পদাবলি
অলংকরণ :: দেওয়ান আতিকুর রহমান
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২২:১০
আমাদেরকে দাঁড়িয়েই থাকতে হবে
আরিফ মঈনুদ্দীন
(ফিলিস্তিনি শিশুর স্বগতোক্তি)
মাতৃগর্ভে থেকেই জেনেছি–
জন্মেই আমি মাতৃভূমির জন্য যুদ্ধে শামিল হবো
যেমন এক পা মাটির স্বপ্নে আমার জন্মদাতা পিতা আজীবন জাগ্রত–
যেই স্বপ্ন তাকে এবং আমার জননীকে একা ঘুমুতে দেয়নি কখনও
বুকে আমার সহোদর স্বপ্নকে লালন করতে করতে
একদিন আমাকে ঢেলে দিয়েছেন প্রায় পরীধান এক ভূখণ্ড–
তাও তো আমি দেখেছি পৃথিবীর আলো
মাটির মমতা গায়ে মেখে তৈরি হয়েছি যুদ্ধের পোশাকে
কিন্তু আমার সেই সহোদর-স্বপ্ন আজও পৃথিবীর মুখ দেখেনি
আজও পিতার ঔরস এবং মাতৃজরায়ু গঙ্গায় সাঁতরাচ্ছে সে–
অকূলপাথারে পড়ে যাওয়া সহায়হীন নাবিকের মতো
খড়কুটোর সন্ধানে অন্ধকার ফেনিল সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে কেবল
তীরে দাঁড়িয়ে কিছু লোক তামাশায় মশগুল
যাদের হাতে জীবন নৌকোর পাল অথবা হাল তারাই
সার্কাসের ভিলেনের মতো ধরে আছে তা
যাদের সাগর সাঁতরানোর কোনো ব্যবস্থা নেই
তারাই শুধু হাপিত্যেশ করে করে শেষাবধি
শামিল হচ্ছে মিটিংয়ে-মিছিলে
এদের কিছুই করার নেই– এই কথা ঠিক না,
তাদের দৃপ্ত উচ্চারণের দোহাই–
আমি মৃত্যুর মতো অস্ত্রকে শান দিয়ে অবলীলায়
ঝাঁপিয়ে পড়ছি ময়দানে
ট্যাঙ্কের নিচে শুয়ে পড়ে জমিনে বপন করে দিচ্ছি স্বাধীনতার বীজ
তারা তামাশা দেখুক– প্রতিবাদের সারি লম্বা হতে হতে
যখন যুক্ত হবে আকাশের ফরমান
সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় আমিও দাঁড়িয়ে থাকব
আমাদেরকে দাঁড়িয়েই থাকতে হবে।
এই শীতে
শারদুল সজল
ঝাঁক ঝাঁক পাখি আকাশ সাঁতরিয়ে বাড়ি যাচ্ছে।
অদূর কলুই ক্ষেতে ঝেঁকে বসছে শীত, নীরব হয়ে–
ঘুমিয়ে যাচ্ছে কোদালিয়া পাড়ার পা পথ–
মুরগি তার ছানাগুলো মাতৃছায়ায় জড়িয়ে নিচ্ছে
ডানার তলে; এর ফাঁকে কুয়ার পাড়ের নারকেল গাছ থেকে–
একটি প্যাঁচা উড়ে গেল ...
দূরের গ্রামগুলোকে তখন ঝাপসা পাহাড়ের মতন
উঁচু উঁচু টিলা মনে হলো
মনে হলো ধু-ধু ...
কুয়াশা ...
এভাবেই রাত নামল– কোটি কোটি বছরের রাত ...
দূরের গ্রামে, এখন আর কোনো কুপি জ্বলছে না
ঘরে ঘরে ঘুম নেমেছে
পুবের চরে ইয়াকুবের বাঁশির সুরও থেমে গেছে
ঘুমিয়ে গেছে বেতবনের জোনাকি
শুধু ঘুমায়নি প্রেমিকের মন–
শীতের কুয়াশায় স্বপ্ন বুনে বুনে জেগে থাকে আজও– মুন্সি রতন
পুরাতন সকাল
রওশন আরা মুক্তা
তোমাকে আর দেখি না
পুরাতন কিন্তু ঠিকঠাক জুতা পায়ে
কানে গান গুঁজে সোজা হেঁটে যাই
তোমার দৃষ্টিতে তাকাই হয়তো একবার
কিন্তু তোমাকে আর দেখি না
বড় রাস্তা নতুন ওভারব্রিজ
পানির মাঝে সকালের আলো
চকচক করে ইতিহাসের আগের মতোই
আর্দ্র মনে যদিও শুনি বুকভাঙা গানই
তবে তোমাকে আর দেখি না
দাঁড়াই না কোথাও এমন দৃশ্যে
যেখানে একলা শিশু আনমনে খেলে
আধখাওয়া সিগারেটের বাট ধরে
হাঁটি তো সময়েরই আগে সময় ধরতে
এমন অসময়ে শিশুর কল্পনায় ফাঁদা
এ ভুবনে পুরাতন এ আমি পুরাতন তোমার
চোখ থেকে আগত এনার্জিতে
একটু বোধহয় কাঁপি, অজান্তেই না বলে ফেলি
মাথা নেড়ে, আর যেখানে চাই যেতে
সেদিকেই পা বাড়াই একটুও না থেমে
ভুলেও আর দেখি না তোমাকে