ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

প্রথম প্রদর্শনী

প্রথম প্রদর্শনী

প্রদর্শনীতে অতিথিবর্গের পাশে সৈয়দ ইকবাল [বামে প্রথম]

সৈয়দ ইকবাল

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৩ | ১৭:০২ | আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৩ | ২৩:০২

বড় ক্যানভাসে আঁকা শুরু করতে আমাকে বাধ্য করেছিলেন আমার স্ত্রী শাহানা ইকবাল। নব্বই দশকে আমি ছিলাম বাংলাদেশের প্রথম সারির প্রথম বিজ্ঞাপন কোম্পানি ‘বিটপী’র জ্যেষ্ঠ শিল্পনির্দেশক। শত শত বইয়ের প্রচ্ছদ, শিশু-কিশোর বইয়ের অলংকরণ আর মঞ্চ নাটকের পোস্টার ডিজাইন করতাম। আমার স্ত্রীর খুব ইচ্ছা, শিল্পী বন্ধুদের মতো আমারও ক্যানভাসে আঁকা বড় ছবির প্রদর্শনী উদ্বোধন হবে আর তিনি শাড়ি পরে দরজায় দাঁড়িয়ে দর্শক-অতিথিদের হাতে ফুল দেবেন। 
তখন আমরা সপরিবারে কানাডায় চলে যাচ্ছি। ইমিগ্রেশনের সবকিছু স্ত্রীরই করা। সই করা ছাড়া আমার কাজ নেই। যাওয়ার আড়াই মাস বাকি, হঠাৎ একদিন হন্তদন্ত হয়ে স্ত্রী এসে বললেন, ‘বড় মুশকিল হয়ে গেল। তুমি শিল্পী হিসেবে ইমিগ্রেশন পেয়েছো। যদি তোমার কোনো প্রদর্শনী না হয়ে থাকে, আর্ট ক্যাটালগ না থাকে, তাহলে কানাডায় এয়ারপোর্টে নামতেই ফিরতি প্লেনে আমাদের সবাইকে ফেরত পাঠিয়ে দিতে পারে।’ 
প্রথমে ভাবলাম, ‘ভালোই তো! এমনিতেই আমি দেশ ছেড়ে যেতে চাই না।’ পরে মনে হলো, আমার জন্যে আমার ছোট্ট মেয়ে, খালা ও তার পুত্রদের নিয়ে নায়াগ্রা দেখার ইচ্ছা পূরণ হবে না। স্ত্রীর ইমিগ্রেশন নিয়ে এত লেখালেখি এত পরিশ্রম সব বৃথা যাবে। তখন সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমানের ৬৪/সি গ্রিন রোডের চারতলায় দুই রুম নিয়ে স্টুডিও বানিয়ে ক্যানভাসে ছবি আঁকতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। পাশে থাকলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভালো মানুষ শিল্পী বাদল চক্রবর্তী। আজকের স্বনামধন্য স্থপতি ও সৃজনশীলতার সুপারম্যান এনামুল করিম নির্ঝরের ‘যোজন’ গ্যালারি ছিল সেন্ট্রাল রোডে। শিল্পী নাজিব তারেক নিজে প্রদর্শনী পিছিয়ে জায়গা করে দিলেন আমাকে। শ্রদ্ধেয় হাশেম খান, রফিকুন নবী– প্রায় সব শিল্পী এলেন। স্ত্রী তখন বিশ্বব্যাংক ঢাকায় কর্মরত, তাই মিশন চিফ পিয়ারে ল্যান্ডাল মিলস এলেন। এলেন ডেনমার্কসহ কয়েক দেশের রাষ্ট্রদূত। আমার বন্ধু সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কবিরা তো ছিলেনই। বঙ্গবন্ধুর শেষ সকাল– ‘মর্নিং অফ ফিফটিন আগস্ট’ নামে সাতটি ছবির সিরিজ ছিল। ক্যানভাসজুড়ে একটি কালো মোটা ফ্রেমের চশমা পরে যাচ্ছে, একটি অতিকায় কালো পাইপ পরে যাচ্ছে। এই ছিল বিষয়। মাত্র এক ঘণ্টায় সাতটা ছবি কাড়াকাড়ি করে বিক্রি হয়ে গেল। অন্য ছবিগুলোও লাল টিপ পরতে লাগল দ্রুতই। বিটিভিতে খবর হলো, দৈনিক পত্রিকাগুলোতে বড় কাভারেজ। প্রত্যেক সন্ধ্যায় গ্যালারিতে সুন্দরীদের মেলা! দুঃখ হলো, কেন এতদিন বড় ছবির প্রদর্শনী করিনি। 
বাঘ যেমন রক্তের স্বাদ পেয়ে গেলে আর ছাড়ে না, আমারও হলো তাই। কানাডার মন্ট্রিয়লে এসে এক বছরের মাথায় দ্বিতীয় প্রদর্শনী করলাম। সেটিও জমজমাট হলো। দুই পকেট ভর্তি ছবি বেচা ডলার। আজ দেশে-বিদেশে মোট ১৮টি একক প্রদর্শনী হয়ে গেছে। বিশ্বজুড়ে ৭২টি যৌথ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ। এর বাইরে যখন দেখি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, কানাডার রম-রয়্যাল অন্টারিও মিউজিয়াম, কানাডার জাতীয় পার্লামেন্ট, অটোয়া, টরন্টো ইউনিভার্সিটি পার্মানেন্ট গ্যালারি সেইন্ট জর্জ ক্যাম্পাস ছাড়াও বিশ্বজুড়ে অগণিত মানুষের সংগ্রহে আমার ছবি রয়েছে, অনুপম ভালো লাগা কাজ করে। u

আরও পড়ুন