শৈশবের প্রথম স্মৃতি–
আমার শৈশবের মধুময় সময় কেটেছে কুষ্টিয়ায়। মনে পড়ে অবাধে ঘোরাফেরা আর খেলে বেড়ানো সেসব দিনের কথা। দিনগুলো এখন শুধুই স্মৃতি হয়ে আছে। ছেলেবেলার সেই বন্ধুদের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্মৃতি আধুনিক শহরের ইট-পাথরের তৈরি বড় বড় অট্টালিকার মধ্যে থেকেও মনে পড়ে। তাই এখনও একটু সুযোগ পেলে চলে যাই কুষ্টিয়াতে। কুষ্টিয়া আমার প্রিয় শহর। এই শহরে থাকার সময় থেকে আমার লেখকসত্তার জন্ম হয়। আজও মনে আছে সেই দিনগুলোর কথা। তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। সেই সময় হঠাৎ একদিন একটি কবিতা লিখলাম। খাতাটা টেবিলের ওপর খোলাই ছিল। আমার বড় ভাই কবিতা পড়ে বেশ প্রশংসা করলেন। বললেন ভালোই তো লিখেছিস। আমার লেখার প্রতি একটা আগ্রহ জন্মেছিল সেদিন।  

যে ব্যক্তিগত ঘটনাটির প্রভাব আজ আপনাকে নাট্যকার করেছে–
১৯৮০ সালের কথা, তখন কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় বেড়াতে এসেছিলাম। তখন একদিন গেলাম বাংলা একাডেমিতে। গিয়ে দেখলাম, বরেণ্য নাট্যকার ও অভিনেতা এসএম সোলায়মানের ‘ক্ষ্যাপা পাগলার প্যাঁচাল’ নামের পথনাটকটা হচ্ছে। যেখানে তিনি অভিনয়ও করছেন। মনোযোগ দিয়ে নাটকটা দেখলাম। এরপর ভাবলাম এমন করে নাটক হলে, নিজেও লিখতে পারি। এরপর কুষ্টিয়া ফিরে এসে নিজেই লিখলাম ‘চাঁদ আলীর ডকুমেন্টারি’। শুরু হলো আমার নাট্যকার জীবন।

প্রথম বই প্রকাশের স্মৃতি–
আমার লেখা প্রথম বই প্রকাশ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। আশির দশকের গোড়াতে আমি বেশ ক’টি পথনাটক লিখে ফেলেছিলাম। আমার লেখা নাটকগুলোর ভেতর থেকে ‘আওরঙ্গজেব’, ‘কাকলাস’ ও আরও একটা নাটক; এখন নাম মনে করতে পারছি না। এই তিনটি নাটক মিলে ১৯৮৫ সালে একটি সংকলন প্রকাশ হলো।   

প্রিয় নাট্যকার যাঁরা এবং যে কারণে তাঁরা প্রিয়–
প্রিয় নাট্যকারের সংখ্যা অনেক। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনকে গুরু মানি। তিনি ছাড়া নাট্যকার হিসেবে আমার প্রিয় সৈয়দ শামসুল হক, মমতাজউদ্দীন আহমদ, মামুনুর রশীদ, আবদুল্লাহ আল–মামুনসহ আরও অনেকে। হ্যারল্ড পিন্টার, স্যামুয়েল বেকেট, ইউজিন ও’নিল, ইবসেন, ক্রিস্টোফার মার্লো আমার প্রিয় নাট্যকার।

যে বইগুলো বারবার পড়েছেন–
পাওলো কোয়েলোর ‘দি আলকেমিস্ট’, ‘ভেরোনিকা ডিসাইডস টু ডাই’, কালহিল জিবরানের ‘প্রফেসি অব কাহলিল জিবরান’, মার্কেসের ‘ক্রনিকল অব ডেথ ফোর টোল্ড’, ‘ওয়ান হানড্রেড ইয়ারস অব সলিচিউড’, ভার্জিলের ‘ইনিড’, সেলিম আল দীনের ‘যৈবতী কন্যার মন’, ‘চাকা’, মামুনুর রশীদের ‘সমতট’ এবং আমার নিজের লেখা নাটক ‘নিত্যপুরাণ’।

যে লেখকের লেখা পড়ে ঈর্ষা বোধ হয়–
আমার গুরু সেলিম আল দীন। তাঁর সব লেখা পড়েই আমার ভেতরে ঈর্ষা জাগে। কী করে এত দুর্দান্ত সব লেখা লিখেছেন তিনি!

লেখক ছাড়া আরও যা হতে পারতেন–
ফুটবলার। কারণ ভালো ফুটবল খেলতাম। কুষ্টিয়াতে থাকার সময় কলেজ টিমে খেলেছি। দলের গোলকিপারের দায়িত্ব পালন করতাম। তাই আমার মনে হয়, যদি লেখক না হতাম, তাহলে ফুটবলার হয়ে রিটায়ার করতাম অনেক আগেই। লেখক হওয়াতে রিটায়ার করতে হচ্ছে না।

প্রিয় সংগীতশিল্পী–
নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী, সুবীর নন্দী, ফরিদা পারভীন, শাহনাজ রহমতুল্লাহ আর এই সময়ে ভালো লাগছে নিশিতা বড়ুয়ার গান।

ব্যক্তিগত যে সীমাবদ্ধতা আপনাকে কষ্ট দেয়–
অতি অভিমানী মানুষ। অনেকের সঙ্গে আমার রাগ হয়, কিন্তু সামনে কিছু বলতে পারি না।

আপনার চরিত্রের শক্তিশালী দিক–
অসম্ভব ধৈর্য আমার। যখন সিদ্ধান্ত নিই কিছু করব, তখন তা না করা পর্যন্ত ছাড়ি না। আর যখন লেখার টেবিলে বসি, তখন আমার আশপাশে কী ঘটছে, তা নজরে থাকে না। লেখার সময় আমার মনোযোগ থাকে চরিত্রগুলোর ওপর। আর আমি কখনও দুটো কাজ একসঙ্গে করি না।

প্রিয়জনের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি শোনা প্রশংসাবাক্য–
অনেকই বলেন, বিনোদন অঙ্গনে আমার নিজস্ব একটা ঘরানা আছে, যা আমার কাজগুলো দেখলে বোঝা যায়।

প্রিয়জনের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি শোনা অভিযোগবাক্য–
না করতে পারি না। বিষয়টা খুলে বলি। ধরা যাক, আমার কোনো কিছু করতে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু সেটা আমি সেই ব্যক্তিকে না করতে পারি না। সরাসরি না বলতে পারি না। এরপর আমি নানা অজুহাতে তা করি না।

মানুষের ব্যক্তিত্বের যে দিকটি আগ্রহী করে তোলে–
মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, যা একজন থেকে অন্যজনকে আলাদা করেছে।

প্রিয় উদ্ধৃতি–
সমবেত সিদ্ধান্তকে আমি প্রাধ্যান্য দিই। আমার কাছে মনে হয় যদি সমবেতভাবে একদল পাগলও কোনো এক সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছায়, তা একজন স্বাভাবিক মানুষের চাইতে শক্তিশালী হয়। (পাওলো কোয়েলো তাঁর ‘ভেরোনিকা ডিসাইডস টু ডাই’ উপন্যাসে এ রকম কথাই বলেছেন)

এপিটাফে যা লেখা থাকতে পারে–
জীবন তো একদিন দেবে জানি ফাঁকি, তোমাদের আড্ডায় তবু যেন থাকি।

গ্রন্থনা :: মীর সামী