দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৪০ সালের ১১ মার্চ কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতা সারদা দেবী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় ভাই তিনি। ‘বঙ্গের রঙ্গ দর্শক’ ও ‘দেশের ব্যথার ব্যথী’ ছদ্মনামে লিখতেন।
বাল্যকালে নিজগৃহেই বাল্যশিক্ষা সম্পন্ন হয়। এরপর সেইন্ট পলস স্কুল ও হিন্দু কলেজে পড়েন। পরিবারে ‘বড়বাবু’ বলে খ্যাত ছিলেন। শৈশব থেকেই ছিলেন আত্মভোলা প্রকৃতির। মাত্র বিশ বছর বয়সে তিনি ‘মেঘদূত’-এর প্রথম বাংলা পদ্যানুবাদ করেন।
১৮৭৫ সালে ‘স্বপ্নপ্রয়াণ’ নামে একটি রূপক কাব্য রচনা করেন। পরে ‘কাব্যমালা’ (১৯২০) নামে দ্বিজেন্দ্রনাথের আরও একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
দ্বিজেন্দ্রনাথ বাংলা ভাষায় প্রথম গানের স্বরলিপি ও বাংলা শর্টহ্যান্ডবিষয়ক গ্রন্থ ‘রেখাক্ষর বর্ণমালা’ (১৯১২) রচনা করেন। স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি কলকাতায় হিন্দুমেলার (১৮৬৭) আয়োজন করেন। ১৮৭০-৭৩ পর্বে এর সম্পাদক ছিলেন। বিদ্বজ্জন-সমাগম (১৮৭৪), সারস্বত সমাজ (১৮৮২), ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা, ন্যাশনাল সোসাইটি, বেঙ্গল থিওসফিক্যাল সোসাইটি, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন।
দ্বিজেন্দ্রনাথ ১৮৯৪ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্য হন। পরপর তিনবার (১৮৯৭-১৯০০) এর সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের (১৯১৩) মূল সভাপতি ও আদি ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদকের (১৮৬৬-৭১) দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৭৭ সাল থেকে দীর্ঘ সাত বছর তিনি ভারতী ও ১৮৮৪ সাল থেকে সুদীর্ঘ ২৫ বছর তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা সম্পাদনা করেন। সাপ্তাহিক হিতবাদী (১৮৯১) পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি।
পরে দ্বিজেন্দ্রনাথ দীর্ঘকাল প্রাচীন ভারতীয় দর্শন ও সমাজতত্ত্ব চর্চা শুরু করেন। দর্শনবিষয়ক রচনাগুলিতে তিনি শঙ্করের অদ্বৈতবাদকে খণ্ডন করার চেষ্টা করেন। মহর্ষি-নির্দিষ্ট আদর্শ অনুসরণে উপাসনামূলক ব্রহ্মবাদের ব্যাখ্যা করেন তিনি। সমাজতত্ত্ববিষয়ক রচনায় দ্বিজেন্দ্রনাথ উনিশ শতকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য আদর্শের সংঘাতের তাৎপর্য গভীর পর্যবেক্ষণ সহকারে আলোচনা করেন এবং এ বিষয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
দ্বিজেন্দ্রনাথ গণিতে প্রতিভাধর ছিলেন। চিত্রাঙ্কনেও ছিলেন সমান ভাস্বর। এসব বিষয়ে তাঁর বেশ কয়েকটি গ্রন্থ আছে। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– ‘ভ্রাতৃভাব’ (১৮৬৩), ‘তত্ত্ববিদ্যা’ (৪ খণ্ড, ১৮৬৬-৬৯), ‘সোনার কাঠি রূপার কাঠি’ (১৮৮৫), ‘সোনায় সোহাগা’ (১৮৮৫), ‘আর্য্যামি এবং সাহেবিআনা’ (১৮৯০), ‘সামাজিক রোগের কবিরাজী চিকিৎসা’ (১৮৯১), ‘অদ্বৈতমতের সমালোচনা’ (১৮৯৬), ‘ব্রহ্মজ্ঞান ও ব্রহ্মসাধনা’ (১৯০০), ‘বঙ্গের রঙ্গভূমি’ (১৯০৭), ‘হারামণির অন্বেষণ’ (১৯০৮), ‘গীতাপাঠের ভূমিকা’ (১৯১৫), ‘প্রবন্ধমালা’ (১৯২০) প্রভৃতি।
ইরেজি ভাষায়ও তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়, যেমন Boxometry [বাক্সমিতি– গণিত বিশেষ] (১৯১৩) ও Anthology (১৮৭১) ইত্যাদি। জ্যামিতি-বিষয়ে তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইংরেজি গ্রন্থ আছে, যাতে বারোটি পুরোনো স্বতঃসিদ্ধ বাতিল করে তিনি বারোটি নতুন স্বতঃসিদ্ধ উদ্ভাবন করেন। স্বীকার্য বা স্বতঃসিদ্ধ এমন এক ধরনের উক্তি বা সাক্ষ্য, যা এখনও প্রমাণ হয়নি বা ব্যাখ্যা করা হয়নি, তবু সত্য বলে ধরে নেওয়া হয়।
দ্বিজেন্দ্রনাথ কয়েকটি  ব্রহ্মসংগীত ও স্বদেশি গান রচনা করে বেশ প্রশংসিত হন। তাঁর রচিত ব্রহ্মসংগীত মলিন মুখ-চন্দ্রমা ভারত তোমারই এখানে উপস্থাপিত হলো–

মলিন মুখ-চন্দ্রমা ভারত তোমারই।
দিবা রাত্রি ঝরিছে লোচন বারি।।
চন্দ্র জিনি কান্তি নিরখিয়ে, ভাসিতাম আনন্দে,
আজি এ মলিন মুখ কেমনে নেহারি।
এ দুঃখ তোমার হায়রে সহিতে না পারি।।

দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৬ সালের ১৯ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।  

প্রশ্ন

১. দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছদ্মনাম দুটি কী কী?
২. দ্বিজেন্দ্রনাথের রূপক কাব্যটির নাম কী?
৩. জ্যামিটির কয়টি নতুন স্বতঃসিদ্ধ উদ্ভাবন করেন দ্বিজেন্দ্রনাথ?

কুইজ ৯০–এর উত্তর
১. জিওফ্রে চসার
২. সোশ্যালিজম সম্বন্ধে
৩. ছয় বছর

নিয়ম

পাঠক, কুইজে অংশ নিতে আপনার উত্তর পাঠিয়ে দিন সোমবারের মধ্যে কালের খেয়ার ঠিকানায়। পরবর্তী কুইজে প্রথম তিন বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে। বিজয়ীর ঠিকানায় পৌঁছে যাবে পুরস্কার।