পথশিশুদের সুরক্ষায় আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছেন সংসদ সদস্য ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেছেন, বর্তমান সরকার নানা পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও এখনও পথশিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়নি। এ ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা অন্যতম প্রধান কারণ। জাতীয় পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিতে পারলেই পথশিশুদের বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাব মিলনায়তনে পথশিশুদের জন্য কর্মরত 'স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাক্টিভিস্টস নেটওয়ার্ক (স্ক্যান)' বাংলাদেশ ও কারিতাস আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এই সুপারিশ তুলে ধরেন তারা। 'মহান বিজয় দিবসের প্রত্যাশা ও পথশিশু সুরক্ষায় ক্রস সেক্টর বডি প্রতিষ্ঠা' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মুকুল।

প্রবন্ধে তিনি বলেন, পথশিশুর সংখ্যা বাড়ছে। সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পথশিশুদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সমন্বয়হীনতার কারণে প্রত্যাশিত অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে প্রকল্পভিত্তিক নানামুখী কার্যক্রমেও শিশু অধিকার সুরক্ষায় কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই।

আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠনের রূপরেখা তুলে ধরে প্রবন্ধে বলা হয়, এই কমিটি প্রয়োজন অনুযায়ী আইনি সহায়তা ও প্রণয়ন, পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন, মাদকাসক্ত শিশুদের পুনর্বাসন, শিশুশ্রম ও পাচার বন্ধ করতে কাজ করবে। তা ছাড়া পরিবারগুলোকে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তি, গবেষণা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিবেদন তৈরি, ব্যাপকভিত্তিক জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনাসহ পথশিশু কার্যক্রম সমন্ব্বয়ের কাজ করতে পারে। প্রবন্ধে কমিটি গঠনের পাশাপাশি পথশিশু সুরক্ষায় বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন ও শিশু অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়।

আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতা ও সংসদ সদস্য গেল্গারিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের সুরক্ষায় বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছিলেন। বর্তমান সরকার সেই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী রাজধানীমুখী মানুষ নিয়ন্ত্রণে গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। সাধারণ মানুষের জন্য ৩৩ ধরনের ভাতা চালু করেছেন।

পথশিশুদের সুরক্ষায় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু। তিনি বলেন, সরকার আইন ও নীতি প্রণয়ন করলেও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নেই। তৃণমূলে সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাই পরিবারের অজান্তে অনেক শিশু পথে নামছে এবং পাচারের শিকার হচ্ছে।

পথশিশুদের মাদকাসক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সংসদ সদস্য শিরীন আহমেদ। তিনি বলেন, মাদক বহন করতে গিয়ে মাদকে আসক্ত হচ্ছে, তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এর পেছনে সব সময় সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করছে, যা সরকারের একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব।

সংসদ সদস্য খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন বলেন, পথশিশুরা বিভিন্ন ধরনের শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে পথশিশুদের ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। কারিতাসের ঢাকা আঞ্চলিক কর্মকর্তা জ্যোতি গোমেজের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন র‌্যাব-১০ এর কমান্ডিং অফিসার এম ফরিদ উদ্দিন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের নিখিল চন্দ্র ভদ্র, স্ক্যান সভাপতি জাহাঙ্গীর নাকির, ওয়ার্ল্ড ভিশনের মিঠুন সরকার, এক রঙা এক ঘুড়ির এস এম মাসুদুল ইসলাম নীল, এএসডির শাওমী ইমাম, কারিতাসের কামরুন্নাহার প্রমুখ।