
হেলাল হাফিজ
পাখির নামে নাম
যেখানে কেউ কারও ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকে, তার নাম বাড়ি।
কবির বাড়ি সারা বিশ্ব। শিল্পীর বাড়ি সারা ব্রহ্মাণ্ড। তবু যে ক্ষেত্রটা তার সীমার মাঝে অসীমকে ধারণ করে, দেহের মতো, বাড়ি নামে সেই সসীমের সঙ্গে মানুষের অন্তত অর্ধলক্ষ বছরে আত্মীয়তা। বাড়ির প্রতি তার আকুতি সহজাত। স্বদেশের আহ্বান যেমন অনির্বাণ। বিবর্তনে মানুষ সামাজিক প্রাণী হয়ে উঠেছে বিধায়, তার ভেতর এ চাহিদা অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে আজ পর্যন্ত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে নাই।
একজন খেয়ালি বিদ্যোৎসাহী লেখক পিতা, মমতামিতা মাকে নিয়ে হেলাল হাফিজদের নেত্রকোনার ভাড়া বাড়িটা এক দারুণ ফিরে আসার জায়গা ছিল। কিন্তু যেখানে সুন্দর আছে, সেখানে সুন্দরের হত্যাকারী আছে। যে জীবন আছে, সেখানে আছে মৃত্যু। একদিন হেলাল হাফিজদের পরিবারে প্রথম মৃত্যুর ডাকহরকরা উপস্থিত।
হেলাল হাফিজের মা- পাখির নামে নাম বলেই হয়তো, পাখির মতো আয়ু মেনে নিয়ে সেই হরকরার পত্র গ্রহণ করলেন।
কোকিলা খাতুন যখন মারা যান, ছেলে হেলাল হাফিজের বয়স তখন তিন। হেলাল একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ সূর্য। মায়ের মৃত্যু। সূর্য উষাকালেই তার আকাশকে হারাল। সেদিনই অবশিষ্ট গন্তব্যপথ হয়তো নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল হেলাল হাফিজের।
অভিমানী সূর্য আর কোনো আকাশের আশ্রয় কি চেয়েছিলেন? হয়তো না। কিন্তু মনের গোপন কোণে একটা আশ্রয়ের আকাঙ্ক্ষা তাঁর ছিল হয়তো। কিন্তু সেই আকাঙ্ক্ষাকে দূরে রেখে কবি একটা যাতনাবোধকে বাঁচিয়ে রাখলেন।
বড় হওয়ার পর হেলাল হাফিজের মনে মাকে নিয়ে প্রশ্ন তো কম জাগেনি। মা কেমন ছিলেন- সে প্রশ্নের উত্তরের জন্য সন্তানের অন্তরে তৃষ্ণা ছিল। কিন্তু সেই তৃষ্ণা মেটানোর মতো যথেষ্ট জল ছিল না কোথাও। মাকে ঘিরে তাই একটা স্মৃতিরই রোমন্থন হতো সবচেয়ে বেশি। ছোট্ট, প্রায় গল্পহীন সেই স্মৃতি। তবু অমূল্য।
হেলাল হাফিজ একদিন উঠানে খেলছিলেন। হঠাৎ ভীতিকর এক অচেনা প্রাণী তাঁর সামনে চলে এলো। ওটা কুকুর না মহিষ, আজ আর মনে নেই। তবে যে আতঙ্ক তখন মনে জেগেছিল তা আজও ধরা আছে। মা বসেছিলেন কাছে কোথাও। হেলাল মায়ের কাছে ছুটে গিয়ে, তাঁর আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে, সভয়ে তাকিয়ে আছেন। মা তাঁকে আড়াল দিয়ে, অভয় দিয়ে, বিভীষিকা তাড়িয়ে দিলেন।
তবে যে আতঙ্ক মনে জেগেছিল তা আজও ধরা আছে। মা বসেছিলেন কাছে কোথাও। ছোট্ট হেলাল হাফিজ তাঁর কাছে ছুটে গিয়েছিলেন। তাঁর আড়ালে লুকিয়েছিলেন। মা তাঁকে অভয় দিয়ে তাড়িয়ে দিলেন বিভীষিকা। মায়ের সঙ্গে এই হলো হেলালের একমাত্র স্মৃতি। প্রায় সত্তর বছর আগের সেই প্রহর ধরা আছে কবির অর্ধেক কল্পনায় অর্ধেক স্মৃতিতন্তুতে। প্রথম সিদ্ধ আশ্রয়ের স্মৃতি। প্রথম শুদ্ধ আঁচলের স্মৃতি। প্রথম ও শেষ।
বাড়িতে মা নেই। কেন ফিরব বাড়িতে? যে বাড়িতে মা নেই, সে বাড়িতে সন্তান ফেরে, তবে ফেরে তার দেহটাই কেবল। অবশিষ্ট যে হৃদয় গোটা ব্রহ্মাণ্ড চষে বেড়ায় আর মায়ের সন্ধান করে। কিন্তু মুখে বলে না।
পৃথক মানুষ তবু একই মানুষ
হয়তো দুজন হারিয়ে যাব ফুরিয়ে যাব
তবুও আমি যুদ্ধে যাব তবু তোমায় যুদ্ধে নেবো
অন্যরকম সংসারেতে গোলাপবাগান তৈরি করে
হারিয়ে যাব আমরা দুজন ফুরিয়ে যাব
(অন্যরকম সংসার)
হেলাল হাফিজ ও জ্যাঁ-জ্যাক রুশোর জীবনের কিছু মিল চমকে ওঠার মতো। যেন একই কলমে লেখা। দু'জনই দূর শৈশবে মাকে হারান। তাই একটা উন্মূল অনুভব বুকের ভেতর লালিত হতো। যদিও বন্ধুভাবাপন্ন বাবা পেয়েছিলেন দু'জনই। তবু আকাশের সঙ্গতৃষা দুটো সূর্যেরই রয়ে গিয়েছিল। খানিকটা পরিণত বোধের বয়সে বাড়ি ছাড়েন দু'জনই। পরে আবার যখন ফিরে আসেন, বাড়ির মানুষেরা, বেঁচে থাকা পিতারা বুঝেছেন- ও ফিরেছে, কিন্তু ফেরেনি। পথে তার ঠিকানা পেয়েছে, নিশিডাকা ঠিকানা। সুতরাং আর কখনও ফিরবে না।
দু'জনেরই যুদ্ধবিরোধী, প্রেমপেলব মন ছিল। ভালোবাসতে উন্মুখ। বয়সে বড় নারীর প্রতি প্লেটোনিক প্রেমে আকৃষ্ট হয়েছিলেন দু'জনই। রুশো পেয়েছিলেন মাদাম দ্য ওয়ারেনকে। আর হেলাল, সবিতা সেন। রুশো-হেলাল দু'জনেরই কর্মবিস্তার ও রচনার ভাবগভীরতায় সেই নারীদ্বয়ের গভীর ছাপ পড়েছিল। মাদাম দ্য ওয়ারেন রুশোকে দিয়েছিলেন উদার ধর্মবোধ, নিবেদনের শুদ্ধতা। সবিতা সেন হেলালকে শিখিয়েছিলেন 'জীবন খরচ করে কবিতা লেখা', দিয়েছিলেন শিল্পের প্রতি সততার উত্তরাধিকার।
পুরুষ ও নারী তাদের জীবনসঙ্গীর ভেতর অবচেতনে মাতা ও পিতার ছায়া খোঁজে। রুশো হেলাল দু'জনই দুই নারীর ভেতর হারানো মাকে পেয়েছিলেন। কল্পনার প্রেমিকাকে পেয়েছিলেন।
সমস্ত বন্ধনসূত্রই প্রেমে গ্রন্থিত। সে প্রেম যদি জন্মধারার আহ্বান বহন করে তো একরকম গন্তব্য পায়। যদি নিস্কাম প্রেমের স্রোতে আরোহী হয় তো আরেক কূলে পৌঁছায়। শত হোক, মানুষ তো। সেই কূলের পথে মাঝি হয়তো গোঁফের আড়ালে ফ্রয়েডের হাসি হাসে। কিন্তু নৌকাটা চলে সক্রেটিসের প্রিয়তম শিষ্যের বৈঠায়। যৌনতাবোধ তার উপস্থিতি জানান দেয়- আমি আছি। তবে যৌনতার যেটুকু দৈহিক মিলনাকাঙ্ক্ষী, সেটুকু থাকে ঘুমিয়ে। যেটুকু আত্মিক মিলনাকাঙ্ক্ষী, সেটুকু কথা বলে সুরেলা ভাষায়।
এখানেও, রুশো-হেলাল সমসুর।
নিস্কাম অথচ যৌনজ প্রেম তাদের গভীরতা দিয়েছে। আত্মিক মিলনাকাঙ্ক্ষার যে সুরেলা ভাষা, তা রুশোয় প্রকাশ পেয়েছে সুরে, আর হেলালে কবিতায়।
এইভাবে স্থানকালের অলক্ষ্য মিলনক্ষেত্রে, দুই কালের, দুই মহাদেশের দুটো মানুষ হাত ধরে চললেন। ক্রমশ দু'জন পরিণত কিষান হয়ে যেমন চারা রোপণ করলেন, শিল্প, চেতনা ও যাতনার তেমন ফলন হলো। সমানুপাতে এলো পরিবেশে তার প্রতিক্রিয়া। রুশো সমষ্টির দার্শনিকে পরিণত হলেন। মানুষের জন্য উপহার দিলেন সোশ্যাল কনট্রাক্ট। হেলাল পরিণত হলেন কবিতে। যে জলে আগুন জ্বলে, সেই জল পানের সুযোগ পেল মানুষ।
রাজার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে, সোশ্যাল কনট্রাক্টে রুশো যে সাধারণ মানুষের হাতে শক্তির জাদুকাঠি তুলে দিয়েছিলেন, হেলাল হাফিজ কবিতার মাধ্যমে সেই মানুষকেই করতে জড়ো করতে চাইলেন। একজনের রচনা মহান রুশবিপ্লবকে প্রভাবিত করল। আরেকজনের রচনা আহিত করল গণঅভ্যুত্থানকে, মহান মুক্তিযুদ্ধকে। দুটোই বিপ্লব। দুটোই প্রেমজ সংক্ষোভ। দুটো সফল হওয়ার পর সৃজিত হলো গোলাপ বাগান। কণ্টকাকীর্ণ। যদিও পুষ্পবতী।
স্বদেশ জুড়ে গোলাপ বাগান তৈরি করে
লাল গোলাপে রক্ত রেখে গোলাপ কাঁটায় আগুন রেখে
আমরা দুজন হয়তো রানা মিশেই যাব মাটির সাথে
মিলের পরিশিষ্ট। সাধারণের সিদ্ধান্ত সাধারণকেই গ্রহণের যে পন্থা রুশো দেখিয়েছেন তা যেমন বৃহৎ পরিসরে ভালো কার্যকর নয়, তেমনই হেলালের কবিতা কাব্যকলার বহুবিচিত্র শাখাকে পুষ্পিত না করে কিছু বাঁধা গতে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে শিল্পীর সীমাবদ্ধতা হচ্ছে সেই একচিমটি লবণ- যে লবণ মিষ্টি তৈরিতে গুণী ময়রার রহস্যময় রসায়নের অংশ।
ফুলের দাম, কাঁটার দান
শীত এগিয়ে আসতে থাকা নভেম্বরের সন্ধ্যা। তোপখানা রোডে কবি ইসমাত শিল্পীর বাড়ির বসার ঘর। কবি বলছিলেন তাঁর অতীতের কথা।
মগরা নদীর তীর, খেলার মাঠ, প্রথম স্কুল। কৈশোরেই পুরস্কার পাওয়া বই এত বেশি জমেছিল যে নেত্রকোনা পাঠাগারে জমা দিয়ে বাবাকে পাঠাগারের আজীবনের সদস্যপদ পাইয়ে দিয়েছিলেন। মাথায় পাগড়ি পড়তেন তাঁর বাবা। সাহিত্যের শিক্ষক ছিলেন। তাঁর নাম ছড়িয়েছিল পাগড়িওয়ালা স্যার। খালেক দাদ চৌধুরীর 'উত্তর আকাশ' পত্রিকায় সেসময় তাঁর কবিতা ছাপা হতো। হেলাল হাফিজ বলছিলেন বাবা ও তাঁর ছাত্রী সবিতা সেনের কথা। মাতৃবিয়োগের ব্যথা যে বৈভব তৈরি করেছিল হেলাল হাফিজের হৃদয়ে, বাবা আর সবিতা সেন তাঁকে কীভাবে তা ফুলেল করে তুলেছিলেন, বিশেষ করে সবিতা সেন।
প্রথম তারুণ্যে চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন হেলাল হাফিজ। চাঞ্চল্যকর তথ্য নিঃসন্দেহে। চিকিৎসক হতে চাওয়ার একটি কারণ প্রায়োগিক এ বিজ্ঞানের প্রতি মোহ। অপর কারণটি ছিল শংকরী নামে এক তরুণীর প্রতি আকর্ষণ। শেষমেশ শংকরীর চিকিৎসাবিজ্ঞান ঠিক পড়া হলেও কাব্যশংকর হেলাল হাফিজ থেমে গেলেন। ক্রমশ কবিতা তাঁকে টেনে এনে স্থির করে তুলল ঢাকায়।
ইকবাল হলের স্মৃতিগুলো ভাস্বর। অরুণ তরুণ ছাত্রনেতারা আসতেন তখন। ধানমন্ডি ৩২-এর পর এই ইকবাল হল (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছিল আন্দোলনের নানান নীতিনির্ধারণী কেন্দ্র। আ স ম আবদুর রব, নূরে আলম সিদ্দিকী, সিরাজুল আলম খান, শাজাহান সিরাজ, আব্দুল কুদ্দুস মাখন- তাঁরা ছিলেন এ হলের আবাসিক ছাত্র। হেলাল হাফিজও তাই। রাজনীতিকদের সংসর্গে ছিলেন, কবিতা দিয়ে শক্তি জুগিয়েছেন, কিন্তু কর্মকাণ্ডে জড়াননি। তড়িচ্চালক যন্ত্র যখন শক্তি উৎপাদন করে তখন স্ট্যাটর-রোটর উভয়ই ভূমিকা রাখে। একা স্ট্যাটর বা রোটর বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করতে পারে না। পৃথিবীর ইতিহাসে শিল্প হচ্ছে সেই স্ট্যাটর।
যে যত্ন তিনি স্বদেশকে, স্বদেশের ভাষাকে আর স্বদেশির ভেতর দিয়ে বিশ্বকে দিয়েছেন, মানুষ আজীবন ভালোবেসে তার ঋণ শুধতে চেয়েছে। ভালোবাসাকে আরও বহুমাত্রিক করার সময় এসেছে। কবির শারীরিক সাধ্য ফুরিয়ে আসছে। কথা বলতে কষ্ট হয়। তবে এখনও ভাষায় জড়তা আসেনি- প্রকৃতিকে ধন্যবাদ। তবে দ্রুত ভেঙে পড়ছে শরীর। এ বছর ৭ অক্টোবর কেটেছে কবির জন্মদিন। কেটেছে বঙ্গবন্ধু পোস্ট গ্র্যাজুয়েট হাসপাতালে। তখন থেকেই কবির মন অনেক বেশি যে তৃষ্ণা অনুভব করছেন, তা সঙ্গতৃষ্ণা।
সঙ্গতৃষ্ণা দুর্দমনীয়। যে মানুষ অপর কোনো মানুষের সঙ্গ চান না, তিনিও অন্তত একটা নদীর সঙ্গ চান, একটা মিনিজিরি পাতার সঙ্গ চান। হেলাল হাফিজ মানুষের সঙ্গ চেয়েছেন জীবনভর। একই সঙ্গে চেয়েছেন একটা মুক্ত পরিবার। যেখানে শুধু রক্তের আত্মীয়তা নয়, বোধের আত্মীয়তায় সবাই সম্পর্কিত।
তাঁর লেখায় ও ভাবনায় মানুষের রাজ রাজ অবস্থান। সেইসঙ্গে আপন মানস রাজত্ব ছাড়া বৈভবের রাজ্যবিস্তারে তাঁর মন ছিল না। কবি যাকে বলেন জীবন খরচ করে কবিতা লেখা- তা অমরত্বের বিনিময়ে এক রুক্ষ বোহেমিয়ান পথে কবিকে পথিক করে। সে পথের দু'পাশে অমরত্বের মধুক্ষরা রংরঙিন ফুল। কিন্তু তার পাতার নিচে পুরুষ্টু বিষফল। পায়ের নিচে কাঁটা।
সোনালি বিকেলের পর যখন জীবনে গোধূলি নেমেছে, তখন এক আশ্চর্য দোলাচলও উপস্থিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা শেষে হেলাল হাফিজ, তোপখানা রোডে কবি ইসমাত শিল্পীর বাড়িতে অস্থায়ীভাবে বাস করছেন এবং ১০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সান্নিধ্যে গিয়ে চোখে পড়ল, কাল ক্রমশ গভীর আঁচড় কাটতে শুরু করেছে তাঁর শরীরে। সৎভাই নেহাল হাফিজ কবিকে ময়মনসিংহে নিজস্ব পরিবারে নিয়ে রাখতে চাইছেন এবং যে প্রেস ক্লাবের দোতলায় অগণিত দিনরাত কেটেছে কবির, সেই প্রেস ক্লাবের কর্তাব্যক্তিরা কোনো অতিথিশালায় কবির সামনের দিনগুলোর ব্যবস্থা করতে চাইছেন। এমন ব্যবস্থায় সম্মত ও প্রস্তুত নিশ্চয়ই আরও অনেকেই।
কিন্তু সময় তাকিয়ে আছে রুশোর সোশ্যাল কনট্রাক্টের অক্ষরমালা থেকে উঠে আসা জনজোটের দিকে। যে জনজোট রাষ্ট্রশক্তির ধারক। শ্রান্ত বোহেমিয়ানের চাই শান্ত স্বনীড়। মানুষের হয়ে কবি শিল্প সৃষ্টি করেছেন। কবির এমন বিব্রত গোধূলিতে মানুষ-রাষ্ট্র তাঁর স্বস্তি রচনা করবে- এই চাওয়া বেশি কিছু নয়।
যেখানে কেউ কারও ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকে, তার নাম বাড়ি।
কবির বাড়ি সারা বিশ্ব। শিল্পীর বাড়ি সারা ব্রহ্মাণ্ড। তবু যে ক্ষেত্রটা তার সীমার মাঝে অসীমকে ধারণ করে, দেহের মতো, বাড়ি নামে সেই সসীমের সঙ্গে মানুষের অন্তত অর্ধলক্ষ বছরে আত্মীয়তা। বাড়ির প্রতি তার আকুতি সহজাত। স্বদেশের আহ্বান যেমন অনির্বাণ। বিবর্তনে মানুষ সামাজিক প্রাণী হয়ে উঠেছে বিধায়, তার ভেতর এ চাহিদা অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে আজ পর্যন্ত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে নাই।
একজন খেয়ালি বিদ্যোৎসাহী লেখক পিতা, মমতামিতা মাকে নিয়ে হেলাল হাফিজদের নেত্রকোনার ভাড়া বাড়িটা এক দারুণ ফিরে আসার জায়গা ছিল। কিন্তু যেখানে সুন্দর আছে, সেখানে সুন্দরের হত্যাকারী আছে। যে জীবন আছে, সেখানে আছে মৃত্যু। একদিন হেলাল হাফিজদের পরিবারে প্রথম মৃত্যুর ডাকহরকরা উপস্থিত।
হেলাল হাফিজের মা- পাখির নামে নাম বলেই হয়তো, পাখির মতো আয়ু মেনে নিয়ে সেই হরকরার পত্র গ্রহণ করলেন।
কোকিলা খাতুন যখন মারা যান, ছেলে হেলাল হাফিজের বয়স তখন তিন। হেলাল একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ সূর্য। মায়ের মৃত্যু। সূর্য উষাকালেই তার আকাশকে হারাল। সেদিনই অবশিষ্ট গন্তব্যপথ হয়তো নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল হেলাল হাফিজের।
অভিমানী সূর্য আর কোনো আকাশের আশ্রয় কি চেয়েছিলেন? হয়তো না। কিন্তু মনের গোপন কোণে একটা আশ্রয়ের আকাঙ্ক্ষা তাঁর ছিল হয়তো। কিন্তু সেই আকাঙ্ক্ষাকে দূরে রেখে কবি একটা যাতনাবোধকে বাঁচিয়ে রাখলেন।
বড় হওয়ার পর হেলাল হাফিজের মনে মাকে নিয়ে প্রশ্ন তো কম জাগেনি। মা কেমন ছিলেন- সে প্রশ্নের উত্তরের জন্য সন্তানের অন্তরে তৃষ্ণা ছিল। কিন্তু সেই তৃষ্ণা মেটানোর মতো যথেষ্ট জল ছিল না কোথাও। মাকে ঘিরে তাই একটা স্মৃতিরই রোমন্থন হতো সবচেয়ে বেশি। ছোট্ট, প্রায় গল্পহীন সেই স্মৃতি। তবু অমূল্য।
হেলাল হাফিজ একদিন উঠানে খেলছিলেন। হঠাৎ ভীতিকর এক অচেনা প্রাণী তাঁর সামনে চলে এলো। ওটা কুকুর না মহিষ, আজ আর মনে নেই। তবে যে আতঙ্ক তখন মনে জেগেছিল তা আজও ধরা আছে। মা বসেছিলেন কাছে কোথাও। হেলাল মায়ের কাছে ছুটে গিয়ে, তাঁর আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে, সভয়ে তাকিয়ে আছেন। মা তাঁকে আড়াল দিয়ে, অভয় দিয়ে, বিভীষিকা তাড়িয়ে দিলেন।
তবে যে আতঙ্ক মনে জেগেছিল তা আজও ধরা আছে। মা বসেছিলেন কাছে কোথাও। ছোট্ট হেলাল হাফিজ তাঁর কাছে ছুটে গিয়েছিলেন। তাঁর আড়ালে লুকিয়েছিলেন। মা তাঁকে অভয় দিয়ে তাড়িয়ে দিলেন বিভীষিকা। মায়ের সঙ্গে এই হলো হেলালের একমাত্র স্মৃতি। প্রায় সত্তর বছর আগের সেই প্রহর ধরা আছে কবির অর্ধেক কল্পনায় অর্ধেক স্মৃতিতন্তুতে। প্রথম সিদ্ধ আশ্রয়ের স্মৃতি। প্রথম শুদ্ধ আঁচলের স্মৃতি। প্রথম ও শেষ।
বাড়িতে মা নেই। কেন ফিরব বাড়িতে? যে বাড়িতে মা নেই, সে বাড়িতে সন্তান ফেরে, তবে ফেরে তার দেহটাই কেবল। অবশিষ্ট যে হৃদয় গোটা ব্রহ্মাণ্ড চষে বেড়ায় আর মায়ের সন্ধান করে। কিন্তু মুখে বলে না।
পৃথক মানুষ তবু একই মানুষ
হয়তো দুজন হারিয়ে যাব ফুরিয়ে যাব
তবুও আমি যুদ্ধে যাব তবু তোমায় যুদ্ধে নেবো
অন্যরকম সংসারেতে গোলাপবাগান তৈরি করে
হারিয়ে যাব আমরা দুজন ফুরিয়ে যাব
(অন্যরকম সংসার)
হেলাল হাফিজ ও জ্যাঁ-জ্যাক রুশোর জীবনের কিছু মিল চমকে ওঠার মতো। যেন একই কলমে লেখা। দু'জনই দূর শৈশবে মাকে হারান। তাই একটা উন্মূল অনুভব বুকের ভেতর লালিত হতো। যদিও বন্ধুভাবাপন্ন বাবা পেয়েছিলেন দু'জনই। তবু আকাশের সঙ্গতৃষা দুটো সূর্যেরই রয়ে গিয়েছিল। খানিকটা পরিণত বোধের বয়সে বাড়ি ছাড়েন দু'জনই। পরে আবার যখন ফিরে আসেন, বাড়ির মানুষেরা, বেঁচে থাকা পিতারা বুঝেছেন- ও ফিরেছে, কিন্তু ফেরেনি। পথে তার ঠিকানা পেয়েছে, নিশিডাকা ঠিকানা। সুতরাং আর কখনও ফিরবে না।
দু'জনেরই যুদ্ধবিরোধী, প্রেমপেলব মন ছিল। ভালোবাসতে উন্মুখ। বয়সে বড় নারীর প্রতি প্লেটোনিক প্রেমে আকৃষ্ট হয়েছিলেন দু'জনই। রুশো পেয়েছিলেন মাদাম দ্য ওয়ারেনকে। আর হেলাল, সবিতা সেন। রুশো-হেলাল দু'জনেরই কর্মবিস্তার ও রচনার ভাবগভীরতায় সেই নারীদ্বয়ের গভীর ছাপ পড়েছিল। মাদাম দ্য ওয়ারেন রুশোকে দিয়েছিলেন উদার ধর্মবোধ, নিবেদনের শুদ্ধতা। সবিতা সেন হেলালকে শিখিয়েছিলেন 'জীবন খরচ করে কবিতা লেখা', দিয়েছিলেন শিল্পের প্রতি সততার উত্তরাধিকার।
পুরুষ ও নারী তাদের জীবনসঙ্গীর ভেতর অবচেতনে মাতা ও পিতার ছায়া খোঁজে। রুশো হেলাল দু'জনই দুই নারীর ভেতর হারানো মাকে পেয়েছিলেন। কল্পনার প্রেমিকাকে পেয়েছিলেন।
সমস্ত বন্ধনসূত্রই প্রেমে গ্রন্থিত। সে প্রেম যদি জন্মধারার আহ্বান বহন করে তো একরকম গন্তব্য পায়। যদি নিস্কাম প্রেমের স্রোতে আরোহী হয় তো আরেক কূলে পৌঁছায়। শত হোক, মানুষ তো। সেই কূলের পথে মাঝি হয়তো গোঁফের আড়ালে ফ্রয়েডের হাসি হাসে। কিন্তু নৌকাটা চলে সক্রেটিসের প্রিয়তম শিষ্যের বৈঠায়। যৌনতাবোধ তার উপস্থিতি জানান দেয়- আমি আছি। তবে যৌনতার যেটুকু দৈহিক মিলনাকাঙ্ক্ষী, সেটুকু থাকে ঘুমিয়ে। যেটুকু আত্মিক মিলনাকাঙ্ক্ষী, সেটুকু কথা বলে সুরেলা ভাষায়।
এখানেও, রুশো-হেলাল সমসুর।
নিস্কাম অথচ যৌনজ প্রেম তাদের গভীরতা দিয়েছে। আত্মিক মিলনাকাঙ্ক্ষার যে সুরেলা ভাষা, তা রুশোয় প্রকাশ পেয়েছে সুরে, আর হেলালে কবিতায়।
এইভাবে স্থানকালের অলক্ষ্য মিলনক্ষেত্রে, দুই কালের, দুই মহাদেশের দুটো মানুষ হাত ধরে চললেন। ক্রমশ দু'জন পরিণত কিষান হয়ে যেমন চারা রোপণ করলেন, শিল্প, চেতনা ও যাতনার তেমন ফলন হলো। সমানুপাতে এলো পরিবেশে তার প্রতিক্রিয়া। রুশো সমষ্টির দার্শনিকে পরিণত হলেন। মানুষের জন্য উপহার দিলেন সোশ্যাল কনট্রাক্ট। হেলাল পরিণত হলেন কবিতে। যে জলে আগুন জ্বলে, সেই জল পানের সুযোগ পেল মানুষ।
রাজার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে, সোশ্যাল কনট্রাক্টে রুশো যে সাধারণ মানুষের হাতে শক্তির জাদুকাঠি তুলে দিয়েছিলেন, হেলাল হাফিজ কবিতার মাধ্যমে সেই মানুষকেই করতে জড়ো করতে চাইলেন। একজনের রচনা মহান রুশবিপ্লবকে প্রভাবিত করল। আরেকজনের রচনা আহিত করল গণঅভ্যুত্থানকে, মহান মুক্তিযুদ্ধকে। দুটোই বিপ্লব। দুটোই প্রেমজ সংক্ষোভ। দুটো সফল হওয়ার পর সৃজিত হলো গোলাপ বাগান। কণ্টকাকীর্ণ। যদিও পুষ্পবতী।
স্বদেশ জুড়ে গোলাপ বাগান তৈরি করে
লাল গোলাপে রক্ত রেখে গোলাপ কাঁটায় আগুন রেখে
আমরা দুজন হয়তো রানা মিশেই যাব মাটির সাথে
মিলের পরিশিষ্ট। সাধারণের সিদ্ধান্ত সাধারণকেই গ্রহণের যে পন্থা রুশো দেখিয়েছেন তা যেমন বৃহৎ পরিসরে ভালো কার্যকর নয়, তেমনই হেলালের কবিতা কাব্যকলার বহুবিচিত্র শাখাকে পুষ্পিত না করে কিছু বাঁধা গতে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে শিল্পীর সীমাবদ্ধতা হচ্ছে সেই একচিমটি লবণ- যে লবণ মিষ্টি তৈরিতে গুণী ময়রার রহস্যময় রসায়নের অংশ।
ফুলের দাম, কাঁটার দান
শীত এগিয়ে আসতে থাকা নভেম্বরের সন্ধ্যা। তোপখানা রোডে কবি ইসমাত শিল্পীর বাড়ির বসার ঘর। কবি বলছিলেন তাঁর অতীতের কথা।
মগরা নদীর তীর, খেলার মাঠ, প্রথম স্কুল। কৈশোরেই পুরস্কার পাওয়া বই এত বেশি জমেছিল যে নেত্রকোনা পাঠাগারে জমা দিয়ে বাবাকে পাঠাগারের আজীবনের সদস্যপদ পাইয়ে দিয়েছিলেন। মাথায় পাগড়ি পড়তেন তাঁর বাবা। সাহিত্যের শিক্ষক ছিলেন। তাঁর নাম ছড়িয়েছিল পাগড়িওয়ালা স্যার। খালেক দাদ চৌধুরীর 'উত্তর আকাশ' পত্রিকায় সেসময় তাঁর কবিতা ছাপা হতো। হেলাল হাফিজ বলছিলেন বাবা ও তাঁর ছাত্রী সবিতা সেনের কথা। মাতৃবিয়োগের ব্যথা যে বৈভব তৈরি করেছিল হেলাল হাফিজের হৃদয়ে, বাবা আর সবিতা সেন তাঁকে কীভাবে তা ফুলেল করে তুলেছিলেন, বিশেষ করে সবিতা সেন।
প্রথম তারুণ্যে চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন হেলাল হাফিজ। চাঞ্চল্যকর তথ্য নিঃসন্দেহে। চিকিৎসক হতে চাওয়ার একটি কারণ প্রায়োগিক এ বিজ্ঞানের প্রতি মোহ। অপর কারণটি ছিল শংকরী নামে এক তরুণীর প্রতি আকর্ষণ। শেষমেশ শংকরীর চিকিৎসাবিজ্ঞান ঠিক পড়া হলেও কাব্যশংকর হেলাল হাফিজ থেমে গেলেন। ক্রমশ কবিতা তাঁকে টেনে এনে স্থির করে তুলল ঢাকায়।
ইকবাল হলের স্মৃতিগুলো ভাস্বর। অরুণ তরুণ ছাত্রনেতারা আসতেন তখন। ধানমন্ডি ৩২-এর পর এই ইকবাল হল (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছিল আন্দোলনের নানান নীতিনির্ধারণী কেন্দ্র। আ স ম আবদুর রব, নূরে আলম সিদ্দিকী, সিরাজুল আলম খান, শাজাহান সিরাজ, আব্দুল কুদ্দুস মাখন- তাঁরা ছিলেন এ হলের আবাসিক ছাত্র। হেলাল হাফিজও তাই। রাজনীতিকদের সংসর্গে ছিলেন, কবিতা দিয়ে শক্তি জুগিয়েছেন, কিন্তু কর্মকাণ্ডে জড়াননি। তড়িচ্চালক যন্ত্র যখন শক্তি উৎপাদন করে তখন স্ট্যাটর-রোটর উভয়ই ভূমিকা রাখে। একা স্ট্যাটর বা রোটর বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করতে পারে না। পৃথিবীর ইতিহাসে শিল্প হচ্ছে সেই স্ট্যাটর।
যে যত্ন তিনি স্বদেশকে, স্বদেশের ভাষাকে আর স্বদেশির ভেতর দিয়ে বিশ্বকে দিয়েছেন, মানুষ আজীবন ভালোবেসে তার ঋণ শুধতে চেয়েছে। ভালোবাসাকে আরও বহুমাত্রিক করার সময় এসেছে। কবির শারীরিক সাধ্য ফুরিয়ে আসছে। কথা বলতে কষ্ট হয়। তবে এখনও ভাষায় জড়তা আসেনি- প্রকৃতিকে ধন্যবাদ। তবে দ্রুত ভেঙে পড়ছে শরীর। এ বছর ৭ অক্টোবর কেটেছে কবির জন্মদিন। কেটেছে বঙ্গবন্ধু পোস্ট গ্র্যাজুয়েট হাসপাতালে। তখন থেকেই কবির মন অনেক বেশি যে তৃষ্ণা অনুভব করছেন, তা সঙ্গতৃষ্ণা।
সঙ্গতৃষ্ণা দুর্দমনীয়। যে মানুষ অপর কোনো মানুষের সঙ্গ চান না, তিনিও অন্তত একটা নদীর সঙ্গ চান, একটা মিনিজিরি পাতার সঙ্গ চান। হেলাল হাফিজ মানুষের সঙ্গ চেয়েছেন জীবনভর। একই সঙ্গে চেয়েছেন একটা মুক্ত পরিবার। যেখানে শুধু রক্তের আত্মীয়তা নয়, বোধের আত্মীয়তায় সবাই সম্পর্কিত।
তাঁর লেখায় ও ভাবনায় মানুষের রাজ রাজ অবস্থান। সেইসঙ্গে আপন মানস রাজত্ব ছাড়া বৈভবের রাজ্যবিস্তারে তাঁর মন ছিল না। কবি যাকে বলেন জীবন খরচ করে কবিতা লেখা- তা অমরত্বের বিনিময়ে এক রুক্ষ বোহেমিয়ান পথে কবিকে পথিক করে। সে পথের দু'পাশে অমরত্বের মধুক্ষরা রংরঙিন ফুল। কিন্তু তার পাতার নিচে পুরুষ্টু বিষফল। পায়ের নিচে কাঁটা।
সোনালি বিকেলের পর যখন জীবনে গোধূলি নেমেছে, তখন এক আশ্চর্য দোলাচলও উপস্থিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা শেষে হেলাল হাফিজ, তোপখানা রোডে কবি ইসমাত শিল্পীর বাড়িতে অস্থায়ীভাবে বাস করছেন এবং ১০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সান্নিধ্যে গিয়ে চোখে পড়ল, কাল ক্রমশ গভীর আঁচড় কাটতে শুরু করেছে তাঁর শরীরে। সৎভাই নেহাল হাফিজ কবিকে ময়মনসিংহে নিজস্ব পরিবারে নিয়ে রাখতে চাইছেন এবং যে প্রেস ক্লাবের দোতলায় অগণিত দিনরাত কেটেছে কবির, সেই প্রেস ক্লাবের কর্তাব্যক্তিরা কোনো অতিথিশালায় কবির সামনের দিনগুলোর ব্যবস্থা করতে চাইছেন। এমন ব্যবস্থায় সম্মত ও প্রস্তুত নিশ্চয়ই আরও অনেকেই।
কিন্তু সময় তাকিয়ে আছে রুশোর সোশ্যাল কনট্রাক্টের অক্ষরমালা থেকে উঠে আসা জনজোটের দিকে। যে জনজোট রাষ্ট্রশক্তির ধারক। শ্রান্ত বোহেমিয়ানের চাই শান্ত স্বনীড়। মানুষের হয়ে কবি শিল্প সৃষ্টি করেছেন। কবির এমন বিব্রত গোধূলিতে মানুষ-রাষ্ট্র তাঁর স্বস্তি রচনা করবে- এই চাওয়া বেশি কিছু নয়।
মন্তব্য করুন