
গতিময় অর্থনীতি, লেখক-ড. শামসুল আলম, প্রকাশনা-আলোঘর, প্রচ্ছদ-শতাব্দী জাহিদ, দাম-৮৫০ টাকা
কোনো সমাজে পণ্য, সম্পদ বরাদ্দ এবং পণ্য ও পরিষেবা বিতরণের পদ্ধতি; অর্থাৎ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য যে ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তাকে ওই সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলে। অর্থনীতিই হলো সমাজের ভিত্তি। এর ওপর গড়ে উঠে রাজনীতি, সংস্কৃতি ইত্যাদি উপরিকাঠামো। এটি ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। অর্থনীতি যেমন রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে, তেমনি আবার বিপরীতভাবে ক্ষমতাসীন রাজনীতিও ওই নির্দিষ্ট সমাজের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই রাজনীতি ও অর্থনীতি কখনোই বিচ্ছিন্ন নয়; বরং এটি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত, একে-অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যাকে আমরা এক কথায় বলি রাজনৈতিক অর্থনীতি। সমাজ সচেতন মানুষ, তথা প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার জন্য সমসাময়িক বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি সম্পর্কে জানা-বোঝাটা ভীষণ জরুরি। এ ক্ষেত্রে বর্তমান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ড. শামসুল আলমের নিবন্ধ সংকলন 'গতিময় অর্থনীতি' বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তিন যুগেরও অধিক সময় ধরে কলামিস্ট হিসেবে ড. শামসুল আলম দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলোতে উপ-সম্পাদকীয়, নিবন্ধ লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে তার বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকার। 'গতিময় অর্থনীতি' সংকলনে ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখকের ৪৮টি নির্বাচিত নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকার স্থান পেয়েছে। এসব নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে দেশের চলমান অর্থনীতির বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে। লেখক এখানে সংকট ও সমাধানের বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
উল্লেখ্য, অর্থনীতির বিশ্নেষণ রাজনীতি নিরপেক্ষ হয় না। সেদিক থেকে বইটির লেখক তার বিশ্নেষণে নিজের রাজনৈতিক অবস্থানের সুস্পষ্ট ছাপ ফেলেছেন। রাজনৈতিক সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপের পক্ষে তথ্য-উপাত্ত সহকারে বিশ্নেষণ তুলে ধরেছেন। তার এ বিশ্নেষণের সঙ্গে সবাইকে একমত হতে হবে, তিনি তেমনটাও মনে করেন না, যে কারণে ভূমিকায় ড. শামসুল আলম এ বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছেন- 'অর্থনীতিবিদ ও সমাজ অনুসন্ধিৎসু সবাই অর্থনৈতিক পথপরিক্রমায় তথ্য-উপাত্তভিত্তিক বস্তুনিষ্ঠ এই উপস্থাপনাগুলো উপভোগ করতে পারেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একমত না হয়ে এবং একমত না হয়েও। দ্রুত ধাবমান সময়ের চিন্তা-চিহ্ন হিসেবে নিবন্ধগুলো এই সময়ের ছাপ হিসেবে থেকে যাবে। ...বিশেষভাবে অর্থনীতি ও রাজনৈতিক অর্থনীতি বিষয়ে আগ্রহী ছাত্রছাত্রীদের কাছে বইটি প্রাসঙ্গিক বিবেচিত হবে।'
ড. শামসুল আলম গুরুত্বপূর্ণ আমলা এবং পরবর্তীকালে প্রতিমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও এসব প্রবন্ধে একপক্ষীয় সফলতার জয়গান গেয়েছেন, এমন নয়। বরং অনেক ক্ষেত্র তিনি যৌক্তিক সমালোচনা-সীমাবদ্ধতাও তুলে ধরেছেন। মূলত প্রাতিষ্ঠানিক বা একাডেমিক ধাঁচের এ বইটি সংশ্নিষ্ট বিষয়ে গবেষণা বা পড়াশোনা করতে ইচ্ছুকদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ২০২১ সালের ৬ মার্চ দৈনিক বণিক বার্তায় প্রকাশিত 'অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা :দারিদ্র্য দূরীকরণ ও অসমতা ঞ্রাসে যে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি' শীর্ষক এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, 'গত এক যুগে বাংলাদেশের এমন সাফল্য সত্ত্বেও অস্বস্তি রয়ে যায় অসমতার ক্ষেত্রে। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে অসমতা দারিদ্র্য হ্রাসের সাফল্যকে ম্লান করে দেয়। আর তাই সরকার সপ্তম এবং সর্বশেষ অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে।' তিনি আরও বলেন, ''অসমতার হার পরিমাপের একটি মাধ্যম হলো জিনি সহগ। জিনি সহগের মান কম হলে তা অপেক্ষাকৃত বেশি আয় সমতা বোঝায় আর জিনি সহগের মান বেশি হলে তা কম আয় সমতা বোঝায়। ...বাংলাদেশে আয়বৈষম্যের ক্ষেত্রে জিনি সহগ ২০০৫ সালে ছিল ০.৪৬৭। ২০১০ সালে তা সামান্য কমে দাঁড়ায় ০.৪৫৮। পরবর্তী সময়ে তা আবার বেড়ে ২০১৬ সালে দাঁড়ায় ০.৪৮৩। ...অসমতার হার পরিমাপের আরেকটি গ্রহণযোগ্য মাধ্যম হলো 'পালমা অনুপাত'। পালমা অনুপাত হলো জনসংখ্যার সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশের দেশের মোট আয়ের শেয়ার ও সবচেয়ে নিচের ৪০ শতাংশের মোট আয়ের শেয়ারের অনুপাত। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে 'পালমা অনুপাত' ১৯৯৫-৯৬-এর ২.২৩ থেকে বেড়ে ২০০৫-এ এসে দাঁড়ায় ২.৬২-এ এবং আরও বেড়ে তা ২০১৬ সালে এসে দাঁড়ায় ২.৯৩-এ। এটি নির্দেশ করে যে দেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বেড়েছে।''
এ অসমতা সমাধানের উপায় হিসেবে তিনি বলেন, 'রাজস্ব বৃদ্ধির সর্বোচ্চ প্রয়াসসহ সুচিন্তিত প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা, সম্পদ কর আরোপ, কর ফাঁকি বন্ধ করা, বৈষম্য রোধ ও অসমতা দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রকল্প প্রণয়নে পরিকল্পনার প্রাধান্য প্রতিফলিত হতে হবে।'
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতি, তথা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন উদ্যোগে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে জড়িত থাকায় ড. শামসুল আলম তার প্রকাশিত নিবন্ধে সরকারি তথ্য-উপাত্ত সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। উল্লেখ্য, এসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিশ্নেষণের ক্ষমতা তিনি প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতার বলেই অর্জন করেছেন। তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে এমএসসি, ১৯৮৩ সালে ব্যাংককের থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে এমএ এবং ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসল আপন টাইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে অর্থনীতি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রাষ্ট্রপতির ১০ শতাংশ কোটায় ক্যাডার সার্ভিসের বাইরে প্রথম সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা অর্জন করেন। পেশাগত জীবনে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিব্যবসা ও বিপণন বিভাগে দীর্ঘ ৩৫ বছর অধ্যাপনায় যুক্ত ছিলেন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে যান। তিনি ২০২১ সালের ১৯ জুলাই থেকে সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
উল্লেখ্য, অর্থনীতির বিশ্নেষণ রাজনীতি নিরপেক্ষ হয় না। সেদিক থেকে বইটির লেখক তার বিশ্নেষণে নিজের রাজনৈতিক অবস্থানের সুস্পষ্ট ছাপ ফেলেছেন। রাজনৈতিক সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপের পক্ষে তথ্য-উপাত্ত সহকারে বিশ্নেষণ তুলে ধরেছেন। তার এ বিশ্নেষণের সঙ্গে সবাইকে একমত হতে হবে, তিনি তেমনটাও মনে করেন না, যে কারণে ভূমিকায় ড. শামসুল আলম এ বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছেন- 'অর্থনীতিবিদ ও সমাজ অনুসন্ধিৎসু সবাই অর্থনৈতিক পথপরিক্রমায় তথ্য-উপাত্তভিত্তিক বস্তুনিষ্ঠ এই উপস্থাপনাগুলো উপভোগ করতে পারেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একমত না হয়ে এবং একমত না হয়েও। দ্রুত ধাবমান সময়ের চিন্তা-চিহ্ন হিসেবে নিবন্ধগুলো এই সময়ের ছাপ হিসেবে থেকে যাবে। ...বিশেষভাবে অর্থনীতি ও রাজনৈতিক অর্থনীতি বিষয়ে আগ্রহী ছাত্রছাত্রীদের কাছে বইটি প্রাসঙ্গিক বিবেচিত হবে।'
ড. শামসুল আলম গুরুত্বপূর্ণ আমলা এবং পরবর্তীকালে প্রতিমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও এসব প্রবন্ধে একপক্ষীয় সফলতার জয়গান গেয়েছেন, এমন নয়। বরং অনেক ক্ষেত্র তিনি যৌক্তিক সমালোচনা-সীমাবদ্ধতাও তুলে ধরেছেন। মূলত প্রাতিষ্ঠানিক বা একাডেমিক ধাঁচের এ বইটি সংশ্নিষ্ট বিষয়ে গবেষণা বা পড়াশোনা করতে ইচ্ছুকদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ২০২১ সালের ৬ মার্চ দৈনিক বণিক বার্তায় প্রকাশিত 'অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা :দারিদ্র্য দূরীকরণ ও অসমতা ঞ্রাসে যে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি' শীর্ষক এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, 'গত এক যুগে বাংলাদেশের এমন সাফল্য সত্ত্বেও অস্বস্তি রয়ে যায় অসমতার ক্ষেত্রে। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে অসমতা দারিদ্র্য হ্রাসের সাফল্যকে ম্লান করে দেয়। আর তাই সরকার সপ্তম এবং সর্বশেষ অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে।' তিনি আরও বলেন, ''অসমতার হার পরিমাপের একটি মাধ্যম হলো জিনি সহগ। জিনি সহগের মান কম হলে তা অপেক্ষাকৃত বেশি আয় সমতা বোঝায় আর জিনি সহগের মান বেশি হলে তা কম আয় সমতা বোঝায়। ...বাংলাদেশে আয়বৈষম্যের ক্ষেত্রে জিনি সহগ ২০০৫ সালে ছিল ০.৪৬৭। ২০১০ সালে তা সামান্য কমে দাঁড়ায় ০.৪৫৮। পরবর্তী সময়ে তা আবার বেড়ে ২০১৬ সালে দাঁড়ায় ০.৪৮৩। ...অসমতার হার পরিমাপের আরেকটি গ্রহণযোগ্য মাধ্যম হলো 'পালমা অনুপাত'। পালমা অনুপাত হলো জনসংখ্যার সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশের দেশের মোট আয়ের শেয়ার ও সবচেয়ে নিচের ৪০ শতাংশের মোট আয়ের শেয়ারের অনুপাত। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে 'পালমা অনুপাত' ১৯৯৫-৯৬-এর ২.২৩ থেকে বেড়ে ২০০৫-এ এসে দাঁড়ায় ২.৬২-এ এবং আরও বেড়ে তা ২০১৬ সালে এসে দাঁড়ায় ২.৯৩-এ। এটি নির্দেশ করে যে দেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বেড়েছে।''
এ অসমতা সমাধানের উপায় হিসেবে তিনি বলেন, 'রাজস্ব বৃদ্ধির সর্বোচ্চ প্রয়াসসহ সুচিন্তিত প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা, সম্পদ কর আরোপ, কর ফাঁকি বন্ধ করা, বৈষম্য রোধ ও অসমতা দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রকল্প প্রণয়নে পরিকল্পনার প্রাধান্য প্রতিফলিত হতে হবে।'
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতি, তথা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন উদ্যোগে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে জড়িত থাকায় ড. শামসুল আলম তার প্রকাশিত নিবন্ধে সরকারি তথ্য-উপাত্ত সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। উল্লেখ্য, এসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিশ্নেষণের ক্ষমতা তিনি প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতার বলেই অর্জন করেছেন। তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে এমএসসি, ১৯৮৩ সালে ব্যাংককের থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে এমএ এবং ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসল আপন টাইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে অর্থনীতি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রাষ্ট্রপতির ১০ শতাংশ কোটায় ক্যাডার সার্ভিসের বাইরে প্রথম সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা অর্জন করেন। পেশাগত জীবনে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিব্যবসা ও বিপণন বিভাগে দীর্ঘ ৩৫ বছর অধ্যাপনায় যুক্ত ছিলেন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে যান। তিনি ২০২১ সালের ১৯ জুলাই থেকে সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মন্তব্য করুন