![দেবদাস চক্রবর্তী [জন্ম :২৫ ডিসেম্বর ১৯৩৩ - মৃত্যু :৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮]](https://samakal.com/uploads/2023/02/online/photos/Untitled-31-samakal-63dbfdf018ea5.jpg)
দেবদাস চক্রবর্তী [জন্ম :২৫ ডিসেম্বর ১৯৩৩ - মৃত্যু :৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮]
পঞ্চাশের দশকের প্রধান শিল্পীদের একজন দেবদাস চক্রবর্তী। দেশভাগ, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের সংগ্রামী কর্মতৎপরতার আবহে বিকশিত শিল্পী দেবদাস। জন্ম ১৯৩৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর শরীয়তপুর জেলার বুড়িরহাটের দেওভোগ গ্রামে। ফরিদপুরের ভূস্বামী পরিবারের এ সন্তান সাতচল্লিশের দেশভাগের পরে সপরিবারে স্থানান্তরিত হন কলকাতায়। ভর্তি হন সেখানকার আর্ট কলেজে। ওখানে বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন। প্রতিবাদ করে বসলেন রাজ্যপালের আর্ট কলেজ পরিদর্শনের। ফলত বিখ্যাত শিল্পী সোমনাথ হোর, বিজন চৌধুরী, গীতা সেন, দেবদাস চক্রবর্তীসহ বহিস্কৃত হন। ফেরত আসেন বাংলাদেশে। অতঃপর জয়নুল আবেদিনের প্রতিষ্ঠিত চারু শিক্ষালয়ে নতুন পাঠযাত্রা শুরু। চিত্রকলায় স্নাতক সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন (১৯৫৬)। পোলিশ সরকারের শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে পোল্যান্ডের ওয়ারশ থেকে ছাপচিত্রের ওপর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। সেখানে আন্তর্জাতিক আর্ট ওয়ার্কশপে তিনি চিত্রকলায় প্রথম স্থান অর্জন করেন (১৯৭৮)। দেবদাস চক্রবর্তীর পেশাগত জীবন শুরু হয় প্রথমে ঢাকার আরমানিটোলা হাইস্কুলে চারুকলার শিক্ষক হিসেবে (১৯৫৭)। পরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কিছুদিন ডিজাইনার পদে চাকরি করেন। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করেন। মাঝে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রচার বিভাগে ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন। তাঁর আঁকা বিখ্যাত পোস্টার : 'বাংলার হিন্দু/ বাংলার খৃষ্টান/ বাংলার বৌদ্ধ/ বাংলার মুসলমান/ আমরা সবাই বাঙালি।'
পঞ্চাশের দশকের ভাষা আন্দোলন, রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি মিলিয়ে সৃষ্ট বহুমুখী সৃজন তৎপরতার ধারাবাহিকতায় হাসান হাফিজুর রহমানের সূত্রে দেবদাস চক্রবর্তী এবং সিকান্দার আবু জাফরের যোগাযোগ তৈরি হয়। সিকান্দারের হাত ধরে দেবদাসের শিল্প নির্দেশনায় আত্মপ্রকাশ করে বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা 'সমকাল'। এরই সূত্র ধরে বইয়ের প্রচ্ছদের কাজেও মনোনিবেশ করেন দেবদাস। সেখানেও যথারীতি সুনাম কুড়িয়ে নেন। আধুনিকতা এবং বিমূর্ততার মিশেলে তিনি নান্দনিক সব প্রচ্ছদের নকশা করেছেন। হাসান হাফিজুর রহমানের 'আধুনিক কবি ও কবিতা' এবং সত্যেন সেনের 'অভিশপ্ত নগরী' গ্রন্থের প্রচ্ছদ আধুনিক প্রচ্ছদের স্মারক। ছাত্রজীবনে বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় নিরন্ন অবহেলিত মানুষের প্রতি দরদি ছাপ পড়তে থাকে তাঁর চিত্রকলায়। জলরং, তেলরং, গোয়াশ, প্যাস্টেল বিভিন্ন মাধ্যমে দক্ষতা ও নিরীক্ষার সঙ্গে চিত্রকর্ম রচনা করেন। রেখাচিত্রেও তাঁর দক্ষতা ছিল প্রশংসনীয়। ষাটের দশকের দিকে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় পারিপার্শ্বিকতার কারণে শিল্পচর্চায় বিমূর্ত ধারার একটা কর্তৃত্ব তৈরি হয়। তখন দেবদাসও সে ধারায় নিজস্বতাকে বজায় রেখে শিল্প তৈরি করতে থাকেন। অনুজ্জ্বল রঙে আঁকতে পছন্দ করতেন। ক্যানভাসে তেলরঙে ছিলেন সিদ্ধহস্ত।
স্বাধীনতা-উত্তর দেবদাসের কাজে নতুনত্ব দেখা দেয়। তখনকার বাস্তবতায় শিল্পীদের কাজের জায়গায় অনেক স্বাধীনচেতা মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। আগের দশকের সংকীর্ণতা এবং রক্ষণশীলতা কিছুটা ঘুচে যায়। ফলে বিমূর্ত রীতিতে মূর্ত ঘরানার ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর জনতাকে উপজীব্য করে রাঙিয়ে তোলেন নতুন নতুন ক্যানভাস। কিন্তু স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। অচিরেই নিজের পুরোনো রীতিতে ছবি আঁকতে থাকেন। যার ধারাবাহিকতায় এঁকেছেন তাঁর বিখ্যাত 'বৃষ্টি সিরিজ'। মূর্ত, বিমূর্ত এবং আধা বিমূর্ত ছবিতে তাঁর সৃষ্টিশীলতা সমৃদ্ধ করেছে বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রকলাকে। জীবদ্দশায় সাতটি একক চিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে প্রকাশ করেন। এ ছাড়া দেশে-বিদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক যৌথ প্রদর্শনীতে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
'বৃষ্টি সিরিজ' আঁকার পরপরই জটিল রোগে আক্রান্ত হন দেবদাস। যে রোগে ভুগে তুলি ধরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। বন্ধ হয়ে যায় বাক ও চলনশক্তি। দীর্ঘকাল রোগে ভুগে ২০০৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি দেহত্যাগ করেন।
প্রশ্ন
১. কোথায় দেবদাস চক্রবর্তীর কর্মজীবন শুরু হয়?
২. কোন সাহিত্য পত্রিকার শিল্প নির্দেশক ছিলেন দেবদাস?
৩. কোন দশকে বিমূর্ত ধারার চিত্রকলার কর্তৃত্ব তৈরি হয়?
কুইজ ৮৮-এর উত্তর
১. আবু শরাফ মোহাম্মদ কামরুল হাসান
২. পটুয়া কামরুল হাসান
৩. তিনকন্যা
কুইজ ৮৮-এর জয়ী
ফারজানা ইসলাম
হাইমচর, চাঁদপুর
মনিরুল ইসলাম পাপ্পু
রূপসা, খুলনা
নিয়ম
পাঠক, কুইজে অংশ নিতে আপনার উত্তর পাঠিয়ে দিন ৬ ফেব্রুয়ারি সোমবারের মধ্যে কালের খেয়ার ঠিকানায়। পরবর্তী কুইজে প্রথম তিন বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে। বিজয়ীর ঠিকানায় পৌঁছে যাবে পুরস্কার।
পঞ্চাশের দশকের ভাষা আন্দোলন, রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি মিলিয়ে সৃষ্ট বহুমুখী সৃজন তৎপরতার ধারাবাহিকতায় হাসান হাফিজুর রহমানের সূত্রে দেবদাস চক্রবর্তী এবং সিকান্দার আবু জাফরের যোগাযোগ তৈরি হয়। সিকান্দারের হাত ধরে দেবদাসের শিল্প নির্দেশনায় আত্মপ্রকাশ করে বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা 'সমকাল'। এরই সূত্র ধরে বইয়ের প্রচ্ছদের কাজেও মনোনিবেশ করেন দেবদাস। সেখানেও যথারীতি সুনাম কুড়িয়ে নেন। আধুনিকতা এবং বিমূর্ততার মিশেলে তিনি নান্দনিক সব প্রচ্ছদের নকশা করেছেন। হাসান হাফিজুর রহমানের 'আধুনিক কবি ও কবিতা' এবং সত্যেন সেনের 'অভিশপ্ত নগরী' গ্রন্থের প্রচ্ছদ আধুনিক প্রচ্ছদের স্মারক। ছাত্রজীবনে বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় নিরন্ন অবহেলিত মানুষের প্রতি দরদি ছাপ পড়তে থাকে তাঁর চিত্রকলায়। জলরং, তেলরং, গোয়াশ, প্যাস্টেল বিভিন্ন মাধ্যমে দক্ষতা ও নিরীক্ষার সঙ্গে চিত্রকর্ম রচনা করেন। রেখাচিত্রেও তাঁর দক্ষতা ছিল প্রশংসনীয়। ষাটের দশকের দিকে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় পারিপার্শ্বিকতার কারণে শিল্পচর্চায় বিমূর্ত ধারার একটা কর্তৃত্ব তৈরি হয়। তখন দেবদাসও সে ধারায় নিজস্বতাকে বজায় রেখে শিল্প তৈরি করতে থাকেন। অনুজ্জ্বল রঙে আঁকতে পছন্দ করতেন। ক্যানভাসে তেলরঙে ছিলেন সিদ্ধহস্ত।
স্বাধীনতা-উত্তর দেবদাসের কাজে নতুনত্ব দেখা দেয়। তখনকার বাস্তবতায় শিল্পীদের কাজের জায়গায় অনেক স্বাধীনচেতা মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। আগের দশকের সংকীর্ণতা এবং রক্ষণশীলতা কিছুটা ঘুচে যায়। ফলে বিমূর্ত রীতিতে মূর্ত ঘরানার ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর জনতাকে উপজীব্য করে রাঙিয়ে তোলেন নতুন নতুন ক্যানভাস। কিন্তু স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। অচিরেই নিজের পুরোনো রীতিতে ছবি আঁকতে থাকেন। যার ধারাবাহিকতায় এঁকেছেন তাঁর বিখ্যাত 'বৃষ্টি সিরিজ'। মূর্ত, বিমূর্ত এবং আধা বিমূর্ত ছবিতে তাঁর সৃষ্টিশীলতা সমৃদ্ধ করেছে বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রকলাকে। জীবদ্দশায় সাতটি একক চিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে প্রকাশ করেন। এ ছাড়া দেশে-বিদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক যৌথ প্রদর্শনীতে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
'বৃষ্টি সিরিজ' আঁকার পরপরই জটিল রোগে আক্রান্ত হন দেবদাস। যে রোগে ভুগে তুলি ধরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। বন্ধ হয়ে যায় বাক ও চলনশক্তি। দীর্ঘকাল রোগে ভুগে ২০০৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি দেহত্যাগ করেন।
প্রশ্ন
১. কোথায় দেবদাস চক্রবর্তীর কর্মজীবন শুরু হয়?
২. কোন সাহিত্য পত্রিকার শিল্প নির্দেশক ছিলেন দেবদাস?
৩. কোন দশকে বিমূর্ত ধারার চিত্রকলার কর্তৃত্ব তৈরি হয়?
কুইজ ৮৮-এর উত্তর
১. আবু শরাফ মোহাম্মদ কামরুল হাসান
২. পটুয়া কামরুল হাসান
৩. তিনকন্যা
কুইজ ৮৮-এর জয়ী
ফারজানা ইসলাম
হাইমচর, চাঁদপুর
মনিরুল ইসলাম পাপ্পু
রূপসা, খুলনা
নিয়ম
পাঠক, কুইজে অংশ নিতে আপনার উত্তর পাঠিয়ে দিন ৬ ফেব্রুয়ারি সোমবারের মধ্যে কালের খেয়ার ঠিকানায়। পরবর্তী কুইজে প্রথম তিন বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে। বিজয়ীর ঠিকানায় পৌঁছে যাবে পুরস্কার।
মন্তব্য করুন