সরকারবিরোধী ধারাবাহিক আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। সারাদেশে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে ঘোষিত জনসমাবেশ কর্মসূচির বাইরে আজ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে পদযাত্রা করবে দলটি। এবার প্রতিটি কর্মসূচিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। নিজেদের সাংগঠনিক অবস্থান যাচাই করতে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে বলা হয়েছে নেতাকর্মীকে। আন্দোলনের এ পথ ধরে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে যেতে চাচ্ছে দলটি। লক্ষ্য অর্জনে প্রায় প্রতিদিন দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন দলের হাইকমান্ড। একই সঙ্গে দলের নিষ্ক্রিয় নেতাদের প্রতি সতর্কবার্তাও দিয়েছে দলটি। দুই সপ্তাহ বিরতি দিয়ে শনিবার চার পর্বে ৮২ সাংগঠনিক জেলায় জনসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি, যা শেষ হবে ২৬ মে। কর্মসূচি সফল করতে দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবদের মাঝে ইতোমধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

এ কর্মসূচির বাইরে নতুন করে ঢাকা মহানগরকেন্দ্রিক পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে আজ দুপুর ২টায় বাসাবো খেলার মাঠ থেকে মালিবাগ কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এ কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস উপস্থিত থাকবেন। একই দিন একই সময়ে উত্তরের উদ্যোগে বাড্ডা সুবাস্তু ভ্যালি টাওয়ারের সামনে থেকে শুরু করে রামপুরা আবুল হোটেল পর্যন্ত পদযাত্রা হবে। এ কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন উপস্থিত থাকবেন।

এ বিষয়ে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম সমকালকে বলেন, মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সরকার শুধু লুটপাট আর বিদেশে টাকা পাচার করেনি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে জনগণকে ভাতেও মারতে চায়। তাই এখন আর কোনো প্রতিবাদ নয়, অন্যায়ের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রস্তুত রয়েছেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের সঙ্গে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও রাজপথে নামার জন্য অপেক্ষায় আছেন। এখন সেই সময় এসেছে। তাঁদের প্রতিটি কর্মসূচিতে এর প্রতিফলন ঘটছে। বুধবারও জনতার ঢল নামবে তাঁদের কর্মসূচিতে।

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদ, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে এককভাবে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।
জানা গেছে, সরকার পতনের আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকাকে প্রস্তুত করতে বিগত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন তৎপরতা শুরু করেছেন দলের নীতিনির্ধারক নেতারা। গত বছরের জুলাই থেকে শুরু হওয়া ধারাবাহিক আন্দোলনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হলেও আন্দোলনের শেষ সময়ে সাংগঠনিক শক্তিকে আবারও যাচাই করে নিতে চায়। এ জন্য একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হচ্ছে নেতাকর্মীকে। এবার তারই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পদযাত্রা কর্মসূচিতে শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে থাকার কৌশল নিয়েছে দলটি।

বিএনপির নেতারা জানান, কেন্দ্র ঘোষিত এবারের প্রতিটি কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেতাকর্মীকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক করা হয়েছে। নিষ্ক্রিয় আর গড়হাজির নেতাদের বিষয়ে রয়েছে হুঁশিয়ারি। এর আগে দুই মহানগরের থানায় থানায় অবস্থান কর্মসূচিতে বেশ কয়েকটি থানা ঢিলেঢালা কর্মসূচি করায় তোপের মুখে পড়েন নেতারা। অনেককে তখন মৌখিক সতর্ক করা হয়, অনেককে লিখিত শোকজ দেওয়া হয়। এবার এ রকম কিছু ঘটলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি কমিটি ভেঙে দেওয়ারও বার্তা রয়েছে।

দলটির সিনিয়র নেতাদের মতে, দ্রব্যমূল্যসহ মানুষের বেঁচে থাকার সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়, দেশের অর্থনীতি দুর্বল হওয়ায়, মানুষের আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় এবং সর্বোপরি সরকারের দুর্নীতি আর লুটপাটে জনগণ অতিষ্ঠ। তাই এই সরকারের বিরুদ্ধে যে কোনো কর্মসূচিতে বিক্ষুব্ধ সাধারণ জনগণ মাঠে নামতে মুখিয়ে আছে। ফলে এসব কর্মসূচিতে জনসমাগম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। জনগণের এ অংশগ্রহণের মাধ্যমেই গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

জানা গেছে, একের পর এক কর্মসূচিতে নেতাকর্মীর মধ্যে ব্যস্ততা বাড়লেও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। এরই মধ্যে কর্মসূচি সফল করতে মহানগর বিএনপি ছাড়াও দলের মহানগরকেন্দ্রিক বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা নিজেদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন। প্রায় প্রতিদিনই ঘরোয়া বৈঠক, প্রস্তুতি সভা, মতবিনিময়, প্রচার-প্রচারণা চলছে। এ কর্মসূচিতে মাঠ পর্যায়ে সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ বাড়ানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলের নেতাদের এলাকাভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সভা করে নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। ঘরোয়া বৈঠক, উঠান বৈঠক, পাড়া-মহল্লায় কর্মিসভা, মতবিনিময় সভার মতো আয়োজনে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করছেন দলের নেতাকর্মীরা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ইস্যু ছাড়াও দেশের অর্থনৈতিক সংকট সামনে এনে এবং জনগণের ভোটাধিকার, মানবাধিকার রক্ষার দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে তাঁরা জনমত তৈরিতে কাজ করছেন, বিভিন্ন কারণে সরকারের ওপর জনগণের ক্ষোভকে কাজে লাগাচ্ছেন। জনইস্যু এবং রাষ্ট্রীয় ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে একসময়ে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে। খুব শিগগির এ আন্দোলনকে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে বলেও নেতারা জানান।

মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক জানান, ঢাকা মহানগর বিএনপি পুরোপুরিভাবে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার চূড়ান্ত পর্ব শুরু হবে ঢাকাকে কেন্দ্র করেই। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় এখন মহানগরের প্রত্যেক নেতাকর্মী সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে, জীবনবাজি রাখতে মাঠে নামতে চান।