আবদুল মান্নান সৈয়দ সব্যসাচী লেখক, সৃজনশীল ও মননশীল উভয় সাহিত্যে তাঁর অনুসন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গি বোদ্ধা পাঠকদের সহজেই আকৃষ্ট করে। বাংলা ছোটগল্পে তাঁর স্বতন্ত্র শিল্পচিন্তা ও বিশেষত্ব স্পষ্ট। উপন্যাস রচনা তাঁর অন্যতম শিল্পমাধ্যম। ষাটের দশক থেকে মান্নান সৈয়দ উপন্যাস লিখে গেছেন। আবহমান বাংলা উপন্যাসের ধারায় তিনি সবার চেয়ে একটু ব্যতিক্রম। তাঁর কাহিনি পরিকল্পনা, চরিত্র সৃষ্টি, ভাষার উপযোগিতা, বাস্তবতা, জীবনবোধ ও সংলাপ পাঠকের পাঠ অভিজ্ঞতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। বিশেষত তাঁর ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাসগুলো বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। 'পোড়ামাটির কাজ', 'উৎসব', 'শ্রাবস্তীর দিন রাত্রি', 'একাত্তর', 'ক্ষুধা প্রেম আগুন' ইত্যাদি।
'একাত্তর' মান্নান সৈয়দের আরেকটি ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাসটিতে মুক্তিযোদ্ধা শওকতই উপন্যাসের নায়ক। শওকত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র। আগরতলায় সে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের কাজে নিয়োজিত অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা হারুনের মাধ্যমে মালতির সঙ্গে প্রথমে পরিচয় ও পরে প্রণয়াবদ্ধ হয়। নায়িকা মালতির ভালোবাসা শওকতের কর্তব্যবোধে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারেনি। লেম্বুছড়া ক্যাম্পে যাবার আগে মালতির সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা হয় শওকতের। বিদায়ের ক্ষণে শওকত মালতিকে বলে- 'মালতি ট্রেনিং শেষ হওয়ার পর সরাসরি যুদ্ধ করতে হবে আমাদের। আর যদি না ফিরি, তাহলে এই শেষ দেখা। কিন্তু দেশ স্বাধীন করে যদি ফিরে আসি তখন কিন্তু তোমাকে ডাকাতি করে নিয়ে যাব।' লেম্বুছড়া ক্যাম্পে ক্যাপ্টেন কে. পি. সিং, ক্যাপ্টেন শর্মা, মেজর মাহমুদের প্রশিক্ষণের পর সরাসরি শওকত যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দেশ স্বাধীন হলো। মালতির ভালোবাসা একজন মুক্তিযোদ্ধাকে শক্তি জুগিয়েছে। দেশ স্বাধীন হবার পর মালতির খবর নেওয়া আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। খালাতো বোন মনিকেই বিয়ে করে শওকত সংসারী হয়। শেষ পর্যন্ত স্বপন আর স্বপ্না তথা শওকত ও মালতির স্বপ্ন জগতের দুই তরুণ-তরুণীই থেকে যায়। যুদ্ধের কালো ঝড়ো দিনগুলোতে ওরা ফুটেছিল দুটি লাল গোলাপের মতো। ঝরে গেছে তারপর। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত এ উপন্যাসে দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করার মন্ত্রে দুই তরুণ-তরুণীর প্রবল আবেগে বহমান প্রেমের ট্র্যাজিক পরিণতি পাঠক হৃদয়কে আমূল বিদ্ধ করে।
আবদুল মান্নান সৈয়দের কাহিনি পরিকল্পনা, গল্প তৈরি, সংলাপ ও জীবনবোধের সুখ্যাতি সূক্ষ্ণ বিশ্নেষণ স্মরণ করিয়ে দেয় তাঁর অনুসন্ধানী চরিত্রকে। কাহিনি উপযোগী ভাষা ও সংলাপ, বুদ্ধিভিত্তিক মুনশিয়ানার জোরে তাঁর উপন্যাস পাঠককে কথাসাহিত্যের এক নতুন জগতের সন্ধান দেয়।
বাংলা সাহিত্যের যে শাখায়ই তিনি চর্চা করেছেন, সাফল্য ও কীর্তি ধরা দিয়েছে অবলীলায়। বলা হয়েছে এদেশে তার মতো পরিশ্রমী লেখক নেই। যে কোনো লেখার মধ্যেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন। প্রচ তোলপাড় করা শক্তি নিয়ে বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। বাংলা কবিতায় তিনি যুক্ত করেছিলেন পরাবাস্তববাদী দিগন্ত। তার উদ্ভাবনী শক্তি ও ব্যঞ্জনা সৃষ্টি তার ভাষাকে করে তুলেছে ব্যতিক্রমী।
প্রশ্ন
১. 'একাত্তর' উপন্যাসটি ইতিহাসের কোন প্রেক্ষাপটে লেখা?
২. আবদুল মান্নান সৈয়দের কোন বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল?
৩. জীবনানন্দ দাশকে আবদুল মান্নান সৈয়দ কী অভিধায় আখ্যায়িত করেছিলেন?
কুইজ ২১-এর উত্তর
১। ১৯৬৩ সালে
২। ১৯৮৩ সালে
৩। উপন্যাসের মূল চরিত্র 'তাতারী'

কুইজ ২১-এর জয়ী
ধীমান হালদার অংকন
দাউদ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, যশোর।

ইয়াসিন মামুন
লোহাগড়া, নড়াইল।

ফারিহা ইসলাম ঝুমু
বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ, বাগেরহাট।
নিয়ম
পাঠক কুইজে অংশ নিতে আপনার উত্তর পাঠিয়ে দিন ২৪ আগস্ট মঙ্গলবারের মধ্যে কালের খেয়ার ঠিকানায়। পরবর্তী কুইজে প্রথম তিন বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে। বিজয়ীর ঠিকানায় পৌঁছে যাবে পুরস্কার।