মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ 'পথ চলাতেই আনন্দ'। বইটি পড়ে পাঠক নতুন দিগন্তের দেখা পাবেন। গ্র্রন্থের ভেতর বাংলা এবং বিশ্বসাহিত্যের অসংখ্য গ্রন্থের উল্লেখ আছে। কিছু ক্ষেত্রে উপন্যাসের কিংবা কবিতার অংশবিশেষের উদ্ধৃতি আছে। বিখ্যাত অনেক চলচ্চিত্র নিয়ে নিজের অনুভূতিও উপস্থাপিত হয়েছে।
'পথ চলাতেই আনন্দ' বইটির লেখক মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ পেশাগত সাফল্যের অধিকারী এবং বর্তমানে এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ব্যক্তিগত জীবনে পরিবারকেন্দ্রিক একজন মানুষ। ভ্রমণ পছন্দ করেন বরাবর। তাই মাঝে মাঝেই বেরিয়ে পড়েন অজানার উদ্দেশে। বইটিতে লেখকের জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা অত্যন্ত সাবলীলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। পথ চলাতেই আনন্দ' পাঠ করলে পাঠক দেখতে পাবেন, বিভিন্ন প্রয়োজনে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন পথে-প্রান্তরে। কখনও কেনিয়ার মাসাই মারা, আবার কখনও-বা বার্লিনে। প্রতিটি পর্বে পাঠক নতুন অভিজ্ঞতার সন্ধান পাবেন।
মোট পাঁচটি পর্বে প্রবন্ধ-নিবন্ধ মিলে 'পথ চলাতেই আনন্দ' গ্রন্থে মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ পাঠককে তার জীবনের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে গেছেন। যেখানে পাঠক বইটি পড়তে পড়তে কোনো প্রান্তে নিজেকেও খুঁজে পাবেন নিঃসন্দেহে।
প্রথম পর্বের শিরোনাম 'ভ্রমণ'। যেখানে কোয়ারেন্টাইন প্রহর ও বিশ্বের বিভিন্ন শহরে লেখকের ভ্রমণস্মৃতি রয়েছে। লেখক এই করোনাকালে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যদের গ্রঙ্গে মিলিত হতে। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর লেখককে বিধি মোতাবেক দুই সপ্তাহের জন্য হোটেলে নিভৃতবাস (কোয়ারেন্টাইন) করতে হয়। এই নির্জনকক্ষে বাসকালে লেখক বলে যান তার জীবনের কথকতা।
সিডনির হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে বসে মনের দিগন্তে উড়াল দিয়েছেন। সেখানে ১৪ দিন হোটেলে একাকী অবস্থানের বিবরণ আছে 'কোয়ারেন্টাইনের প্রহরগুলো' রচনায়। ভ্রমণপর্বেই আছে কেনিয়ার মাসাইমারা ন্যাশনাল রিজার্ভে সাফারির চমৎকার সব বর্ণনা। জিরাফ, বুনো মহিষ, জেব্রা, হরিণ, জলহস্তী, কালো গন্ডার এমনকি সিংহ আর চিতাবাঘ দেখার রোমহর্ষক গল্প। লিখেছেন ১৯৮৯ সালে ছাত্রজীবনে ভূস্বর্গ কাশ্মীরসহ ভারতের বিভিন্ন শহর ভ্রমণের কথা। যে আত্মীয়া ভ্রমণের অর্থ জোগাড়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ভোলেননি। আছে ২০১৭ সালে এক কর্মশালায় জার্মানির বার্লিন শহরে গিয়ে সেখানে পরিপাটি জাদুঘর দেখার গল্পও। দ্বিতীয় পর্বে পরিবার ও বন্ধুদের স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে নিজের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ পেয়েছে। এখানে লেখক যেন নিজের সঙ্গে নিজেই কথা বলেছেন। এসেছে তার ছোট খালার জীবনসংগ্রাম, চাওয়া-পাওয়ার হিসাবের কথা। তৃতীয় পর্বে ছিল স্মৃতিকথা। একটা লেখার শিরোনাম- 'স্মৃতিতে আম-দুধ, আহ্‌'। এ পর্বেই আছে ছুটির দিনে একটু বেশি সাইকেল চালিয়ে চনমনে হওয়ার অনুভূতির কথা। চতুর্থ পর্বের শিরোনাম ব্যক্তিগত অনুভূতি। ব্যক্তিগত কথামালায় মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন কাব্যিক ভাষায়। পঞ্চম পর্বে এসেছে লেখকের সমাজ ভাবনা।
মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে চিন্তিত লেখকের বক্তব্য প্রকাশ পেয়েছে। তবে সমাজ ও দেশ নিয়ে তার ভাবনা এবং দায়িত্ববোধের কথা তিনি ব্যক্ত করেছেন গ্রন্থের পঞ্চম পর্বে।
বলাবাহুল্য, লেখকের জীবনের অভিজ্ঞতা বিপুল। তিনি ভ্রমণ করেছেন বিশ্বের ২৩টি দেশ। তার কর্মজীবনের অনেকটা সময় কেটেছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ায়। তার লেখনীতে সেই অভিজ্ঞতা ফুটে উঠেছে সুনিপুণভাবে।
এছাড়া লেখক যেসব বিষয় এ গ্রন্থে একটির পর একটি প্রবন্ধে বর্ণনা করেছেন তা হয়ে উঠেছে পুরো জীবনের বর্ণনা। সমাজ ও দেশ নিয়ে তার ভাবনা এবং দায়িত্ববোধের কথা তিনি ব্যক্ত করেছেন অত্যন্ত সহজ ভাবে যার প্রভাব পাঠকের মনে দীর্ঘস্থায়ী হতে বাধ্য। তার এই পথযাত্রার ভিন্ন ভিন্ন গল্পগুলোকে একত্রে মালা গাঁথা হয়েছে এক বইয়ের মলাটে। বইটি প্রকাশ করেছে 'রুটস'।