টানাপোড়েন চলছে। একটি দুঃসহ মুহূর্তকে সহ্য করতে হচ্ছে যথারীতি। জানালার ওপারে ঢলে পড়া আকাশের বুকে এক দঙ্গল বিষণ্ন দাঁড়কাক কা কা করছে তো করছেই! এমন ঝাঁজালো আওয়াজে আমি মুষড়ে পড়ছি বারবার। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাচ্ছে সায়েলের। ইনহেলারের মাউথপিসে মুখ রেখে শ্বাস নিচ্ছে। ওর বেডের পাশে বসে আমরা সবাই তখন মুমূর্ষু। সায়েলের হার্ট রেট ফর্টিতে নেমে এসেছে। হার্টের পাম্পিং অর্গান আগের মতো অতটা সক্রিয় নয়। একগাদা টেস্টের রিপোর্ট, প্রেসক্রিপশন আর মেডিসিন বক্স ছাড়া তেমন কিছু রাখা হয়নি সায়েলের বেডরুমে।
অনুপ বলল, কী দেখছ আপু?
– কই, কিছু না তো!
– ওষুধ খেয়েছিস?
- খেয়েছি। আর কত খাব এভাবে?
- সারাজীবন খাবি।
হেসে উঠল সায়েল। জোর করে হাসল মনে হলো! ওর চোয়াল দুটো অস্বাভাবিক রকম ভেঙে পড়েছে। রাত-দিন শুয়ে থাকতে থাকতে আর কত ভালো থাকা যায়? মাঝেমধ্যে ওর শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠছে। ওর ছায়ার ওপর দুঃসংবাদের খড়্গ ঝুলছে অনবরত। তার সঙ্গে আমরাও পুড়ছি। শারীরিক যন্ত্রণা মেটানো গেলেও মানসিক যন্ত্রণা কীভাবে মেটাব?
চুপচাপ শুয়েই রইল সায়েল। বলল, আমি এখন কিছু খাব না। খিদে নেই।
– কী বলছিস? কিছু না খেলে পাম্পিং অর্গান আরও নিস্তেজ হয়ে পড়বে।
– পড়ুক! আব্বুকে দেখেছিস আহ্নিকা?
– ফার্মেসিতে গেছে। এরপর ট্রায়াল স্পেকট্রাম অ্যাম্বুলেন্সের জন্য কথা বলে ফিরবেন।
– আমি কোথাও যাব না। আম্মু কোথায়?
– রান্নাঘরে।
– হাসিব ভাইয়াকে লাঞ্চ করিয়েছিস?
– আম্মু রেডি করছে। তুই উঠে বস তো! চা-টা খেয়ে নে। চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে বললাম, খেয়ে নাও। দেখবে, ফ্রেশ লাগছে। হার্টের পাম্পিংও ইমপ্রুভ করবে।
– আমার কি আদৌ কোনো ইমপ্রুভ হবে?
– কেন হবে না? হার্ট ফাউন্ডেশনে অ্যাডমিট করাব। রিনাউন্ড হার্ট স্পেশালিস্টরা তোমার চিকৎসা করবেন।
আজ সায়েলের হার্ট অপারেশনের ডেট ফিক্সড। ওকে এখনও জানানো হয়নি! খুব ক্লান্ত লাগছে। খাবার সময়। ডাইনিং টেবিলে খাবার রেডি করে বলল, লাঞ্চ করবেন না?
– না। পেটে এসিডিটির প্রবলেম।
– খালি পেটে এসিডিটি তো বাড়বেই। ফ্রেশ হয়ে আসুন। গোসল করতে পারেন।
দীপ্তি আমার প্রতি ভীষণ কেয়ারিং। স্ত্রী হিসেবে সে অসাধারণ। চোখ বুজে সোফা সেটের সঙ্গে হেলান দিলাম। এসি অন করলাম। অপেক্ষা আরও গুরুগম্ভীর হতে লাগল। ধীরলয়ে এগিয়ে যেতে থাকল প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসের নীল রং। v
সুহৃদ বগুড়া

বিষয় : অনুগল্প

মন্তব্য করুন