
তরু দত্ত (৪ মার্চ ১৮৫৬-৩০ আগস্ট ১৮৭৭), অরু দত্ত (১৮৫৪-২৩ জুলাই ১৮৭৪)
ইংরেজি ও ফরাসি সাহিত্যে একসময় দুটি বাঙালি মেয়ে– অরু দত্ত ও তরু দত্তের নাম স্বতঃস্ফূর্তভাবে উচ্চারিত হতো। ‘অরু ও তরু দত্ত : বাংলার ব্রন্টি বোনেরা’ নামে নিজ অন্তর্জালে প্রকাশিত একটি লেখায় এ তথ্য উল্লেখ করেছেন কবি ও অনুবাদক জ্যোতির্ময় নন্দী। অরু ও তরু দত্ত দুই পিঠাপিঠি বোন। তাঁদের বাবা ছিলেন কবি ও ভাষাবিদ গোবিন্দ চন্দ্র দত্ত। গোবিন্দ চন্দ্র দত্তের এক ছেলে ও দুই মেয়ের প্রত্যেকে দুঃখজনকভাবে স্বল্পায়ু ছিলেন। অরু ও তরু দুই বোনের মধ্যে কবি-কথাশিল্পী হিসেবে খ্যাতিটা ছোট বোন তরুরই একটু বেশি ছিল বলে জানা যায়।
তরু দত্ত (৪ মার্চ ১৮৫৬-৩০ আগস্ট ১৮৭৭) বেঁচে ছিলেন মাত্র ২১ বছর। এরই মধ্যে ইংরেজি ও ফরাসিতে কবিতা রচনা করে সেই ভাষাভাষী মানুষের মাঝে সাড়া ফেলেছিলেন। তরু দত্তের দুটো উপন্যাসের একটি ইংরেজি, অপরটি ফরাসিতে লেখা। ইংরেজিতে লেখা ‘বিয়াংকা অর দা ইয়াং স্প্যানিশ মেইডেন’ এবং ফরাসিতে লেখা ‘ল্যো জুর্নাল দ্য মাদমোয়াজেল দার্ভের’। ফরাসিতে লিখিত কবিতাগুলো পরে ইংরেজিতে অনূদিত হয় এবং ‘এ শেফ গ্লিন্ড ইন ফ্রেঞ্চ ফিল্ড’ নামে প্রকাশিত হয়। সংস্কৃত সাহিত্য থেকে তরু দত্তের অনূদিত সংগীতসংগ্রহ ‘অ্যানসিয়েন্ট ব্যালাডস অ্যান্ড লিজেন্ডস অব হিন্দুস্তান’ পশ্চিমে পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।
বড় বোন অরু দত্ত (১৮৫৪-২৩ জুলাই ১৮৭৪) বেঁচে ছিলেন আরও এক বছর কম; মাত্র ২০ বছর। অরুর জন্ম কলকাতার রামবাগানে দত্তদের পৈতৃক বাড়িতে, এবং মৃত্যুও কলকাতাতে। একের পর এক মৃত্যু গ্রাস করার আগে চার বছর দত্ত পরিবার ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে কাটায় এবং অরু-তরুর সাহিত্যজীবনের সূত্রপাতও হয় ইউরোপে। অরু দত্তের সাহিত্যকর্ম বা কাব্যকৃতির বড় একটা অংশ এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে। কিছু কবিতা ভুলক্রমে ছোট বোন তরু দত্তের নামে প্রকাশিত হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন ভুল পরে শুধরে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।
নিশ্চিতভাবে তরু দত্ত লিখিত একটি সনেট এখানে উপস্থাপিত হলো। এ সনেট ইংরেজি ভাষায় লেখা। অনুবাদ করেছেন কবি জ্যোতির্ময় নন্দী। কবিতায় তরু দত্ত তাঁর স্বদেশ বাংলাদেশের ছবি এঁকেছেন।
চতুর্দশপদী
আমাদের বাগানকে ঘনিষ্ঠ বাঁধনে জড়িয়েছে পত্রপল্লবের অবাধ পাথার,
তবে সে সাগর নয় বৈচিত্র্যবিহীন সবুজের রাজ, একঘেয়ে নীরস বিস্তার,
সকল রঙের তীব্র বৈপরীত্য দেখতে তুমি পাবে এ-বাগানে;
গভীর সবুজ আম্রকুঞ্জগুলোর এখানে ওখানে
হালকা সবুজ লাবণ্যময় তিন্তিড়ী তরুদের ভিড়,
আর তার মধ্যে মধ্যে ধূসর থামের মতো তাল গাছ উচ্চশির;
পুকুরের শান্ত জলে নুয়ে আছে শিমুল গাছেরা ফুলে ভরা
লালে লাল, যেন চমক জাগানো তূর্যধ্বনি, উঠছে নিঃস্বরা।
সবচেয়ে মনোরম কিন্তু সারিবদ্ধ বাঁশবন পূর্বদিক জুড়ে
যার ফাঁকে ফাঁকে বিহ্বলের মতো মরে ঘুরে ঘুরে
আর থেকে থেকে উঁকি মারে চাঁদ, আর শ্বেতকমলেরা
রং পাল্টে হয়ে যায় রুপোর পেয়ালা। যে-কেউ লাগাম ছেঁড়া
বেহেড মাতাল হবে এ-সৌন্দর্য পানে, কিম্বা শুধু বাক্যহীন হয়ে
দেখবে আর দেখবে এক আদিম স্বর্গোদ্যান বিপুল বিস্ময়ে।
প্রশ্ন
১. তরু ও অরু দত্তের বাবার নাম কী ছিল?
২. তরু দত্ত কত বছর বয়সে মারা যান?
৩. পুকুরের শান্ত জলে কারা নুয়ে আছে?
কুইজ ৯১–এর উত্তর
১. ‘বঙ্গের রঙ্গ দর্শক’ ও ‘দেশের ব্যথার ব্যথী’
২. স্বপ্নপ্রয়াণ
৩. বারোটি নতুন স্বতঃসিদ্ধ উদ্ভাবন করেন
গত সংখ্যার বিজয়ী
আবরার শাহরিয়ার ফাহিম
ইকবাল রোড, খুলনা
জেসমিন আক্তার
আদর্শ সদর, কুমিল্লা
নিয়ম
পাঠক, কুইজে অংশ নিতে আপনার উত্তর পাঠিয়ে দিন সোমবারের মধ্যে কালের খেয়ার ঠিকানায়। পরবর্তী কুইজে প্রথম তিন বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে। বিজয়ীর ঠিকানায় পৌঁছে যাবে পুরস্কার।
মন্তব্য করুন