সমবেত পণ্যভাণ্ডার ও ব্যাংক স্থাপনের জন্য ইহাদিগকে শিক্ষা সাহায্য ও উৎসাহ দান করতে হইবে। প্রত্যেক মণ্ডলীর একটি করিয়া সাধারণ মণ্ডপ থাকিবে, যেখানে কর্মে ও আমোদে সকলে একত্র হইবার স্থান পাইবে এবং সেইখানে ভারপ্রাপ্ত প্রধানেরা মিলিয়া সালিশের দ্বারা গ্রামের বিবাদ ও মামলা মিটাইয়া দিবে।'
দেখা যাচ্ছে, রবীন্দ্রনাথ কয়েকটি গ্রাম নিয়ে মণ্ডলীকে নিছক গ্রাম-সভার একটি প্রাতিষ্ঠানিক পাটাতন বলে ভাবেননি, এমনকি আজকের যুগের 'ইউনিয়ন কাউন্সিল' রূপেও ভাবেননি। তিনি প্রতিটি গ্রাম মণ্ডলীকেই একটি প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ স্ব-শাসিত 'সর্বপ্রকার প্রয়োজন-সাধনক্ষম' করে গড়ে উঠতে দেখতে চেয়েছিলেন। এসব প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন (Institutional development) ছাড়া গ্রামের কৃষকের জীবনের মৌলিক উন্নতি ঘটানো সম্ভব নয়- এই ছিল তার সুচিন্তিত মত। ১৯১৭ সালে অক্টোবর বিপ্লবের পরের লেখাগুলোয় আরও বিস্তৃতভাবে রবীন্দ্রনাথ যৌথ-চাষাবাদ, বহুমুখী সমবায় ও স্বশাসিত গ্রাম-পর্যায়ের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিয়ে লিখেছেন। দুঃখের বিষয়, রবীন্দ্রনাথের কবি-খ্যাতি তার এই গুরুত্বপূর্ণ সাম্যবাদী লেখাগুলোকে এতদিন প্রায় আড়াল করে রেখেছিল। ফলে বাঙালি নীতিপ্রণেতাদের এদিকে বিশেষ নজর পড়েনি। ১৯১৮ সালে লেখা তার 'সমবায়' প্রবন্ধটি পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর নিরীক্ষামূলক মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ ব্যবস্থার কথা মনে করিয়ে দেয়। রবীন্দ্রনাথ কৃষকদের উদ্দেশ করে বলছেন :
'যাহা একজনে না পারে তাহা পঞ্চাশ জনে জোট বাঁধিলেই হইতে পারে। তোমরা যে পঞ্চাশ জনে চিরকাল পাশাপাশি পৃথক পৃথক চাষ করিয়া আসিতেছ, তোমরা তোমাদের সমস্ত জমি হাল-লাঙ্গল গোলাঘর পরিশ্রম একত্র করিতে পারিলেই গরিব হইয়াও বড়ো মূলধনের সুযোগ আপনিই পাইবে। যখন কল-আনাইয়া লওয়া, কলে কাজ করা- কিছুই কঠিন হইবে না। কোনো চাষীর গোয়ালে যদি তার নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত এক সের মাত্র দুধ বাড়তি থাকে, সে দুধ লইয়া সে ব্যবসা করিতে পারে না। কিন্তু একশো দেড়শো চাষী এমন বাড়তি দুধ একত্র করিলে মাখন-তোলা কল আনাইয়া ঘিয়ের ব্যবসা চালাইতে পারে। য়ুরোপে এই প্রণালীর ব্যবসা অনেক জায়গায় চলিতেছে। ডেনমার্ক প্রভৃতি ছোটো-ছোটো দেশে সাধারণ লোকে এইরূপে জোট বাঁধিয়া মাখন পনির ক্ষীর প্রভৃতির ব্যবসা খুলিয়া দেশ হইতে দারিদ্র্য একেবারে দূর করিয়া দিয়াছে। এই সকল ব্যবসায়ের যোগে সেখানকার সামান্য চাষী ও সামান্য গোয়ালা সমস্ত পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে আপন বৃহৎ সম্বন্ধ বুঝিতে পারিয়াছে। এমনি করিয়া শুধু টাকায় নয়, মনে ও শিক্ষায় সে বড়ো হইয়াছে। এমনি করিয়া অনেক গৃহস্থ অনেক মানুষ একজোট হইয়া জীবিকা নির্বাহ করিবার যে উপায় তাহাকেই য়ুরোপে আজকাল কো-অপারেটিভ-প্রণালী এবং বাংলায় 'সমবায়' নাম দেওয়া হইয়াছে। আমার কাছে মনে হয়, এই কো-অপারেটিভ প্রণালীই আমাদের দেশকে দারিদ্র্য হইতে বাঁচাইবার একমাত্র উপায়।'
এই সমবায়ী মালিকানাই বঙ্গবন্ধুর বাহাত্তরের সংবিধানের 'Fundamental Principles of State Policy' অধ্যায়ের ১৩নং আর্টিকেলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। কথাটি ছিল এরূপ : 'Co-operative Ownership, that is Ownership by Co-operatives on behalf of their members & within such limits as may be prescribed by law’। অর্থাৎ, সমবায়ী মালিকানার পরিধি ছিল ব্যাপক- তা যে কোনো খাতেই গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোনো বাধা ছিল না। পরবর্তীকালে এই সমবায়ী মালিকানা বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচিতে ও বাকশালের মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ ধারণার প্রয়োগে আরও সমৃদ্ধ করার প্রয়াস ছিল। সমবায় সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর নিজের প্রচণ্ড উৎসাহ ছিল। ১৯৭২-৭৩ সালে স্বাধীনতার ঊষালগ্নেই গ্রামাঞ্চলে সমবায় নিয়ে নিরীক্ষামূলক কাজকর্ম নিয়ে তার মধ্যে গভীর আগ্রহ দেখা দেয়। এ রকমই একটি নিরীক্ষার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন তৎকালীন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অর্থনীতিবিদ মো. আনিসুর রহমান। এটা ছিল গ্রামকে 'স্বনির্ভর' করার আন্দোলন সম্পর্কিত একটি নিরীক্ষামূলক উদ্যোগ। এ ধরনের উদ্যোগে শুধু গ্রামবাসীরাই উদ্যোগী হয়েছিলেন তাই নয়, গ্রামের স্বনির্ভর কর্মকাণ্ডে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে সম্পৃক্ত হতে পারেন, তারও নতুন উদাহরণ তৈরি হচ্ছিল। ফিরে যাই চুয়াত্তরের জানুয়ারিতে, যখন আনিসুর রহমানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কথোপকথন হচ্ছে গ্রামের উন্নয়নকে ঘিরে, ততদিনে আনিসুর রহমান পরিকল্পনা কমিশনের কাজ ছেড়ে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় ফিরে গেছেন। দু'জনের কথোপকথনের বিষয়বস্তু গ্রাম। আনিসুর রহমানের 'পথে যা পেয়েছি' থেকে উদ্ধৃতি করছি। আনিসুর রহমানকে দেখে বঙ্গবন্ধু সস্নেহে তাকে তার পাশে বসালেন। বললেন, 'এতদিন আসেননি কেন?
আনিসুর রহমান- 'আপনি এত ব্যস্ত মানুষ, খামাখা এসে আপনাকে বিরক্ত করব কেন?'
বঙ্গবন্ধু- 'আপনার গ্রামের কাজ কেমন চলছে?
আনিসুর রহমান-'চলছে একরকম।'
বঙ্গবন্ধু- 'জানেন, আমার একটা আইডিয়া আছে। আমার দুটা গ্রাম আছে, ... এ দুটো আমার নিজের গ্রাম, আমি সেখানে যাই, গ্রামের লোকেরা আসে, আমার কথা শোনে। চলেন এক দিন গ্রাম দুটোতে আমি আর আপনি যাই, আপনি আপনার সব গ্রাম-উন্নয়নের আইডিয়া বলবেন, তারা শুনবে।'
[ক্রমশ]
মন্তব্য করুন