
-তুই আবার একটা বিয়া কর বাপ।
ভিডিও কলে জলজ্যান্ত মানুষটার মুখাবয়ব ভেসে ওঠে। কথা বলার সময় মায়ের শারীরিক ভাষা ঠিকঠাক পড়ার চেষ্টা করে আলম। ভিডিও কলে কতটুকুইবা আর দেখা যায়! তার ওপর পারুল বেগম আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করে অনর্গল কথা বলায় তেমন পারদর্শীও নন। তাই শারীরিক ভাষা না বলে মুখের ভাষা দেখে বোঝার চেষ্টা করছে আলম, এ কথা বলাই ঢের ভালো। মায়ের মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে রেবেকার প্রতি তীব্র ক্ষোভ। রেবেকার সঙ্গে বিয়েতে একফোঁটা সম্মতি ছিল না মায়ের। পারুল বেগম ভেবেছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে শ্রম বিক্রি করা ছেলেকে বড় ঘরে বিয়ে করাবেন। রেস্তোরাঁয় থালাবাসন ধোয়ামোছার কাজ হোক অথবা পেট্রোল পাম্পের তদারকি করুক, ছেলে বিদেশে চাকরি করে বলে কথা! দিন শেষে টাকা জমা পড়ছে ব্যাংকে, পাল্টে যাচ্ছে বাড়ির হালসুরত; অতএব ছেলের বিয়ের জন্য বড়লোকের মেয়ে আশা করা পারুল বেগমের কোনো অন্যায় দাবি তো ছিল না।
ঠিক চার বছর ৯ মাস দশ দিন আগে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে দেশে এসেছিল আলম। ঘটক চান মিয়ার চিতি পড়া মলিন ব্যাগে লাল-নীল-গোলাপি শাড়ি পরা গোলাকার, ডিম্বাকার, লম্বা মুখের পাত্রীরা একে অন্যের সঙ্গে লেপ্টে আছে- চান মিয়া সেগুলো আলাদা আলাদা করে আলমের চোখের সামনে মেলে ধরে। পেট গুলিয়ে আসা সুগন্ধি জর্দা দিয়ে পান চিবাতে চিবাতে চান মিয়া বারান্দার গ্রিলের ফুটো দিয়ে পানের পিক ফেলে উঠানে; মুখের পাশ দিয়ে পড়তে থাকে লালার সঙ্গে মিশে থাকা পানের টকটকে লাল রস। হাতের চেটোয় মুখ মুছে চান মিয়া পাত্রীদের পারিবারিক ফিরিস্তি বর্ণনা শুরু করে। কোনো পাত্রীর বাবা মেম্বার, কারও বাবা বাজারে কাঠের স মিলের মালিক, সব পয়সাওয়ালা ঘর। পারুল বেগমের চোখ চকচক করে ওঠে। পাত্রীদের উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতার আশা তেমন একটা করেনি আলম। কারণ, সে নিজেই বিএ ক্লাসে ওঠার পর আর মন লাগাতে পারেনি পড়াশোনায়, পাস দেওয়া হয়নি আর। পারুল বেগম সব সময় আফসোস করেন, বিদেশে চাকরির সঙ্গে বিএ পাসের ডিগ্রিটাও যদি পাশে বসানো যেত, তাহলে চেয়ারম্যানের মেয়ে জরিনাকে ঘরে আনায় আর কোনো বাধাই থাকত না।
তবু কী এক অদৃশ্য কারণে চান মিয়ার ব্যাগের মেয়েরা আলমকে টানতে পারে না। উঠানে নেমে আবারও পানের পিক ফেলে ঘটক চান মিয়া; তারপর গজগজ করতে করতে চলে যায়। পারুল বেগমের মুখ তখন বর্ষার আকাশ। মেম্বারের মেয়েকে মনে ধরেছিল তার অথচ ছেলের মনের আশপাশ দিয়েও গেল না সেই মেয়ে। সলিম মাঝি স্ত্রীকে বোঝায়-
'বিয়া করব পোলা, তুমি এমন ফোসফোস করো ক্যা? ও যেমুন চায় করুক।'
রহমত-মফিজ-আরিফের সঙ্গে বাজারে গুলতানি মেরে ফেরার পথে একদিন আলমের চোখ পড়ে যায় রেবেকার ওপর; স্কুল থেকে ফিরছিল সে। সাদা আর সবুজ রঙের স্কুলড্রেসের সাদা রংটা বুঝে নিতে হয়। ময়লা হতে হতে সাদা তখন বিবর্ণ হয়ে গেছে, তবু সেই রং ছাপিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রেবেকার গায়ের রং। বুকে জাপটে ধরা বইখাতা, বুকের আকার তাই দেখা হয় না আলমের। তবু সেই মুখ আর চোখ দেখেই স্থির সংকল্পে পৌঁছায়, রেবেকাকেই বিয়ে করবে সে।
পারুল বেগমের মাথা ঝিমঝিম করে ওঠে, আপত্তি তোলেন। সে আপত্তি ছেলের কানে পৌঁছায় না, হৃদয়ে পৌঁছানো তো বহুদূর। অগত্যা পারুল বেগম মেনে নেন; টাকার উৎসকে বেশি ঘাঁটালে বিপদ। রেবেকার বাড়িতে যায় বিয়ের প্রস্তাব।
বর্গাচাষি হালিম মিয়া স্বপ্নেও ভাবেনি বিদেশে চাকরি করা ছেলের জন্য তার মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব আসবে। রাজি হতে একবিন্দু দ্বিধাও করে না সে। অভাবের সংসারে কোনো কোনো দিন ভাতও জোটে না। তিন-তিনটা মেয়ে গলায় কাঁটার মতো বিঁধে আছে; না পারে গিলতে, না পারে ফেলতে। রেবেকা ছাত্রী ভালো, ক্লাস ফাইভ আর এইটে বৃত্তি পেয়েছে। 'বৃত্তি' মানে কী, তা না বুঝলেও, নিজের টাকায় সে পড়াশোনা করে, এটা বেশ বোঝে হালিম মিয়া। স্কুলের স্যারেরা বলে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় রেবেকার 'জিপিএ ফাইভ' কেউ আটকাতে পারবে না। কিন্তু এমন পাত্র পাওয়া হালিম মিয়ার সাতজন্মের পুণ্যের ফল। এই পাত্র হাতছাড়া করলে গুনাহ হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি রেবেকার অন্য একটা গুণ শিক্ষকদের নজর কাড়ত সব সময়- তার গানের গলা খুব মিষ্টি; প্রতিদিন জাতীয় সংগীত ছাড়াও স্কুলের যে কোনো অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য রেবেকার ডাক পড়ত। চিরকাল রেবেকা মেপে মেপে কথা বলে; বিয়ের তোড়জোড় শুনেও তার মুখে কোনো কথা নেই। তার নীরবতায় হালিম মিয়ার পরিবারের মুখে হাসি ফোটে। বেজে ওঠে বিয়ের সানাই।
বিয়ের পর এক মাস দেশে থেকে আলম আবার পাড়ি জমায় ভূমধ্যসাগরের তীরে। যে ক'টা দিন বাড়িতে ছিল, সেই দিনগুলোয় সে অনুভব করে রেবেকার ওপর তীব্র ক্ষোভ পারুল বেগমের। প্রতিটি কাজেই খুঁত বের হয় নতুন বউয়ের। নতুন বউ আস্তে আস্তে পুরোনো হয়, কিন্তু পারুল বেগমের মনের বদল হয় না। প্রতি রাতেই একটা নির্দিষ্ট সময়ে ভিডিও কলে রেবেকার সঙ্গে কথা বলে আলম। এক রাতে রেবেকা গেয়ে শোনায়-
'আমার ঘুম ভাঙ্গাইয়া গেল গো মরার কোকিলে ...।'
গানের সুর-তাল-লয় মেলাতে গিয়ে গলাটা সেদিন একটু চড়ে যায় তার। পরদিন পারুল বেগমের অভিযোগ আসে, রেবেকার মাথায় জিন-পরীর আসর রয়েছে। আলমের বুঝতে বাকি থাকে না, প্রতি রাতে ভিডিও কলে কথা বলার সময় একজোড়া কান দরজার ওপারে নীরবে সব কথা তার মগজে ঢোকায়। অথচ রেবেকা কোনো দিন কারও বিরুদ্ধে আলমের কাছে অভিযোগ করে না, কোনো চাহিদাও নেই তার।
'একজন মানুষ কী করে এতটা নির্লিপ্ত হয়!'
আলম ভাবতে থাকে।
বছরে একবার করে এক মাসের জন্য দেশে আসে আলম। ঠিক দুই দিন পর আবার তার দেশে আসার ফ্লাইট। এ সময় পারুল বেগমের বলা আরেকটা বিয়ে করার কথা তার সব আনন্দে জল ঢেলে দেয়। সন্তান হচ্ছে না রেবেকার। তাই আবার বিয়ের কথা বলছেন তিনি। আলম এসব নিয়ে ভাবেওনি এতদিন, কিন্তু এবার মনে হচ্ছে দেশে গিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
আলম এখন দেশে। মনোযোগ দিয়ে সব শোনেন ডাক্তার রেহানা।
-আপনাদের বিবাহিত জীবনের বয়স তো প্রায় পাঁচ বছর। আপনি কতটা সময় দেশে ছিলেন?
-প্রতি বছরেই একবার আসি, এক মাস থাকি।
-এক মাসেই আপনার সন্তান হয়ে যাবে?
-আম্মা বলেন সন্তান হইতে এক দিনই যথেষ্ট।
-সন্তান হতে এক মুহূর্তই যথেষ্ট। এটা যেমন ঠিক, তেমনি ঠিক এই থিওরি সবার সঙ্গে মেলেও না। ডাক্তারি ভাষায়, সন্তান হতে হলে অন্তত তিন মাস একসঙ্গে থাকতে হয় এবং নিয়ম মেনে থাকতে হয়। নারীদেহে মাসের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ডিম তৈরি হয়। সন্তান ধারণের জন্য ঠিক সেই সময়ে সহবাস খুব জরুরি। এভাবে তিন মাস মিলিত হওয়ার পরও যদি সন্তান না আসে এবং এভাবে বেশ কয়েক বছর গত হয়ে গেলে তখন আমরা বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার কথা ভাবি, এর আগে নয়। এবার কত দিন থাকবেন?
-এইবার বেশি সময় নিয়া আইছি। আড়াই মাস থাকব, আফা।
ডাক্তার রেহানার শিখিয়ে দেওয়া নিয়মে নিয়ম করে মিলিত হয় তারা। অঙ্ক মিলে যেতে থাকে। দুই মাসের মাথাতেই দরজায় এসে কড়া নাড়ে শুভসংবাদ। আকাঙ্ক্ষিত সন্তান আসছে তার গর্ভে। আলমেরও ফিরে যাওয়ার সময় এসে পড়ে। এ প্রথম রেবেকা কেমন অসহায়-মুখে স্বামীর দিকে তাকায়; চোখের ভাষায় তার ভেতরের ছটফটানি ফুটে ওঠে। আলম তাকে বোঝায়, এখন না গেলে আবার সন্তান জন্মের সময় মিলবে না ছুটি। রেবেকা এবং অদেখা সন্তানের ভার বাবা-মায়ের ওপর ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে উঠে বসে আলম।
দিনে দিনে বদলে যেতে থাকে রেবেকার পেটের আকার। পারুল বেগমের মুখের ভাষাও বদলায় একই সঙ্গে।
-পেট দেইখা মনে হইতাছে বউয়ের মাইয়াই হইব।
-মাইয়া হইলে সমস্যা কী আম্মা? তোমারও তো আমার আগে মাইয়াই হইছিল; ভুইলা গেলা বুবুর কথা?
আট বছরের আরিফা এবং চার বছরের আলমকে নিয়ে দুপুরের ভাতঘুমে বিভোর পারুল বেগম, সলিম মাঝি তখন ঘাটে নাও টানায় ব্যস্ত। কী এক কালঘুম পারুল বেগমের চোখে! মেয়েটা গুটি গুটি পায়ে চৌকি থেকে নেমে দরজা ঠেলে কখন যে বের হয়ে গেল, বিন্দুমাত্র টের পেল না সে। ঘোর বর্ষাকাল তখন। ডোবা-নালা সব পানিতে টইটম্বুর। ঘুম ভাঙার পর পারুল বেগমের আত্মা শুকিয়ে কাঠ। কোথায় আরিফা? আশপাশের বাড়িঘর, বাগান-জঙ্গল তন্নতন্ন করে খুঁজেও পাওয়া গেল না বুকের মানিক। খানিক বাদে নওশেরদের পুকুর ঘাটে দেখা গেল ছোট একজোড়া গোলাপি হাওয়াই চপ্পল। কারও আর বুঝতে বাকি রইল না শাপলা তুলতে গিয়ে পুকুরে পড়ে গেছে আরিফা। সলিম মাঝিসহ আরও তিন-চারজন জাল টেনে টেনে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় খুঁজে পেল আরিফাকে। ততক্ষণে আরিফা লাশ।
পুরোনো ক্ষতে টান পড়ে পারুল বেগমের। এ ক্ষত শুকিয়ে শুকিয়ে চামড়ার ভেতর এমনভাবে মিলে গিয়েছিল, এত বছর পরে সেই দাগ আর দেখাও যায় না। কিন্তু আলম একদম সেই ক্ষত ধরে টান মারতে বাধ্য হয়। মোমবাতির শেষ সলতের মতো জ্বলতে জ্বলতে দপ করে নিভে যায় পারুল বেগমের মুখ।
পেটের মধ্যে ফুটবল খেলার দাপট বাড়ে। শক্তিসামর্থ্য দিয়ে শিশু বোঝায় এবার আমার আলো দেখার সময় হয়ে এলো। চীন দেশ থেকে আসা এক ভয়াবহ সংক্রামক রোগ তত দিনে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে। বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন করোনাভাইরাস। শুকিয়ে যাওয়া পাতার মতো টুপটুপ করে মরে যাচ্ছে মানুষ। শতক থেকে হাজার, হাজার থেকে লাখ লাখ মানুষ লাশের সংখ্যা গণনায় ঢুকে পড়ছে প্রতিনিয়ত। এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলাচলের সব রাস্তা বন্ধ। ভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি বার্তা দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দেশে ফেরা হয় না আলমের। সুটকেসের ভেতরে ছয় মাস ধরে জমানো জনসনের সাবান, শ্যাম্পুর বোতলগুলো বারবার খুলে বুকে জড়ায় সে; মনটা কাটা কই মাছের মতো তড়পায়।
পারুল বেগমের অনুমান মিথ্যা প্রমাণ করে ছেলেসন্তানের জন্ম দেয় রেবেকা। হাসপাতাল থেকে ফেরার তিন দিন পর থেকেই রেবেকার গায়ে ধুম ফাটানো জ্বর।
-আম্মা, রেবেকারে জেলা শহরে নিয়া যাও। করোনা টেস্ট করা লাগব।
-তোগো যা কতা! পোলাপান হওনের পর এমুন জ্বর আমাগোও হইছে। বুকে দুধ আইলে পরথম পরথম জ্বর আইয়া পড়ে।
আজ কোজাগরি পূর্ণিমা। নিবারণ চক্রবর্তীদের বাড়ি থেকে ভেসে আসে সম্মিলিত উলুধ্বনি। শিশুরা কুলা বাজিয়ে আওয়াজ করতে থাকে-
'ঘরের লক্ষ্মী ঘরে আয়, অলক্ষ্মী দূর হ।'
দক্ষিণমুখী জানালাটা খুলে দেয় রেবেকা। চাঁদের আলোয় সুপারিগাছের পাতাগুলো চকচক করে ওঠে। জোছনার আলো এসে পড়ে শিশুটির মুখে। বাইরে কত্ত বাতাস কিন্তু রেবেকার ভেতরটা একটু বাতাস চেয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে। কোথাও কি একফোঁটা বাতাস নেই। পুরো শরীর ঘামে ভিজে যায়, শ্বাস নিতে চেষ্টা করে করে ক্লান্ত হয় রেবেকা।
এতদিন বাদে টুলু এসে দাঁড়ায় রেবেকার সামনে। ওরা তিন বোন একসঙ্গে স্কুলে যেত। প্রতিদিন টুলু পেছন পেছন গিয়ে ওদের এগিয়ে দিয়ে আসত। যেন এক ভাই পাহারা দিয়ে বোনদের আড়াল করছে সব বিপদ থেকে।
হালিম মিয়া হাটে গেলেও আঠার মতো সেঁটে থাকত টুলু। কোনো কাজে জেলা সদরে যেতে হলে রিকশার পেছনে প্রাণপণ দৌড়াত টুলু। রেবেকার আম্মা তখন রিকশা থামিয়ে বলতেন-
'এই টুলু, বাড়িত যা, আমরা সদরে যাইতেছি।'
বাধ্য ছেলের মতো হালিমার কথা শুনে বাড়ি ফিরে যেত টুলু। সেই টুলু সারা দিন ধরে ওঠে না, কিছু খায় না। হালিমার ধারণা, শয়তানি করে টুলুকে কেউ বিষ খাইয়ে দিয়েছে। দুই দিন যুদ্ধ করে হেরে গেল আদরের কুকুরটা। বাড়িসুদ্ধ মানুষের কান্না সেদিন থামে না স্বজন হারানোর বেদনায়। রেবেকার মতো টুলুও কি একফোঁটা বাতাসের জন্য মিনতি করেছিল সেদিন।
শিশুর চিৎকারে দৌড়ে ঘরে ঢোকে পারুল বেগম। পেছন পেছন আস্তে আস্তে আসে সলিম মাঝি। মৃত মায়ের স্তন চুষে চুষে একফোঁটা দুধও না পেয়ে নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে অনবরত কান্না করে যেতে থাকে এগারো দিন বয়সী একটা অবুঝ শিশু।
পারুল বেগম ফুঁসে ওঠে-
'পরথমেই কইছিলাম মাইয়াডা অলক্ষ্মী। না অইলে আইজকের রাইতেই এমুন ছোড পোলা ফালাইয়া মরতে হইলো!'
ভিডিও কলে জলজ্যান্ত মানুষটার মুখাবয়ব ভেসে ওঠে। কথা বলার সময় মায়ের শারীরিক ভাষা ঠিকঠাক পড়ার চেষ্টা করে আলম। ভিডিও কলে কতটুকুইবা আর দেখা যায়! তার ওপর পারুল বেগম আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করে অনর্গল কথা বলায় তেমন পারদর্শীও নন। তাই শারীরিক ভাষা না বলে মুখের ভাষা দেখে বোঝার চেষ্টা করছে আলম, এ কথা বলাই ঢের ভালো। মায়ের মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে রেবেকার প্রতি তীব্র ক্ষোভ। রেবেকার সঙ্গে বিয়েতে একফোঁটা সম্মতি ছিল না মায়ের। পারুল বেগম ভেবেছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে শ্রম বিক্রি করা ছেলেকে বড় ঘরে বিয়ে করাবেন। রেস্তোরাঁয় থালাবাসন ধোয়ামোছার কাজ হোক অথবা পেট্রোল পাম্পের তদারকি করুক, ছেলে বিদেশে চাকরি করে বলে কথা! দিন শেষে টাকা জমা পড়ছে ব্যাংকে, পাল্টে যাচ্ছে বাড়ির হালসুরত; অতএব ছেলের বিয়ের জন্য বড়লোকের মেয়ে আশা করা পারুল বেগমের কোনো অন্যায় দাবি তো ছিল না।
ঠিক চার বছর ৯ মাস দশ দিন আগে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে দেশে এসেছিল আলম। ঘটক চান মিয়ার চিতি পড়া মলিন ব্যাগে লাল-নীল-গোলাপি শাড়ি পরা গোলাকার, ডিম্বাকার, লম্বা মুখের পাত্রীরা একে অন্যের সঙ্গে লেপ্টে আছে- চান মিয়া সেগুলো আলাদা আলাদা করে আলমের চোখের সামনে মেলে ধরে। পেট গুলিয়ে আসা সুগন্ধি জর্দা দিয়ে পান চিবাতে চিবাতে চান মিয়া বারান্দার গ্রিলের ফুটো দিয়ে পানের পিক ফেলে উঠানে; মুখের পাশ দিয়ে পড়তে থাকে লালার সঙ্গে মিশে থাকা পানের টকটকে লাল রস। হাতের চেটোয় মুখ মুছে চান মিয়া পাত্রীদের পারিবারিক ফিরিস্তি বর্ণনা শুরু করে। কোনো পাত্রীর বাবা মেম্বার, কারও বাবা বাজারে কাঠের স মিলের মালিক, সব পয়সাওয়ালা ঘর। পারুল বেগমের চোখ চকচক করে ওঠে। পাত্রীদের উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতার আশা তেমন একটা করেনি আলম। কারণ, সে নিজেই বিএ ক্লাসে ওঠার পর আর মন লাগাতে পারেনি পড়াশোনায়, পাস দেওয়া হয়নি আর। পারুল বেগম সব সময় আফসোস করেন, বিদেশে চাকরির সঙ্গে বিএ পাসের ডিগ্রিটাও যদি পাশে বসানো যেত, তাহলে চেয়ারম্যানের মেয়ে জরিনাকে ঘরে আনায় আর কোনো বাধাই থাকত না।
তবু কী এক অদৃশ্য কারণে চান মিয়ার ব্যাগের মেয়েরা আলমকে টানতে পারে না। উঠানে নেমে আবারও পানের পিক ফেলে ঘটক চান মিয়া; তারপর গজগজ করতে করতে চলে যায়। পারুল বেগমের মুখ তখন বর্ষার আকাশ। মেম্বারের মেয়েকে মনে ধরেছিল তার অথচ ছেলের মনের আশপাশ দিয়েও গেল না সেই মেয়ে। সলিম মাঝি স্ত্রীকে বোঝায়-
'বিয়া করব পোলা, তুমি এমন ফোসফোস করো ক্যা? ও যেমুন চায় করুক।'
রহমত-মফিজ-আরিফের সঙ্গে বাজারে গুলতানি মেরে ফেরার পথে একদিন আলমের চোখ পড়ে যায় রেবেকার ওপর; স্কুল থেকে ফিরছিল সে। সাদা আর সবুজ রঙের স্কুলড্রেসের সাদা রংটা বুঝে নিতে হয়। ময়লা হতে হতে সাদা তখন বিবর্ণ হয়ে গেছে, তবু সেই রং ছাপিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রেবেকার গায়ের রং। বুকে জাপটে ধরা বইখাতা, বুকের আকার তাই দেখা হয় না আলমের। তবু সেই মুখ আর চোখ দেখেই স্থির সংকল্পে পৌঁছায়, রেবেকাকেই বিয়ে করবে সে।
পারুল বেগমের মাথা ঝিমঝিম করে ওঠে, আপত্তি তোলেন। সে আপত্তি ছেলের কানে পৌঁছায় না, হৃদয়ে পৌঁছানো তো বহুদূর। অগত্যা পারুল বেগম মেনে নেন; টাকার উৎসকে বেশি ঘাঁটালে বিপদ। রেবেকার বাড়িতে যায় বিয়ের প্রস্তাব।
বর্গাচাষি হালিম মিয়া স্বপ্নেও ভাবেনি বিদেশে চাকরি করা ছেলের জন্য তার মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব আসবে। রাজি হতে একবিন্দু দ্বিধাও করে না সে। অভাবের সংসারে কোনো কোনো দিন ভাতও জোটে না। তিন-তিনটা মেয়ে গলায় কাঁটার মতো বিঁধে আছে; না পারে গিলতে, না পারে ফেলতে। রেবেকা ছাত্রী ভালো, ক্লাস ফাইভ আর এইটে বৃত্তি পেয়েছে। 'বৃত্তি' মানে কী, তা না বুঝলেও, নিজের টাকায় সে পড়াশোনা করে, এটা বেশ বোঝে হালিম মিয়া। স্কুলের স্যারেরা বলে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় রেবেকার 'জিপিএ ফাইভ' কেউ আটকাতে পারবে না। কিন্তু এমন পাত্র পাওয়া হালিম মিয়ার সাতজন্মের পুণ্যের ফল। এই পাত্র হাতছাড়া করলে গুনাহ হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি রেবেকার অন্য একটা গুণ শিক্ষকদের নজর কাড়ত সব সময়- তার গানের গলা খুব মিষ্টি; প্রতিদিন জাতীয় সংগীত ছাড়াও স্কুলের যে কোনো অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য রেবেকার ডাক পড়ত। চিরকাল রেবেকা মেপে মেপে কথা বলে; বিয়ের তোড়জোড় শুনেও তার মুখে কোনো কথা নেই। তার নীরবতায় হালিম মিয়ার পরিবারের মুখে হাসি ফোটে। বেজে ওঠে বিয়ের সানাই।
বিয়ের পর এক মাস দেশে থেকে আলম আবার পাড়ি জমায় ভূমধ্যসাগরের তীরে। যে ক'টা দিন বাড়িতে ছিল, সেই দিনগুলোয় সে অনুভব করে রেবেকার ওপর তীব্র ক্ষোভ পারুল বেগমের। প্রতিটি কাজেই খুঁত বের হয় নতুন বউয়ের। নতুন বউ আস্তে আস্তে পুরোনো হয়, কিন্তু পারুল বেগমের মনের বদল হয় না। প্রতি রাতেই একটা নির্দিষ্ট সময়ে ভিডিও কলে রেবেকার সঙ্গে কথা বলে আলম। এক রাতে রেবেকা গেয়ে শোনায়-
'আমার ঘুম ভাঙ্গাইয়া গেল গো মরার কোকিলে ...।'
গানের সুর-তাল-লয় মেলাতে গিয়ে গলাটা সেদিন একটু চড়ে যায় তার। পরদিন পারুল বেগমের অভিযোগ আসে, রেবেকার মাথায় জিন-পরীর আসর রয়েছে। আলমের বুঝতে বাকি থাকে না, প্রতি রাতে ভিডিও কলে কথা বলার সময় একজোড়া কান দরজার ওপারে নীরবে সব কথা তার মগজে ঢোকায়। অথচ রেবেকা কোনো দিন কারও বিরুদ্ধে আলমের কাছে অভিযোগ করে না, কোনো চাহিদাও নেই তার।
'একজন মানুষ কী করে এতটা নির্লিপ্ত হয়!'
আলম ভাবতে থাকে।
বছরে একবার করে এক মাসের জন্য দেশে আসে আলম। ঠিক দুই দিন পর আবার তার দেশে আসার ফ্লাইট। এ সময় পারুল বেগমের বলা আরেকটা বিয়ে করার কথা তার সব আনন্দে জল ঢেলে দেয়। সন্তান হচ্ছে না রেবেকার। তাই আবার বিয়ের কথা বলছেন তিনি। আলম এসব নিয়ে ভাবেওনি এতদিন, কিন্তু এবার মনে হচ্ছে দেশে গিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
আলম এখন দেশে। মনোযোগ দিয়ে সব শোনেন ডাক্তার রেহানা।
-আপনাদের বিবাহিত জীবনের বয়স তো প্রায় পাঁচ বছর। আপনি কতটা সময় দেশে ছিলেন?
-প্রতি বছরেই একবার আসি, এক মাস থাকি।
-এক মাসেই আপনার সন্তান হয়ে যাবে?
-আম্মা বলেন সন্তান হইতে এক দিনই যথেষ্ট।
-সন্তান হতে এক মুহূর্তই যথেষ্ট। এটা যেমন ঠিক, তেমনি ঠিক এই থিওরি সবার সঙ্গে মেলেও না। ডাক্তারি ভাষায়, সন্তান হতে হলে অন্তত তিন মাস একসঙ্গে থাকতে হয় এবং নিয়ম মেনে থাকতে হয়। নারীদেহে মাসের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ডিম তৈরি হয়। সন্তান ধারণের জন্য ঠিক সেই সময়ে সহবাস খুব জরুরি। এভাবে তিন মাস মিলিত হওয়ার পরও যদি সন্তান না আসে এবং এভাবে বেশ কয়েক বছর গত হয়ে গেলে তখন আমরা বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার কথা ভাবি, এর আগে নয়। এবার কত দিন থাকবেন?
-এইবার বেশি সময় নিয়া আইছি। আড়াই মাস থাকব, আফা।
ডাক্তার রেহানার শিখিয়ে দেওয়া নিয়মে নিয়ম করে মিলিত হয় তারা। অঙ্ক মিলে যেতে থাকে। দুই মাসের মাথাতেই দরজায় এসে কড়া নাড়ে শুভসংবাদ। আকাঙ্ক্ষিত সন্তান আসছে তার গর্ভে। আলমেরও ফিরে যাওয়ার সময় এসে পড়ে। এ প্রথম রেবেকা কেমন অসহায়-মুখে স্বামীর দিকে তাকায়; চোখের ভাষায় তার ভেতরের ছটফটানি ফুটে ওঠে। আলম তাকে বোঝায়, এখন না গেলে আবার সন্তান জন্মের সময় মিলবে না ছুটি। রেবেকা এবং অদেখা সন্তানের ভার বাবা-মায়ের ওপর ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে উঠে বসে আলম।
দিনে দিনে বদলে যেতে থাকে রেবেকার পেটের আকার। পারুল বেগমের মুখের ভাষাও বদলায় একই সঙ্গে।
-পেট দেইখা মনে হইতাছে বউয়ের মাইয়াই হইব।
-মাইয়া হইলে সমস্যা কী আম্মা? তোমারও তো আমার আগে মাইয়াই হইছিল; ভুইলা গেলা বুবুর কথা?
আট বছরের আরিফা এবং চার বছরের আলমকে নিয়ে দুপুরের ভাতঘুমে বিভোর পারুল বেগম, সলিম মাঝি তখন ঘাটে নাও টানায় ব্যস্ত। কী এক কালঘুম পারুল বেগমের চোখে! মেয়েটা গুটি গুটি পায়ে চৌকি থেকে নেমে দরজা ঠেলে কখন যে বের হয়ে গেল, বিন্দুমাত্র টের পেল না সে। ঘোর বর্ষাকাল তখন। ডোবা-নালা সব পানিতে টইটম্বুর। ঘুম ভাঙার পর পারুল বেগমের আত্মা শুকিয়ে কাঠ। কোথায় আরিফা? আশপাশের বাড়িঘর, বাগান-জঙ্গল তন্নতন্ন করে খুঁজেও পাওয়া গেল না বুকের মানিক। খানিক বাদে নওশেরদের পুকুর ঘাটে দেখা গেল ছোট একজোড়া গোলাপি হাওয়াই চপ্পল। কারও আর বুঝতে বাকি রইল না শাপলা তুলতে গিয়ে পুকুরে পড়ে গেছে আরিফা। সলিম মাঝিসহ আরও তিন-চারজন জাল টেনে টেনে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় খুঁজে পেল আরিফাকে। ততক্ষণে আরিফা লাশ।
পুরোনো ক্ষতে টান পড়ে পারুল বেগমের। এ ক্ষত শুকিয়ে শুকিয়ে চামড়ার ভেতর এমনভাবে মিলে গিয়েছিল, এত বছর পরে সেই দাগ আর দেখাও যায় না। কিন্তু আলম একদম সেই ক্ষত ধরে টান মারতে বাধ্য হয়। মোমবাতির শেষ সলতের মতো জ্বলতে জ্বলতে দপ করে নিভে যায় পারুল বেগমের মুখ।
পেটের মধ্যে ফুটবল খেলার দাপট বাড়ে। শক্তিসামর্থ্য দিয়ে শিশু বোঝায় এবার আমার আলো দেখার সময় হয়ে এলো। চীন দেশ থেকে আসা এক ভয়াবহ সংক্রামক রোগ তত দিনে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে। বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন করোনাভাইরাস। শুকিয়ে যাওয়া পাতার মতো টুপটুপ করে মরে যাচ্ছে মানুষ। শতক থেকে হাজার, হাজার থেকে লাখ লাখ মানুষ লাশের সংখ্যা গণনায় ঢুকে পড়ছে প্রতিনিয়ত। এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলাচলের সব রাস্তা বন্ধ। ভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি বার্তা দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দেশে ফেরা হয় না আলমের। সুটকেসের ভেতরে ছয় মাস ধরে জমানো জনসনের সাবান, শ্যাম্পুর বোতলগুলো বারবার খুলে বুকে জড়ায় সে; মনটা কাটা কই মাছের মতো তড়পায়।
পারুল বেগমের অনুমান মিথ্যা প্রমাণ করে ছেলেসন্তানের জন্ম দেয় রেবেকা। হাসপাতাল থেকে ফেরার তিন দিন পর থেকেই রেবেকার গায়ে ধুম ফাটানো জ্বর।
-আম্মা, রেবেকারে জেলা শহরে নিয়া যাও। করোনা টেস্ট করা লাগব।
-তোগো যা কতা! পোলাপান হওনের পর এমুন জ্বর আমাগোও হইছে। বুকে দুধ আইলে পরথম পরথম জ্বর আইয়া পড়ে।
আজ কোজাগরি পূর্ণিমা। নিবারণ চক্রবর্তীদের বাড়ি থেকে ভেসে আসে সম্মিলিত উলুধ্বনি। শিশুরা কুলা বাজিয়ে আওয়াজ করতে থাকে-
'ঘরের লক্ষ্মী ঘরে আয়, অলক্ষ্মী দূর হ।'
দক্ষিণমুখী জানালাটা খুলে দেয় রেবেকা। চাঁদের আলোয় সুপারিগাছের পাতাগুলো চকচক করে ওঠে। জোছনার আলো এসে পড়ে শিশুটির মুখে। বাইরে কত্ত বাতাস কিন্তু রেবেকার ভেতরটা একটু বাতাস চেয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে। কোথাও কি একফোঁটা বাতাস নেই। পুরো শরীর ঘামে ভিজে যায়, শ্বাস নিতে চেষ্টা করে করে ক্লান্ত হয় রেবেকা।
এতদিন বাদে টুলু এসে দাঁড়ায় রেবেকার সামনে। ওরা তিন বোন একসঙ্গে স্কুলে যেত। প্রতিদিন টুলু পেছন পেছন গিয়ে ওদের এগিয়ে দিয়ে আসত। যেন এক ভাই পাহারা দিয়ে বোনদের আড়াল করছে সব বিপদ থেকে।
হালিম মিয়া হাটে গেলেও আঠার মতো সেঁটে থাকত টুলু। কোনো কাজে জেলা সদরে যেতে হলে রিকশার পেছনে প্রাণপণ দৌড়াত টুলু। রেবেকার আম্মা তখন রিকশা থামিয়ে বলতেন-
'এই টুলু, বাড়িত যা, আমরা সদরে যাইতেছি।'
বাধ্য ছেলের মতো হালিমার কথা শুনে বাড়ি ফিরে যেত টুলু। সেই টুলু সারা দিন ধরে ওঠে না, কিছু খায় না। হালিমার ধারণা, শয়তানি করে টুলুকে কেউ বিষ খাইয়ে দিয়েছে। দুই দিন যুদ্ধ করে হেরে গেল আদরের কুকুরটা। বাড়িসুদ্ধ মানুষের কান্না সেদিন থামে না স্বজন হারানোর বেদনায়। রেবেকার মতো টুলুও কি একফোঁটা বাতাসের জন্য মিনতি করেছিল সেদিন।
শিশুর চিৎকারে দৌড়ে ঘরে ঢোকে পারুল বেগম। পেছন পেছন আস্তে আস্তে আসে সলিম মাঝি। মৃত মায়ের স্তন চুষে চুষে একফোঁটা দুধও না পেয়ে নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে অনবরত কান্না করে যেতে থাকে এগারো দিন বয়সী একটা অবুঝ শিশু।
পারুল বেগম ফুঁসে ওঠে-
'পরথমেই কইছিলাম মাইয়াডা অলক্ষ্মী। না অইলে আইজকের রাইতেই এমুন ছোড পোলা ফালাইয়া মরতে হইলো!'
মন্তব্য করুন