নিউনরমালে পেশা পরিবর্তন এক খাপ খাইয়ে যাওয়া ঘটনায় পরিণত হয়েছে। জীবিকার ক্ষেত্রে আগে চিন্তা করা কঠিন ছিল, এমন অনেক ট্যাবুই ভেঙে পড়েছে সাম্প্র্রতিক মহামারিতে।
অবশ্য মহামারি আরম্ভের কয়েক বছর আগে থেকে- সম্ভবত জিডিপি বৃদ্ধিতে আশাবাদী মানুষের আনন্দোল্লাস থামাতে- দেশে ধনী-গরিবে বৈষম্যের প্রসঙ্গটিও আলোচিত হতে শুরু করে। আর এখন মনে হচ্ছে, বিকাশমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি বিরাট অংশের- দরিদ্র শ্রেণিতে পর্যবসিত হওয়ার ধীর প্রক্রিয়াটিকেই যেন ত্বরান্বিত করল মহামারি। এবং সামাজিকভাবে একধরনের বৈধতাও দিয়ে গেল এই নব-দারিদ্র্যের।
বলছিলেন কবি, আর স্বীকার করে নিচ্ছিলেন তিনি নিজেও এই নব্য-দরিদ্রের দলে পড়েন। সম্প্রতি তার বাবা দীর্ঘ বেকারত্বের অবসান ঘটিয়ে করেছেন পেশা পরিবর্তন। জেলা শহরের সবচেয়ে বড় সিনেমা হলের ম্যানেজার হিসেবে তিরিশটা বছর কাটিয়ে দেওয়ার পর- মেইনস্ট্রিম চলচ্চিত্র-শিল্পের মূলোৎপাটনের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী। শেষ দশ বছর নিজেই লিজ নিয়ে সিনেমা হলটি চালাতেন। লোকসান দিতে দিতে কোথায় লাগাম টানতে হবে বুঝতে পারেননি।
কবির সঙ্গে এমন এক আপার চা দোকানে মাঝে মাঝে দেখা হয়- রং চায়ের লিকার যিনি প্রয়োজনীয় মাত্রায় পাতলা রাখতে জানেন। দেখা হলেই কবি নিজের ও মানুষের নানা দুঃখকষ্টের বর্ণনা করেন আর এর থেকে উত্তরণের জন্য নিত্যনতুন যেসব আইডিয়া তার মাথায় খেলে যায় সেসব বলেন।
সম্প্রতি কবি অবৈষয়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ভাবছেন- যেখানে থাকবে না কোনো জীবিকার বাহাদুরি। সবাই কাজ করবে রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে, মনের আনন্দে আর দেশ গড়ার ছলে। বিনিময়ে নাগরিকের থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে সাধ-আহ্লাদ সবকিছুরই দায়িত্ব নেবে রাষ্ট্র। শুনে কেমন চেনা-চেনা মনে হওয়ায় আমি বললাম-
এ রকম চেষ্টা তো সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে ইতিপূর্বে সম্পন্ন ও ব্যর্থ হলো?
কিন্তু কবি আত্মবিশ্বাসী- এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হবে। নাগরিকদের ওপর রাষ্ট্র কিছু চাপিয়ে দেবে না। রাষ্ট্র শুধু চাইবে নাগরিকের প্রতিযোগিতামূলক জীবনব্যবস্থার অবসান ঘটাতে।
কিন্তু কীভাবে সেটা সম্ভব হবে?
নিরন্ন, ভূমিহীন মানুষের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করলেই এটা কার্যকর করা অনেকাংশে সম্ভব।
কবি বলে চলেন, ধরো ভূমিহীনকে খাসজমি ও ইট-সিমেন্ট দিয়ে রাষ্ট্র বলবে- তুমি রাজমিস্ত্রির কাজটা শিখে নিজের ঘর নিজে তোল। এ বিষয়ে আগেই ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করবে রাষ্ট্র- কীভাবে একটা ঘর বানাতে হয় শেখাবে। এভাবে ভূমিহীনের ঘরের ব্যবস্থার পাশাপাশি তাদের মধ্য থেকে গড়ে ওঠা নির্মাণশ্রমিকদের সরকারি বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেবে রাষ্ট্র।
কিন্তু এতে কি ঘর পাওয়ার ক্ষেত্রে একজন গৃহহীনকে নির্মাণশ্রমিক হয়ে উঠতেই বাধ্য করা হয় না?
কবি আশ্বস্ত করেন, নির্মাণশ্রমিকই হতে হবে সবাইকে- এমন না। কেউ চাইলে বাড়ির পাশে পুকুরে মাছের চাষ করতে পারে। সরকারিভাবে পুকুর কেটে দেওয়া হবে। কাউকে পোলট্র্রি, কেউবা গরুর খামার গড়ে তোলার যাবতীয় প্রশিক্ষণ, ঋণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্র থেকেই পাবে।
কবির প্রাথমিক প্রস্তাবনায় অবৈষয়িক দুনিয়ার কথা বলা হলেও এ ক্ষেত্রে বিরাট কর্মযজ্ঞের দেখা পেয়ে আমি একটু দ্বিধায় পড়ে গেলাম- তবে যে অবৈষয়িক দুনিয়া?
কবি মৃদু হাসেন।
বুঝতে পেরেছি, আপনি এ বিরাট কর্মযজ্ঞকে বৈষয়িক ভাবছেন। আসলে তা নয়। সবই করা হবে সবকিছুকে আরও সহজ ও সুন্দর করে তোলার জন্য।
সবকিছু সরকারিভাবে পরিচালিত হলেই যে সহজ-সুন্দর হবে, এই নিশ্চয়তা কোথায়?
নিশ্চয়তা নিয়ে বেশি চিন্তা না করে শুরু করে দিতে হবে।
তার মানে সরকার অবৈষয়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপে ভূমিহীনকে ঘর দিতে যাচ্ছে?
ঠিক তাই।
এটা কেন?
সরকার আসলে সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত লোকগুলোকে আশার আলো দেখাবে। বিনিময়ে, অবৈষয়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায়- তাদেরকেই পাবে সবচেয়ে দক্ষ ও কার্যকর ভূমিকায়। পরবর্তী ধাপই হলো- রাষ্ট্র অতি অল্প মূল্যে নাগরিকের তিন বেলা খাবারের দায়িত্ব নেবে। এমন না যে ফ্রি খাওয়াবে। রাষ্ট্র উৎপাদন থেকে বিপণন অবধি এমন একটা চেইন বিল্ডআপ করবে, যাতে কোটি কোটি গ্রাহক থাকার কারণে অতি কম মূল্যেও সেটা লাভজনক থাকবে।
গ্রাহক!?
রাষ্ট্রীয় হোটেলের- যেখানে একজন নাগরিক- ঘরে অ্যারেঞ্জ করে খেলেও যা দাম পড়ত তার অর্ধেক দামে- সাপ্তাহিক, মাসিক বা দৈনিক ভিত্তিতে খাবারের গ্রাহক হতে পারবে। আর বুঝতেই পারছেন হোটেলের জোগানগুলো কোত্থেকে আসবে?
মনে হচ্ছে ঘর পাওয়া মানুষের কর্মোদ্দীপনায় উৎপাদিত ক্ষেতখামার থেকে।
ঠিক ধরেছেন। ভাবুন কেউ কিন্তু বাধ্য না। সরকারি হোটেলের গ্রাহক অনেকেই হয়তো হবেনও না। কিন্তু চাইলেই কেউ গ্রাহক হয়ে গিয়ে- প্রতিযোগিতামূলক জীবনব্যবস্থা থেকে খানিকটা নিস্তার পেতে পারে।
বুঝলাম সকলে না হয় পঞ্চাশ টাকায় তিন বেলা পেটপুরে খেলো। খাওয়াটাই সব? আর উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষকে না হয় খাসজমি বুঝে দেশের যেখানে খুশি স্থানান্তর করা গেল। কিন্তু নাগরিক জীবনের কী হবে? বাসা ভাড়া তো দিতে হবে। সেটা কমবে কীভাবে?
শোনেন। অবৈষয়িক মানসিকতার নাগরিকরাই কিন্তু বেশি সুবিধা পাবে। বুঝতে হবে, রাষ্ট্র এখানে একটা দার্শনিক মনোভঙ্গি নিয়ে আগাচ্ছে। মানে কেউ যদি সদরের ভাড়া বাসা ছেড়ে গ্রামে গিয়ে কিছু করতে চায়- যেখানে তার হয়তো একখণ্ড জমি আছে- রাষ্ট্র তাকেই সর্বোচ্চ সুযোগ তৈরি করে দেবে।
কিন্তু গ্রামে গিয়ে কিছু করতে চাওয়ার মধ্যে কি বৈষয়িক আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে না? গ্রামে ফিরে যাওয়াকে এত অবৈষয়িক ভাবার সুযোগ কই। শহরে ভূরি ভূরি ব্যর্থ লোক পাওয়া যাবে- গ্রামে গিয়ে যারা হাফ ছেড়ে বাঁচবে।
বাঁচুক! তাদেরকে বাঁচানোই তো রাষ্ট্রের লক্ষ্য হবে। যার যার নিজ নিজ এলাকায় তার জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও থাকবে বেশি। নিজ ভিটেয় বসবাসকারীকে প্রয়োজনে প্রণোদনাও দেবে রাষ্ট্র।
আলাপ করতে করতেও নতুন অনেক আইডিয়া পান কবি। কিছু টুকে রাখেন তার দামি মোবাইল ফোনের নোটে। সবশেষ যে পত্রিকায় কাজ করতেন, সেখানে তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে মালিকপক্ষ তাকে উপহার হিসেবে দিয়েছিল। চাকরিটা ছেড়েছেন বাধ্য হয়ে- এক বছরের বেতন বকেয়া পড়ে যাওয়ার পর। তখনই এলাকার এক বন্ধুর একটা এনজিও কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, শেষতক সেটাকেই আঁকড়ে ধরে সাংবাদিকতার ইতি টানেন।
কিন্তু বিধিবাম, মাস কয়েকের মধ্যেই বন্ধু আর আগের মতো নেই- বন্ধু হিসেবে নয়, বরং কর্মচারী হিসেবে ট্রিট করছে- এমন উপলব্ধির মধ্য দিয়ে গিয়ে চাকরি ছাড়েন। করোনায় প্রথম ঢেউ শেষ না হতেই দুটি চাকরি হারিয়ে কবি ভালোই বিপন্ন অবস্থায় পড়েছেন। দূরবর্তী জেলা শহরে এক ভাড়া বাসায় তার বাবা-মা সীমাহীন অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছে- তিনি ছেলে হয়ে কিছুই করতে পারছেন না। ঢাকায় পড়ে আছেন তবু, কেননা ছুটাছাঁটা সম্পাদনা ও প্রুফ রিডিংয়ের কাজ কিছু পান চেহারা দেখিয়ে। তা দিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজের ঢাকায় থাকা-ভিন্ন কোনো কিছুরই কোনো গতি হয় না।
মাঝে মাঝে এর-ওর কাছ থেকে ধার করে বাড়িতে টাকা পাঠান। কবির মা এসবের ঘোর বিরোধী। ঘোর বিরোধী কেননা কবির বাবা এই করেই সর্বস্বান্ত হয়েছেন। ধারাবাহিক লোকসান গুনেও নতুন-পুরোনো সিনেমা ভাড়া করে দর্শকহীন বড় পর্দায় চালিয়ে গেছেন। শেষে ভিটেমাটি বেচে ঋণ শোধ করতে হয়েছে। অবশ্য কবির বিশ্বাস তাকে যারা ধার দেয়, তাদের কারও পক্ষে অতটা কঠিন হওয়া সম্ভব নয়। প্রধানত সবাই ফেরত পাওয়ার আশা ছেড়েই ধার দিচ্ছে ভেবে কবি প্রশান্তি বোধ করেন। নিজের কবিতা সম্বন্ধে অতি উচ্চ ধারণা পোষণ করা কবির বিশ্বাস, তার কল্পিত অবৈষয়িক রাষ্ট্রে এ মানের কবিতা লিখিয়েদের জন্য ভালোই অর্থকড়ির ব্যবস্থা থাকবে। রাষ্ট্র দিচ্ছে না, তাই আপাতত বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষীরাই দিচ্ছে।
তার মানে অবৈষয়িক রাষ্ট্র কবি-লেখকদের টাকা দেবে?
কিছু হাতখরচ তো দেবেই। তাছাড়া দেশ-বিদেশে ঘুরতে পাঠাবে। ধরো, নির্মলেন্দু গুণকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে কিউবায়। হেলাল হাফিজকে ফ্রান্সে। একেবারে শর্তছাড়া নয় অবশ্য।
শর্ত কী হবে?
কিউবা ও ফ্রান্স ভ্রমণ নিয়ে একটি করে ভ্রমণ পুস্তক রচনা করবেন তারা। রাষ্ট্র নিজ উদ্যোগে স্প্যানিশ, ফরাসি ও ইংরেজি ভাষায় বইগুলোর অনুবাদ করবে। এবং সংশ্নিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে এসব ভ্রমণ পুস্তককে কাজে লাগাবে।
কবির কল্পিত রাষ্ট্র নিয়ে প্রায়ই চায়ের দোকানে আলাপ হতে থাকে। উৎসাহী দুয়েকজন নাগরিকও জুটে যায়। তারা প্রয়োজনীয় মাত্রায় লিকার পাতলা রাখায় বিশেষ দক্ষ চা দোকানি আপার জন্য অবৈষয়িক রাষ্ট্রের পুরস্কার কী- জানতে চায়।
বিশেষত চা দোকানের ক্ষেত্রে লাইসেন্সের প্রয়োজন পড়বে বলে কবি কঠোর মত দেন। আর সেই লাইসেন্স তারাই পাবে- নিঃসন্দেহে যারা আপার মতো ভালো চা বানাতে পারে।
লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে উৎকণ্ঠায় পড়তে নেওয়া আপা শেষ অংশটুকু শুনে প্রথমত স্বস্তি পান এবং সংশোধনে সচকিত হয়ে- অপ্রতিষ্ঠিত সেই রাষ্ট্রের তরফে পাওয়া অদৃশ্য মুকুটটি মাথা বাড়িয়ে পরে নেন যেন।
অবৈষয়িক রাষ্ট্রে মানসিক চাপ নিয়ে কোনো কাজ করা যাবে না। সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্যের গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রকাশ হবে। নেওয়া হবে সেইমতো ব্যবস্থা। অধস্তনদের মানসিক চাপ বিষয়ে ঊর্ধ্বতনরা থাকবে জবাবদিহিতার আওতায়।
এতকিছু সত্ত্বেও এখনকার বৈষয়িক পৃথিবীতে কবির একটি চাকরি দরকার। সে বিষয়ে চেষ্টাচরিত্রেরও কমতি নেই। কিন্তু কেন যেন কোথাও কোনো চাকরি হচ্ছে না এবার। আগে কখনও এতদিন বেকার থাকেননি। জেলা শহরে কবির বাবা একটি হোটেল দিয়েছেন। পুঁজির অভাবে মাসখানেকের মধ্যেই বন্ধ হবার পথে। প্রাথমিক জোগাড়যন্ত্রে কিছু ধার পেয়েছিলেন, চালিয়ে নেওয়ার মতো ধার পাওয়া যাচ্ছে না এখন। বিধ্বস্ত ভঙ্গিতে একদিন আমাকেই বললেন, দেখো না যদি লাখখানেক টাকা ম্যানেজ করে দিতে পার!
আমার অবস্থাও কবির চেয়ে বিশেষ ভালো কিছু না। আমিও বেকার। বলা যেতে পারে দু'জনের আশ্চর্য কিছু মিলই এ বন্ধুত্বের উপলক্ষ তৈরি করেছে। সাংবাদিকতা করতাম একসময়। লিখতাম কবিতা আমিও। বর্তমানে কথাসাহিত্যে থিতু হয়েছি- তাও বছর চারেক আগে একদিন এই উপলব্ধি থেকেই যে- আমি তো কবির মতো লিখতে পারি না! মিল যা কিছু- সাহিত্যের বাইরে। যেমন পরিবারে দু'জনেই আমরা মেজো। বয়সে এক। উভয়েই গন্তব্যহীন ট্রেন জার্নি ভালোবাসি।
অর্থনৈতিকভাবে কবির চেয়ে এদিক থেকে একটু এগিয়ে যে, কবির মতো আমার বাসা ভাড়া নিয়ে টেনশন নেই। আমার বাবাও সিনেমা হলকেন্দ্রিক দীর্ঘ কর্মজীবন কাটিয়েছেন, তবে পার্থক্য হলো- তার হোটেলটা জমে গেছে। সম্প্রতি সেই হোটেলে ম্যানেজার হিসেবে আমাকে চাকরির অফার করা হয়েছে। বেতন ছোট শহরের জন্য লাগসই। কবির অবৈষয়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে আমিও হয়তো এই মুহূর্তে জেলা শহরে গিয়ে বাবার হোটেলেরই হাল ধরতাম। কিন্তু বৈষয়িক পৃথিবীতে বাবার সঙ্গেও আমার প্রতিযোগিতা বজায় আছে। গিয়ে তার হোটেলে জয়েন করা মানে এক পরাজয়। এমন যে- ঢাকায় এসেও আমাকে ফেরত যেতে হলো সেই বাপের হোটেলেই।
এসব শুনে কবি হাসেন। অবৈষয়িক রাষ্ট্রে জয়-পরাজয়ের সব হিসাব উল্টে দেওয়া হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আমার প্রকাশনা সংস্থা থেকে কবির একটা বই করব ভাবি। সম্প্রতি চাকরিবাকরি আর করব না ভেবে প্রকাশনা দিয়েছি। মুশকিল হলো, লেখকের থেকেই টাকা নিয়ে বই করি। অবশ্য কোনো বাজে পাণ্ডুলিপি বেশি টাকার বিনিময়েও ছাপি না। কবির বই যে করব- না আমার টাকা আছে তা করার, তেমনি কবিরও টাকা দিয়ে বই করার কোনো প্রয়োজন নেই। নামিদামি প্রকাশনা থেকেই কবির বই বেরোয়। অবশ্য কবিতার বই তেমন চলে না, এ জন্য রয়্যালিটি পান না। সুতরাং কবিকে তার বাবার ক্ষয়িষ্ণু হোটেল চালিয়ে নিতে লাখখানেক টাকা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয় না।
বহু ইতস্তত ও কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে সপ্তাহখানেক আগে কবিকে বলেছিলাম, নিজ জেলা শহরে চলে যেতে। বাবার হোটেলটা চলছে না কেন, হোটেলটাকে লাভজনক করার উপায় খুঁজে বের করতে। সেই থেকে কবির সঙ্গে দেখা নেই। ফোন করলেও ধরছেন না। ফেসবুকে কবি আগেও ছিলেন না, এখনও নেই। জানি না তিনি ফিরে গিয়েছেন কিনা। আমি চা দোকানে গিয়ে বসলে কেউ কেউ কল্পিত রাষ্ট্রপ্রধানের ব্যাপারে জানতে চান। আমি অনুমান করে বলি, কাজ শুরু হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপ্রধান ফিরে গেছেন নিজ জেলা শহরে।
কিন্তু সেদিনই সকাল সকাল কবিকে রাস্তার মোড়ে দেখতে পেয়েছেন, এমন দাবি তোলা একজন ব্যক্তি আমাকে চ্যালেঞ্জ করে বসলেন- আপনার জন্যই তো নাকি কবি আর দোকানে আসে না। কী নাকি খুব অপমান করছেন আপনি তারে?

বিষয় : প্রচ্ছদ তানিম কবির

মন্তব্য করুন