মুনীর চৌধুরী- পুরো নাম আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশের অসামান্য প্রতিভাধর একজন শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী।
ছাত্রাবস্থাতেই এক অঙ্কের নাটক রাজার জন্মদিনে লিখেছিলেন, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ মঞ্চস্থ করেছিল।
বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে১৯৪৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে যে প্রথম ছাত্রসভা হয়, তাতে বক্তৃতা দিয়েছিলেন মুনীর চৌধুরী। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে পুলিশের ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান। ২৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের প্রতিবাদ সভা আহ্বান করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন এবং তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ সময় প্রায় দুই বছর তিনি দিনাজপুর ও ঢাকা জেলে বন্দি জীবনযাপন করেন। বন্দি অবস্থায় ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দিদের অভিনয়ের জন্য লেখেন 'কবর' নামের বিখ্যাত নাটকটি। এ নাটকটি তার শ্রেষ্ঠ নাটক হিসেবে খ্যাত এবং এর প্রথম মঞ্চায়ন হয় জেলখানার ভেতরে, যাতে কারাবন্দিরাই বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
সঙ্গি কারাবন্দি অধ্যাপক অজিত গুহের কাছ থেকে তিনি প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের পাঠ গ্রহণ করেন। কারাগারে থেকেই ১৯৫৩ সালে বাংলায় এমএ পরীক্ষা দেন ও প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির অস্থায়ী প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরের বছর যোগ দেন বাংলা বিভাগে। ১৯৫৬ সালের শেষ দিকে রকফেলার বৃত্তি নিয়ে তিনি যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং ১৯৫৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে আরও একটি ডিগ্রি অর্জন করেন। সে বছর সেপ্টেম্বরে দেশে ফিরে আসেন। মুনীর চৌধুরী ১৯৬৫ সালে কেন্দ্রীয় বাঙলা উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বাংলা টাইপরাইটারের জন্য উন্নতমানের কি-বোর্ড উদ্ভাবন করেন, যেটি আজও মুনীর অপ্‌টিমা নামে পরিচিত।
তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে- নাটক রক্তাক্ত প্রান্তর, চিঠি, দণ্ডকারণ্য, পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য। ১৯৬২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। তার অনুবাদ নাটকগুলোর মধ্যে জর্জ বার্নার্ড শ'র You never can tel-এর বাংলা অনুবাদ 'কেউ কিছু বলতে পারে না', জন গলজ্‌ওয়র্দি-র The Silver Box থেকে বাংলা 'রূপার কৌটা', উইলিয়াম শেক্‌সপিয়রের Taming of the Shrew এর বাংলা 'মুখরা রমণী বশীকরণ'।
প্রবন্ধ গ্রন্থ :ড্রাইডেন ও ডি.এল. রায়, মীর মানস; সৈয়দ শামসুল হক ও রফিকুল ইসলামের সঙ্গে একত্রে 'রণাঙ্গন', 'বাংলা গদ্যরীতি'।
১৯৭১ সালের মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুনীর চৌধুরী ফিরে আসার কিছুকাল পরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তার কিশোর ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে চলে যায়। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আদেশে মে-জুন মাসে ইংরেজি বিভাগের প্রধান হিসেবে এবং জুলাই মাস থেকে কলা অনুষদের ডিন হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মুনীর চৌধুরীকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী আলবদর বাহিনী তার বাবার বাড়ি থেকে অপহরণ করে এবং সম্ভবত ওই দিনই তাকে হত্যা করে।

প্রশ্ন
১। মুনীর চৌধুরী তার কোন সৃষ্টিকর্মের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান?
২। 'কবর' নাটকটি কোন জেলখানায় প্রথম মঞ্চস্থ হয়েছিল?
৩। মুনীর চৌধুরী কত সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান নিযুক্ত হন?
কুইজ ৪১-এর উত্তর
১। 'প্রকৃতি সম্বন্ধে দেমোক্রিতোসীয় ও এপিকুরোসীয় দর্শনের মধ্যে পার্থক্য'
২। ম্যাক্স স্টিনার
৩। নিউইয়র্ক ট্রিবিউন
কুইজ ৪১-এর জয়ী

শেখর বালা
১৯/৬-এ, স্বামীবাগ লেন, ঢাকা

মোহাম্মদ ইয়াছিন রিসাদ
দারোগারহাট, ছাগলনাইয়া, ফেনী

ইমন আহমেদ
পটিয়া, চট্টগ্রাম

নিয়ম

পাঠক, কুইজে অংশ নিতে আপনার উত্তর পাঠিয়ে দিন ১৮ জানুয়ারি মঙ্গলবারের মধ্যে কালের খেয়ার ঠিকানায়। পরবর্তী কুইজে প্রথম তিন বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে। বিজয়ীর ঠিকানায় পৌঁছে যাবে পুরস্কার।