
আপনার মনে কি অনুশোচনা হচ্ছে? ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে? বিয়ারের গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে প্রশ্ন করল আবেদ চৌধুরী।
ঘাড় নাড়লেন সাইফুজ্জামান খান। বললেন-
আমরা দুই বছর ভেবেছি। গত দু'বছরে কতবার আমরা কক্সবাজারে এসে এই হোটেলে উঠে আলোচনা করেছি। ?তুমি আমাকে চেনো। আমি কাগজে লিখে লিখে প্রতিটি বিষয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেছি। ?তারপর সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। বার্ধক্যের ভার কাঁধে নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করার সাহস আমার হয় না। ঈশ্বরের উচিত ছিল এমন নিয়ম করা যাতে বয়স পঁচাত্তর হলে মানুষ মরে যাবে। কিংবা সত্তর। সত্তরই ভালো। কী বাকি আছে, এ পৃথিবীর যা দেখা দরকার? কোন? অভিজ্ঞতা অর্জনের আশায় আমি আরও পাঁচ কিংবা দশ বছর বেঁচে থাকতে চাইব?
একটু থেমে তিনি বললেন-
মানুষের জীবনে বার্ধক্য না থাকলে আমি অনন্তকাল বেঁচে থাকতে চাইতাম। গত মাসে ছোট কাকা পারকিনসন্স ডিজিজে তিন বছর ভুগে মারা গেলেন। বিছানার সঙ্গে তাঁর পিঠ মিশে গিয়েছিল। ?
শুয়ে থাকতে থাকতে পিঠজুড়ে দগদগে ক্ষত জন্মেছিল। চাদরের সঙ্গে চামড়া লেগে যেত।
শেষের ছয় মাস কথা বলতে পারতেন না। পশুর মতো বেঁচে ছিলেন।? চিকিৎসার খরচ জোগাতে গুলশানের দুটো ফ্ল্যাট তিনি একে একে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। না না আবেদ, এ রকম কষ্টকর মৃত্যুর জন্য আমি অপেক্ষা করতে চাই না।
কিন্তু তোমার বয়স আমার চেয়ে অনেক কম। তুমি কি আরও কয়েক বছর বেঁচে থাকতে চাও?
না স্যার, সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে আসার কোনো কারণ ঘটেনি। এটা ঠিক, আপনার তুলনায় আমার বয়স কিছুটা কম, কিন্তু আমার অবস্থাটা দেখুন। প্রথমে এয়ারফোর্সে থেকে বের করে দেওয়া হলো। তারপর বিমানে গেলাম প্লেন চালাতে। পনেরো বছর চাকরির পর বিমান আমাকে বাধ্যতামূলক অবসর দিল। আমার পেনশন মাসে ৮০ হাজার টাকা। যে বাসায় আমি আছি সে বাসার ভাড়া ৫০ হাজার। দুই বছরে? গ্র্যাচুইটির টাকা অর্ধেক খেয়ে ফেলেছি। আমি কি ভিক্ষে করে সংসার চালাব?
তিন মাস পরপর কোর্টে হাজিরা দিতে হয়। ফ্লাইট অফিসার নন্দিতা আমাকে ফাঁসিয়েছে। ককপিটে বসে ওই ধুমসিকে কিছু একটা করা কারও পক্ষে সম্ভবপর? সত্যি বলছি স্যার, ওই ধুমসি যেদিন ফ্লাইং অফিসার হিসেবে ককপিটে আমার পাশে বসে থাকত, সেদিন আমার ল্যান্ডিং ভালো হতো না। আমার নাকে ওর শরীর থেকে পচা গন্ধ এসে মাথাটা খারাপ করে দিত। আমার মনে হতো আমি ল্যান্ডিং গিয়ার বের না করে বিমানটা ক্র্যাশ করে দেই।
মুখ দিয়ে খারাপ কথা কথা বের হয়ে গেল স্যার। মাফ করবেন।
২.
ও সবাইকে বলে বেড়াত আমি ওর জন্য পাগল। হা হা হা। আমি চাইলে মাত্র ১০০ ডলার খরচ করলেই
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরীদের একজনকে ব্যবহার করতে পারতাম।
বানিয়ে বানিয়ে সে গল্প করত। প্যাথলজিক্যাল কেইস। কেউ ওকে পোছে না। আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলে বলে সে নিজের দাম বাড়াত।
এইসব সরস গল্প গোপন থাকে না স্যার। এক দিন আমার স্ত্রী তালাক দিয়ে চলে গেল। আর ওই ধুমসিটা আমার নামে ধর্ষণের মামলা ঠুকে দিল। ? আর আদালতের কাণ্ড দেখুন স্যার, কোনো প্রাথমিক তদন্ত নেই কিন্তু মামলা নিয়ে বসে আছে। কোনো মেয়ে অভিযোগ করলেই ধর্ষণের মামলা নিতে হবে? একটা শুনানি করে দেখতে পারত না আদৌ সেক্সের সুযোগ ছিল কিনা? একটা ড্যাশ ৮ এর ককপিটে কয় ইঞ্চি জায়গা থাকে?
ঢাকা থেকে এয়ারবোর্ন হওয়ার পর নেপালের ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে কয় মিনিট সময় লাগে?
জামিন নিতে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। ? প্রতি রাতে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমোতে যাই আমি। ? আগের দুটো বড়িতেই চলত, এখন চারটি বড়ি না গিললে চলে না। ঘুম আসে না। বন্ধুবান্ধবের কাছে ২০ লাখ টাকা দেনা হয়ে গেছে। এই দেনার পাহাড় বড় হতেই থাকবে। তারপর কী হবে আমার? ক্যাডেট কলেজ ক্লাবে গেলে আজকাল অনেকে আমাকে এড়িয়ে চলে, পাছে বিনে পয়সায় মদ খাওয়াতে হয়।
সবকিছু ভেবেছি স্যার। অনেকবার ভেবেছি। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জন্মের ওপর আমার হাত ছিল না।
কিন্তু মৃত্যুর ওপর মনে হয় নিয়ন্ত্রণ আছে। বয়সের মাপে, জীবনের হিসাবে যেখানে এসে পৌঁছেছি, আমার মনে হয় না আমার আর এক সেকেন্ডও বেঁচে থাকা উচিত। না আমি এই পৃথিবীর জন্য কিছু করতে পারি, না আমি নিজের জন্য কিছু করতে পারি। আমি আত্মহত্যা করছি না স্যার, আমি আমার জীবনের সীমানাটা যুক্তিযুক্তভাবে একটুখানি ছোট করে দিচ্ছি। বলা যায়, জীবনের অপ্রয়োজনীয় অংশটুকু ছেঁটে দিচ্ছি।
জিনিসটা কোত্থেকে সংগ্রহ করেছ?
হাটখোলার সায়েন্টিফিক জিনিসপত্রের মার্কেট থেকে।
সাপের বিষ নাকি?
না স্যার। বেলাডোনা।
ভেজাল না থাকলেই হয়।
বড় দোকান থেকে সংগ্রহ করেছি। প্যাকিং ভালো ছিল। লেখা ছিল 'প্রোডাক্ট অব ইইউ'।
ভালো।
কটা বাজল স্যার? রাত ১০টা বাজতে আর কত দেরি?
৩.
ডান পাশের দেয়ালে টাঙানো গ্র্যান্ডফাদার্স ক্লকের দিকে তাকিয়ে অনুপম চ্যাটার্জি বললেন-
সাতটা বাজতে চলেছে।
আরও তিন ঘণ্টা। যে কোনো অপেক্ষাই ক্লান্তিকর। ? আমার সবচেয়ে বেশি ক্লান্তি লাগত যখন এয়ারপোর্টে টেক-অফের আগে ফ্লাইট কিউতে অনেকক্ষণ পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো।
হ্যাঁ, আরও তিন ঘণ্টা। আটটার সময় আমরা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ডিনার করে আসব। নাকি তুমি চাও রুম সার্ভিসে অর্ডার করি?
রেস্টুরেন্টই ভালো স্যার। পাশের হোটেলের রেস্টুরেন্টের বাবুর্চি খুব ভালো রান্না করে। শামুকের ফুচকা ওদের স্পেশাল আইটেম। কফিটাও অসাধারণ। ?চলুন ওখানে খেয়ে আসি। হাজার হলেও জীবনের শেষ ডিনার।
শেষ ডিনারটা জম্পেশ হওয়া উচিত, তাই না স্যার। একটু হাসল আবেদ খান।
ডিনার শেষে হোটেলে ফিরে নিজের ঘরে গেলেন আবেদ চৌধুরী। সন্ধ্যা থেকে গোটা তিনেক বিয়ার পেটে গেছে।
ইউরিন ব্ল্যাডার ফুলে উঠেছে।
সাড়ে ৯টা বাজলে টয়লেটে গিয়ে অজু করলেন এয়ার কমডোর (অব.) সাইফুজ্জামান খান। ঘরোয়া পোশাক ছেড়ে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা পরলেন। একটু আতর ব্যবহার করলেন। তারপর কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়লেন। নামাজের শেষে তওবা করে মোনাজাত করলেন। মোনাজাতের মধ্যে বললেন-
'হে আল্লাহ, হে প্রতিপত্তিশালী সৃষ্টিকর্তা, হে করুণাময় প্রতিপালক আমাকে মাফ করুন। আমার জান কবজের জন্য দয়া করে রহমতের ফেরেশতা প্রেরণ করুন।'
রাত দশটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে আবেদ চৌধুরীর ঘরে গিয়ে কলিং বেল টিপলেন তিনি।
কোনো সাড়া এলো না।
নিজের ঘরে ফিরে হাউস ফোনে আবেদকে ফোন করলেন। ফোন 'নো রিপ্লাই' হলো।
ভয়েজ মেসেজে তিনি বললেন-
'আবেদ, কল মি হোয়েন ইউ আর রেডি।'
৪.
জ্যেষ্ঠ বিচারক জ্ঞানেন্দ্রনাথ মৈত্র একটু কেশে নিয়ে বক্তব্য শুরু করলেন।
এ মামলাটি জটিল কিছু নয়। আসামি বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর আব্দুস সালাম খান বিষ প্রয়োগ করে তার একসময়ের সহযোগী পাইলট ক্যাপ্টেন আবেদ খানকে হত্যা করেছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ যথাযথভাবে তদন্ত করেছে এবং প্রমাণ করেছে যে এই হত্যাকাণ্ড অন্য কেউ নয় বরং আসামি আব্দুস সালাম খান নিজেই ঘটিয়েছে। জেলা জজ বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী তাকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন।
আমরা আসামির আপিল নিবিড়ভাবে পাঠ করেছি। ? আমাদের সামনে তিনটি বিষয় রয়েছে। প্রথমত, বৈচারিক আদালত যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে বিচার আদেশ দিয়েছে কিনা; ? দ্বিতীয়ত, পুলিশের তদন্তে কোনো ত্রুটি রয়েছে কিনা; এবং ? তৃতীয়ত, সামগ্রিকভাবে অন্যতর কোনো ত্রুটি আছে কিনা, যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থি।
আমাদের অভিমত এই যে বৈচারিক আদালত সিআরপিসি যথাযথভাবে অনুসরণ করে বিচারকার্য সমাধা করেছেন। দ্বিতীয়ত, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ফরেনসিক অনুসন্ধানসহ সকল প্রকার কার্য সমাধা করেছে এবং যে সকল প্রমাণ উপস্থাপন করেছে তাতে বিষ প্রয়োগে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তৃতীয়ত, আমরা পুরো ঘটনাটি বিশ্নেষণ করেছি এবং হত্যাকাণ্ড সংঘটন থেকে তদন্ত কার্যক্রম এবং বিচার প্রক্রিয়া এই তিনের মধ্যে কোনো ধরনের অসংলগ্নতা খুঁজে পাইনি। এমতাবস্থায় আমরা মনে করি যে বৈচারিক আদালতের আদেশের মধ্যে হস্তক্ষেপের কোনো আইনি সুযোগ বিদ্যমান নেই।
এইটুকু বলে তিনি কনিষ্ঠ বিচারপতির দিকে ঘাড় ফেরালেন। কনিষ্ঠ বিচারপতি আব্দুল করিম হাওলাদার মাথা নাড়িয়ে তার সম্মতি জ্ঞাপন করলেন।
ঠিক এই সময় উঠে দাঁড়ালেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাজীব সামদানীর পাশে বসে থাকা ছোটখাটো একটি মানুষ।
বিচারপতিদের ভুরু কুঁচকে গেল। আদালতে সামান্য গুঞ্জন দেখা দিল।
ব্যারিস্টার রাজীব সামদানী হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। তিন বছর আগে অবসর নিয়ে তিনি ওকালতি শুরু করেছেন। ? তিনিও দাঁড়ালেন। তিনি বললেন-
মান্যবর আদালত, আমার পাশে যিনি উঠে দাঁড়িয়েছেন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি আজকে সকালে পত্রিকা পড়ে মামলার বিষয়টি অবহিত হয়েছেন। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তিনি আদালতে এসেছেন একটি বিষয় তুলে ধরার জন্য।
জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বললেন-
আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছি। কেবল আদেশ ঘোষণা বাকি আছে। ?
যাই হোক, বিষয়টি যেহেতু বিষ প্রয়োগে হত্যাকাণ্ড এবং যিনি এসেছেন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগের একজন অভিজ্ঞ অধ্যাপক তাই তাঁর বক্তব্য শুনতে আপত্তি করার কারণ নেই।
অধ্যাপক মিসির আলী বললেন-
মাননীয় আদালত, বিলম্ব্বে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য দুঃখিত। বাইরে ছাত্ররা আন্দোলন করছে। তাই রাস্তা পার হতে বিলম্ব্ব হয়েছে।
আজ আবার কী নিয়ে আন্দোলন?
জ্যেষ্ঠ বিচারপতির কণ্ঠে বিস্ময়!
পরিস্কার বুঝিনি। মনে হয়, ওরা চায় ব্রাজিলের সাপোর্টারদের দক্ষিণ আমেরিকায় নির্বাসন দেওয়া হোক।
৫.
আদালতে হাসির রোল উঠল।
অধ্যাপক মিসির আলী বললেন-
মাননীয় আদালত, পত্রিকাতে পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট পূর্ণাঙ্গভাবে আসেনি।
তবে আমার ঘরে 'সাপ্তাহিক অপরাধচিত্র' পত্রিকাটির কিছু পুরোনো সংখ্যা ছিল। তার একটিতে এ মৃত্যু ও বিচার নিয়ে বড় আকারের প্রতিবেদন ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে তদন্তের মধ্যে একটি ত্রুটি ও একটি অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে। ত্রুটি হচ্ছে, তারা যে বিষের কথা উল্লেখ করেছেন সেই বিষ ভিকটিম নিজে পান করেছেন না তাকে জোর করে পান করানো হয়েছে- এ ব্যাপারে তারা কৌতূহল বোধ করেননি। ?
দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, আসামি কী কারণে তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীকে হত্যা করবেন, সে মোটিভ সম্পর্কেও কোনোরূপ উল্লেখ কোথাও পাইনি। আবেদ চৌধুরীর মৃত্যুতে অভিযুক্ত সাইফুজ্জামান সাহেব উপকৃত হননি।
পত্রিকায় লেখা হয়েছে পুলিশ কোনো মোটিভ খুঁজে পায়নি। মোটিভ ছাড়া হত্যাকাণ্ড হয় না। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই বিষয়গুলির নিষ্পত্তি না হলে ন্যায়বিচার ক্ষুণ্ণ হবে, এই আমার অভিমত।
কনিষ্ঠ বিচারপতি আব্দুল করিম হাওলাদার মৃদু কণ্ঠে কী বললেন তা স্পষ্ট বোঝা গেল না। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী দাঁড়িয়ে বললেন-
তদন্তে প্রতিবেদনের সবকিছু বলা আছে। আদালতের কছে তা দাখিল করা আছে।
অধ্যাপক মিসির আলী বললেন-
কোন? বিষে আবেদ খানের মৃত্যু হয়েছে তা কি জানা গেছে?
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিরক্তমুখে বললেন-
অবশ্যই জানা গেছে। বেলেডোনা।
বেলেডোনার মধ্যে তিনটি কম্পোনেন্ট থাকে। সবগুলি থাকার অর্থ হলো বিষাক্ত খাদ্য থেকে বিষক্রিয়া হয়েছে।
কনিষ্ঠ বিচারপতি আব্দুল করিম হাওলাদার জিজ্ঞেস করলেন-
কী রকম খাদ্য?
আমরা প্রতিদিন খাই এ রকম খাদ্য। আলু, টমেটো, বেগুনে বেলেডোনা স্বল্পমাত্রায় থাকে। রান্না করলেও
তার তেজ নষ্ট হয় না। তবে কখনও কখনও আলুতে বেশি মাত্রার বিষ পাওয়া যায়, যা মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিরক্তমুখে কাগজপত্র ঘাঁটতে লাগলেন।
জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বললেন-
আপনি আদালতকে বলুন, অধ্যাপক সাহেবের প্রশ্নের উত্তর কী?
বেশ খানিকক্ষণ সময় পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী দাঁড়িয়ে বললেন ভিসেরা রিপোর্টে লেখা হয়েছে সোলানিন থাকার কথা।
কেবল একপ্রকার বিষ? হায়োসিন ও অ্যাট্রোপিন পাওয়া যায়নি?
না কেবল উচ্চমাত্রার সোলানিনের কথা লেখা।
৬.
তার মানে বাজার থেকে কেনা বিষ। বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে কেনা হয়েছে।
একটু থেমে অধ্যাপক মিসির আলী বললেন-
আত্মহত্যা ছাড়া কেউ নিজে নিজে মুখে বিষ তোলে না।
কক্সবাজার থানার সুরতহাল রিপোর্টে কি জোর করে বিষপান করানো যেমন ধস্তাধস্তির কোনো প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে?
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন ঘেঁটে বললেন-
সুরতহাল রিপোর্টে সে রকম কিছু নেই। তার লাশ হোটেলের বিছানায় পড়ে ছিল। ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। হতে পারে তার রাতের খাবারে বিষ মেশানো হয়েছিল।
তিনি রাতের খাবার কোথায় খেয়েছিলেন তা কি জানা গেছে?
পেছনে দাঁড়ানো সিআইডির একজন পুলিশ অফিসার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কানে কানে কিছু বলল।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বললেন-
তদন্ত প্রতিবেদনে আছে আসামি ও ভিকটিম একসঙ্গে হোটেল থেকে বাইরে গিয়ে অনতিদূরে অবস্থিত কোরীয় রেস্টুরেন্টে একসঙ্গে ডিনার করেছেন। তারপর একসঙ্গে হোটেলে ফিরে এসেছেন।
মিসির আলী বললেন-
তা হলে অনুমান অসংগত হবে না যে ভিকটিমের রাতের খাবারে বিষ মেশানো হয়নি। কোরীয় বাবুর্চি বা ওয়েটার এ রকম করবে, এমন ভাবাও অসংগত।
জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বললেন-
আপনি কি ঠিক ইঙ্গিত করছেন তা বলবেন?
আমি বোঝার চেষ্টা করছি এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা। বিষ কোথা থেকে কে সংগ্রহ করেছিল জানা গেলে বিষয়টি পরিস্কার হতো।
কনিষ্ঠ বিচারপতি বললেন-
এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে কিছু পড়েছি বলে মনে হয় না।
মিসির আলী বললেন-
বেলেডোনা জাতীয় বিষ আজকাল সহজে পাওয়া যায় না। তার কারণ হলো, এর কোনো অ্যান্টিডোট আবিস্কৃত হয়নি। ইঁদুর মারার ঔষধেও আগে বেলেডোনা ব্যবহার করা হতো। আজকাল মানুষ ইঁদুর মারার ঔষধ খাচ্ছে বলে বেলেডোনার পরিবর্তে অন্য বিষ ব্যবহার করা হয়। ভিসেরা রিপোর্টে আর কী আছে?
ভিকটিম ২০ গ্রাম ডায়াজিপাম খেয়েছিল বিছানায় যাওয়ার আগে।
অধ্যাপক মিসির আলী বললেন-
২০ গ্রাম ডায়াজিপাম? তার মানে অনুমান করা যায় ভিকটিম হতাশায় ভুগছিলেন। ঘুম আসার জন্য তাকে উচ্চমাত্রার ডায়াজিপাম খেতে হতো।
ফরেনসিক রিপোর্টে কি মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়েছে?
৭.
হূৎপিণ্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে।
ভুল। সোলানিন ফুসফুস তথা শ্বাসতন্ত্রকে অকেজো করে দেয়। সেটাই মৃত্যুর কারণ। যাই হোক, এমবিবিএস কোর্সে টক্সিকোলজি পড়ানো হয় না। তরুণ ডাক্তারের পক্ষে ভুল করাটাই স্বাভাবিক।
জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জিজ্ঞেস করলেন-
কী করে বুঝলেন তিনি তরুণ ডাক্তার?
সিনিয়র ও অভিজ্ঞ ডাক্তাররা মৃতদেহের পোস্টমর্টেম পরীক্ষা করতে চায় না। কক্সবাজারে কোনো মেডিকেল কলেজ নেই, যেখানে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থাকবে। সুতরাং যিনি পোস্টমর্টেম করেছেন তিনি কম বয়সী হবেন, এটাই স্বাভাবিক।
আর কোনো প্রশ্ন আছে আপনার?
মান্যবর, অনেক প্রশ্ন করবার রয়েছে। যেমন, আবেদ খান সাহেবের দুশ্চিন্তার কারণগুলি কী কী? এটি গুরুত্বপূর্ণ। তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে এসব বিষয়ে আমার কৌতূহল হতো। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আমি জানতে চাইতাম ঢাকা থেকে কক্সবাজার ফ্লাইট এবং এই হোটেলের রুম বুকিং দেওয়া হয়েছে কার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে। ভিকটিম গত দুই বছরে কত টাকা ধার করেছেন, তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির অবস্থা কী?
তিনি কি সম্প্রতি কোনো বিলি বণ্টন করেছেন? তাঁর হয়তো জীবন বীমা ছিল। এ বিষয়ে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সম্প্রতি?
দুই বিচারপতি মাথা কাছে এনে কিছু পরামর্শ করলেন। মধ্যাহ্ন বিরতির আদেশ দিয়ে বিচারকার্য স্থগিত করলেন।
৮.
দুপুর তিনটায় আবার আদালত বসল। দুই বিচারপতি নিজ নিজ আসনে স্থির হয়ে বসলেন। রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিনিধি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জিজ্ঞেস করলেন-
অধ্যাপক মিসির আলী যেসব বক্তব্য দিয়েছেন সেসব বিষয়ে আপনার আপত্তি আছে?
উঠে দাঁড়িয়ে উকিল সাহেব বললেন-
মহাত্মন, আমাদের বিশেষ কোনো আপত্তি নেই।
জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বললেন-
আমরা পুরো বিষয়টি পূর্বাপর নতুন করে বিবেচনা করেছি। এই হত্যাকাণ্ডের কোনো সাক্ষী নেই। কোনো পারিপার্শ্বিক প্রমাণ নেই। একমাত্র প্রমাণ হলো তার ঘরে একটি গ্লাসে এবং একটি টিস্যু বক্সের গায়ে অভিযুক্ত আসামি জনাব সাইফুজ্জমান খানের আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে।
অনেক খুনের মামলার ক্ষেত্রে আসামির পক্ষে মোটিভ বা উদ্দেশ্য না থাকাটা নন-কনসেকোয়েন্সিয়াল বিবেচনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে তা করা সমীচীন হবে না। সাক্ষীর অভাব, পারিপার্শ্বিক প্রমাণের অভাব ইত্যাদি বিবেচনা করে আমাদের সিদ্ধান্ত এই যে বিষক্রিয়ায় আবেদ চৌধুরীর দুঃখজনক মৃত্যু হলেও এ বিষয়ে আসামি জনাব সাইফুজ্জমান খানের সম্পৃক্ততা আছে ধারণা করার কোনো গ্রহণযোগ্য কারণ বিদ্যমান নেই। বাদীপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি যে তিনিই খুনি। তাকে খুনের দায় থেকে অবমুক্তি দিলে ন্যায়বিচার করা হয়। তিনি সম্ভবত আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু সেই প্রশ্ন এই আদালতের বিবেচ্য নয়। া
ঘাড় নাড়লেন সাইফুজ্জামান খান। বললেন-
আমরা দুই বছর ভেবেছি। গত দু'বছরে কতবার আমরা কক্সবাজারে এসে এই হোটেলে উঠে আলোচনা করেছি। ?তুমি আমাকে চেনো। আমি কাগজে লিখে লিখে প্রতিটি বিষয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেছি। ?তারপর সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। বার্ধক্যের ভার কাঁধে নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করার সাহস আমার হয় না। ঈশ্বরের উচিত ছিল এমন নিয়ম করা যাতে বয়স পঁচাত্তর হলে মানুষ মরে যাবে। কিংবা সত্তর। সত্তরই ভালো। কী বাকি আছে, এ পৃথিবীর যা দেখা দরকার? কোন? অভিজ্ঞতা অর্জনের আশায় আমি আরও পাঁচ কিংবা দশ বছর বেঁচে থাকতে চাইব?
একটু থেমে তিনি বললেন-
মানুষের জীবনে বার্ধক্য না থাকলে আমি অনন্তকাল বেঁচে থাকতে চাইতাম। গত মাসে ছোট কাকা পারকিনসন্স ডিজিজে তিন বছর ভুগে মারা গেলেন। বিছানার সঙ্গে তাঁর পিঠ মিশে গিয়েছিল। ?
শুয়ে থাকতে থাকতে পিঠজুড়ে দগদগে ক্ষত জন্মেছিল। চাদরের সঙ্গে চামড়া লেগে যেত।
শেষের ছয় মাস কথা বলতে পারতেন না। পশুর মতো বেঁচে ছিলেন।? চিকিৎসার খরচ জোগাতে গুলশানের দুটো ফ্ল্যাট তিনি একে একে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। না না আবেদ, এ রকম কষ্টকর মৃত্যুর জন্য আমি অপেক্ষা করতে চাই না।
কিন্তু তোমার বয়স আমার চেয়ে অনেক কম। তুমি কি আরও কয়েক বছর বেঁচে থাকতে চাও?
না স্যার, সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে আসার কোনো কারণ ঘটেনি। এটা ঠিক, আপনার তুলনায় আমার বয়স কিছুটা কম, কিন্তু আমার অবস্থাটা দেখুন। প্রথমে এয়ারফোর্সে থেকে বের করে দেওয়া হলো। তারপর বিমানে গেলাম প্লেন চালাতে। পনেরো বছর চাকরির পর বিমান আমাকে বাধ্যতামূলক অবসর দিল। আমার পেনশন মাসে ৮০ হাজার টাকা। যে বাসায় আমি আছি সে বাসার ভাড়া ৫০ হাজার। দুই বছরে? গ্র্যাচুইটির টাকা অর্ধেক খেয়ে ফেলেছি। আমি কি ভিক্ষে করে সংসার চালাব?
তিন মাস পরপর কোর্টে হাজিরা দিতে হয়। ফ্লাইট অফিসার নন্দিতা আমাকে ফাঁসিয়েছে। ককপিটে বসে ওই ধুমসিকে কিছু একটা করা কারও পক্ষে সম্ভবপর? সত্যি বলছি স্যার, ওই ধুমসি যেদিন ফ্লাইং অফিসার হিসেবে ককপিটে আমার পাশে বসে থাকত, সেদিন আমার ল্যান্ডিং ভালো হতো না। আমার নাকে ওর শরীর থেকে পচা গন্ধ এসে মাথাটা খারাপ করে দিত। আমার মনে হতো আমি ল্যান্ডিং গিয়ার বের না করে বিমানটা ক্র্যাশ করে দেই।
মুখ দিয়ে খারাপ কথা কথা বের হয়ে গেল স্যার। মাফ করবেন।
২.
ও সবাইকে বলে বেড়াত আমি ওর জন্য পাগল। হা হা হা। আমি চাইলে মাত্র ১০০ ডলার খরচ করলেই
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরীদের একজনকে ব্যবহার করতে পারতাম।
বানিয়ে বানিয়ে সে গল্প করত। প্যাথলজিক্যাল কেইস। কেউ ওকে পোছে না। আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলে বলে সে নিজের দাম বাড়াত।
এইসব সরস গল্প গোপন থাকে না স্যার। এক দিন আমার স্ত্রী তালাক দিয়ে চলে গেল। আর ওই ধুমসিটা আমার নামে ধর্ষণের মামলা ঠুকে দিল। ? আর আদালতের কাণ্ড দেখুন স্যার, কোনো প্রাথমিক তদন্ত নেই কিন্তু মামলা নিয়ে বসে আছে। কোনো মেয়ে অভিযোগ করলেই ধর্ষণের মামলা নিতে হবে? একটা শুনানি করে দেখতে পারত না আদৌ সেক্সের সুযোগ ছিল কিনা? একটা ড্যাশ ৮ এর ককপিটে কয় ইঞ্চি জায়গা থাকে?
ঢাকা থেকে এয়ারবোর্ন হওয়ার পর নেপালের ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে কয় মিনিট সময় লাগে?
জামিন নিতে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। ? প্রতি রাতে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমোতে যাই আমি। ? আগের দুটো বড়িতেই চলত, এখন চারটি বড়ি না গিললে চলে না। ঘুম আসে না। বন্ধুবান্ধবের কাছে ২০ লাখ টাকা দেনা হয়ে গেছে। এই দেনার পাহাড় বড় হতেই থাকবে। তারপর কী হবে আমার? ক্যাডেট কলেজ ক্লাবে গেলে আজকাল অনেকে আমাকে এড়িয়ে চলে, পাছে বিনে পয়সায় মদ খাওয়াতে হয়।
সবকিছু ভেবেছি স্যার। অনেকবার ভেবেছি। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জন্মের ওপর আমার হাত ছিল না।
কিন্তু মৃত্যুর ওপর মনে হয় নিয়ন্ত্রণ আছে। বয়সের মাপে, জীবনের হিসাবে যেখানে এসে পৌঁছেছি, আমার মনে হয় না আমার আর এক সেকেন্ডও বেঁচে থাকা উচিত। না আমি এই পৃথিবীর জন্য কিছু করতে পারি, না আমি নিজের জন্য কিছু করতে পারি। আমি আত্মহত্যা করছি না স্যার, আমি আমার জীবনের সীমানাটা যুক্তিযুক্তভাবে একটুখানি ছোট করে দিচ্ছি। বলা যায়, জীবনের অপ্রয়োজনীয় অংশটুকু ছেঁটে দিচ্ছি।
জিনিসটা কোত্থেকে সংগ্রহ করেছ?
হাটখোলার সায়েন্টিফিক জিনিসপত্রের মার্কেট থেকে।
সাপের বিষ নাকি?
না স্যার। বেলাডোনা।
ভেজাল না থাকলেই হয়।
বড় দোকান থেকে সংগ্রহ করেছি। প্যাকিং ভালো ছিল। লেখা ছিল 'প্রোডাক্ট অব ইইউ'।
ভালো।
কটা বাজল স্যার? রাত ১০টা বাজতে আর কত দেরি?
৩.
ডান পাশের দেয়ালে টাঙানো গ্র্যান্ডফাদার্স ক্লকের দিকে তাকিয়ে অনুপম চ্যাটার্জি বললেন-
সাতটা বাজতে চলেছে।
আরও তিন ঘণ্টা। যে কোনো অপেক্ষাই ক্লান্তিকর। ? আমার সবচেয়ে বেশি ক্লান্তি লাগত যখন এয়ারপোর্টে টেক-অফের আগে ফ্লাইট কিউতে অনেকক্ষণ পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো।
হ্যাঁ, আরও তিন ঘণ্টা। আটটার সময় আমরা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ডিনার করে আসব। নাকি তুমি চাও রুম সার্ভিসে অর্ডার করি?
রেস্টুরেন্টই ভালো স্যার। পাশের হোটেলের রেস্টুরেন্টের বাবুর্চি খুব ভালো রান্না করে। শামুকের ফুচকা ওদের স্পেশাল আইটেম। কফিটাও অসাধারণ। ?চলুন ওখানে খেয়ে আসি। হাজার হলেও জীবনের শেষ ডিনার।
শেষ ডিনারটা জম্পেশ হওয়া উচিত, তাই না স্যার। একটু হাসল আবেদ খান।
ডিনার শেষে হোটেলে ফিরে নিজের ঘরে গেলেন আবেদ চৌধুরী। সন্ধ্যা থেকে গোটা তিনেক বিয়ার পেটে গেছে।
ইউরিন ব্ল্যাডার ফুলে উঠেছে।
সাড়ে ৯টা বাজলে টয়লেটে গিয়ে অজু করলেন এয়ার কমডোর (অব.) সাইফুজ্জামান খান। ঘরোয়া পোশাক ছেড়ে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা পরলেন। একটু আতর ব্যবহার করলেন। তারপর কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়লেন। নামাজের শেষে তওবা করে মোনাজাত করলেন। মোনাজাতের মধ্যে বললেন-
'হে আল্লাহ, হে প্রতিপত্তিশালী সৃষ্টিকর্তা, হে করুণাময় প্রতিপালক আমাকে মাফ করুন। আমার জান কবজের জন্য দয়া করে রহমতের ফেরেশতা প্রেরণ করুন।'
রাত দশটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে আবেদ চৌধুরীর ঘরে গিয়ে কলিং বেল টিপলেন তিনি।
কোনো সাড়া এলো না।
নিজের ঘরে ফিরে হাউস ফোনে আবেদকে ফোন করলেন। ফোন 'নো রিপ্লাই' হলো।
ভয়েজ মেসেজে তিনি বললেন-
'আবেদ, কল মি হোয়েন ইউ আর রেডি।'
৪.
জ্যেষ্ঠ বিচারক জ্ঞানেন্দ্রনাথ মৈত্র একটু কেশে নিয়ে বক্তব্য শুরু করলেন।
এ মামলাটি জটিল কিছু নয়। আসামি বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর আব্দুস সালাম খান বিষ প্রয়োগ করে তার একসময়ের সহযোগী পাইলট ক্যাপ্টেন আবেদ খানকে হত্যা করেছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ যথাযথভাবে তদন্ত করেছে এবং প্রমাণ করেছে যে এই হত্যাকাণ্ড অন্য কেউ নয় বরং আসামি আব্দুস সালাম খান নিজেই ঘটিয়েছে। জেলা জজ বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী তাকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন।
আমরা আসামির আপিল নিবিড়ভাবে পাঠ করেছি। ? আমাদের সামনে তিনটি বিষয় রয়েছে। প্রথমত, বৈচারিক আদালত যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে বিচার আদেশ দিয়েছে কিনা; ? দ্বিতীয়ত, পুলিশের তদন্তে কোনো ত্রুটি রয়েছে কিনা; এবং ? তৃতীয়ত, সামগ্রিকভাবে অন্যতর কোনো ত্রুটি আছে কিনা, যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থি।
আমাদের অভিমত এই যে বৈচারিক আদালত সিআরপিসি যথাযথভাবে অনুসরণ করে বিচারকার্য সমাধা করেছেন। দ্বিতীয়ত, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ফরেনসিক অনুসন্ধানসহ সকল প্রকার কার্য সমাধা করেছে এবং যে সকল প্রমাণ উপস্থাপন করেছে তাতে বিষ প্রয়োগে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তৃতীয়ত, আমরা পুরো ঘটনাটি বিশ্নেষণ করেছি এবং হত্যাকাণ্ড সংঘটন থেকে তদন্ত কার্যক্রম এবং বিচার প্রক্রিয়া এই তিনের মধ্যে কোনো ধরনের অসংলগ্নতা খুঁজে পাইনি। এমতাবস্থায় আমরা মনে করি যে বৈচারিক আদালতের আদেশের মধ্যে হস্তক্ষেপের কোনো আইনি সুযোগ বিদ্যমান নেই।
এইটুকু বলে তিনি কনিষ্ঠ বিচারপতির দিকে ঘাড় ফেরালেন। কনিষ্ঠ বিচারপতি আব্দুল করিম হাওলাদার মাথা নাড়িয়ে তার সম্মতি জ্ঞাপন করলেন।
ঠিক এই সময় উঠে দাঁড়ালেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাজীব সামদানীর পাশে বসে থাকা ছোটখাটো একটি মানুষ।
বিচারপতিদের ভুরু কুঁচকে গেল। আদালতে সামান্য গুঞ্জন দেখা দিল।
ব্যারিস্টার রাজীব সামদানী হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। তিন বছর আগে অবসর নিয়ে তিনি ওকালতি শুরু করেছেন। ? তিনিও দাঁড়ালেন। তিনি বললেন-
মান্যবর আদালত, আমার পাশে যিনি উঠে দাঁড়িয়েছেন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি আজকে সকালে পত্রিকা পড়ে মামলার বিষয়টি অবহিত হয়েছেন। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তিনি আদালতে এসেছেন একটি বিষয় তুলে ধরার জন্য।
জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বললেন-
আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছি। কেবল আদেশ ঘোষণা বাকি আছে। ?
যাই হোক, বিষয়টি যেহেতু বিষ প্রয়োগে হত্যাকাণ্ড এবং যিনি এসেছেন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগের একজন অভিজ্ঞ অধ্যাপক তাই তাঁর বক্তব্য শুনতে আপত্তি করার কারণ নেই।
অধ্যাপক মিসির আলী বললেন-
মাননীয় আদালত, বিলম্ব্বে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য দুঃখিত। বাইরে ছাত্ররা আন্দোলন করছে। তাই রাস্তা পার হতে বিলম্ব্ব হয়েছে।
আজ আবার কী নিয়ে আন্দোলন?
জ্যেষ্ঠ বিচারপতির কণ্ঠে বিস্ময়!
পরিস্কার বুঝিনি। মনে হয়, ওরা চায় ব্রাজিলের সাপোর্টারদের দক্ষিণ আমেরিকায় নির্বাসন দেওয়া হোক।
৫.
আদালতে হাসির রোল উঠল।
অধ্যাপক মিসির আলী বললেন-
মাননীয় আদালত, পত্রিকাতে পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট পূর্ণাঙ্গভাবে আসেনি।
তবে আমার ঘরে 'সাপ্তাহিক অপরাধচিত্র' পত্রিকাটির কিছু পুরোনো সংখ্যা ছিল। তার একটিতে এ মৃত্যু ও বিচার নিয়ে বড় আকারের প্রতিবেদন ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে তদন্তের মধ্যে একটি ত্রুটি ও একটি অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে। ত্রুটি হচ্ছে, তারা যে বিষের কথা উল্লেখ করেছেন সেই বিষ ভিকটিম নিজে পান করেছেন না তাকে জোর করে পান করানো হয়েছে- এ ব্যাপারে তারা কৌতূহল বোধ করেননি। ?
দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, আসামি কী কারণে তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীকে হত্যা করবেন, সে মোটিভ সম্পর্কেও কোনোরূপ উল্লেখ কোথাও পাইনি। আবেদ চৌধুরীর মৃত্যুতে অভিযুক্ত সাইফুজ্জামান সাহেব উপকৃত হননি।
পত্রিকায় লেখা হয়েছে পুলিশ কোনো মোটিভ খুঁজে পায়নি। মোটিভ ছাড়া হত্যাকাণ্ড হয় না। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই বিষয়গুলির নিষ্পত্তি না হলে ন্যায়বিচার ক্ষুণ্ণ হবে, এই আমার অভিমত।
কনিষ্ঠ বিচারপতি আব্দুল করিম হাওলাদার মৃদু কণ্ঠে কী বললেন তা স্পষ্ট বোঝা গেল না। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী দাঁড়িয়ে বললেন-
তদন্তে প্রতিবেদনের সবকিছু বলা আছে। আদালতের কছে তা দাখিল করা আছে।
অধ্যাপক মিসির আলী বললেন-
কোন? বিষে আবেদ খানের মৃত্যু হয়েছে তা কি জানা গেছে?
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিরক্তমুখে বললেন-
অবশ্যই জানা গেছে। বেলেডোনা।
বেলেডোনার মধ্যে তিনটি কম্পোনেন্ট থাকে। সবগুলি থাকার অর্থ হলো বিষাক্ত খাদ্য থেকে বিষক্রিয়া হয়েছে।
কনিষ্ঠ বিচারপতি আব্দুল করিম হাওলাদার জিজ্ঞেস করলেন-
কী রকম খাদ্য?
আমরা প্রতিদিন খাই এ রকম খাদ্য। আলু, টমেটো, বেগুনে বেলেডোনা স্বল্পমাত্রায় থাকে। রান্না করলেও
তার তেজ নষ্ট হয় না। তবে কখনও কখনও আলুতে বেশি মাত্রার বিষ পাওয়া যায়, যা মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিরক্তমুখে কাগজপত্র ঘাঁটতে লাগলেন।
জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বললেন-
আপনি আদালতকে বলুন, অধ্যাপক সাহেবের প্রশ্নের উত্তর কী?
বেশ খানিকক্ষণ সময় পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী দাঁড়িয়ে বললেন ভিসেরা রিপোর্টে লেখা হয়েছে সোলানিন থাকার কথা।
কেবল একপ্রকার বিষ? হায়োসিন ও অ্যাট্রোপিন পাওয়া যায়নি?
না কেবল উচ্চমাত্রার সোলানিনের কথা লেখা।
৬.
তার মানে বাজার থেকে কেনা বিষ। বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে কেনা হয়েছে।
একটু থেমে অধ্যাপক মিসির আলী বললেন-
আত্মহত্যা ছাড়া কেউ নিজে নিজে মুখে বিষ তোলে না।
কক্সবাজার থানার সুরতহাল রিপোর্টে কি জোর করে বিষপান করানো যেমন ধস্তাধস্তির কোনো প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে?
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন ঘেঁটে বললেন-
সুরতহাল রিপোর্টে সে রকম কিছু নেই। তার লাশ হোটেলের বিছানায় পড়ে ছিল। ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। হতে পারে তার রাতের খাবারে বিষ মেশানো হয়েছিল।
তিনি রাতের খাবার কোথায় খেয়েছিলেন তা কি জানা গেছে?
পেছনে দাঁড়ানো সিআইডির একজন পুলিশ অফিসার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কানে কানে কিছু বলল।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বললেন-
তদন্ত প্রতিবেদনে আছে আসামি ও ভিকটিম একসঙ্গে হোটেল থেকে বাইরে গিয়ে অনতিদূরে অবস্থিত কোরীয় রেস্টুরেন্টে একসঙ্গে ডিনার করেছেন। তারপর একসঙ্গে হোটেলে ফিরে এসেছেন।
মিসির আলী বললেন-
তা হলে অনুমান অসংগত হবে না যে ভিকটিমের রাতের খাবারে বিষ মেশানো হয়নি। কোরীয় বাবুর্চি বা ওয়েটার এ রকম করবে, এমন ভাবাও অসংগত।
জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বললেন-
আপনি কি ঠিক ইঙ্গিত করছেন তা বলবেন?
আমি বোঝার চেষ্টা করছি এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা। বিষ কোথা থেকে কে সংগ্রহ করেছিল জানা গেলে বিষয়টি পরিস্কার হতো।
কনিষ্ঠ বিচারপতি বললেন-
এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে কিছু পড়েছি বলে মনে হয় না।
মিসির আলী বললেন-
বেলেডোনা জাতীয় বিষ আজকাল সহজে পাওয়া যায় না। তার কারণ হলো, এর কোনো অ্যান্টিডোট আবিস্কৃত হয়নি। ইঁদুর মারার ঔষধেও আগে বেলেডোনা ব্যবহার করা হতো। আজকাল মানুষ ইঁদুর মারার ঔষধ খাচ্ছে বলে বেলেডোনার পরিবর্তে অন্য বিষ ব্যবহার করা হয়। ভিসেরা রিপোর্টে আর কী আছে?
ভিকটিম ২০ গ্রাম ডায়াজিপাম খেয়েছিল বিছানায় যাওয়ার আগে।
অধ্যাপক মিসির আলী বললেন-
২০ গ্রাম ডায়াজিপাম? তার মানে অনুমান করা যায় ভিকটিম হতাশায় ভুগছিলেন। ঘুম আসার জন্য তাকে উচ্চমাত্রার ডায়াজিপাম খেতে হতো।
ফরেনসিক রিপোর্টে কি মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়েছে?
৭.
হূৎপিণ্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে।
ভুল। সোলানিন ফুসফুস তথা শ্বাসতন্ত্রকে অকেজো করে দেয়। সেটাই মৃত্যুর কারণ। যাই হোক, এমবিবিএস কোর্সে টক্সিকোলজি পড়ানো হয় না। তরুণ ডাক্তারের পক্ষে ভুল করাটাই স্বাভাবিক।
জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জিজ্ঞেস করলেন-
কী করে বুঝলেন তিনি তরুণ ডাক্তার?
সিনিয়র ও অভিজ্ঞ ডাক্তাররা মৃতদেহের পোস্টমর্টেম পরীক্ষা করতে চায় না। কক্সবাজারে কোনো মেডিকেল কলেজ নেই, যেখানে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থাকবে। সুতরাং যিনি পোস্টমর্টেম করেছেন তিনি কম বয়সী হবেন, এটাই স্বাভাবিক।
আর কোনো প্রশ্ন আছে আপনার?
মান্যবর, অনেক প্রশ্ন করবার রয়েছে। যেমন, আবেদ খান সাহেবের দুশ্চিন্তার কারণগুলি কী কী? এটি গুরুত্বপূর্ণ। তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে এসব বিষয়ে আমার কৌতূহল হতো। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আমি জানতে চাইতাম ঢাকা থেকে কক্সবাজার ফ্লাইট এবং এই হোটেলের রুম বুকিং দেওয়া হয়েছে কার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে। ভিকটিম গত দুই বছরে কত টাকা ধার করেছেন, তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির অবস্থা কী?
তিনি কি সম্প্রতি কোনো বিলি বণ্টন করেছেন? তাঁর হয়তো জীবন বীমা ছিল। এ বিষয়ে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সম্প্রতি?
দুই বিচারপতি মাথা কাছে এনে কিছু পরামর্শ করলেন। মধ্যাহ্ন বিরতির আদেশ দিয়ে বিচারকার্য স্থগিত করলেন।
৮.
দুপুর তিনটায় আবার আদালত বসল। দুই বিচারপতি নিজ নিজ আসনে স্থির হয়ে বসলেন। রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিনিধি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জিজ্ঞেস করলেন-
অধ্যাপক মিসির আলী যেসব বক্তব্য দিয়েছেন সেসব বিষয়ে আপনার আপত্তি আছে?
উঠে দাঁড়িয়ে উকিল সাহেব বললেন-
মহাত্মন, আমাদের বিশেষ কোনো আপত্তি নেই।
জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বললেন-
আমরা পুরো বিষয়টি পূর্বাপর নতুন করে বিবেচনা করেছি। এই হত্যাকাণ্ডের কোনো সাক্ষী নেই। কোনো পারিপার্শ্বিক প্রমাণ নেই। একমাত্র প্রমাণ হলো তার ঘরে একটি গ্লাসে এবং একটি টিস্যু বক্সের গায়ে অভিযুক্ত আসামি জনাব সাইফুজ্জমান খানের আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে।
অনেক খুনের মামলার ক্ষেত্রে আসামির পক্ষে মোটিভ বা উদ্দেশ্য না থাকাটা নন-কনসেকোয়েন্সিয়াল বিবেচনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে তা করা সমীচীন হবে না। সাক্ষীর অভাব, পারিপার্শ্বিক প্রমাণের অভাব ইত্যাদি বিবেচনা করে আমাদের সিদ্ধান্ত এই যে বিষক্রিয়ায় আবেদ চৌধুরীর দুঃখজনক মৃত্যু হলেও এ বিষয়ে আসামি জনাব সাইফুজ্জমান খানের সম্পৃক্ততা আছে ধারণা করার কোনো গ্রহণযোগ্য কারণ বিদ্যমান নেই। বাদীপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি যে তিনিই খুনি। তাকে খুনের দায় থেকে অবমুক্তি দিলে ন্যায়বিচার করা হয়। তিনি সম্ভবত আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু সেই প্রশ্ন এই আদালতের বিবেচ্য নয়। া
মন্তব্য করুন