
[ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে– প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিও না, তাহা হইলে মিথ্যা জবাব শুনিতে হইবে না।]
এক দেশে ছিল এক রানী। সত্যযুগে এইটুকু বলিলেই চলিতো। কোথাকার রানী, কেন রানী, কীভাবে রানী, কোন পদ্ধতিতে রানী, ইত্যাকার হাজার প্রশ্ন করিয়া একটি ‘চমৎকার গল্প’ কিংবা কোনো না হইয়া ওঠা গল্পে রসপ্রবাহ রোধ করিবার মতো বিচক্ষণ পাঠক ছিল না। বিচক্ষণ শব্দটি আপেক্ষিক বটে। রসজ্ঞ, গল্পের রস আহরণ লইয়া ভাবেন উহার সত্যাসত্য যাচাই তাহার নিকট আবশ্যক নহে। নীরব পরিহাসপূর্ণ তীক্ষ্ণ কটাক্ষ ঘৃণা প্রকাশে যতখানি সক্ষম তাহার পর তো কলহের আবশ্যক হয় না। তাই বলিয়া জগৎ সংসারে কলহ কি থামিয়া আছে? দশদিকে উৎকর্ণ থাকুন টের পাইবেন ইহার সত্যতা। কথায় আমরা নিজদিগকে যতটুকু প্রকাশ করি, তাহা নিজের চেষ্টায় গড়িয়া লইতে হয়। উপযুক্ত ক্ষমতার অভাবে অধিকাংশ সময় তাহা ভুলও হয়। তবু মনুষ্যসমাজে মনের ভাব আর একটু বাহুল্য করিয়া বলা আবশ্যক কিনা সে কারণেই গল্পগাছা। যাহা হোক, শুরু হইলো গল্প।
রাজ্যে আজ বড় আনন্দের দিন। বড় সাফল্যের দিন। সোনার বাংলায় স্বর্ণখচিত সপ্তডিঙ্গা সাজিয়া উঠিতেছে। অমাত্যবর্গ, নাজিমবর্গ, প্রধান রাজবৈদ্য, বৈদ্যগণ, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ সকল বিভাগের প্রধান এবং হর্তাকর্তাগণ মনিমাণিক্যখচিত বসন-ভূষণে হাজির। আর তাহাদের সঙ্গিনী সহধর্মিণীগণ? তাহারা প্রত্যেকেই যেন এক একটি সুবর্ণ বিগ্রহ! রাজপণ্ডিতগণ উচ্চস্বরে হাসিতেছে, কলরব করিতেছে, সভাস্থ সকলে রানীর যশকে ধন্য ধন্য করিতেছে। রাজকুমার এবং যুবরাজগণ ধনুর্বাণ হস্তে দাঁড়াইয়া। সৈন্যগণ কাতারে কাতারে। বাজনদারগণ কেশ নাচাইয়া সবলে পরমোৎসাহে ঢোল পিটাইতেছে। মহাধুম পড়িয়া গিয়াছে।
দরবারের প্রধান রাজ দার্শনিক উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে ওমর খৈয়াম আওড়াইতেছেন– ‘পূর্ণ করে দাও সখী পানপাত্র মোর/ অফুরন্ত হয়ে থাক স্বপনের ঘোর।/ বারবার মিছে আর বলো না আমায়/ কেমনে চরণতলে দিন বয়ে যায়!/ ভীত মনে প্রতিক্ষণে/ কে হায় শুনিতে চায় বিদায় সংকেত বাণী/ আজ যদি বর্তমানই শুধু ভালো লাগে/ কেন তবে মিছে ভাবো অকারণে/ অকারণ ভেবে কেন হারাও সংবিৎ/ অনাগত কাল অথবা যা হয়েছে অতীত।’ মাওয়া হইতে জাজিরা প্রান্ত পর্যন্ত জলজলাট (জমকালো)। অকুস্থলের আকাশ দিয়া তৎক্ষণাৎ উড়িয়া যাইতেছিলেন ইচ্ছা ঠাকরুন। দৈববলে তিনি কেবল মানুষের মনোভাবই নয়; মনের ভাষাও পড়িতে পারেন। উড্ডয়নকালীন বুঝিতে পারিতেছিলেন– এই স্বর্গধামে অবাঞ্ছিত তিনি। স্বর্গধামরূপী এই মর্ত্যলোকে ইহাদের সকল মনোবাঞ্ছাই পূর্ণ হইয়াছে। ইহারা অধিক জয়ী। তাহাকে ইহাদের প্রয়োজন নাই। একবার আকাশের পানে, আরবার ইহাদের পানে চাহিয়া মুচকি হাসিয়া ইচ্ছা ঠাকরুন ভাবিলেন, যাই তবে একবার, গুলশানপাড়া পরিভ্রমণ করিয়া আসি গে। জুন মাসের ২৫ তারিখের বাদলা আকাশ। দ্রুত ঘরে ফিরিতে পারিলেই ভালো। কিন্তু ইচ্ছা ঠাকরুনের দয়ার শরীর। ঘূর্ণিঝড় কী মেঘ-বৃষ্টি-বাদলের তোয়াক্কা করা চলে না তাহার। ইচ্ছা ঠাকরুন বলিয়া কথা! পল পরিমাণ সময় অতিবাহিত হইল মাত্র। তিনি হাজির হইলেন গুলশানের এক নীলাভ কুটিরে। অকুস্থলে গিয়া দেখিলেন ভূবনমোহিনী রূপের এক নারী। শরৎকালের রোদের মত কাঁচা সোনার প্রতিমা যেন। তবে সেই প্রতিমায় কালের নিষ্ঠুর চিহ্ন বসিয়াছে। কুটিরপ্রান্তে চাল-ডাল সহযোগে উচ্ছে-করলা রাঁধিতেছেন। শাকান্ন রাঁধিলেও তিনি রানী বটেন। তাহাকে চিনিতে ইচ্ছা ঠাকরুনের বেগ পাইতে হইলো না। ইহার আগে শত সহস্রবার তাহাকে দেখিয়াছেন; অসংখ্য সেবাদাসী পরিবেষ্টিত। প্রবল কুলাভিমান ইহার কুলে কতকাল হইতে প্রবাহিত হইতেছে!
রানীর শরীরে খানদানি রক্ত। হৃদয়ে খানদানি অভিমান। জনসম্মুখে শোক প্রকাশে কুণ্ঠিতা মিতাচারী এই নারী বহুদিন বাদে আজ ইচ্ছা ঠাকরুনকে চোখের সম্মুখে দেখিয়া বিস্ময়াভিভূত। প্রায় দশককাল হইল আকুল হইয়া তিনি ইচ্ছা ঠাকরুনকে আকাঙ্ক্ষা করিতেছেন। তপস্যার অমৃত ফল মিলিলো তবে! সেই মাহেন্দ্রক্ষণে সাশ্রু নেত্রে সজল কণ্ঠে যথাসম্ভব সংযত স্বরে তপস্বীনী বলিলেন, কতদিন হইল তিনি প্রাসাদ ত্যাগ করিয়া গুলশানের এই ভগ্ন কুটিরে আশ্রয় লইয়াছেন। রাজ্যমাঝারে কেহই কি তাহার অভাব বোধ করিতেছে না? গ্রিক পুরাণের ইথাকা রাজ্যের রাজপণ্ডিতদের মতো এই রাজ্যের পণ্ডিতগণও কি কপালে একটি চক্ষু লইয়া ঘুরিয়া বেড়ায়? ইচ্ছা ঠাকরুন সকলই বুঝিলেন। মানুষের মনোভাব মনোবাঞ্ছা মনের ক্ষত বুঝিয়া তাহাদের ইচ্ছা পূরণ করাই দেবীর ধর্ম। তথাপি তপস্বীনীর মনস্তত্ত্ব যাচাই করিয়া লইতে চাহিলেন।
– সুখ মানে তো গভীর আত্মিক আনন্দ বৎসা। গ্লানি আবর্জনাই পোড়ে। ছাই হয়। যা খাঁটি তা ছাই হয় না, পুড়ে শুদ্ধ হয়। আজ রাজ্যে মহা আনন্দযজ্ঞ চলিতেছে। বাংলা মুল্লুকের আকাশের নিচে পদ্মার তরঙ্গে তরঙ্গে আনন্দ উছলিয়া উঠিতেছে। উদয়াচলে শঙ্খ বাজিতেছে। ভাবিলাম অস্তাচলের প্রান্তে বসিয়া কে বিরহ শোকে কাঁদিতেছে দেখিয়া আসি।
রানী ইচ্ছা ঠাকরুনের কথা অনেকক্ষণ ধরিয়া মনযোগ সহকারে শুনিলেন। কিয়ৎকাল চুপ করিয়া রহিলেন। আগেই বলা হইয়াছে আপন স্বভাবের চারিদিকে একটি আবরণ লইয়াই তিনি জন্মাইয়াছেন। তিনি স্বল্পভাষীনী, স্বল্পহাসিনী, স্বল্পপ্রকাশিনী। রাজকার্যের সহিত বিচ্ছেদ-বেদনা কালক্রমে তাহাকে অসাড় করিয়াছে বটে তবে সেই বিচ্ছেদটুকুর মধ্যেও একটি জীবন্ত আশা প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে তাহাকে পীড়ন দিতেছে। কিন্তু তাহা প্রকাশে কুণ্ঠিতা রানীর জবাব, এই আনন্দযজ্ঞের খবরে আমার কী আবশ্যক? কতকাল হইলো একটি মাত্র সঙ্গী লইয়া নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করিতেছি। দুঃখ সহিতে আমার আপত্তি নাই দেবী। কাঁটার মুকুট পরিয়া আছি; মখমল বিছানার পরিবর্তে শরশয্যা পাতিয়াছি। শরাহত আমি, তাহাতেও আপত্তি নাই। কিন্তু সম্মান? উহা গেলে আর থাকে কী? লক্ষ যোদ্ধার আদর্শ হইয়া যুদ্ধ করিতে করিতে মরিবো। এইভাবে কেঁচোর মরণ মরিয়া ফল কী!
ইচ্ছা ঠাকরুন ব্যগ্র কণ্ঠে কহিলেন, তবে শুনি তোমার ইচ্ছা?
– দুখীর আবার ইচ্ছা! দুখীর দুঃখ ইচ্ছা পূরণ না হওয়ার দুঃখ!
– ইন্দ্রিয়কে অধিক বশ্যতায় আনিতে হইবে বৎসা। বৃথা ভর্ৎসনায় কাজ কী। তুমি তোমার রাজ্যপাট আবার ফিরিয়া পাইবে। তবে এখন নয়। ব্যাকুল কণ্ঠে তপস্বীনী রানী জানিতে চাহিলেন, এখন নয়, তবে কবে?
সর্বদর্শীর হাসি হাসিলেন ইচ্ছা ঠাকরুন। প্রায়শ্চিত্ত শেষ হইলেই ফিরিয়া পাইবে রাজ্যপাট। বলামাত্র কখন যে আকাশে মিলাইয়া গেলেন ইচ্ছা ঠাকরুন আর তাহার দেখা পাওয়া গেল না।
আগেই বলিয়াছি নির্বাসনকালে অতীত রানী দাওয়ায় মাদুর পাতিয়া বসিয়া বসিয়া ভাবিতেন, আহারে! যখন রাজ্যপাট ছিল তখন যদি দুষ্টদিগকে আইনমতো প্রতিরোধ করিতাম! সামন্তপ্রভুদিগের লোলুপ জিহ্বায় লাগাম টানিয়া ধরিতাম, পণ্যবাজারের অস্থিরতা দূর করিতাম। লুটেরাগণ যদি লুটপাটের সুযোগ না পাইতো রাজ্যে। লুণ্ঠিত অর্থ যদি গরিব-দুখীদের বিলাইয়া দিতাম। কৃতঘ্ন ডালিমকুমারদিগের শূলদণ্ড ভিন্ন অন্য দণ্ড রাজনীতিতে ব্যবস্থিত হওয়া উচিত নহে। দরবারের পাগলা হস্তীরূপী উজিরবৃন্দ আর শুভাকাঙ্ক্ষী সাজিয়া থাকা নাগকুলকে যদি তৎক্ষণাৎ বিনাশ করা যাইতো! ...রানীর শপথকালে যাহা যাহা প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলাম তাহা যদি রক্ষা করিতাম, তাহা হইলে আজ এই দুর্দিন দেখিতে হইতো না। সত্যিই যদি আরেকবার রাজ্যপাট ফিরিয়া পাই তো চেষ্টা করিয়া দেখিবো। রাজ্যের অকল্যাণ হয় এমন কাজ আর কখনও নয়। প্রজাসকলকে সমান চোখে দেখিবো। দুখীর দুঃখ দূর করিবো। অভাবীর অভাব মোচন করিবো। পূর্ব রানীর অনন্ত অনুরাগীদের প্রতিও কোনোরূপ অন্যায় অবিচার কদাচ হইবে না। প্রতিজ্ঞামাত্র হঠাৎ অলৌকিক আলোয় ধাঁধিয়া উঠিল তাহার চোখ। এই কি সেই পূর্বের রাজভবন? সেখানে হাজার হাজার দীপ জ্বলিতেছে। ধুপ পুড়িতেছে। রাজমহলের বাগানে বাগানে কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ির রঙে মেঘসকল রক্তাভ হইয়া উঠিয়াছে। কুমুদ সরোবরে টলটল করিতেছে কাকচক্ষু জল। এইবার রানী তাহার মোমের মতো শরীরের পানে চাহিলেন। গলায় জ্বলজ্বল করিতেছে সেই পুরাতন রক্তের ফোঁটার মতো একফোঁটা খাঁটি চুনির লকেট। প্রাসাদ প্রাঙ্গণের চতুর্দিকে সিপাহি শাস্ত্রি দাসদাসী। সাতমহলায় সেই পুরাতন চন্দনকাঠের খাট। অমাত্যবর্গ মালঞ্চমালা হাতে প্রস্তুত। উজিরে আজম ভাবিতেছেন সর্বসুলক্ষণা রানীর উপযুক্ত হইতে পারে কেবল এই নবরত্নের মণিহার। বহু মেহনতে এক এক রাজ্য হইতে জোগাড় করিয়াছেন শ্রেষ্ঠতম মুক্তা মানিক্য বৈদূর্য গোমেদ বজ্ব বিদ্রুম পদ্মরাগ মরকত নীলকান্ত এই ন’টি রত্ন। সোনার পিঞ্জরে সোনার সুখপাখি ডাকিতেছে। পলকমাত্র পর দেখিলেন সকলেই আপন আপন ধন লইয়া সরিয়া পড়িতেছে। ভৃত্যবর্গ কেহ নাই। দুই-একজন অতি পুরাতন দাসদাসী প্রভুর সঙ্গে একত্রে প্রাণ পরিত্যাগে কৃতসংকল্প হইয়া সাশ্রু লোচনে অবস্থিতি করিতেছে। অন্তঃপুরে জ্ঞাতি কুটুম্ব আত্মীয়স্বজন রাজপুরী মাঝারে যাহারা অবস্থান করিত সকলেই যথাকালে আপন আপন প্রাণ লইয়া প্রস্থান করিয়াছে। সেই বৃহৎ রাজভবন আজ অরণ্যতুল্য। জনশূন্য নিঃশব্দ অন্ধকার। অদৃষ্টে যাহা ছিল তাহাই হইয়াছে। ক্রোধ সর্বব্যাপক, সর্বগ্রাসক, তদভিন্ন নিচাশয় অনুচরবর্গের প্রতি ক্রোধে কাজ কী, ভাবিতেছিলেন। এমত মুহূর্তে ঊর্ধ্ব হইতে তাহার কর্ণে অলৌকিক বাণী প্রবেশ করিল। বৎসে, আমি পথ দেখাইতেছি। তিনি চকিতের ন্যায় ঊর্ধ্বদৃষ্টি করিলেন। তন্দ্রালু চোখে দেখিলেন সেই নারীমূর্তি। শোনো বৎসে, মনুষ্য ভাষাতে তেমন কথা নাই। মনুষ্যের তেমন চিন্তাশক্তিও নাই। মনুষ্য দুঃখ ভোগ করে কিন্তু কেন করে তাহা জানে না। দুঃখ কী তাহাই তাহারা জানে না। ঈশ্বরের নিয়ম ভিন্ন। তোমরা যাহাকে দয়া বলো ঈশ্বরের অনন্ত জ্ঞানের কাছে তাহা দয়া নহে। মনুষ্য ভাষাতে তোমরা যাহাকে পীড়ন বলো তাহা পীড়নও নহে। ভাবো, কেন জন্মিয়াছো? জন্মাইয়াছো তো মানুষের দুঃখ দূর করিবার জন্য, তো কেন যোগ্য হইয়া উঠো নাই? কেন বানের মুখে কুটার মতো লোভের স্রোতে ভাসিয়া গেলে? বৎসে, তুমি যশের আশা করিতেছো? একবারও চিন্তা করিয়াছো যশ কী? তাহা কী বস্তু? কোনো কোনো কসাইয়েরও যশ থাকে এই বলিয়া যে তাহারা মাংস সম্বন্ধে কাহাকেও প্রবঞ্চনা করে না। ষাঁড়ের মাংস বলিয়া কাহাকে কুকুরের মাংস দেয় না। স্থূলবুদ্ধি যশস্বী হইয়া কী সুখ? সঠিক সময়ে সঠিক ক্ষণে ঈশ্বর তোমার যোগ্য স্থান খুঁজিয়া দেবেন। অলৌলিক স্বর যেমন করিয়া আবির্ভূত হইয়াছিল তেমন আশ্চর্যরূপে মিলাইয়া গেল।
ইচ্ছা ঠাকরুনের কথা
আমি আমার সমস্ত তত্ত্বজ্ঞানের অসারতা টের পাইয়াছি। এক্ষণ আমি এক সামান্য রাজভৃত্যের সমান। এই বঙ্গসমাজে আমার আর কোনো কার্য নাই। আমার ইচ্ছার কোনো মূল্য নাই, প্রয়োজনও নাই। আমি অনাথের নাথ নই। আশ্রয়হীনের আশ্রয় নই। সহায়হীনের সহায় নই। দুর্বলের বল নই। ধনী উচ্চকুলজাত সম্ভ্রান্ত এবং রাজকর্মচারীদের পক্ষে কালান্তক যমও নই। মানুষ কেন আমায় স্মরণ করিবে? দিনে দিনে আমি মানবেতর হইয়া উঠিতেছি। সমস্ত জীবনের এই তবে সঞ্চয়! আমার জন্য পূজারীর যুগ-যুগান্তরের সাধনা মানব হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা সকলই কি তাহাদের কল্পনার কুহক? অশ্ব যখন সর্বত্র বিজয়ী হইয়া ফিরিয়া আসে তখনই অশ্ব মেধযজ্ঞ হয়। আজ আমি পরাজিত হইয়াছি। তাই ইচ্ছা মেধযজ্ঞ ঘটাইতেছি।
ইচ্ছা ঠাকরুন তাহার এক একটি ইচ্ছা ছিঁড়িয়া অগ্নিগর্ভে নিক্ষেপ করিতে লাগিলেন। ধু-ধু করিয়া বহ্নিশিখা জ্বলিয়া উঠিল। তৎপরে তিনি বহ্নিরূপিনী, অতঃপর ভস্ম হইলেন।
[প্রথমে তোমার নিজের চোখ থেকে তক্তাটা বের করে ফেলো। তাহলে তোমার ভাইয়ের চোখ থেকে কুটোটা সরাতে পারবে : বাইবেল।]
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ইচ্ছাপূরণ’ গল্প থেকে প্রণীত)
বিষয় : প্রচ্ছদ জয়া ফারহানা
মন্তব্য করুন