রাজারহাটে ধানকাটা শ্রমিক সংকট ও মজুরি বেশি হওয়ায় বিপদে পড়েছেন কৃষক। অনেক স্থানে বাড়তি মজুরি দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিক। ধান ঘরে তুলতে বাড়তি খরচ হওয়ায় ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন কৃষকেরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন ভালো হয়েছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের শেষ পর্যায়ে এসে শুরু হয়েছে ধান কাটা উৎসব। আবহাওয়া এখনও ভালো থাকায় দ্রুত ধান ঘরে তুলতে চাইছেন কৃষকেরা। তবে বাড়তি মজুরি ও শ্রমিক সংকটে বিপদে পড়েছেন তাঁরা। এ সুযোগে মজুরি বাড়িয়ে দিয়েছেন শ্রমিকেরা। পাঁচ শতাংশ জমির ধান কাটতেই ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা নিচ্ছেন। এক বিঘা জমির ধান কাটতে দিতে হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত। এর সঙ্গে রয়েছে মাড়াই, ঝাড়াই ও শুকানোর খরচ।

চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১২ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে ১২ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। কৃষকেরা জানান, বোরো মৌসুমে এমনিতেই শ্রমিক সংকট থাকে। অনেকে বেশি উপার্জনের আশায় বগুড়া, জয়পুরহাট, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে চলে গেছেন। ফলে মৌসুমে শ্রমিক সংকট তীব্র হয়েছে।

উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের কৃষক ওছমান আলী বসুনিয়া বলেন, পাঁচ শতাংশ জমির ধান কাটা ও মাড়াই করতেই খরচ হয় ১ হাজার টাকা। রোপণ, সার-কীটনাশক, নিড়ানি, সেচে আরও ১ হাজার টাকা চলে যায়। সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন হয় তিন মণ। চাষাবাদ খরচ ২ হাজার টাকা যাওয়ার পর কিছু থাকে না।

ফুলবাড়ী উপনচৌকি গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, ‘তিনদিন ধরে শ্রমিকের পেছনে ঘুরছি। তারা এখনও আমার ধান কাটা শুরু করতে পারেনি। আগে যাদের জমিতে কাটার চুক্তি নিয়েছে, সেগুলো এখনও শেষ করতে পারেনি।’ বাড়তি মজুরির বিষয়ে দেবিচরণ গ্রামের শ্রমিক আজিজার রহমান বলেন, ‘খালি মজুরি বৃদ্ধিটাই দেখলেন? সারাদিনের আয়ে বাজারে গিয়ে যে মাছ-মাংস কেনারও টাকা থাকে না।’

এদিকে ফলন ভালো হলেও বাজারে দাম কম হওয়ায় ধান উৎপাদনে উৎসাহ হারাচ্ছেন কৃষকেরা। স্থানীয় হাট-বাজারে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা মণ দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। কৃষকেরা বলছেন, এতে খরচ বাদ দিয়ে তাঁদের পারিশ্রমিকও উঠছে না। পশ্চিম দেবত্তর গ্রামের আব্দুস সালাম বলেন, উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল না, ফলনও ভালো হয়েছে। তবে ন্যায্য দাম না পেলে আর ধানের আবাদ করা যাবে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাথি বেগম বলেন, উপজেলায় ভর্তুকিতে কৃষকদের ছয়টি হারভেস্টার মেশিন দেওয়া হয়েছে। সেগুলো দিয়ে মাঠে ধান কাটার কাজ চলছে। শ্রমিক সংকটের কারণে সব সময় কৃষকদের আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছ।