বাংলা ভাষার অন্যতম কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হকের জন্ম ১৯৩৯ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে। তাঁর শৈশব কৈশোর কাটে রাঢ়বঙ্গের লালমাটিতে। দেশভাগের পর তাঁকে তাঁর মাতৃভূমি ছেড়ে চলে আসতে হয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজশাহীতে। তাঁর লেখায় বারবার ফিরে এসেছে দেশান্তরের আঘাত ও আঘাত-পরবর্তী অভিঘাতের কুহক স্মৃতি। বেদনাঘন আঘাতরাশির বুনন নিয়ে হাসান আজিজুল হকের গল্পগ্রন্থ 'দেশভাগের গল্প'। গ্রন্থভুক্ত ছয়টি গল্পে ফুটে উঠেছে দেশভাগে উন্মুলিত মানুষের আর্তি ও আকাঙ্ক্ষার বয়ান...
পৃথিবীতে নানা কারণে দেশভাগের ঘটনা ঘটেছে। ফলে বিভক্ত হতে হয়েছে একই জাতি, সম্প্রদায় বা ভাষার মানুষকে। প্যালেস্টাইন, জার্মানি, কোরিয়া, রাশিয়া তার উদাহরণ। এ বিভক্তির ফলে অনেক জায়গায় একই পরিবারের মানুষজন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন আপনজন হতে। তাদের এখন দেখা করতে দুটি রাষ্ট্রের অনুমতি লাগে, হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা করার উপায়ই থাকে না। এ মানবিক বিপর্যয়ের মর্মস্পর্শী উপাদান নিয়ে পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য কালজয়ী চলচ্চিত্র, লেখা হয়েছে উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা। বিশেষত মহাভারতের পাঞ্জাব অংশের বিভাজন নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক সাহিত্যকর্ম। বাংলা ভাগ নিয়ে সে তুলনায় কাজ হয়েছে কম।
`The majority of literature dealing with Partition in India is set in Punjab, as one can see in the key ÔPartition novelsÕ, where the authors also come from this ÔwesternÕ side of Partition. Rarely do writers from Ôthe other sideÕ of Partition, from Bengal or Bangladesh, hold such a privileged position.1

মহাভারতের বাংলা ভাগের বিপর্যয় নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে উল্লেখযোগ্য কিছু সৃষ্টিকর্ম থাকলেও বিশেষত বর্তমান বাংলাদেশ তার পরিমাণ খুব বেশি নয়। উজ্জ্বল ব্যতিক্রম কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক। তাঁর কথাসাহিত্যের প্রধান উপজীব্য বিষয় দেশভাগ। এ নিয়ে তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্প যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে উপন্যাস। হাসান আজিজুল হকের দেশভাগ নিয়ে লেখালেখির মূল কারণ, তিনি ব্যক্তিগতভাবে দেশভাগের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, 'দেশভাগ আমার জীবনের জন্য একটা ক্ষতস্বরূপ। ক্ষত সারলেও দাগ থেকে যায়। আমি এই দাগের কারণ অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি।' ২
হাসান আজিজুল হকের জন্ম ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে। তাঁর শৈশব কৈশোর অতিবাহিত হয় রাঢ় বঙ্গের রুক্ষ মাটিতে, লাল আলোয়। তাঁর গল্পের নায়কের মতো তাঁরও 'বর্ধমানের পুরানো জেলা শহরটার লাল রোদের কথা মনে পড়ে।'৩ তিনি তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন গ্রামেরই পণ্ডিতের পাঠশালায়। মাধ্যমিক পাস করেন যবগ্রাম সরকারি কালীশ্বরী উচ্চ ইংরাজি বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে। এ সময়েই তিনি প্রত্যক্ষ করেন দুর্ভিক্ষ, মহামারি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আর দেশভাগ। এর বিস্তারিত বিবরণ তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ডে।৪ সেখানে তিনি বর্ণনা করেন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় গা হিম করে আতঙ্কের মধ্যে রাত কাটানো। আর দেশভাগের রক্তাক্ত ঘটনা। ফলে শেকড়চ্যুত হয়ে তাঁকে তাঁর পরিচিত গ্রাম, পরিচিত পরিবেশ আর প্রতিবেশী ছেড়ে রিফিউজি হয়ে চলে আসতে হয় নবগঠিত পূর্ব পাকিস্তানে। দেশভাগের পর ১৯৬১ সালে তাঁর পিতা পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে বিনিময় ব্যবস্থার অধীনে সপরিবারে বাংলাদেশে চলে আসেন। বিনিময় ব্যবস্থার মাধ্যমে খুলনায় তাঁর পৈতৃক নিবাস গড়ে ওঠে। তার আগে ব্রজলাল মহাবিদ্যালয় থেকে ১৯৫৬ সালে। তারপর রাজশাহী কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে স্নাতক হন ১৯৫৮ সালে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৬০ সালে। তারপর পেশা জীবন বেছে নেন রাজশাহীতেই। প্রথমে কলেজে পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর বাকী জীবন অতিবাহিত হচ্ছে রাজশাহীর বরেন্দ্রভূমিতে। যদিও তাঁর মনোজগৎ জুড়ে আছে রাঢ় অঞ্চলের মাটি। তাঁকে বাংলাদেশে অভিহিত করা হয় রাঢ়বঙ্গের কথাকার হিসেবে। জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে ২০১৩ সালেও তিনি বলেন, 'আমার বাড়ি রাঢ় দেশে।'৬ তাঁর একটি গল্পগ্রন্থের নামই তিনি রেখেছেন রাঢ়বঙ্গের গল্প।
লেখালেখি শৈশব থেকেই করলেও বাংলা কথাসাহিত্যে তাঁর সরব উপস্থিতি ঘটে ষাটের দশকে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ 'সমুদ্রের স্বপ্ন :শীতের অরণ্য' (১৯৬৪)। তারপর একে একে প্রকাশিত হয় আত্মজা ও একটি করবী গাছ (১৯৬৭), জীবন ঘষে আগুন (১৯৭৩), নামহীন গোত্রহীন (১৯৭৫), পাতালে হাসপাতালে (১৯৮১), আমরা অপেক্ষা করছি (১৯৮৮), রোদে যাবো (১৯৯৫), মা-মেয়ের সংসার (১৯৯৭), নির্বাচিত গল্প (১৯৮৭), রাঢ়বঙ্গের গল্প (১৯৯১), হাসান আজিজুল হকের শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৯৫) ও দেশভাগের গল্প (২০১১)। প্রকাশিত প্রবন্ধ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে অপ্রকাশের ভার (১৯৯৮), চালচিত্রের খুঁটিনাটি। আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ রয়েছে তিনটি- বাচনিক আত্মজৈবনিক(২০১১), ফিরে যাই ফিরে আসি (২০০৯) ও উঁকি দিয়ে দিগন্ত (২০১২)।
প্রকাশিত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- বৃত্তায়ন (১৯৯১) ও আগুনপাখি (২০১১), সাবিত্রি উপাখ্যান (২০১৯)।
অর্জন করেছেন 'আদমজী সাহিত্য পুরস্কার' (১৯৬৭), 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার' (১৯৭০), 'লেখক শিবির পুরস্কার' (১৯৭৩), 'আলাওল পুরস্কার' (১৯৮৩), 'অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার' (১৯৮১), 'অগ্রণী ব্যাংক পুরস্কার' (১৯৮৪), 'ফিলিপস পুরস্কার' (১৯৮৮), 'আনন্দ পুরস্কার' (১৪১৪), ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার (২০১১) ইত্যাদি।
দেশভাগের গল্প শীর্ষক গ্রন্থভুক্ত গল্পগুলোর ভেতর দিয়ে দেশভাগের আঘাত ও আঘাত পরবর্তী অভিঘাতের যে মর্মান্তিক চিত্র ফুটে উঠেছে তা নিয়ে আলোচনার আগে সংগত কারণেই এ গল্পগুলোর পটভূমি, পরিপ্রেক্ষিত ও লেখকের মানসলোক অনুসন্ধানের জন্য গল্পগুলোতে চিত্রিত সময়কাল নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা প্রয়োজন। কেননা, 'নির্দিষ্ট সময়খণ্ডের ভেতর ব্যক্তির পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, ভৌগোলিক অবস্থান এবং অধীতবিদ্যা, পূর্বকালীন-সমকালীন চিন্তাচেতনা, ভাব-আন্দোলন, কল্লোল ও কোলাহলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণে জারিত হয়ে গড়ে ওঠে একজন ব্যক্তির তথা শিল্পীর মানসকাঠামো।'৭ তাছাড়া, 'শিল্পীর সৃজনী কল্পনার উদ্ভব ও ক্রমযাত্রার পটভূমিতেও গতিসঞ্চার করে জীবনের বহুমাত্রিক উত্তাপ ও স্পন্দন। কারণ বিশেষ কালের শিল্প প্রকরণ সমকালীন জীবনের সমগ্রতাকে ধারণ করেই হয়ে ওঠে বিশিষ্ট, উত্তরণমুখী।'৮
হাসান আজিজুল হকের বাবা মোহাম্মদ দোয়া বখ্‌শ ছিলেন যবগ্রামের সম্পন্ন কৃষক। তাঁর নানা পুরোনোকালের শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। ফরাসি ও বাংলায় তাঁর লেখা বেশক'টি পাণ্ডুলিপিও ছিল। তিনি ছিলেন দারুণ এক কথক। হাসান আজিজুল হকের বাবা-চাচাদের পরিবার ছিল বিশাল একান্নবর্তী একটি পরিবার। ছেলেবেলায় যবগ্রামের অবাধ প্রকৃতির লীলাবৈচিত্র্য দেখে দেখে তিনি বড় হয়েছেন। যবগ্রাম সে সময়ে ছিল প্রায় যোগাযোগরহিত। দুর্গম প্রত্যন্ত এলাকা। তাঁর নিজের বর্ণনায়-
'বর্ধমান শহর থেকে আমার গ্রামের বাড়ি পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার। ছোটবেলায় মনে হতো আমাদের গ্রাম থেকে কতদূর বর্ধমান। তার কারণও ছিলো।'৯
হাসানের সময় সে গ্রামে ফি বছর হানা দিত ম্যালেরিয়া, কলেরা। লেখকের স্মৃতিতে- 'শরৎকালের ভাদ্র-আশ্বিনে ম্যালেরিয়া জ্বরটা শুরু হয়, বসন্ত আর গরমকালের চোত-বোশেখে শুরু হয় কলেরা আর বসন্ত। এ ফি বছরে হবেই। কোনো বছর বাদ গেলে অবাক লাগে।'১০ সেগুলো তাদের গাঁ সওয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ গ্রামেই এক সময় হানা দেয় তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ। তিনি দেখেন না খেয়ে মরা মানুষের সারি। একটু ভাতের ফ্যানের জন্য ক্ষুধার্ত মানুষের রব। তাঁর প্রতিবেশী সাবেদ চাচার মেয়ে কালোর না খেয়ে গাছতলায় রোগেভুগে মরেছে। লাশটি পর্যন্ত সৎকার করার সংগতি তাদের বা সে সমাজের ছিল না। লেখকের সে সব দিনের বর্ণনা- 'খানিক বাদে কালোকে আবার দেখতে যাই। রাস্তার শুকনো বাতাস আর সাদা আটার মতো ধুলো। দু'পাশের মাটির বাড়িগুলো কি কবর নাকি? তেঁতুল তলায় এসে দেখি, কালো শুকিয়ে শুটকি মাছ হয়ে গন্ধ ছড়াচ্ছে।'১১
কলকাতার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষ এ দূর যবগ্রাম পর্যন্ত ধেয়ে আছে। পাঠশালার হিন্দু সহপাঠীরা তাঁর কাছে হঠাৎ করেই অচেনা হয়ে যায়। সন্ধ্যায় পণ্ডিতমশাই তাঁকে না পড়িয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। সন্ত্রস্ত লেখক ধুলোপায়ে বাড়ি ফিরে রাতে আতঙ্কে ঘুমুতে পারেন না। এ পাশে মুসলমান আর ও পাশে হিন্দু সম্প্রদায় মুখোমুখি সারারাত একপক্ষ আরেক পক্ষকে পাহারা দেয়। সামান্য উছিলায় উত্তেজনা তৈরি হয়। বর্ধমান শহরে বড়ভাইয়ের মেসে গিয়ে পড়েন দাঙ্গার মুখে। এই দাঙ্গার অব্যবহিত পরেই দেশভাগ। সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তান। এতে পূর্ববঙ্গ থেকে যেমন বিপুল সংখ্যক হিন্দু সম্প্রদায়কে উদ্বাস্তু হয়ে চলে যেতে হয় পশ্চিমবঙ্গে, তেমনি পশ্চিমবঙ্গের অনেক মুসলমানকে উদ্বাস্তু হয়ে চলে আসতে হয় পূর্ব পাকিস্তানে। সে সময়ে চলে আসা এমনি একজন লেখকের স্মৃতি- 'আমার ছেলেবেলা ছিল ভয়ঙ্কর। আমার জন্ম হয়েছে দুর্ভিক্ষের সময়ে, ১৯৪৩ সালে। জন্মের কয়েক বছরের মধ্যে, ১৯৪৬-এ কলকাতায় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ভয়াবহ দাঙ্গা, পরের বছর ১৯৪৭-এ দেশ ভাগ।...আমার জন্ম পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে আরেকটা ভয়াবহ দাঙ্গা হয়, ১৯৫০-এ। '৪৭-এর দেশবিভাগের অসংখ্য মুসলমান চলে এসেছিল এ বাংলায়। আমাদেরও চলে আসতে হয়। ১৯৫০-এ আমরা পরিবারের সবাই নৌকোয় করে পালিয়ে এসেছি। দেশবিভাগ মানুষকে ছিন্নমূল করেছে।...এক রাতের কথা মনে পড়ছে। একদল লোক মশাল নিয়ে আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দিতে এসেছে। পুড়িয়ে দিতে পারেনি কিন্তু সেই ভীতিটা রয়ে গেছে। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আম্মা বলছেন, ওঠ, উঠে খানায় চল। খানা মানে বড় নর্দমা। ওখানে লুকোতে হবে, পালাতে হবে। তারপর ট্রেনে ট্রেনে-সে এক বিভীষিকা। সেই বিভীষিকার দিনগুলো আমার ভেতরে রয়ে গেছে। যত বয়স বাড়ছে আমার মধ্যে সেই বিভীষিকা তত জাগ্রত হচ্ছে।'১২
হাসান আজিজুল হকের ক্ষেত্রেও 'সেই বিভীষিকার দিনগুলো ভেতরে রয়ে গেছে। যত বয়স বাড়ছে আমার মধ্যে সেই বিভীষিকা তত জাগ্রত হচ্ছে।' সে জাগ্রত স্মৃতি নানা আকারে নানা ভঙ্গিতে প্রকাশ পেয়েছে তার দেশভাগের গল্পগুলোতে। কেননা, হাসানের বিনয়ী ভাষ্য অনুযায়ী বানিয়ে তিনি লিখতে পারেন না। 'আমি বানিয়ে গল্প লিখতে পারি না। বাস্তবতাটা যা চোখে দেখি, সেটার বর্ণনা দিয়ে আমার গল্প বানানোর অক্ষমতাকে ভরিয়ে তুলতে চাই।- গল্প যেটাকে তৈরি করা বলে আর কি, সেভাবে তৈরি করা কোনো গল্পই আমার নেই। আমি সেই কথাটা খুব ভালো করে বলতে চেষ্টা করেছিলাম যে আমার কোনো উদ্ভাবনী ক্ষমতা নেই।'১৩
দেশভাগের গল্পগুলো লেখার অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে হাসান বলেন- 'বুকের পাঁজর ফাটিয়ে দীর্ঘ দিনের ব্যবধানে এক দুটি করে গল্প বেরিয়ে এসেছে। ঠিক যেন করাতকলে হৃদপিণ্ড- চেরাই হচ্ছে এ রকম তীব্র কষ্টের সব মুহূর্তে এক একটি গল্প লেখা হয়েছে।- কতো বড়ো মানব বিপর্যয় ঘটেছিল ১৯৪৭ সালে, ঠিক কতোটা ক্ষতি হয়েছিল মানুষের সংসারে, কতোটা খর্বতার ভিতরে ঢুকে গিয়েছিলাম আমরা।'১৪ অর্থাৎ হাসান এখানে দেশভাগ নিয়ে নিজের ও সমষ্টির অভিজ্ঞতার কথা বলেন। অবশ্য গবেষকের মতে 'দেশত্যাগের ব্যক্তিগত বেদনা প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর ছোটগল্পে।'১৫
দেশভাগের অভিঘাত নিয়ে লেখা হাসানের প্রথম গল্প 'উত্তর বসন্ত'। গল্পটি তিনি রচনা করেছিলেন ১৯৬২ সালে। অর্থাৎ হাসানের পরিবার তার এক বছর আগেই দেশত্যাগ করে বাংলাদেশে গিয়েছেন। হাসান তখন পূর্ববঙ্গে কলেজে শিক্ষকতা করছেন বা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। গল্পটিও দেশভাগে বাংলাদেশে গিয়ে বাস করা একটি পরিবারের ও একজন কলেজ শিক্ষকের গল্প পাই। দেশান্তরিত হয়ে আসা পরিবারটি একটি পরিত্যক্ত প্রায় জল-জঙ্গলায়ভরা বাড়িতে থাকে। যেখানে- 'অভিশপ্ত ঘরগুলোর কোণে কোণে দৈত্যের মতো গাছগুলোর গোড়ায় অন্ধকার জমে থাকে।
মায়ের ভিজে ভিজে অসন্তুষ্ট বিমর্ষ গলা কানে আসে, সকাল কি এ বাড়িতে হবে না? ছি, ছি এই জঙ্গলে মানুষ বাস করে?' (দে.ভা.পৃ.১১)
বাবা হতাশায় ক্লিন্ন। দিনের বেলায়ও মশারির ভেতর শুয়ে থাকেন। আর শোনেন স্ত্রীর গলা, ছিছি এমন দেশ আর ভূভারতে আর নাই..(দে.ভা.পৃ.১৩)।
এ বাড়ির মেয়ে বীণার মনে হয়, 'বাপ মায়ের কাছে জীবনটা জীর্ণ ন্যাকড়ার মতো উড়ছে। কোন কিছুই তাদের পরিচিত আর প্রিয় নয়। আর ছোট ভাই দুটি নিরানন্দ এবং আমরা রিফিউজি।' (দে.ভা.পৃ.১৪)।
বাণী একদিন কলেজে গিয়ে আবিস্কার করে বর্ধমানে ফেলে আসা তার বড়বোনের প্রেমিক ইতিহাসের অধ্যাপক কবীরকে। সেও এখন দেশান্তরিত হয়ে এদেশে এসেছে। তার বড়বোন ততদিনে মৃত। মৃতবোনের ঘর দেখাতে বাণী তাকে নিয়ে আসে বাড়িতে। কবীর আবার বাঁচার আশা জাগাতে চায়। কিন্তু বাণীর মনে হয় 'আমাদের কোনো অধিকার নেই জীবনে (পৃ.২৩)। গল্পটির প্রতিটি চরিত্রই হতাশাগ্রস্ত। এ হতাশার কারণ দেশত্যাগ। এখানকার এই অন্ধকার হিম পরিবেশে জীবনটা জীর্ণ ন্যাকড়ার মতো। তারা জীবন ফেলে এসেছে ফেলে আসা শহরের আশ্চর্য লাল রোদে। যে রোদ আর কোনো দেখতে পাবে না। জীবনটা এখন ক্লান্তিকর আশাহীন আর নিরর্থক। এ পরিবারটি আসলে বর্তমান পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হয়ে অসন্তুষ্ট। ফলে তারা ফেলে আসা জীবনে ভূখণ্ডের জীবনের কথা মনে করে হাহাকারে দীর্ণ।
দেশভাগের বেদনা নিয়ে হাসানের লেখা একটি বিখ্যাত গল্প হলো- 'আত্মজা ও একটি করবী গাছ'। এ গল্পটি সম্পর্কে হাসান বলেছেন-'গল্পটি লেখা হয়েছে ১৯৬৬ সালের দিকে। এটা হচ্ছে ছেচল্লিশ সালে ভারত বিভাজন এবং বঙ্গ বিভাজন হওয়ার পরের যে ব্যাপার, গল্পটা পড়লে তা পরিস্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে। কোন সম্প্রদায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেই হিসাব আমি করব না। এখানে উন্মুল হওয়ার যে বেদনা, সেটাকে আমি ধরার চেষ্টা করেছি। এ বেদনার অর্থই হচ্ছে মানুষের নিজের কাছে নিজের মনুষ্যত্ব, নিজের মর্যাদা-অস্তিত্ব প্রায় হারিয়ে ফেলা। তার মানে চাপা একটা বিষ, সমাজের ব্যাধির একটা দুর্গন্ধ গল্পটি যখন লিখি, তখনো রয়ে গিয়েছিল। এরই প্রকাশ আত্মজা ও একটি করবী গাছ।'১৬
দেশত্যাগ করে পূর্ব পাকিস্তানে আসা একটি মুসলিম পরিবারের চূড়ান্ত অবক্ষয়ের চিত্র ফুটে উঠেছে এ গল্পে। দেশভাগে সর্বস্ব হারানো বৃদ্ধ পিতা থাকার অবলম্বন হয় তাঁরই মেয়ের দেহ। মাত্র দুই টাকার বিনিময়ে তিনি এলাকার বেকার, উচ্ছন্নে যাওয়া বখাটে ছেলেদের কাছে রাতে তুলে দেন মেয়েকে। রাতে পূর্ববঙ্গের খালবিল ডোবা পেরিয়ে আসা খদ্দের বখাটে ছেলেগুলোকে তিনি বলেন, 'ওসব তোমরা জানো। আমরা শুকনো দেশের লোক, বুঝলে না? সব সেখানে অন্যরকম, ভাবধারাই আলাদা আমাদের। এখানে না খেয়ে মরে যেতাম তোমরা না থাকলে বাবারা। (দে.ভা.গ.পৃ.৩২)। কিন্তু যখন তার মেয়েকে সম্ভোগের তখন বুড়ো তার আত্মগ্লানির কথা বলেন। 'আমি যখন এখানে এলাম-তখন একটি করবী গাছ লাগাই।-তখন হু হু করে কেদে উঠল, চুড়ির শব্দ এলো এলোমেলো শাড়ির শব্দ আমি একটা করবী গাছ লাগাই বুঝলে?...ফুলের জন্য নয় বুড়ো বলল- বিচির জন্য।...চমৎকার বিষ হয় করবী ফুলের বিচিতে।(দে.ভা.গ.পৃ.৩৩)
বুড়োর এই অসহায় আত্মহননের ইচ্ছার সামনে দাঁড়িয়ে আমরা বিহবল হয়ে যাই। লেখক যেন অক্ষম আমাদেরই বার বার জিজ্ঞাসা করেন, এ্যাহন তুমি কাঁদতিছ? এ্যাহন তুমি কাঁদতিছ? এ্যাহন কাঁদতিছ তুমি? গল্পের এই স্ল্যাপিং এন্ড যেন আমাদেরই গালে চটোপাঘাত করে।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার স্মৃতি নিয়ে লেখা গল্প 'পরবাসী'। গল্পের প্রধান চরিত্র বশির মাঠে কৃষিকাজে যাওয়ার আগে তার চাচা ওয়াজদ্দিকে বলে, 'তুমি কিচুই শোন নাই। পাকিস্তানে হিঁদুদের লিকিন একছার কাটচে- কলকাতায় দেমনি কাটচে মোচলমানদের।...লবাবপুর ছিষ্টিধরপুর থেকে মা কালীর পুজো দিয়ে হিঁদুরা আসবে' (দে.ভা.গ.পৃ.৪২-৪৩)। তারপর দেশত্যাগের তার সিদ্ধান্তটি নিয়ে চাচা-ভাতিজার মধ্যে কথাগুলো আমরা শুনি-
: হাজার হলেও পাকিস্তানটো মোচলমানদের দ্যাশ, সিখানে মোচলমানদের রাজত্বি...
: তাহলে পাকিস্তানে যাস নাই ক্যানে?
: আমাদের কি সায়োস হয় চাচা ঘর সংসার লিয়ে কোতাও যেতে? তেবু দ্যাশ তো।
: তোর বাপ কটো? এ্যাঁ-কটো বাপ? মা কটো? একটা তো? দ্যাশও তেমনি একটো। বুইলি।
বচির বুঝেছে মা যেমন একটা দ্যাশ তেমনি একটা। সে মায়ের কাছেই থেকেছে। পরিণামে তার চোখের সামনে খুন হতে দেখেছে চাচা ওয়াজদ্দিকে।
ঘরে ফিরে দেখেছে হামলাকারীরা মাটির সাথে গেঁথে ফেলেছে তার সাত বছরের শিশু সন্তানকে, বউসহ বাড়ি দিয়েছে পুড়িয়ে। তখন সে প্রাণ নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্ত পার হয়েছে লুকিয়ে। এখানে সে পেয়েছে তার মতই ভারতে পলায়নরত ধূতি পরিহিত প্রতিপক্ষ সম্প্রদায়ের লোককে। বদলা হিসেবে খুন করেছে সে তাকে। কিন্তু পরক্ষণেই সে আবিস্কার করেছে- 'বশির দেখল সে মুখ যেন ঠিক ওয়াজদ্দির মুখ- রক্তাক্ত, বিভৎস, তেমননি অবাক। চোখের ওপর থেকে ধোঁয়াটে পরদাটা যেন সরে গেল, আর তার চোখের পানিতে ধূসর হয়ে এলো দুটি পৃথিবী- যাকে সে ছেড়ে এলো এবং যেখানে সে যাচ্ছে।( দে.ভা.গ.পৃ.৪৭) লেখক বশির চরিত্রের ভেতর দিয়ে দাঙ্গার পটভূমিকে ঘটালেন মানবিক উন্মিলন। গল্পটি মানবতা জাগরণের গল্প।
পূর্ববঙ্গে রিফিউজি সংকট চিত্র নিয়ে লেখা গল্প 'মারী'। রিফিউজিরা আসছে শুনে পূর্ববঙ্গের মানুষদের মধ্যে বিবিধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়-
শুনি রিফুজি আইছে?
হ, আইছে।
তাহলি তো কিতেবাদি বাধাবেনে।
যাবে কনে?
যেহানে ইচ্ছে সেহানে যাক, আমরা মরতেছি নিজেগো জ্বালায়, এ্যাহন রিফুজি আলি বাঁচবেনে একডা লোক, কনদিনি।'(দে.ভা.গ.পৃ.৪৯)
তারা শেষ অবধি রিফিউজিদের জায়গা দেয়। কেননা, 'রিফুজিরা তো আমাদের ভাই।' (দে.ভা.গ.পৃ.৫০)। চারশত লোকের জায়গা হয় বন্ধ স্কুল ঘরে। মানবেতর জীবন-যাপন করে তারা। এক ফোঁটা দুধ নিয়ে, রিলিফ নিয়ে। শিকার হয় গণমারির। 'স্কুল বাড়িটার সমস্ত জায়গা থেকে হলঘর ক্লাশরুম আর ফাঁকা জায়গাটা থেকে অসংখ্য মানুষ আধশোয়া অবস্থায় বসি করছে আর তাঁর দিকে চেয়ে চকচকে চোখ মেলে চেয়ে হাঁফাচ্ছে। এবং তারপরে মূক মাটির ওপর হলুদ রঙের পাখি নেচে নেচে বেড়াচ্ছে। (দে.ভা.গ.পৃ.৪৯) গল্পটিতে শত বিপন্নতার মধ্যেও মানুষের বেঁচে থাকার স্বপ্নকে রূপায়িত করা হয়েছে।
'খাঁচা' দেশভাগের একটি প্রতীকী গল্প। গল্পটির প্রধান চরিত্র অম্বুজাক্ষ সেতার বাজায়। বিরাট বাড়িঘর নিয়ে এতোদিন পূর্ববঙ্গে ছিল। এখন তাকে বিনিময় করে পশ্চিমবঙ্গে চলে যেতে হচ্ছে। ভারতে বিনিময়ের জন্য এমনি সে জায়গা খুঁজছে। কিন্তু পাচ্ছে না। তার স্ত্রী উদগ্রীব। কিন্তু অম্বুজাক্ষ দ্বিধান্বিত নিজ দেশত্যাগে। এমনি সবকিছু কী আর পাবে? এরমধ্যে তার ছেলে মারা যায় সাপের কামড়ে। স্ত্রী এ উপলক্ষে আরো উগ্র হয়ে ওঠে। কিন্তু সে তার বৃদ্ধ পিতাকে নিয়ে এখনই দেশত্যাগে দ্বিধা জানায়। অম্বুজাক্ষ একদিন তার প্রিয় সেতার কোলে নেয়। দেশরাগে সুর তোলে। আর স্ত্রী তখনই ভেঙে খান খান করে দেয় সেতারটি। কিন্তু অম্বুজাক্ষ জানে সেতারটি ভেঙে ফেললেও মুক্তি তাদের নেই। এখানে যে অবস্থা নতুন দেশেও তার চেয়ে ভাল কোন সংবাদ তার কাছে নেই। তারা দেশ নামক ধারণার খাচায় বন্দি রয়েছে। এটা বদল করা যেতে পারে কিন্তু মুক্তি পরাহত।
'দিবাস্বপ্ন' গল্পটি বৃদ্ধ রহিম বখশের দেশবদলের স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন নিয়ে। গল্পটি শুরু হয়েছে এভাবে-'রহিম বখশের জীবন খুব লম্বা। এই লম্বা জীবনের শেষভাগে যখন তাকে জন্মভূমি ছাড়তে হয়, তখন সে ভীষণ বিপাকে পড়ে যায়।...নতুন দেশে আসার আগে একটি কামনা ছিল তার। সে যেন পরিস্কার ঝকঝকে কোনো সকালে সেখানে পৌঁছায়, যাতে একেবারেই পুরো দেশটা দেখে ফেলতে পারে এবং ছবিটা মৃত্যু পর্যন্ত মনে গেঁথে নিতে পারে। কিন্তু ব্যাপার দাঁড়ালো উল্টো।'(দে.ভা.গ.পৃ.৭১) নতুন দেশের বাস্তবতার সাথে সে খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে সে তার ফেলে আসা দেশ নিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখতে শুরু করে। সে তার ফেলে আসা শৈশব আর দেশকে নিয়েই বিভোর থাকে সারাক্ষণ। এ দেশে হওয়া কেরাণিপুত্র বা পুত্রবধূ কারো সময় নেই এসব চিন্তা করার বা বৃদ্ধকে বোঝার। সব কিছু বুড়োর কাছে অচেনা হয়ে যায়। সে ভাবে একমাত্র তার পৌত্রকেই বলা যায় সে সব গল্প। কিন্তু বলতে গিয়ে সে আবিস্কার করলো সে বলতে পারছে না। নিজেকে তার জন্তুর মতো মনে হলো। ফেলে আসা শৈশব আর দেশকে নিয়ে স্মৃতিভারাক্রান্ত নিঃসঙ্গ বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া বৃদ্ধের কাহিনি শিল্পনিপুণভাবে বলা হয়েছে 'দিবাস্বপ্ন' গল্পে।
হাসান আজিজুল হকের গল্পের দেশভাগের মানুষরা দেশভাগের আঘাত পরবর্তী অভিঘাতে হয়ে পড়ে কুণ্ডলয়ানকামী, বৃত্তাবদ্ধ, চারপাশের মানুষের সাথে যোগাযাগে রহিত। তারা বাস করে একাকী। গ্রামের বা বিলের এক এক প্রান্তে। যেন নিজ পরিবারই একটি সমাজ। অর্থাৎ তারা যে নতুন দেশে এসেছে সেখানেও তারা মানসিকভাবে বহিরাগত। হাসান যেমনটি নিজের সম্পর্কে বলেন- এই 'ব্যাপারটা কঠিন হয়েছিল আমার পক্ষে। নতুন করে মন জোড়া।'১৭
ফলে তারা তৈরি করেন একটি ডেসপোরা। এ মানুষগুলো বাস করে এক স্থানে আর তাদের মন অধিকার করে থাকে ফেলে আসা মাটিতে। এমনকি বিয়ে পর্যন্ত করেন পুরোনো সম্প্রদায়ে। হাসান গবেষক যেমনটি বলেন, 'রাজশাহীর জীবনে হাসান আজিজুল হকের জীবনে পুনরায় শৈশব কৈশোরের ছেড়ে আসা রাঢ়বঙ্গের রুক্ষপ্রকৃতির স্পর্শ পান। বিএ শ্রেণীতে অধ্যয়নের সময় শামছুন্নাহার-এর সাথে তাঁর বিয়ে হয়। বৈবাহিক সূত্রে হাসান আজিজুল হকের পুনরায় বর্ধমানের সাথে সম্পর্ক তৈরি হয়। কারণ, স্ত্রী শামছুন্নাহারও বর্ধমানের বাসিন্দা।'১৮
দেশভাগের আঘাত ও আঘাত-পরবর্তী অভিঘাতে বিপন্ন, বিকলাঙ্গ, কুণ্ডলায়িত, আত্মবিবরকামী উন্মুল, নিত্যপরবাসী মনের মানুষের গল্পবলার ভেতর দিয়ে হাসান যেমন লিখে চলেন হাজার লক্ষ মানুষের বেদনাদীর্ণ আর্তি তেমনি লিখে চলেন নিজেকে। গল্পের মানুষ ও ব্যক্তি নিজের কণ্ঠস্বর মিলে গল্পগুলো হয়ে ওঠে বহুস্বরিক। ফলে বাংলা সাহিত্যে তিনি হয়ে উঠেন দেশভাগের ট্রমার এক অনন্য শিল্প ভাষ্যকার।
তথ্যসূত্র
১। Louise HARRINGTON (2011), An-Other Space: diasporic responses to Partition in Bengal, India and the Indian Diasporic Imagination. Rita Christian and Judith Misrahi-Barak (eds.), Montpellier: Presses universitaires de la Méditerranée, France, pp. 237

২। হাসান আজিজুল হক (২০১০), দেশভাগ আমার জীবনের ক্ষতস্বরূপ, সাক্ষাৎকার, দৈনিক ডেসটিনি, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ৫, ঢাকা,পৃ.৪
৩। হাসান আজিজুল হক (২০১১), উত্তর বসন্ত, দেশভাগের গল্প, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, পৃ.১৮
৪। বিস্তারিত দেখুন- হাসান আজিজুল হক (২০১২) উঁকি দিয়ে দিগন্ত, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ঢাকা
৫। সেলিনা হোসেন ও অন্যান্য সম্পাদিত (১৯৯৯), বাংলা একাডেমি লেখক অভিধান, বাংলা একাডেমি, ঢাকা,পৃ.২২৪-২২৫
৬। হাসান আজিজুল হক (২০১৩), এ পথে আমি যে, কালের খেয়া, দৈনিক সমকাল, ১১ অক্টোবর, ঢাকা, পৃ.৪।
৭। শোয়াইব জিবরান (২০০৯), কমলকুমার মজুমদারের উপন্যাসের করণকৌশল, বাংলা একাডেমি, পৃ.১
৮। রফিকউল্লাহ খান (১৯৯৯), সত্যেন সেনের উপন্যাস :বিষয় স্বাতন্ত্র্য ও শিল্পচেতনা, আফসার ব্রাদার্স, ঢাকা, পৃ.৯
৯। হাসান আজিজুল হক (২০১১), বাচনিক আত্মজৈবনিক, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, পৃ.৯৩
১০। হাসান আজিজুল হক (২০১২), উঁকি দিয়ে দেখা, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ঢাকা, পৃ.৫৪
১১। হাসান আজিজুল হক (২০১২), উঁকি দিয়ে দেখা, প্রাগুক্ত পৃ.৬৮
১২। আবদুল মান্নান সৈয়দ (২০০৯), আমি অতি রাগী অতি প্রেমিক, দৈনিক প্রথম আলো, ঢাকা, ৩১ জুলাই, পৃ.২
১৩। হাসান আজিজুল হক (২০১৩), সাক্ষাৎকার, সাহিত্য.কম  http://www.sahitto.com/2013/08/453

১৪। হাসান আজিজুল হক (২০১১), প্রসঙ্গ-কথা, দেশভাগের গল্প, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, পৃ.৭
১৫। সানজিদা আখতার (২০০২), বাংলা ছোটগল্পে দেশভাগ, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, পৃ.১৮১
১৬। হাসান আজিজুল হক (২০১৩), সাক্ষাৎকার, সাহিত্য.কম. http://www.sahitto.com/2013/08/453

১৭। হাসান (১৯৮৬), চালচিত্রের খুঁটিনাটি, মুক্তধারা, ঢাকা,পৃ.১০৭
১৮। অনুপম হাসান (২০১৩), আমার ব্লগ, https://www.amarblog.com/index.php?q=anupamhasan/posts/100128