মানুষের কবিতা ও প্রকৃতি
শিল্পকলা

চিত্রকর্ম :: আলফা বেগম
দেওয়ান আতিকুর রহমান
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৩ | ১৭:১৪ | আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৩ | ২৩:১৪
প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে চারুকলায় পড়াশোনার পাট চুকালেও ছিল না নিরবচ্ছিন্ন শিল্পচর্চা। হয়তো ব্যক্তিজীবন যাপনের যে বাস্তবতা তা ঠিক অনুকূল ছিল না তাঁর। কিন্তু মানসিকভাবে শিল্প থেকে যে বিচ্ছিন্ন হননি, সেটা প্রমাণ হয় ৭৩ বছর বয়সে এসে প্রথম প্রদর্শনী করার আগ্রহ থেকেই। বলছি শিল্পী আলফা বেগমের কথা।
১৯৬৬-৬৭ সালে চারুকলায় ভর্তি হয়ে পাস করে বের হন ১৯৭২-এ। তারপর শিল্পসাধনায় দীর্ঘ বিরতি। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু শিল্পচর্চা করলেও ২০০৫ সাল থেকে আঁকছেন নিয়মিত।
৪ নভেম্বর, ২০২৩, শনিবার বিকেল ৫টায় ধানমন্ডির সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে শুরু হচ্ছে শিল্পী আলফা বেগমের প্রথম একক প্রদর্শনী– Poems of man and nature। চলবে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি সবার জন্য থাকবে উন্মুক্ত। মোট ৪৪টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে এই প্রদর্শনীতে। শিল্পকর্মগুলোর বেশির ভাগই তেলরঙে আঁকা। এ ছাড়া রয়েছে জলরং, ছাপচিত্র মাধ্যমে আঁকা উডকাট, মনোপ্রিন্ট ও কোলাগ্রাফ। ছবি আঁকার বিষয় হিসেবে শিল্পী বেছে নিয়েছেন মানুষ ও প্রকৃতি। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন। বিশেষ করে নারী ও নদীকেন্দ্রিক মানুষের কর্মযজ্ঞ। প্রকৃতি এবং মানুষের প্রতি শিল্পীর ভালোবাসা প্রকাশ পায় তাঁর প্রদর্শনীটির নামকরণেই।
জলরং মাধ্যমের মাত্র ৫টি কাজ স্থান পাবে প্রদর্শনীটিতে। যদিও শিল্পীর সরল স্বীকারোক্তি, ছাপচিত্রে হাতেখড়ি থাকলেও জলরঙে তিনি বেশি ছবি আঁকেননি। কিন্তু তাঁর জলরং মাধ্যমে আঁকা শিল্পকর্মগুলো বিষয় নির্বাচন ও অঙ্কনশৈলীতে অনেক সহজ-সরল। জলরঙের স্বচ্ছতা, পারস্পেকটিভের সরলীকরণ জলরঙে আঁকা ফুল ও ল্যান্ডস্কেপগুলোকে স্বতঃস্ফূর্ত করে তুলেছে।
এই প্রদর্শনীতে ছাপচিত্র মাধ্যমের উডকাটের সংখ্যা থাকবে ৫টি। উডকাটগুলোর বিষয় গ্রামীণ নারীদের দৈনন্দিন গৃহস্থালির কাজ, নদী পারাপার, নদীতীরের নৌকা। কালো রঙের সিংগেল ইম্প্রেশনের পাশাপাশি একাধিক ইম্প্রেশনের রঙিন ছাপচিত্র নিয়েও শিল্পী কাজ করেছেন। তাঁর এসব কাজের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ড্রইং, বিশেষ করে ফিগার ড্রইং। একাডেমিক ধারার বাইরে থেকে স্বতঃস্ফূর্ত লাইনগুলো দেখলেই মনে হবে ফিগারের পারফেকশনের প্রতি শিল্পী খুব বেশি মনোযোগী না হয়ে বরং স্বাধীনভাবে আঁকার আনন্দটাই উপভোগ করতে চেয়েছেন।
প্রদর্শনীতে সবচেয়ে বেশি থাকছে শিল্পীর তেলরঙে আঁকা কাজ। তেলরঙের ২৬টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে প্রদর্শনীটিতে। তবে পেইন্টিংয়ের সবচেয়ে বনেদি মাধ্যম তেলরঙের এ কাজগুলোকে অবশ্য খুব সাধারণই মনে হবে। অনেকটা শখের বশে আঁকা শিল্পীর কাজের মতো। যদিও এর মধ্যে কয়েকটা কাজ রয়েছে ব্যতিক্রম। এখানেও যথারীতি বিষয় থাকছে মানুষ ও প্রকৃতি। রং, টেক্সচার কিংবা বিষয় নিয়ে খুব ভাবনাচিন্তা কিংবা এক্সপেরিমেন্ট না থাকলেও সার্বিকভাবে শিল্পের সঙ্গে থাকার শিল্পীর যে ঐকান্তিক ইচ্ছা, তা প্রকাশিত তাঁর প্রতিটি কাজেই।
শিল্প সাধনার বিষয়, চর্চারও। দীর্ঘ সময় শিল্পচর্চায় ছেদ পড়ায় তাঁর শিল্পকর্মগুলোতে খুব গভীর বিষয়-বৈচিত্র্য কিংবা শৈল্পিক টেকনিক অনুপস্থিত ঠিকই, কিন্তু তাঁর ছবির প্রধান ঐশ্বর্য বোধহয় ছবিগুলোর শিশুসুলভ সরলতা। শিল্পের প্রতি ভালোবাসা। u