
কালচক্র, লেখক-আবদুল্লাহ আল ইমরান, প্রকাশক-অন্বেষা, মূল্য-৩৫০ টাকা
যে কোনো জনপদেই জীবন মূলত তার আর্থ-উৎপাদন ব্যবস্থাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। গত শতকের বেশ কয়েক দশক ধরে খুলনায়ও প্রাণচাঞ্চল্য ছিল শিল্প-কলকারখানাকেন্দ্রিক। প্রতিবেশছিন্ন হয়ে প্রান্তবর্তী অঞ্চলসমূহের মানুষেরা সেখানে এসেছিল কর্মসংস্থানের খোঁজে। আগে থেকে বিভিন্ন জনসম্প্র্রদায়ের মানুষ তো ছিলই।
কিন্তু দু'দশক আগে, আবদুল্লাহ আল ইমরানের কৈশোরে, সেখানে ভয়াবহ এক ঘটনা ঘটে যায় রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হতে থাকে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সেগুলোর ওপর নির্ভরশীল অসংখ্য মানুষ ও তাদের অর্থনীতি। তারা নিঃস্ব হয়ে পড়ে। ওলটপালট হয়ে যায় জীবন। টিকে থাকার জন্য তাদের কেউ কেউ অপরাধে জড়ায়। কেউ কেউ অভিবাসনে বাধ্য হয়। কেউ আবার নামে প্রতারণায়। নানান ধরনের বিশৃঙ্খলা, বিকৃতি দেখা দেয় সমাজে। প্রভাবশালী, ক্ষমতাবানদের অত্যাচার বেড়ে যায়। অর্থাৎ কারখানা বন্ধের তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে এমন সব ঘটনা সেখানে ঘটতে থাকে, যেগুলোর অভিজ্ঞতা সেখানকার মানুষের ছিল না। এসব ঘটনাই উঠে এসেছে ইমরানের উপন্যাস 'কালচক্র'তে। উপন্যাসটি তিনি লিখেছেন সেই ঘটনার অন্তত এক যুগ পরে। উপন্যাসে তিনি একই সমান্তরালে বেশ কিছু গল্প বলেছেন, যার কয়েকটি তার সমবয়সী চরিত্রদের নিয়ে। বোঝাই যায়, এ ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ স্মৃতিকেই গল্পে রূপ দিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ সেই গল্পগুলোর চরিত্রগুলো তার কাছের, সরাসরি দেখেছেন বা তাদের কথা শুনেছেন অথবা চরিত্রগুলোর মধ্যে তিনি নিজেই ছিলেন। এগুলোতে লেখকের সরল হৃদয়াবেগ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। যেমন, একটি নিম্নবিত্ত পরিবারকে নিয়ে যে গল্পটি আছে, তা বিবৃত হয়েছে দু'জন কিশোরের কথোপকথনে। তার একজন ওই পরিবারেরই সদস্য। আরেকজন মনে হয় লেখক নিজেই।
আরও বেশ ক'টি ঘটনা তিনি লিখেছেন যেগুলো নিশ্চয়ই সেই বয়সে তার মনে দাগ কেটেছিল। কিন্তু ঘটনাগুলোর জটিলতা বোঝার জন্য পরিণত সমাজ দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে সাম্প্র্রদায়িকতা, ক্রূূরতা, লোলুপতার গল্পগুলো, যেগুলো বলার জন্য তিনি এক যুগের প্রস্তুতি নিয়েছেন। ফলে এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, তার এই উপন্যাসে আত্মজৈবনিকতার ছাপ আছে।
তবে উপন্যাসের সবক'টি গল্পই কিন্তু কারখানা বন্ধের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। তবে সেগুলো ওই পরিপ্রেক্ষিতেরই গল্প। এদের মধ্যে প্রান্তিক ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের ওপর শোষণ-বঞ্চনা, নিগ্রহ-নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা তুলে আনা হয়েছে। আবার সেই সঙ্গে প্রবলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সৌন্দর্যও চিত্রায়িত হয়েছে। দেখা গেছে, কখনও কখনও শুধু সাহসের ওপর ভর করে দাঁড়িয়েছে তারা। আবার কখনও পরিস্থিতিই তাদের প্রতিবাদের মিছিলে দাঁড় করিয়ে দেয়, আত্মাহুতিতেও উদ্বুদ্ধ করে। যখন দু'ধারেই মৃত্যু, তখন মানুষ হয়তো এভাবেই বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পায়।
উপন্যাসটিতে প্রেমানুরাগের একাধিক বিয়োগান্ত পরিণতি আমরা দেখি, যার নেপথ্যে সমাজের দীর্ঘকালের ভ্রান্তি, বিভেদ, সংস্কার, ষড়যন্ত্র ইত্যাদির ভূমিকা উন্মোচন করেছেন লেখক। কালচক্র উপন্যাসের নামের মধ্যেই আভাসিত হয় এখানে চরিত্রগুলো একটি আবর্তের মধ্যে পড়েছে। এদের মধ্যে কেউ আছেন, যাদের পটভূমিতে নদীভাঙন রয়েছে। আবার কারখানাও গড়ে উঠেছে নদীর তীরেই। নদীর বাঁকবদলের মতোই জীবনের গতিপ্রবাহ। আবার চাকার গতির ভিন্নতায় একেক কালপর্বে ভিন্ন গতি পায় সেই জীবন। নদী বয়ে যায়, চাকা ঘোরে, জীবন একই গতি নিয়ে আবর্তিত হতে থাকে একেক কালের ভেতর, গতিরুদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত।
নদীভাঙন বা সেই আর্থ-উৎপাদনশীলতার চাকা দৈবাৎ বন্ধ হয়ে যদি যায়, সেখানে মানুষের জীবন, বিশেষ করে প্রান্তস্থ যারা, তাদের জীবন বিভিন্ন দিকে ছিটকে পড়ে। ইমরানের ধারাভাষ্যে মূর্ত হয় এমন ভাঙন। মানুষে মানুষে ভেদরেখা প্রকট হয়ে ওঠে, সমাজের অশুভ স্টম্ফীতি পায়। তখন লালসা শুধু বস্তুসম্পদ নয়, আগ্রাসী গ্রাসে জীবনের সমূহ সৌন্দর্য গিলে খেতে চায়। তবুও উপন্যাসটির শেষ পর্যায়ে এসে আমরা দেখি সমূহ বিপর্যয়, আঘাত, অপঘাত আর বিচ্ছেদের মধ্যেও তা জীবনের স্বপ্ন জাগিয়ে রাখে। বোঝাই যায়, শুধু শিল্প সৃষ্টি নয়; এই বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরার একটি তাগিদ ইমরানের মধ্যে ছিল। উপন্যাসটি তাই একদিকে যেমন লেখকের প্রখর প্রত্যক্ষণের সামর্থ্য তুলে ধরে, তেমনি গভীর সমাজবিশ্নেষণী ক্ষমতারও পরিচয় বহন করে। বিশেষ করে উপন্যাসে চরিত্রগুলোর মনোলোকের যে সূক্ষ্ণ চিত্রায়ণ আমরা পাই, তা সেখানকার জনমণ্ডলীর জীবনে লেখকের গভীর অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়। খুলনার পাটকল বন্ধের গভীর, সুদূরপ্রসারী অভিঘাত রয়েছে অসংখ্য মানুষের ওপর। আগে এ সম্পর্কে লোকমুখে, গণমাধ্যমে ও রাজনৈতিক বিতণ্ডা থেকে আমরা তার সামান্যই জেনেছি। কিন্তু তার ওপর এত বড় প্রামাণিক সাহিত্যকর্ম, এত ব্যাপক আলোকপ্রক্ষেপণ সম্ভবত আর হয়নি। সেটি করার মধ্য দিয়ে ইমরান একজন অঙ্গীকারসম্পন্ন সাহিত্যিকেরই দায়িত্ব পালন করেছেন। এই উপন্যাস একই সঙ্গে আমাদের রাষ্ট্র-অর্থনীতির ক্রমবিকাশ বোঝার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।
গত এক দশকে বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি মাধ্যমের বিকাশে আর কারও না হোক, অন্তত বাংলাদেশে বা বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের ওপর একটি প্রভাব পড়েছে। অল্প আয়াসেই বইয়ের বিকল্প মেলে। ফলে বলাই বাহুল্য, বইয়ের পেছনে মাথাপিছু ব্যয়িত সময়ের একটি ভাগ তাতে চলে গেছে। কিন্তু ইমরানের এই উপন্যাস বহু পাঠকের কাছে পৌঁছেছে, তা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস দেখা গেছে তাদের মধ্যে। এর একটি বড় কারণ তার চরিত্রগুলো অচেনা মনে হলেও বিনির্মিত মনে হয় না। আখ্যানে বিধৃত গল্পসমূহের প্রতিটি বাঁকেই অভাবিত বাস্তবতা। অনিশ্চয়তাগুলোই ঘটনাসমূহের নাট্যধর্মিতা সৃষ্টি করে। ইমরানের গল্পের বস্তুনিষ্ঠতা বাড়ায় চরিত্রসমূহের হৃদয়াবেগ। বিভিন্ন পরিস্থিতি ও ঘটনার নিরতিশয় শিকার হিসেবে তাদের যে মৌলিক প্রতিক্রিয়া, সেটাই লেখক দেখান এবং তিনি তার গল্পে তত্ত্বাবেগ আরোপ করেন না।
কিন্তু দু'দশক আগে, আবদুল্লাহ আল ইমরানের কৈশোরে, সেখানে ভয়াবহ এক ঘটনা ঘটে যায় রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হতে থাকে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সেগুলোর ওপর নির্ভরশীল অসংখ্য মানুষ ও তাদের অর্থনীতি। তারা নিঃস্ব হয়ে পড়ে। ওলটপালট হয়ে যায় জীবন। টিকে থাকার জন্য তাদের কেউ কেউ অপরাধে জড়ায়। কেউ কেউ অভিবাসনে বাধ্য হয়। কেউ আবার নামে প্রতারণায়। নানান ধরনের বিশৃঙ্খলা, বিকৃতি দেখা দেয় সমাজে। প্রভাবশালী, ক্ষমতাবানদের অত্যাচার বেড়ে যায়। অর্থাৎ কারখানা বন্ধের তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে এমন সব ঘটনা সেখানে ঘটতে থাকে, যেগুলোর অভিজ্ঞতা সেখানকার মানুষের ছিল না। এসব ঘটনাই উঠে এসেছে ইমরানের উপন্যাস 'কালচক্র'তে। উপন্যাসটি তিনি লিখেছেন সেই ঘটনার অন্তত এক যুগ পরে। উপন্যাসে তিনি একই সমান্তরালে বেশ কিছু গল্প বলেছেন, যার কয়েকটি তার সমবয়সী চরিত্রদের নিয়ে। বোঝাই যায়, এ ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ স্মৃতিকেই গল্পে রূপ দিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ সেই গল্পগুলোর চরিত্রগুলো তার কাছের, সরাসরি দেখেছেন বা তাদের কথা শুনেছেন অথবা চরিত্রগুলোর মধ্যে তিনি নিজেই ছিলেন। এগুলোতে লেখকের সরল হৃদয়াবেগ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। যেমন, একটি নিম্নবিত্ত পরিবারকে নিয়ে যে গল্পটি আছে, তা বিবৃত হয়েছে দু'জন কিশোরের কথোপকথনে। তার একজন ওই পরিবারেরই সদস্য। আরেকজন মনে হয় লেখক নিজেই।
আরও বেশ ক'টি ঘটনা তিনি লিখেছেন যেগুলো নিশ্চয়ই সেই বয়সে তার মনে দাগ কেটেছিল। কিন্তু ঘটনাগুলোর জটিলতা বোঝার জন্য পরিণত সমাজ দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে সাম্প্র্রদায়িকতা, ক্রূূরতা, লোলুপতার গল্পগুলো, যেগুলো বলার জন্য তিনি এক যুগের প্রস্তুতি নিয়েছেন। ফলে এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, তার এই উপন্যাসে আত্মজৈবনিকতার ছাপ আছে।
তবে উপন্যাসের সবক'টি গল্পই কিন্তু কারখানা বন্ধের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। তবে সেগুলো ওই পরিপ্রেক্ষিতেরই গল্প। এদের মধ্যে প্রান্তিক ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের ওপর শোষণ-বঞ্চনা, নিগ্রহ-নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা তুলে আনা হয়েছে। আবার সেই সঙ্গে প্রবলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সৌন্দর্যও চিত্রায়িত হয়েছে। দেখা গেছে, কখনও কখনও শুধু সাহসের ওপর ভর করে দাঁড়িয়েছে তারা। আবার কখনও পরিস্থিতিই তাদের প্রতিবাদের মিছিলে দাঁড় করিয়ে দেয়, আত্মাহুতিতেও উদ্বুদ্ধ করে। যখন দু'ধারেই মৃত্যু, তখন মানুষ হয়তো এভাবেই বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পায়।
উপন্যাসটিতে প্রেমানুরাগের একাধিক বিয়োগান্ত পরিণতি আমরা দেখি, যার নেপথ্যে সমাজের দীর্ঘকালের ভ্রান্তি, বিভেদ, সংস্কার, ষড়যন্ত্র ইত্যাদির ভূমিকা উন্মোচন করেছেন লেখক। কালচক্র উপন্যাসের নামের মধ্যেই আভাসিত হয় এখানে চরিত্রগুলো একটি আবর্তের মধ্যে পড়েছে। এদের মধ্যে কেউ আছেন, যাদের পটভূমিতে নদীভাঙন রয়েছে। আবার কারখানাও গড়ে উঠেছে নদীর তীরেই। নদীর বাঁকবদলের মতোই জীবনের গতিপ্রবাহ। আবার চাকার গতির ভিন্নতায় একেক কালপর্বে ভিন্ন গতি পায় সেই জীবন। নদী বয়ে যায়, চাকা ঘোরে, জীবন একই গতি নিয়ে আবর্তিত হতে থাকে একেক কালের ভেতর, গতিরুদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত।
নদীভাঙন বা সেই আর্থ-উৎপাদনশীলতার চাকা দৈবাৎ বন্ধ হয়ে যদি যায়, সেখানে মানুষের জীবন, বিশেষ করে প্রান্তস্থ যারা, তাদের জীবন বিভিন্ন দিকে ছিটকে পড়ে। ইমরানের ধারাভাষ্যে মূর্ত হয় এমন ভাঙন। মানুষে মানুষে ভেদরেখা প্রকট হয়ে ওঠে, সমাজের অশুভ স্টম্ফীতি পায়। তখন লালসা শুধু বস্তুসম্পদ নয়, আগ্রাসী গ্রাসে জীবনের সমূহ সৌন্দর্য গিলে খেতে চায়। তবুও উপন্যাসটির শেষ পর্যায়ে এসে আমরা দেখি সমূহ বিপর্যয়, আঘাত, অপঘাত আর বিচ্ছেদের মধ্যেও তা জীবনের স্বপ্ন জাগিয়ে রাখে। বোঝাই যায়, শুধু শিল্প সৃষ্টি নয়; এই বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরার একটি তাগিদ ইমরানের মধ্যে ছিল। উপন্যাসটি তাই একদিকে যেমন লেখকের প্রখর প্রত্যক্ষণের সামর্থ্য তুলে ধরে, তেমনি গভীর সমাজবিশ্নেষণী ক্ষমতারও পরিচয় বহন করে। বিশেষ করে উপন্যাসে চরিত্রগুলোর মনোলোকের যে সূক্ষ্ণ চিত্রায়ণ আমরা পাই, তা সেখানকার জনমণ্ডলীর জীবনে লেখকের গভীর অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়। খুলনার পাটকল বন্ধের গভীর, সুদূরপ্রসারী অভিঘাত রয়েছে অসংখ্য মানুষের ওপর। আগে এ সম্পর্কে লোকমুখে, গণমাধ্যমে ও রাজনৈতিক বিতণ্ডা থেকে আমরা তার সামান্যই জেনেছি। কিন্তু তার ওপর এত বড় প্রামাণিক সাহিত্যকর্ম, এত ব্যাপক আলোকপ্রক্ষেপণ সম্ভবত আর হয়নি। সেটি করার মধ্য দিয়ে ইমরান একজন অঙ্গীকারসম্পন্ন সাহিত্যিকেরই দায়িত্ব পালন করেছেন। এই উপন্যাস একই সঙ্গে আমাদের রাষ্ট্র-অর্থনীতির ক্রমবিকাশ বোঝার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।
গত এক দশকে বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি মাধ্যমের বিকাশে আর কারও না হোক, অন্তত বাংলাদেশে বা বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের ওপর একটি প্রভাব পড়েছে। অল্প আয়াসেই বইয়ের বিকল্প মেলে। ফলে বলাই বাহুল্য, বইয়ের পেছনে মাথাপিছু ব্যয়িত সময়ের একটি ভাগ তাতে চলে গেছে। কিন্তু ইমরানের এই উপন্যাস বহু পাঠকের কাছে পৌঁছেছে, তা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস দেখা গেছে তাদের মধ্যে। এর একটি বড় কারণ তার চরিত্রগুলো অচেনা মনে হলেও বিনির্মিত মনে হয় না। আখ্যানে বিধৃত গল্পসমূহের প্রতিটি বাঁকেই অভাবিত বাস্তবতা। অনিশ্চয়তাগুলোই ঘটনাসমূহের নাট্যধর্মিতা সৃষ্টি করে। ইমরানের গল্পের বস্তুনিষ্ঠতা বাড়ায় চরিত্রসমূহের হৃদয়াবেগ। বিভিন্ন পরিস্থিতি ও ঘটনার নিরতিশয় শিকার হিসেবে তাদের যে মৌলিক প্রতিক্রিয়া, সেটাই লেখক দেখান এবং তিনি তার গল্পে তত্ত্বাবেগ আরোপ করেন না।
মন্তব্য করুন