তুলতুলে শরীরটা পুড়ছে জ্বরে। টানতে পারছে না শ্বাস। মাঝেমধ্যে খিঁচুনি। ক্ষণে ক্ষণে চোখ খুলে খুঁজছে মা-বাবার স্পর্শ। তবে তার শয্যাপাশে নেই গর্ভধারিণী মা, কিংবা জন্মদাতা বাবা। নেই কোনো স্বজনও। জন্মগত মস্তিষ্কের অস্বাভাবিকতা, পুষ্টিগত সমস্যাসহ বেশ কিছু জটিলতা নিয়ে পৃথিবীতে আসে এই শিশু। এ কারণে মা-বাবা হয়তো তাকে ফেলে গেছে ঝোপ-ঝাড়ে। নির্মম এই ঘটনা এক ছেলেসন্তানকে ঘিরে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার শিশু বিভাগে নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয়দের আদর-যত্নে চলছে এই ‘অচেনা’ রোগীর চিকিৎসা।

চট্টগ্রাম নগরের টাইগারপাসের দেওয়ানহাট ব্রিজের নিচ দিয়ে গত শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পান পথচারী আব্দুর রাজ্জাক মিলন ও সুমন। পরে তাঁরা টাইগারপাস পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এএসআই আজিজুল ইসলামকে খবর দেন। পুলিশ এসে ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে এক শিশুকে আবিষ্কার করেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে ভর্তি করেন চমেক হাসপাতালে।

শনিবার সরেজমিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটির মুখে অক্সিজেন মাস্ক। দুই হাতে ক্যানোলা, শরীরে ঢুকছে স্যালাইন। কিছুক্ষণ পরপর ওয়ার্ডের নার্স, আয়া কিংবা ওয়ার্ডবয় এসে দেখে যাচ্ছে তাকে। মা-বাবা নিজের সন্তান ফেলে গেছে শুনে অনেক রোগীর স্বজনও এসে ভিড় করছেন শিশুটির শয্যাপাশে।

কথা হয় ওয়ার্ডের আয়া সখিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মা-বাবা কতটা নিষ্ঠুর হলে কোলের আদরের সন্তানকে এভাবে ফেলে দিতে পারে? ওর মা-বাবা কেউ নেই শুনে কিছুক্ষণ পরপর তাকে দেখে যাই। কিছু লাগলে নার্স-ডাক্তারকে বলছি।’

গতকাল শনিবার রাত ৮টার দিকেও শিশুটির জ্বর ছিল ১০২ ডিগ্রির বেশি। এর কিছুক্ষণ পর শিশুটির শয্যাপাশে আসেন ওয়ার্ডবয় মো. সেলিম। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে যখন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তখন তার পুরো শরীরে ময়লা ছিল। ভর্তির পর আমরা সবাই মিলে তাকে পরিষ্কার করি। এত ছোট্ট বয়সে মা-বাবাহীন এভাবে শয্যায় পড়ে থাকতে দেখে খুবই খারাপ লাগছে। তাই সুযোগ পেলেই তাকে একটু দেখতে ছুটে আসি।’

শিশুটির শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিউটিরত ডা. খাদিজা বেগম বলেন, ‘শিশুটি জন্মগত নানা ত্রুটিতে ভুগছে। সঙ্গে রয়েছে ফুসফুসের ইনফেকশন ও খিঁচুনি। ভর্তির পর থেকে তার প্রচণ্ড জ্বর। জন্মগত নানা ত্রুটির কারণে শিশুটির মস্তিষ্কের বিকাশ সঠিকভাবে হয়নি। যে কারণে শিশুটির ওজন যেভাবে বাড়ার কথা, সেভাবে বাড়েনি। শিশুটির বর্তমান অবস্থায় মনে হচ্ছে, সে এক বছরের শিশু। যদিও পুলিশ আমাদের জানিয়েছে, ওর বয়স চার-পাঁচ বছর। জন্মগত ত্রুটির কারণে সে অনেকটা প্রতিবন্ধীর মতো হয়ে গেছে। ওর হাত-পা অনেকটা শক্ত হয়ে গেছে। শিশুটির জন্মগত নানা ইতিহাস আমরা জানতে না পারায় চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবির বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হচ্ছে, শিশুটির মধ্যে প্রতিবন্ধীর লক্ষণ থাকায় মা-বাবা তাকে এভাবে ফেলে চলে গেছে। কারা শিশুটিকে ফেলে গেছে, তা শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’