
আমার সত্তর বছর বয়স। জন্ম টিকাটুলীতে। ঢাকা শহরে খুব কম মানুষ ছিল, এবং তাদের বাসায় বাসায় বাত্তি (বিদ্যুৎ) ছিল। সব সময় যে বাত্তি থাকত, তা না। তবে ওটা কেউ আশাও করত না।
আমি জন্মেছি ১৯৫২ সালে। অন্তত ৫৫ থেকে স্মৃতি আছে আমার। রাস্তায় আমরা ইলেকট্রিক বাতি তখনও দেখিনি। ৫৫-৫৬-তে আমি দেখেছি, সন্ধ্যাবেলা বাতিওয়ালা এসে ল্যাম্পপোস্টে বাতি জ্বালিয়ে দিত। এটা খুব স্বাভাবিক দৃশ্য ছিল। আর ঢাকা শহরে এত গরম ছিল না। কোনোদিন এত বেশি গরম পড়েছে বলে আমার মনে পড়ে না। বাতি চলে গেলে এখন যে রকম কষ্ট হয় মানুষের, তেমন হতো না। ওই সময়েও নিয়মিত বাতি চলে যেত।
তখন দুটো অবলম্বন ছিল। এক মোমবাতি, দুই হারিকেন। মোমবাতি দামি। এজন্য লোকে হারিকেন ব্যবহার করত। সন্ধ্যাবেলা হারিকেনগুলো তৈরি করে রাখা হতো। বাত্তি যেত রাতের দিকে, দিনের দিকে অত বাত্তি যেত না। মোমবাতির একটা বড় প্রয়োজন ছিল লেখাপড়ার জন্য। অবশ্য সারাদিনের মধ্যে লেখাপড়াটা হয়ে যেত।
মগবাজারের স্মৃতি
টিকাটুলী থেকে আমরা চলে এলাম ১৯৫৭ বা ৫৮ সালের দিকে ইস্পাহানী কলোনি, মগবাজার। ওখানে বাত্তি যেত না। তখন কিন্তু মানুষ বাত্তি তত দেখতে পেত না। ঢাকা শহর তখনও ততটা বড় হয়নি। অত খাদক নেই। ১৯৬০ সাল থেকে বাতি যাওয়া শুরু হলো। ষাটের দশকে যথেষ্ট বাত্তি যেত, আমার মনে আছে। তখন ঝড়বৃষ্টি বেশি হতো। এখন তো ঝড়বৃষ্টিও কমে গেছে।
ঝড়বৃষ্টি ঢাকায় অনেক হতো আর ঝড়বৃষ্টি হওয়া মানেই বাত্তি চলে যাওয়া। এ একেবারে নিয়মিত ছিল। আমার মনে আছে ১৯৬৮-৬৯-এর দিকের কথা। তখন দিলু রোডে থাকতাম। বেইলি রোডে একটা সাবস্টেশন ছিল। বাত্তি চলে গেলে কতদিন যে কত লোক সেই বেইলি রোডে গিয়ে খোঁজ নিয়েছে! আমরা ফোন করতাম-
হ্যালো, বেইলি রোড সাবস্টেশন! বাত্তি আছে নাকি? কেন নেই?
এখন এ সমস্ত করার উপায় নেই। এখন আমাদের সে অবস্থাও নেই।
একটা কথা মনে আছে। ৬৬ সালের কথা। ঝড় হয়েছিল একটা বড়। এবং তিন দিন বাত্তি ছিল না গোটা ঢাকা শহরে। তখন যে এত কষ্ট হয়েছে তা না। কেন তত কষ্ট হয়নি তা আমি বলতে পারব না। মনে হয় অভ্যস্ততার কোনো বিষয় আছে। সেই সময়ের একটা ঘটনা আমার আজও স্মরণে আছে। তখন গোটা ঢাকা শহর অন্ধকার। তার মধ্যে একজন হট পেটিসওয়ালা-
হট পেটিস, হট পেটিস-
বলে বলে যাচ্ছিল।
মনে হয়েছিল আহা, এই লোকটার কোনো উপায় নেই। এই অন্ধকারে লোকটা বের হয়েছে হট পেটিস বিক্রি করতে। কে হট পেটিস খাবে ওই ঝড়বৃষ্টির মধ্যে? লোকটা একটানা ডেকেছে। আমরাও খাইনি, ডাকিনি। আমার মনে আছে ওই সময় আমরা চার ভাই বাসায় ছিলাম। আমার বাবা-মা তখন গিয়েছিলেন পাকিস্তানে। আমার বাবার কোনো কাজ ছিল। ওই দিনগুলো একটা পিকনিকের মতো মনে হয়েছিল আমাদের।
তখন তো গ্যাসের চুলা ছিল না। কেরোসিনের চুলায় রান্না হতো, আর না হয় লাকড়িতে। তার ফলে গ্যাসের দুশ্চিন্তা ছিল না।
আমরা ছিলাম দুই তলায়- মানে ওপর তলা। পয়সাপাতি না থাকলেও সুযোগ-সুবিধা অনেক ছিল। আমরা পঁয়ষট্টির পর যে বাড়িতে থাকতাম, সেখানে আমার বাবা-মা এসি রুমে থাকতেন। সে সময় বেশি এসি ছিল না। আমরা গিয়ে মাঝে মাঝে এসিতে থাকতাম। কিন্তু ওটাও মনে হয়নি যে আমাদের এসি রুমে থাকতে হবে। এখন কিন্তু আমি আর পারব না। যে গরম ঢাকা শহরে, আমার অ্যালার্জি হয়ে যায় এ গরমের মধ্যে থাকতে।
ঢাকার আবহাওয়াটা কিন্তু অনেক কোমল ছিল। কোমল আবহাওয়া থাকার ফলে মানুষের এই বিজলি বাত্তির কষ্টটা ছিল না।
হারিকেনটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ ৭০-এর পরে। এত বাত্তি চলে যেত যে আমরা হ্যাজাক ল্যাম্পের কথা ভাবছিলাম। কিন্তু একজন বলল-
হ্যাজাক ল্যাম্পটা খারাপ হবে। এটা অনেক সময় বার্স্ট করে।
তখন আমার বাবা হ্যাজাক বাতিটা আর আনলেন না। লন্ঠন ব্যবহার করত ৭০-এর পর বহু মানুষ। উপায় নেই! মুক্তিযুদ্ধের সময় কিন্তু বাত্তি গেছে বলে মনে হয় না। দুয়েকবার বোধ হয় গেছে।
মোমবাতির বিপদ
এবার আমি একটা উদাহরণ দিই যে মোমবাতি দিয়ে কতটা বিপদ হতো। আমার তখন অনার্স পরীক্ষা চলছে। মোমবাতি দিয়ে পড়ছি। দুই-তিনটা মোমবাতি লাগিয়ে পড়ছি। সেই সময় আমার খালাকে দেখলাম।
আমার খালারা কলকাতার। আমার মা কলকাতার মানুষ। বাবা নোয়াখালীর। আমার ওই খালা পরে কলকাতাতেই রয়ে যান, বাবা-মা চলে এসেছিলেন।
মোমবাত্তি জ্বলছে, এমন সময় পড়া রেখে খালার সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়েছি। আমার মামার বাসার উল্টোদিকে। হঠাৎ আমার খালা বলেন-
এই ওটা কার ঘর!
আমি বলি-
আমার, কেন?
খালা বললেন-
আগুন লেগেছে!
আমি দৌড়ে ওপরে উঠে দেখি আমার মোমবাতি পড়ে বইপত্রে রীতিমতো আগুন ধরে গেছে। ভাগ্যিস, মোটা মোটা বই ছিল। ওই সেই বই মেরে মেরে আগুন বন্ধ করলাম। তারপর আবার পড়তে বসলাম। আমি সৌভাগ্যবান। ওই পরীক্ষাতেও আমি ভালো নম্বর পেয়েছি।
এ ঘটনা স্বাধীনতার পর। আমাদের জীবনে মোমবাতি খুব সহজ একটা বিষয় ছিল। এটা জীবনের অংশ ছিল। তারপর একটা সময় এটা আমার জীবন থেকে চলে গেল।
লোডশেডিংয়ের জন্য অপেক্ষা
আমার বিল্ডিংয়ে যে ঘরে আমি থাকি, ওই ঘরটা রোদ পায় যে পরিমাণ! এত রোদ পায় যে, সকালবেলা উঠে গরমে ঘামতে থাকি। রাতের শোয়াটা কষ্টের। রাতে একটু ঠান্ডা হয়, তখন মানুষ হয়তো ফ্যানটা চালিয়ে রাত পার করতে পারে। আমি তো বয়স্ক মানুষ, আর আমি না হয় একটা এয়ারকন্ডিশনার মেশিন এফোর্ট করতে পারি, বেশিরভাগ মানুষ তো পারে না। তাদের কষ্টটা কী রকম হয়? ঘুমটা কী রকম হয় মানুষের? ঘুম হয় না। বাচ্চাদের কী অবস্থা হয়, ছোট বাচ্চাদের? আমার তো ছোট বাচ্চা নেই, কিন্তু আমি তো জানি কী কষ্টটা তারা পায়।
লোডশেডিংয়ের ব্যাপারটা এখন যেমন চলছে, আমি বুঝি না। প্রথম সাত দিন বিরক্ত লেগেছে। আমি যখন কানাডা থেকে ফিরলাম ২০১২ সালে, তখন আমি লোডশেডিং প্রথম দেখলাম। লোডশেডিং হতো তখন দিনে দুই-তিনবার। কিন্তু ওটা অভ্যস্ততার ভেতর পড়ে গিয়েছিল। মাঝখানে কয়েক বছর পরে লোডশেডিং বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই আবার শুরু হলো। কিন্তু এই লোডশেডিংয়ের আমি কিছু বুঝতে পারছি না এই কারণে- গত তিন দিন আমার এলাকায় লোডশেডিং নেই। কী কারণ? সরকার শিডিউলটা কেন দেয়?
আমি একবারও দেখিনি যে শিডিউলের সঙ্গে মিলেছে। একবারও না। একদিন গেছে চারবার! কোনো কারণ আছে চারবার যাওয়ার? আর তার পরের দিন একবারও যায়নি।
আমার মনে হয়, আমাদের সমস্যা হলো আমরা দক্ষ না। আমরা দক্ষ না বলেই আমরা লোডশেডিং নিয়ে এত হযবরল করছি। লোডশেডিং করে বিপদ সামাল দেওয়ার মতো ক্ষমতাও আমাদের হয়নি। এবং এটা এখানে কেউ ডিমান্ড করে না। ডিমান্ড করে না বলেই আমাদের এখানে সিস্টেমে টিকে থাকার জন্য দক্ষতার প্রয়োজন নেই। দক্ষতার সমস্যার কারণেই আমাদের কষ্টটা এত। শুনলাম কয়েকটি জায়গায় আজকে লোডশেডিং হবে না। লোডশেডিং হবে না তা আগে জানিয়ে দিলেই হতো! এই জায়গায় যে লোডশেডিং হবে না তিন দিন আগে জানাল না কেন?
আমাদের যেটা অসুবিধা হয়- আমি সংসারের কাজও করি, পড়াশোনাও করি। লোডশেডিং হলে কম্পিউটার বন্ধ হয়ে যায়। আমি লিখতে পারি না। আমি তো সংসার চালাই লিখে। কখন লিখব। তো আমাকে রাতের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এই রাতে একটু শান্তি পাওয়া যায়, তখন লেখা যায়। আমার কী করতে হয়েছে- জীবনধারার পরিবর্তন করতে হয়েছে। আমি দু'টা-তিনটার আগে শুতে যাই না। কারণ কাজ শেষ করে তারপর আমি শুই। আমাকে যদি একটা বই পড়তে হয়, তখন কী করব?
আমি একটা বই লেখাতে হাত দেব। আমি এখনও জানি না (হঠাৎ) লোডশেডিং হবে কিনা। কাল থেকে অপেক্ষা করছি লোডশেডিং হবে। এখনও হয়নি।
লোডশেডিং হওয়াটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, না হওয়াটাও তেমনই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তো বুঝতে পারছি না হবে কিনা। জানাটা জরুরি। কেউ জানাচ্ছে না আমাকে। আমি কী করব? আমি অপেক্ষা করছি। নিয়তির ওপর অপেক্ষা করছি, সরকারের ওপর অপেক্ষা করছি, প্রকৃতির ওপর অপেক্ষা করছি- কখন লোডশেডিং হবে।
টরন্টোয় লোডশেডিং
আমি টরন্টোতে ছিলাম ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল। ওখানে কিন্তু একবার লোডশেডিং হয়েছিল। মজা না? কানাডাতে লোডশেডিং? ভাবা যায় না। এমনিতে টরন্টোতে কখনও লোডশেডিং হয় না। তবে দুয়েক সময় হয়। হয়তো তুষারপাত হয়েছে, তখন হয়। ওখানে বাত্তির চাহিদা থাকে শীতকালে বেশি। কারণ, ঘর গরম করতে বিদ্যুৎ লাগে। ওখানে অনেক সময় বাড়িতে বাড়িতে বাত্তি চলে যায়। ফোন করলে তখনই লোক এসে সারিয়ে দেয়।
অনেক সময় বড় কোনো একটা অ্যাপার্টমেন্টে বাত্তি চলে যেত। ম্যাসি বলে একটা অ্যাপার্টমেন্ট আছে, ওটা বাঙালিদের পাড়ায়। ওখানে তো একেক সময় পুরোটা আউট হয়ে যেত। কিন্তু ওটা বিষয় না। ওদের বিকল্প ব্যবস্থা থাকত।
টরন্টোর ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। ওখানকার মানুষ অত খরচও করে না। টরন্টোর সমাজ কিন্তু আমাদের বড়লোকি সমাজ না। ওখানে সবচেয়ে বড়লোকি বাড়িগুলো কিন্তু বাঙালিরা কিনেছে। ওখানে এম্বাসি রো বলে এক জায়গা আছে। এই এম্বাসি রো হচ্ছে বড়লোকদের জায়গা।
আমি একদিন গিয়েছিলাম। ট্রামে করে যাচ্ছিলাম দেখার জন্য যে এ পথ কত দূর যায়। তখন এক জায়গায় একজন দেখাল অ্যাম্বেসি রো। টরন্টোর অভিজাত এলাকা। তারপর পত্রিকায় একদিন দেখলাম, ওখানে সবচেয়ে বেশি বাড়ি কিনেছে বাঙালিরা। বাঙালিরা এখান থেকে পয়সা নিয়ে যায়। এরা মূলত গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির মালিক। রাজনীতিক, আমলারাও আছে, কিন্তু ওরা একটু দূরে থাকতে চায়।
লোডশেডিং : আফ্রিকা পর্ব
আমি পৃথিবীর পঁচিশটা দেশে থেকেছি। কোন দেশের লোডশেডিং দেখি নাই আমি? সব দেশে। আফ্রিকায় তো অনেকবার করে হয়। সেখান মাত্র চার-পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত। আমার মনে আছে, আমি একবার আদ্দিস আবাবাতে ছিলাম, তখন যুদ্ধ চলছে। ইথিওপিয়ার যুদ্ধ। যখন কমিউনিস্টদের সরাল ওরা। সেটা মধ্য নব্বইয়ের দিকে।
তিন দল যুদ্ধ করছে। এয়ারপোর্ট এক দলের দখলে, শহর আরেক দলের দখলে। আর শহরের বাইরে আরেক দল বসে আছে। অবরুদ্ধ। বিদ্যুৎ নেই। সবকিছুর বাড়তেই থাকল দাম। তখন ওখানে আমি কাজ করি এইডস নিয়ে। সবচেয়ে বেশি যৌনরোগী আদ্দিস আবাবায়, শহরের জনসংখ্যার অনুপাতে। মেয়েদের তো কোনো রুজি ছিল না সেই সময়। যুদ্ধের পরপর বা যুদ্ধের সময়তেও। যৌনকর্মে জড়িয়ে পড়ত।
উগান্ডায়ও বাত্তি থাকে না। নিয়মিত হারে বাত্তি থাকে না। পৃথিবীর বেশিরভাগ জায়গায় আসলে বাত্তি থাকে না। এটা আমরা ভুলে যাই। উন্নত দেশে বাত্তি আছে। যেমন আমেরিকায় তো আর বাত্তি যায় না। আমি আমেরিকায় মেইনে, নিউইয়র্কে, মেরিল্যান্ডে নব্বইয়ের দশকে থেকেছি। কোনোটায় বাত্তি যায় না।
আমি নাইজেরিয়াতেও ছিলাম। আসা-যাওয়ার মধ্যে। সেখানেও যৌনরোগীদের নিয়ে কাজ করেছি। নাইজেরিয়ার একটা শহরে ছিলাম, নাম বাউচি। নাইজেরিয়ার উত্তরাংশে, অনেক দূরের শহর। সেনাবাহিনীর লোকেরা ওখানে কাজ করে। বাউচিতে বাত্তি থাকে না।
বাত্তি আসাটা যে মানুষের অধিকারের ভেতর, এটা অনেকে ভাবতে পারে না। এখন আমি জানি না, পৃথিবীর মানুষ কতটা বাত্তি পায় বা না পায়। তখনকার দিনে বাত্তি পাওয়াটাই ছিল আশ্চর্য ব্যাপার।
আচ্ছা বাত্তি এসেছে! জলদি করো, এই করো ওই করো!
অসুবিধা কোনটা হতো- ওষুধগুলো নষ্ট হয়ে যেত না। আমি ইনসুলিন দিই। আমার এখানে যদি বাত্তি চলে যায় তো প্রথম চিন্তা হবে আমি ইনসুলিনটা বাঁচাব কী করে! ওরাও তো এই ভাবে। টিকাদান কর্মসূচিতে যখন কাজ করতে গেছি, খুব অসুবিধা হতো।
আফ্রিকাতে যে জিনিসটা ঘটে, সেখানে অনেক রকম ভাইরাল অসুখ হয়। ওখানে তো জঙ্গল ছিল, জঙ্গল কেটে মানুষ প্রবেশ করছে, সুতরাং ওখানে অনেক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। আফ্রিকায় বাত্তি যে যায়, মানুষ অভিযোগও করে না। কিছু বলে না। ওরা অনেক বেশি সহ্য করে। কারণ, জীবনের কাছে কোনো আশা নেই।
উপসংহারে ঢাকা
বাড়ি হয়েছে অনেক ঢাকা শহরে। সারাদিন গরমটাকে ধরে রাখে আর সন্ধ্যাবেলা ছাড়ে। আর এসি প্রচুর বেড়েছে। এসির জন্য অন্তত এক-দুই সেন্টিডিগ্রি তাপ বেশি হয়। জনসংখ্যাও বেড়েছে।
যে যে কারণে গরম কমার কথা, একটা কিছুও প্রায় নেই ঢাকা শহরে।
সত্তরের দশক-ষাটের দশকের কথা বলছি। ওই সময় মানুষের অনেক কিছুই ছিল না। অনেক সময় একটানা বৃষ্টি হতো দুই-তিন দিনের, আজকাল যেগুলো হয় না। তখন কাপড় শুকানোর জন্য বেতের একরকম জিনিস পাওয়া যেত। কঞ্চি দিয়ে বানানো। ওটার ওপর রেখে দিত। গরম কয়লা থাকত, ওটার ভাপ উঠে কাপড় শুকানো হতো। এখন এমনটা ঢাকার মানুষের জন্য তো ভাবাই যায় না। এখন মানুষ বিদ্যুৎনির্ভর। আমরা এত বিদ্যুৎনির্ভর ছিলাম না।
এখন সব বিদ্যুৎনির্ভর, সেই কারণেই সমস্যা।
আমি জন্মেছি ১৯৫২ সালে। অন্তত ৫৫ থেকে স্মৃতি আছে আমার। রাস্তায় আমরা ইলেকট্রিক বাতি তখনও দেখিনি। ৫৫-৫৬-তে আমি দেখেছি, সন্ধ্যাবেলা বাতিওয়ালা এসে ল্যাম্পপোস্টে বাতি জ্বালিয়ে দিত। এটা খুব স্বাভাবিক দৃশ্য ছিল। আর ঢাকা শহরে এত গরম ছিল না। কোনোদিন এত বেশি গরম পড়েছে বলে আমার মনে পড়ে না। বাতি চলে গেলে এখন যে রকম কষ্ট হয় মানুষের, তেমন হতো না। ওই সময়েও নিয়মিত বাতি চলে যেত।
তখন দুটো অবলম্বন ছিল। এক মোমবাতি, দুই হারিকেন। মোমবাতি দামি। এজন্য লোকে হারিকেন ব্যবহার করত। সন্ধ্যাবেলা হারিকেনগুলো তৈরি করে রাখা হতো। বাত্তি যেত রাতের দিকে, দিনের দিকে অত বাত্তি যেত না। মোমবাতির একটা বড় প্রয়োজন ছিল লেখাপড়ার জন্য। অবশ্য সারাদিনের মধ্যে লেখাপড়াটা হয়ে যেত।
মগবাজারের স্মৃতি
টিকাটুলী থেকে আমরা চলে এলাম ১৯৫৭ বা ৫৮ সালের দিকে ইস্পাহানী কলোনি, মগবাজার। ওখানে বাত্তি যেত না। তখন কিন্তু মানুষ বাত্তি তত দেখতে পেত না। ঢাকা শহর তখনও ততটা বড় হয়নি। অত খাদক নেই। ১৯৬০ সাল থেকে বাতি যাওয়া শুরু হলো। ষাটের দশকে যথেষ্ট বাত্তি যেত, আমার মনে আছে। তখন ঝড়বৃষ্টি বেশি হতো। এখন তো ঝড়বৃষ্টিও কমে গেছে।
ঝড়বৃষ্টি ঢাকায় অনেক হতো আর ঝড়বৃষ্টি হওয়া মানেই বাত্তি চলে যাওয়া। এ একেবারে নিয়মিত ছিল। আমার মনে আছে ১৯৬৮-৬৯-এর দিকের কথা। তখন দিলু রোডে থাকতাম। বেইলি রোডে একটা সাবস্টেশন ছিল। বাত্তি চলে গেলে কতদিন যে কত লোক সেই বেইলি রোডে গিয়ে খোঁজ নিয়েছে! আমরা ফোন করতাম-
হ্যালো, বেইলি রোড সাবস্টেশন! বাত্তি আছে নাকি? কেন নেই?
এখন এ সমস্ত করার উপায় নেই। এখন আমাদের সে অবস্থাও নেই।
একটা কথা মনে আছে। ৬৬ সালের কথা। ঝড় হয়েছিল একটা বড়। এবং তিন দিন বাত্তি ছিল না গোটা ঢাকা শহরে। তখন যে এত কষ্ট হয়েছে তা না। কেন তত কষ্ট হয়নি তা আমি বলতে পারব না। মনে হয় অভ্যস্ততার কোনো বিষয় আছে। সেই সময়ের একটা ঘটনা আমার আজও স্মরণে আছে। তখন গোটা ঢাকা শহর অন্ধকার। তার মধ্যে একজন হট পেটিসওয়ালা-
হট পেটিস, হট পেটিস-
বলে বলে যাচ্ছিল।
মনে হয়েছিল আহা, এই লোকটার কোনো উপায় নেই। এই অন্ধকারে লোকটা বের হয়েছে হট পেটিস বিক্রি করতে। কে হট পেটিস খাবে ওই ঝড়বৃষ্টির মধ্যে? লোকটা একটানা ডেকেছে। আমরাও খাইনি, ডাকিনি। আমার মনে আছে ওই সময় আমরা চার ভাই বাসায় ছিলাম। আমার বাবা-মা তখন গিয়েছিলেন পাকিস্তানে। আমার বাবার কোনো কাজ ছিল। ওই দিনগুলো একটা পিকনিকের মতো মনে হয়েছিল আমাদের।
তখন তো গ্যাসের চুলা ছিল না। কেরোসিনের চুলায় রান্না হতো, আর না হয় লাকড়িতে। তার ফলে গ্যাসের দুশ্চিন্তা ছিল না।
আমরা ছিলাম দুই তলায়- মানে ওপর তলা। পয়সাপাতি না থাকলেও সুযোগ-সুবিধা অনেক ছিল। আমরা পঁয়ষট্টির পর যে বাড়িতে থাকতাম, সেখানে আমার বাবা-মা এসি রুমে থাকতেন। সে সময় বেশি এসি ছিল না। আমরা গিয়ে মাঝে মাঝে এসিতে থাকতাম। কিন্তু ওটাও মনে হয়নি যে আমাদের এসি রুমে থাকতে হবে। এখন কিন্তু আমি আর পারব না। যে গরম ঢাকা শহরে, আমার অ্যালার্জি হয়ে যায় এ গরমের মধ্যে থাকতে।
ঢাকার আবহাওয়াটা কিন্তু অনেক কোমল ছিল। কোমল আবহাওয়া থাকার ফলে মানুষের এই বিজলি বাত্তির কষ্টটা ছিল না।
হারিকেনটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ ৭০-এর পরে। এত বাত্তি চলে যেত যে আমরা হ্যাজাক ল্যাম্পের কথা ভাবছিলাম। কিন্তু একজন বলল-
হ্যাজাক ল্যাম্পটা খারাপ হবে। এটা অনেক সময় বার্স্ট করে।
তখন আমার বাবা হ্যাজাক বাতিটা আর আনলেন না। লন্ঠন ব্যবহার করত ৭০-এর পর বহু মানুষ। উপায় নেই! মুক্তিযুদ্ধের সময় কিন্তু বাত্তি গেছে বলে মনে হয় না। দুয়েকবার বোধ হয় গেছে।
মোমবাতির বিপদ
এবার আমি একটা উদাহরণ দিই যে মোমবাতি দিয়ে কতটা বিপদ হতো। আমার তখন অনার্স পরীক্ষা চলছে। মোমবাতি দিয়ে পড়ছি। দুই-তিনটা মোমবাতি লাগিয়ে পড়ছি। সেই সময় আমার খালাকে দেখলাম।
আমার খালারা কলকাতার। আমার মা কলকাতার মানুষ। বাবা নোয়াখালীর। আমার ওই খালা পরে কলকাতাতেই রয়ে যান, বাবা-মা চলে এসেছিলেন।
মোমবাত্তি জ্বলছে, এমন সময় পড়া রেখে খালার সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়েছি। আমার মামার বাসার উল্টোদিকে। হঠাৎ আমার খালা বলেন-
এই ওটা কার ঘর!
আমি বলি-
আমার, কেন?
খালা বললেন-
আগুন লেগেছে!
আমি দৌড়ে ওপরে উঠে দেখি আমার মোমবাতি পড়ে বইপত্রে রীতিমতো আগুন ধরে গেছে। ভাগ্যিস, মোটা মোটা বই ছিল। ওই সেই বই মেরে মেরে আগুন বন্ধ করলাম। তারপর আবার পড়তে বসলাম। আমি সৌভাগ্যবান। ওই পরীক্ষাতেও আমি ভালো নম্বর পেয়েছি।
এ ঘটনা স্বাধীনতার পর। আমাদের জীবনে মোমবাতি খুব সহজ একটা বিষয় ছিল। এটা জীবনের অংশ ছিল। তারপর একটা সময় এটা আমার জীবন থেকে চলে গেল।
লোডশেডিংয়ের জন্য অপেক্ষা
আমার বিল্ডিংয়ে যে ঘরে আমি থাকি, ওই ঘরটা রোদ পায় যে পরিমাণ! এত রোদ পায় যে, সকালবেলা উঠে গরমে ঘামতে থাকি। রাতের শোয়াটা কষ্টের। রাতে একটু ঠান্ডা হয়, তখন মানুষ হয়তো ফ্যানটা চালিয়ে রাত পার করতে পারে। আমি তো বয়স্ক মানুষ, আর আমি না হয় একটা এয়ারকন্ডিশনার মেশিন এফোর্ট করতে পারি, বেশিরভাগ মানুষ তো পারে না। তাদের কষ্টটা কী রকম হয়? ঘুমটা কী রকম হয় মানুষের? ঘুম হয় না। বাচ্চাদের কী অবস্থা হয়, ছোট বাচ্চাদের? আমার তো ছোট বাচ্চা নেই, কিন্তু আমি তো জানি কী কষ্টটা তারা পায়।
লোডশেডিংয়ের ব্যাপারটা এখন যেমন চলছে, আমি বুঝি না। প্রথম সাত দিন বিরক্ত লেগেছে। আমি যখন কানাডা থেকে ফিরলাম ২০১২ সালে, তখন আমি লোডশেডিং প্রথম দেখলাম। লোডশেডিং হতো তখন দিনে দুই-তিনবার। কিন্তু ওটা অভ্যস্ততার ভেতর পড়ে গিয়েছিল। মাঝখানে কয়েক বছর পরে লোডশেডিং বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই আবার শুরু হলো। কিন্তু এই লোডশেডিংয়ের আমি কিছু বুঝতে পারছি না এই কারণে- গত তিন দিন আমার এলাকায় লোডশেডিং নেই। কী কারণ? সরকার শিডিউলটা কেন দেয়?
আমি একবারও দেখিনি যে শিডিউলের সঙ্গে মিলেছে। একবারও না। একদিন গেছে চারবার! কোনো কারণ আছে চারবার যাওয়ার? আর তার পরের দিন একবারও যায়নি।
আমার মনে হয়, আমাদের সমস্যা হলো আমরা দক্ষ না। আমরা দক্ষ না বলেই আমরা লোডশেডিং নিয়ে এত হযবরল করছি। লোডশেডিং করে বিপদ সামাল দেওয়ার মতো ক্ষমতাও আমাদের হয়নি। এবং এটা এখানে কেউ ডিমান্ড করে না। ডিমান্ড করে না বলেই আমাদের এখানে সিস্টেমে টিকে থাকার জন্য দক্ষতার প্রয়োজন নেই। দক্ষতার সমস্যার কারণেই আমাদের কষ্টটা এত। শুনলাম কয়েকটি জায়গায় আজকে লোডশেডিং হবে না। লোডশেডিং হবে না তা আগে জানিয়ে দিলেই হতো! এই জায়গায় যে লোডশেডিং হবে না তিন দিন আগে জানাল না কেন?
আমাদের যেটা অসুবিধা হয়- আমি সংসারের কাজও করি, পড়াশোনাও করি। লোডশেডিং হলে কম্পিউটার বন্ধ হয়ে যায়। আমি লিখতে পারি না। আমি তো সংসার চালাই লিখে। কখন লিখব। তো আমাকে রাতের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এই রাতে একটু শান্তি পাওয়া যায়, তখন লেখা যায়। আমার কী করতে হয়েছে- জীবনধারার পরিবর্তন করতে হয়েছে। আমি দু'টা-তিনটার আগে শুতে যাই না। কারণ কাজ শেষ করে তারপর আমি শুই। আমাকে যদি একটা বই পড়তে হয়, তখন কী করব?
আমি একটা বই লেখাতে হাত দেব। আমি এখনও জানি না (হঠাৎ) লোডশেডিং হবে কিনা। কাল থেকে অপেক্ষা করছি লোডশেডিং হবে। এখনও হয়নি।
লোডশেডিং হওয়াটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, না হওয়াটাও তেমনই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তো বুঝতে পারছি না হবে কিনা। জানাটা জরুরি। কেউ জানাচ্ছে না আমাকে। আমি কী করব? আমি অপেক্ষা করছি। নিয়তির ওপর অপেক্ষা করছি, সরকারের ওপর অপেক্ষা করছি, প্রকৃতির ওপর অপেক্ষা করছি- কখন লোডশেডিং হবে।
টরন্টোয় লোডশেডিং
আমি টরন্টোতে ছিলাম ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল। ওখানে কিন্তু একবার লোডশেডিং হয়েছিল। মজা না? কানাডাতে লোডশেডিং? ভাবা যায় না। এমনিতে টরন্টোতে কখনও লোডশেডিং হয় না। তবে দুয়েক সময় হয়। হয়তো তুষারপাত হয়েছে, তখন হয়। ওখানে বাত্তির চাহিদা থাকে শীতকালে বেশি। কারণ, ঘর গরম করতে বিদ্যুৎ লাগে। ওখানে অনেক সময় বাড়িতে বাড়িতে বাত্তি চলে যায়। ফোন করলে তখনই লোক এসে সারিয়ে দেয়।
অনেক সময় বড় কোনো একটা অ্যাপার্টমেন্টে বাত্তি চলে যেত। ম্যাসি বলে একটা অ্যাপার্টমেন্ট আছে, ওটা বাঙালিদের পাড়ায়। ওখানে তো একেক সময় পুরোটা আউট হয়ে যেত। কিন্তু ওটা বিষয় না। ওদের বিকল্প ব্যবস্থা থাকত।
টরন্টোর ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। ওখানকার মানুষ অত খরচও করে না। টরন্টোর সমাজ কিন্তু আমাদের বড়লোকি সমাজ না। ওখানে সবচেয়ে বড়লোকি বাড়িগুলো কিন্তু বাঙালিরা কিনেছে। ওখানে এম্বাসি রো বলে এক জায়গা আছে। এই এম্বাসি রো হচ্ছে বড়লোকদের জায়গা।
আমি একদিন গিয়েছিলাম। ট্রামে করে যাচ্ছিলাম দেখার জন্য যে এ পথ কত দূর যায়। তখন এক জায়গায় একজন দেখাল অ্যাম্বেসি রো। টরন্টোর অভিজাত এলাকা। তারপর পত্রিকায় একদিন দেখলাম, ওখানে সবচেয়ে বেশি বাড়ি কিনেছে বাঙালিরা। বাঙালিরা এখান থেকে পয়সা নিয়ে যায়। এরা মূলত গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির মালিক। রাজনীতিক, আমলারাও আছে, কিন্তু ওরা একটু দূরে থাকতে চায়।
লোডশেডিং : আফ্রিকা পর্ব
আমি পৃথিবীর পঁচিশটা দেশে থেকেছি। কোন দেশের লোডশেডিং দেখি নাই আমি? সব দেশে। আফ্রিকায় তো অনেকবার করে হয়। সেখান মাত্র চার-পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত। আমার মনে আছে, আমি একবার আদ্দিস আবাবাতে ছিলাম, তখন যুদ্ধ চলছে। ইথিওপিয়ার যুদ্ধ। যখন কমিউনিস্টদের সরাল ওরা। সেটা মধ্য নব্বইয়ের দিকে।
তিন দল যুদ্ধ করছে। এয়ারপোর্ট এক দলের দখলে, শহর আরেক দলের দখলে। আর শহরের বাইরে আরেক দল বসে আছে। অবরুদ্ধ। বিদ্যুৎ নেই। সবকিছুর বাড়তেই থাকল দাম। তখন ওখানে আমি কাজ করি এইডস নিয়ে। সবচেয়ে বেশি যৌনরোগী আদ্দিস আবাবায়, শহরের জনসংখ্যার অনুপাতে। মেয়েদের তো কোনো রুজি ছিল না সেই সময়। যুদ্ধের পরপর বা যুদ্ধের সময়তেও। যৌনকর্মে জড়িয়ে পড়ত।
উগান্ডায়ও বাত্তি থাকে না। নিয়মিত হারে বাত্তি থাকে না। পৃথিবীর বেশিরভাগ জায়গায় আসলে বাত্তি থাকে না। এটা আমরা ভুলে যাই। উন্নত দেশে বাত্তি আছে। যেমন আমেরিকায় তো আর বাত্তি যায় না। আমি আমেরিকায় মেইনে, নিউইয়র্কে, মেরিল্যান্ডে নব্বইয়ের দশকে থেকেছি। কোনোটায় বাত্তি যায় না।
আমি নাইজেরিয়াতেও ছিলাম। আসা-যাওয়ার মধ্যে। সেখানেও যৌনরোগীদের নিয়ে কাজ করেছি। নাইজেরিয়ার একটা শহরে ছিলাম, নাম বাউচি। নাইজেরিয়ার উত্তরাংশে, অনেক দূরের শহর। সেনাবাহিনীর লোকেরা ওখানে কাজ করে। বাউচিতে বাত্তি থাকে না।
বাত্তি আসাটা যে মানুষের অধিকারের ভেতর, এটা অনেকে ভাবতে পারে না। এখন আমি জানি না, পৃথিবীর মানুষ কতটা বাত্তি পায় বা না পায়। তখনকার দিনে বাত্তি পাওয়াটাই ছিল আশ্চর্য ব্যাপার।
আচ্ছা বাত্তি এসেছে! জলদি করো, এই করো ওই করো!
অসুবিধা কোনটা হতো- ওষুধগুলো নষ্ট হয়ে যেত না। আমি ইনসুলিন দিই। আমার এখানে যদি বাত্তি চলে যায় তো প্রথম চিন্তা হবে আমি ইনসুলিনটা বাঁচাব কী করে! ওরাও তো এই ভাবে। টিকাদান কর্মসূচিতে যখন কাজ করতে গেছি, খুব অসুবিধা হতো।
আফ্রিকাতে যে জিনিসটা ঘটে, সেখানে অনেক রকম ভাইরাল অসুখ হয়। ওখানে তো জঙ্গল ছিল, জঙ্গল কেটে মানুষ প্রবেশ করছে, সুতরাং ওখানে অনেক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। আফ্রিকায় বাত্তি যে যায়, মানুষ অভিযোগও করে না। কিছু বলে না। ওরা অনেক বেশি সহ্য করে। কারণ, জীবনের কাছে কোনো আশা নেই।
উপসংহারে ঢাকা
বাড়ি হয়েছে অনেক ঢাকা শহরে। সারাদিন গরমটাকে ধরে রাখে আর সন্ধ্যাবেলা ছাড়ে। আর এসি প্রচুর বেড়েছে। এসির জন্য অন্তত এক-দুই সেন্টিডিগ্রি তাপ বেশি হয়। জনসংখ্যাও বেড়েছে।
যে যে কারণে গরম কমার কথা, একটা কিছুও প্রায় নেই ঢাকা শহরে।
সত্তরের দশক-ষাটের দশকের কথা বলছি। ওই সময় মানুষের অনেক কিছুই ছিল না। অনেক সময় একটানা বৃষ্টি হতো দুই-তিন দিনের, আজকাল যেগুলো হয় না। তখন কাপড় শুকানোর জন্য বেতের একরকম জিনিস পাওয়া যেত। কঞ্চি দিয়ে বানানো। ওটার ওপর রেখে দিত। গরম কয়লা থাকত, ওটার ভাপ উঠে কাপড় শুকানো হতো। এখন এমনটা ঢাকার মানুষের জন্য তো ভাবাই যায় না। এখন মানুষ বিদ্যুৎনির্ভর। আমরা এত বিদ্যুৎনির্ভর ছিলাম না।
এখন সব বিদ্যুৎনির্ভর, সেই কারণেই সমস্যা।
মন্তব্য করুন