নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র উন্নয়ন করর্পোরেশন (এফডিসি) ও শিল্পকলা একাডেমিতে সোমবার উদযাপিত হয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। এফডিসিতে বেলা সোয়া বারোটায় চলচ্চিত্র দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় আনন্দ র‍্যালি দিয়ে। বেলুন ও কবুতর  উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এরপর জহির রায়হান কালার ল্যাব মিলনায়তনে হয় আলোচনা সভা। 

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন ‘১৯৫৭ সালের এই দিনে তৎকালীন তরুণ নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদে বিল উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি অনুধাবন করেছিলেন সংস্কৃতির সমস্ত শাখার সন্নিবেশে যা সৃষ্টি হয়, সেটি হলো চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রে গান থাকে, নৃত্য থাকে, চলচ্চিত্র সমস্ত শাখার সন্নিবেশ ঘটায়। জাতির পিতা এ সকল কিছু তখনই অনুধাবন করেছিলেন বলেই বিলটি উপস্থাপন করেছিলেন।

তিনি বলেন, দিন দিন আমরা উন্নতি লাভ করছি। বস্তুগত বা অবকাঠামোগত উন্নতির পাশাপাশি মানুষের আত্মিক উন্নতিও প্রয়োজন, আর আত্মিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে চলচ্চিত্র। এমন সব সিনেমা বানানো হোক তা যেন মানুষ তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে দেখতে পারে এবং তা বিনোদনের পাশাপাশি দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রাখে, মানুষের তৃতীয় নয়ন খুলে দিতে পারে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, চলচ্চিত্র উন্নয়নে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সিনেমা হল নির্মাণ এবং পুরনো হল সংস্কারের জন্য সহজ শর্তে ১ হাজার কোটি টাকার এক বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকেই দরখাস্ত করেছেন। অনেকে সিনেপ্লেক্স চালু করেছে এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলও চালু হয়েছে। দু’বছর করোনা মহামারির বেড়াজালে আবদ্ধ না থাকলে আরও সিনেমা হল চালু হতো। বিশেষ অতিথি হিসেবে হাজির হন তথ্য ও সম্পাচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফারুক আহমেদ। 

এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ, প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু, অভিনেত্রী রোজিনা, অঞ্জনাসহ অনেকেই।

 সভায় সভাপতিত্ব করেন এফডিসির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন। এদিকে ‘সবার জন্য চলচ্চিত্র, সবার জন্য শিল্প সংস্কৃতি’ শ্লোগানকে সামানে রেখে বিকাল ৪টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় শুভেচ্ছা বিনিময় ও আলোচনা সভা। এতে অংশ নেন চলচ্চিত্র নির্মাতা, চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলীরা। 

একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, 'চলচ্চিত্র শিল্পের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সবার সাথে কাজ করে যাবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।  দেশে সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রের বিকাশে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সংগঠকদের সাথে আন্দোলনও চালিয়ে যাবো।’ 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিক্ষক মানজারে হাসিন মুরাদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিক্ষক মসিহ উদ্দিন শাকের, চলচ্চিত্র নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার, হাশেম সুফী চলচ্চিত্র সংসদ কর্মী, ঢাকা ডক ল্যাবের পরিচালক ইমরান হোসেন কিরমানি, মোরশেদুল ইসলাম, ফেডারেশন অব ফিল্ম অব বাংলাদেশের সভাপতি স্থপতি লাইলুন নাহার স্বেমি, বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমদ অটন, চলচ্চিত্র নির্মাতা নোমান রবিন, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিক্ষক শামিম আখতারসহ চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিল্পীরা। 

এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষ্যে আগামী ৪ মার্চ ও ৫ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে চলবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী।

প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের এই দিনে তৎকালীন সময়ের পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (এফডিসি) গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই দিনকে স্মরণ করে ২০১২ সালে প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছরও দিবসটি উপলক্ষ্যে এফডিসি ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছিল।