ক.
একটা জীবন তার কাটলো একটা গানে। ঘুরেফিরে একটাই গান সে গাইলো বিগত চল্লিশটা বছর। পুরো গান নয়, তিন লাইন মাত্র! তারপরই তার গলা ধরে আসতো, চোখে জল জমে... আর গাওয়া হতো না। একদিন তো এশার নামাজের মোনাজাতেও এই গান গেয়েছে সে। তারপর তওবা পড়েছে একশবার। প্রিয় গান? না। তবে? কী জানি! এই প্রথম, বিগত ত্রিশ বছরের মধ্যে, গানটা অসহ্য লাগছে!
খ.
কেউ বলতো ববিতার মতো তার চোখ! কেউ বলতো অপর্ণা সেনের মতো হাসি। কী স্টাইলটাই না করতো সে তখন! সেই ১৯৭৩ সালে, মেট্রিক পরীক্ষায় ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছিল বলে আব্বা তাকে সত্তর টাকা দিয়ে জুতো কিনে দিয়েছিলেন। পুরো বংশের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই প্রথম ফার্স্ট ডিভিশন। কম কথা নাকি! ঢাকা থেকে এনেছিলেন মখমলের জামার কাপড়। একদিন দল বেঁধে বান্ধবীরা সেই স্যান্ডেল আর মখমলের কাপড় দেখতে এসেছিল। রূপসী আর মেধাবী দুই মিলে বেশ একটা ডাঁট ছিল তার। কলেজের প্রথম বর্ষে উড়ো চিঠিতে ভরে উঠতো ব্যাগ। বাড়ি ফিরে লুকিয়ে চিঠি পড়তো আর বানান ভুল দেখে ভ্রূ কুচকাতো ঠিক ববিতার মতো ভঙ্গিতেই।
সেকেন্ড ইয়ারে ওঠার সময়, শেষ ফাইনাল পরীক্ষার আগের দিন সন্ধ্যায় জীবনের মোড় ঘুরে গেল তার। সেদিন অফিস থেকে ফিরবার পথে আব্বা গাড়িচাপা পড়ে প্রাণ হারালেন। আব্বা চেয়েছিলেন ব্যারিস্টার হবে তার মেয়ে। পড়ালেখা বন্ধ হওয়া বা সংসারে অভাব- এর কোনোটাই কিন্তু হয়নি। আব্বা যথেষ্ট সম্পত্তি রেখে গেছেন। বড় দুই ভাই আর আম্মা মিলে সংসারের হাল ধরলেও আব্বার অভাব সে মানতে পারেনি সহজে। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার আগের কয়েক মাস রীতিমতো বিছানায় কেটেছে। পরীক্ষা দেবেই না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে যখন, তখন আবারও দল বেঁধে বান্ধবীরা এলো। সারাটা দিন কতভাবে বোঝালো। বড় ভাইয়েরা বললো, আব্বার স্বপ্ন পূরণ করবি না তুই? আব্বার প্রতি এই তোর ভালোবাসা?
আব্বার কথা ভেবেই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রাজি হলো সে। ততদিনে বেশ দেরি হয়ে গেছে। ভাইয়েরা ঠিক করলো, কলেজের ইংরেজির স্যারের বাসায় প্রাইভেট পড়তে পাঠাবেন। বান্ধবীরাও সাহায্য করবে যথাসাধ্য। সেই সময়, স্যারের বাসা থেকে পড়া শেষ করে হাঁটতে হাঁটতে বড় রাস্তার মুখে এসে রিকশা নিতে হতো। সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকতো সে। প্রতিদিন। প্রতিটা দিন।
কয়েকদিন রিকশা নিয়ে পিছু পিছু এলো। কয়েকদিন কোনো কথা না বলে হাতে একটা খাম ধরিয়ে দ্রুত হেঁটে গেল।
চিঠিতে একটাও বানান ভুল ছিল না। ভ্রূ কুচকে যায়নি তার। আর কী আশ্চর্য! সে আব্বার কথাও লিখতো চিঠিতে। লিখতো, 'তোমার কষ্টগুলো আমাকে দাও, দেবে?' এসব চিঠির কথা, রিকশা নিয়ে পিছু পিছু আসবার কথা বড় ভাইদের বলেনি সে। ছোট বোনকে লুকিয়ে আলমারিতে কাপড়ের ভাঁজে রেখেছে চিঠিগুলো।
আব্বা চলে যাবার পর সেই চরম দুঃখের দিনে যখন তার চুলও আঁচড়াতে ইচ্ছে করতো না, অব্যবহূত কাজলে যখন সাদা সাদা পাতলা স্তর জমে উঠছিল সেই সময় সে আবারও ব্লেড দিয়ে কাজলের মুখ কাটতে শুরু করলো, চুলের দুই পাশে দিল দুই বাহারি ক্লিপ।
গ.
দুই বছরের সিনিয়র তার প্রেমিক। ডিগ্রি পাস করে ওকালতি পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রেমিকের বাবা শহরের নামকরা উকিল। সেও বাবার মতোই উকিল হবার স্বপ্ন দেখে। আর, সে দেখতে রাজপুত্রের মতো! তার গায়ের রঙ, চুল, চোখ আর তার ইংরেজি উচ্চারণ... কোথাও এতটুকু খুত নেই। তারও তো স্বপ্ন ব্যারিস্টার হবার। উকিল আর ব্যারিস্টারের যৌথ জীবন হবে একদিন। শুধু অপেক্ষা! দু'জনের পড়ালেখা শেষ হলেই জীবন তারা হাতের মুঠোয় ভরে নেবে।
ঘ.
ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার আগে মাত্র তিনবার দেখা করেছিল তারা। তাতেই যা হবার হয়ে গেছে। বড় ভাইয়া জেনে গেছেন সব। ঠাস ঠাস করে দুই গালে চড়ও মেরেছেন। আম্মা মাঝখানে না দাঁড়ালে আরও বেশি কিছু হয়ে যেত। বড় ভাই চিৎকার করে শুধু বলেছিলেন, আম্মা আপনি জানেন না, ছেলেটার পরিবারের কী ভয়ংকর অবস্থা!
সে তখন বিড়বিড় করে বলেছিল, 'কচু জানিস তুই ভাইয়া!'
পরীক্ষা তখন দোরগোড়ায়। প্রেমিকের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ভাইয়া স্যারের বাসায় নিয়ে যান, নিয়ে আসেন। আম্মা পড়ার টেবিলের পাশে বসে থাকেন। বান্ধবীরা কেউ বাসায় এলেও রুম থেকে যায় না ছোট বোনটা। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা শুরু হয়। ভাইয়ারা পালা করে পরীক্ষার হলে নিয়ে যান, নিয়ে আসেন। তবু, শেষ পরীক্ষার দিন সে ভাইয়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায় প্রেমিকের সঙ্গে। এবং ঠিক সাড়ে আট মাস পরে ফিরেও আসে। গর্ভে তার সন্তান।
ঙ.
শহরের নামকরা উকিলের ছেলে, তার প্রেমিক তাকে অসম্মান করেনি। রক্ষাও করেনি। যেহেতু সে নিজেও তখন ওকালতি পড়তে শুরু করেছিল কেবল, যেহেতু তার নিজের কোনো আয় রোজগার ছিল না, যেহেতু তার নামকরা বাবা আরও দুটো বিয়ে করেছিল, যেহেতু সে ছিল বড় পুত্র, যেহেতু তার মা ভেবেছিল, বড় পুত্রও নামকরা উকিল হলে অন্তত তার সতীন থাকার যন্ত্রণা কিছুটা লাঘব হবে, যেহেতু তারা ছিল অনেক ভাইবোন, যেহেতু তার বাবা নিয়মিত তাদের যথেষ্ট টাকাপয়সা দিলেও বাড়িতে কম আসতেন...সকল হেতুর কারণ নিয়ে প্রেমিক বা স্বামীর মা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। সাড়ে আট মাসের মধ্যে সম্ভবত মাত্র আট দিন তিনি স্বামীর কাছে ঘুমোতে পেরেছেন! তাতেই যখন তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েছেন স্বামীর মা মানে, শাশুড়ির রাগ বেড়েছে শতগুণ! গর্ভপাত ঘটাতে চেয়েছেন। না খাইয়ে রেখেছেন। আর দিনরাত অকথ্য গালাগাল তো চলেছেই।
না, স্বামী তাকে মারেনি। গাল দেয়নি। মায়ের ব্যবহারের প্রতিবাদও করেনি। তার জন্যে বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও করেনি। লুকিয়ে একটা ফল কি একটা ডিমও এনে দেয়নি। এরকম একদিনে তার মনে হয়েছে, বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারবে তো?
চ.
মারাত্মক অপুষ্টি ও কম ওজন নিয়ে একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেয় সে। আম্মা আর ভাইয়েরা তার অযত্ন করেননি। বরং আগলে রেখেছেন আগের মতো ভালোবাসা দিয়ে। বাড়ির সবচেয়ে ভালো রুমটাতে তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাচ্চার জন্য যা কিছু দরকার সব আয়োজন করা হয়েছে। মনে হয়েছে, মাঝখানের এই সাড়ে আট মাসে কিছুই যেন ঘটেনি। শুধু শিশুটির উপস্থিতিই যেন জানান দিতে চেয়েছে বহুকিছুর!
স্বামী আসেনি। সন্তানের মুখ দেখেনি। তাদের আনুষ্ঠানিক কোনো বিচ্ছেদও হয়নি।
সেই সময়, মেয়েকে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে একদিন সে গুনগুন করে গেয়ে উঠেছিল, চন্দন পালঙ্কে শুয়ে একা একা কী হবে/ জীবনে তোমায় যদি পেলাম না...
এইটুকুই। গানের আর কোনো লাইন সে গাইতেই পারে না। গলা ধরে আসে...
ছ.
ভাইদের চাপে আবারও লেখাপড়া শুরু করেছে সে। আম্মা আর ছোট বোনের কাছে বাচ্চা রেখে ডিগ্রি পরীক্ষা দিয়েছে। পিটিআই পাস করেছে। সরকারি প্রাইমারি স্কুলে চাকরি পেয়েছে। ছোট বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় দুই ভাই বিয়ে করেছেন। তাদের বাচ্চাকাচ্চা হয়েছে। সংসারে বাচ্চাসহ ননদ থাকলে অশান্তি হতে পারে ভেবে আম্মা দুই ভাইকে আলাদা করে দিয়েছেন। ছোট বোনটা বিয়ের পর থেকেই ঘোর সংসারী। মেয়ে আর আম্মাকে নিয়ে তার জীবন।
স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে নতুন করে সংসার করবার প্রস্তাব বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে সে। মেয়েকে নিয়ে নতুন সংসারের চিন্তায় ভয় লাগে তার।
স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়নি। দেখা হয়েছে দুবার। লুকিয়ে, একা একা। বিয়ে করেনি সেও। ব্যর্থ উকিল হয়েছে। একবারও বলেনি, ফিরে এসো। একবারও পকেট থেকে চকলেট বের করেনি মেয়ের জন্যে। একবারও মেয়ের ছবি দেখতে চায়নি। একবারও জিজ্ঞেস করেনি, কোন ক্লাসে পড়ে সে।
জ.
মেয়েটা তারই মতো মেধাবী। সুন্দরীও। নানির চোখের মণি। খালা-মামাদেরও আদরের। কোনো বিরতি ছাড়াই সে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পাস করে ফেলে। মামারা তার জন্যে সুপাত্র খোঁজেন। পেয়েও যান। ধুমধাম করে যখন বিয়ের আয়োজন শুরু হয়, তখনই পাত্রের বাড়ি থেকে মেয়ের পিতার খোঁজ জানতে চায়। তখনই মেয়েটি বলে, 'বিয়েতে আব্বু উপস্থিত না থাকলে শ্বশুরবাড়িতে অশান্তি হতে পারে।' সেই প্রথমবার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে তার স্বামী শ্বশুরবাড়িতে আসে। শাশুড়ি ছাড়া আর কেউই তার সঙ্গে তেমন কথা বলেন না। ছোট বোনটা বিদ্রুপের সুরে বলে, সালামালাইকুম দুলাভাই!
আত্মীয়স্বজন বিস্ময় নিয়ে দেখে, চামড়া কুচকে যাওয়া, মাথায় টাক এবং সামনের নিচের পাটির দুটো দাঁত পড়ে যাওয়া একজন মানুষ কেমন আলগা স্পর্শে মেয়েকে বিদায় দিচ্ছে। তারপর মেয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে যাবার দুই ঘণ্টা পরে কাউকে কিছু না বলেই সে চলে যায়।
ঝ.
আরও দুই বছরের মধ্যে চারটা ঘটনা পরপর ঘটে।
প্রথম খবর আসে তার স্বামীর মায়ের মৃত্যু হয়েছে।
মেয়ে এবং মেয়েজামাই আমেরিকার ভিসা পেয়েছে।
উনষাট বছর বয়েস হওয়ায় স্কুল থেকে তার অবসর গ্রহণের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
এবং
তার আম্মা কোনো অসুস্থতা ছাড়াই ঘুমের মধ্যে মারা যান।
ঞ.
হঠাৎ করেই কেমন একা বোধ হয় তার। চাকরির ব্যস্ততা নেই, ঘরে আম্মা নেই, মেয়েজামাইকে আপ্যায়নের দায়িত্ব নেই। আছে কেবল শুয়ে শুয়ে টিভি দেখা। সারাদিন বেশি সাউন্ড দিয়ে টিভি ছেড়ে রাখে, মনে হয়, কত লোক কথা বলছে ঘরে! তারপর নিজেরও খুব ইচ্ছে হয় কথা বলতে। যখনতখন মেয়েকে ফোন করে।
বাংলাদেশ আর আমেরিকার সময়ের ব্যবধান মাথায় থাকে না। অবসরের টাকা পেতে বিলম্ব হতে থাকে। পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে জমিজমা পেয়েছে সে। কিন্তু নগদ টাকা তো তেমন নেই। স্কুলের বেতনের টাকায় মেয়েকে পড়িয়েছে, নিজের বাজার খরচ মিটিয়েছে। তারওপর বয়েস বাড়তে বাড়তে ওষুধের খরচ বেড়েছে।
অবসর নেওয়ার পর থেকে মেয়ে প্রতি মাসে ভালো অঙ্কের টাকা পাঠায়। মেয়েজামাই খোঁজ নেয় আলাদা করে। একাকিত্ব ছাড়া সেই অর্থে বলা যায়, কোনো সমস্যা নেই তার। আর যখনই একা লাগে, তখনই গুনগুন করে গান গান...চন্দন পালঙ্কে শুয়ে একা একা কি হবে/ জীবনে তোমায় যদি পেলাম না। ঠিক তখন তখনই মেয়েকে ফোন করতে ইচ্ছে করে। আমেরিকায় হয়তো তখন রাত তিনটা বাজে!
ট.
'নানু নেই। এত বড় বাসাটায় শুধু বুয়াকে নিয়ে তুমি একা থাকো। আমার চিন্তা হয়। দাদি মারা যাবার পর আব্বুও একা। চাচা-ফুফুরা কেউ তার দিকে খেয়াল নেয় না। আব্বুর সাথে প্রায়ই ফোনে কথা বলি আমি। অনেক কান্নাকাটি করে সে। বারবার স্যরি বলে। দেখো, তোমার তো বয়েস হয়েছে, এই বয়সে দুজন গল্প গুজব করবে, বেড়াতে যাবে। তাছাড়া, স্বামীর সেবা করাটা তোমার দায়িত্ব। কোনোদিন তো সেই সুযোগ পাওনি। আমি তোমাদের দুইজনের খরচ পাঠাবো। আব্বু তোমার কাছে এসে থাকবে। মামারাও পারমিশন দিয়েছেন। খালামণিরও আপত্তি নেই। টাকা যা লাগে আমি দেবো।'
ঠ.
বিকেলবেলা একটা কালো ট্রলি নিয়ে আসে সে। চুপচাপ বসে থাকে। চুকচুক করে চা খায়। ভাত খায়। বাথরুমে গিয়ে গলা খাকাড়ি দিয়ে ব্রাশ করে। প্রস্রাব করে ফ্লাশ করতে ভুলে যায়। রাত বাড়ে। তারা দু'জন পাশাপাশি শুয়ে থাকে। গভীর রাতে আমেরিকা থেকে মেয়ে ভিডিও কল দেয়। এই স্বর্গীয় দৃশ্য দেখতে চায় সে। দেখে, আর 'হাসো, হাসো, স্মাইল' বলে ছবিও তোলে।
ড.
স্বামীর কাছে তাকে ঘুমোতে দেয়নি শাশুড়ি। মাত্র আট দিন একসঙ্গে রাত কাটিয়েছে তারা। ওই আটটা রাত দরজার বাইরে গজগজ করতো শাশুড়ি। স্টিলের গ্লাস ছুঁড়ে মারতো মেঝেতে। অহেতুক বকাঝকা করতো ছোট ছেলেমেয়েদের। এই তো এখন নিশ্চিন্তে সে পাশেই শুয়ে আছে। মুখটা হা করে শ্বাস নিচ্ছে। নিচের পাটিতে দুটো দাঁত নেই বলে কি বাতাস একটু বেশি জোরে বের হচ্ছে! কত চুল ছিল মাথায়! অমিতাভ বচ্চনের মতো স্টাইল করে চুল কাটতো সে। গায়ের রঙ টকটকে ফরসা ছিল। চোখের নিচটা কালো হয়ে আছে। সমস্ত শরীরে, মুখে এমনকি কথায়ও কেমন একটা অলক্ষ্মীপনার ছাপ। তার হঠাৎ মনে হয়, 'শাশুড়ি মা কি আজ সবকিছু দেখতে পাচ্ছেন!'
ফিক করে হেসে দেয় সে। হাসির শব্দে স্বামী চমকে ওঠে। ঘুম ভেঙে যায়। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। পানি চায়। ঢকঢক করে পানি খেয়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়ে।
ঢ.
ফজরের আজানের সময় মেয়েকে ফোন করে সে। আমেরিকায় কয়টা বাজে? যা ইচ্ছা তাই বাজুক!
- কী হইছে আম্মু?
- তোমার আব্বুকে তুমি আমেরিকায় নিয়া যাও। কোনোদিন তো বাপের সেবা করোনি। নিজের কাছে নিয়ে সেবা করো। এটা তোমার দায়িত্ব।
- কী বলছো এসব? এখানে আনা কি এত সোজা? আমরাই এখনও গ্রিনকার্ড পাইনি।
- শোনো, সকালবেলা উঠেই সে যেন চলে যায়। আমি আমার বিছানায় একা ঘুমাতে চাই। আমার বাথরুমটা...উফ! আর আমি আমার গানটা সারাদিন ইচ্ছেমতন গাইতে চাই। বুঝছো তুমি? বুঝছো তো?
ফোনটা নিজেই কেটে দেয় সে।