- কালের খেয়া
- জন্ম নিবন্ধনে জালিয়াতি: চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার ৪, কার্যক্রম স্থগিত ৫ ওয়ার্ডে
জন্ম নিবন্ধনে জালিয়াতি: চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার ৪, কার্যক্রম স্থগিত ৫ ওয়ার্ডে

চট্টগ্রামে জন্ম নিবন্ধন সনদ জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেপ্তারদের মধ্যে তিনজন- সমকাল
চট্টগ্রামে জন্ম নিবন্ধন সনদ জালিয়াতির ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে নগরের পতেঙ্গা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার চারজন হলেন- মোস্তাকিম (২২), দেলোয়ার হোসাইন সাইমন (২৩), মো. আব্দুর রহমান আরিফ (৩৫) ও ১৬ বছরের এক কিশোর। পুলিশ বলছে, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা মাঠ পর্যায়ের কর্মী। তারা শুধু জন্ম নিবন্ধন সনদ নিতে আগ্রহীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দিতেন। জন্ম নিবন্ধনের সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে অন্যজন তথ্যগুলো সংযুক্ত (এন্ট্রি) করে সনদ বের করে দিতেন। এ দিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পাঁচটি ওয়ার্ডে জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যুর কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে জন্ম নিবন্ধনের কাগজপত্র খতিয়ে দেখতে ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে যায় দুদকের একটি দল।
আসামিদের গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার দুপুরে নগরের দামপাড়া চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের উপ কমিশনার ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ‘যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা জন্ম সনদ নিতে আগ্রহীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। তিনভাবে তারা এ আগ্রহীদের সংগ্রহ করেন। সেগুলো হলো- ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে, মাঠ পর্যায়ে যোগাযোগ করে এবং ওয়ার্ড কার্যালয়ের সামনে ঘোরাঘুরি করা দালালদের মাধ্যমে। তারা তথ্য সংগ্রহ করে তথাকথিত একজন হ্যাকারকে দেন। ওই হ্যাকার অবৈধভাবে জন্মনিবন্ধন সার্ভারে প্রবেশ করে জন্ম সনদ তৈরি করে পুনরায় চক্রের সদস্যদের কাছে পাঠান। তারা সেটি প্রিন্ট করে আগ্রহীদের দিয়ে দেন।’
সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আসিফ মহিউদ্দীন বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত তারা ৫ হাজারের বেশি জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করেছেন। তাদের মতো দেশে একাধিক চক্র আছে। একেকটি চক্রের সদস্য সংখ্যা ৩০-১০০ জন। প্রতিটি জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য তারা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা নিয়ে থাকেন।’ আসামিদের ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের জন্ম নিবন্ধন সহকারী আনোয়ার হোসেনের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের পরিদর্শক সঞ্জয় সিনহা।
এ দিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উত্তর পতেঙ্গা, আন্দরকিলতাহ, পাহাড়তলী, দক্ষিণ কাট্টলী ও দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যুর কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এসব ওয়ার্ডের আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অবৈধভাবে ইস্যু করা ৫৪৭ সনদ বাতিল করা হচ্ছে। সোমবার রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. রাশেদুল হাসানের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সাক্ষাতের পর এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্যবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আন্দরকিল্লাহ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী সমকালকে বলেন, আপাতত পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত পাঁচটি ওয়ার্ডে কোনো জন্মনিবন্ধন ইস্যু করা হবে না। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। আর ইতোমধ্যে আইডি হ্যাক করে নেওয়া ৫৪৭ জন্মনিবন্ধন সনদ বাতিলের প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়েছে। এসব সনদ বাতিলের জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে তালিকা পাঠিয়েছে সিটি করপোরেশন।’
পাহাড়তলী ওয়ার্ডে দুদকের দল যাওয়া প্রসঙ্গে ওয়ার্ডটির সচিব আব্দুল হালিম সমকালকে বলেন, ‘দুদকের কর্মকর্তারা যে ১০টি অবৈধ জন্ম নিবন্ধন হয়েছে সে সম্পর্কে তথ্য জানতে চেয়েছেন। এ ছাড়া রেজিস্ট্রার খাতা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেছেন। আমরা তাদের চাওয়া অনুযায়ী তথ্য সরবরাহ করে সহযোগিতা করেছি। আমাদের এখানে কোনো ধরনের ত্রুটি তারা পাননি।’
মন্তব্য করুন