- কালের খেয়া
- চট্টগ্রামে আজাদ হত্যায় ৩ মোটরসাইকেলে অংশ নেয় খুনিরা, গ্রেপ্তার ৪
চট্টগ্রামে আজাদ হত্যায় ৩ মোটরসাইকেলে অংশ নেয় খুনিরা, গ্রেপ্তার ৪

চট্টগ্রামে যুবক আজাদুর রহমান আজাদ হত্যার মিশনে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল আটজন। তিনটি মোটরসাইকেলে করে তারা ঘটনাস্থলে আসে। খুনের পর পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা আত্মগোপনে চলে যায়। এ ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য পেয়েছে র্যাব। এছাড়া সন্ত্রাসীদের পুরো একটি দল এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্যও রয়েছে র্যাবের কাছে।
সোমবার রাঙামাটির কোতোয়ালী থানার একটি আবাসিক হোটেল থেকে তিনজন ও তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নগরীর কদমতলী থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার চারজন হলেন- হালিশহর থানার আবু তাহের রাজিব (২৫), মো. রায়হান সজীব (২২), আবুল হাসনাত রানা (৩০) ও লক্ষীপুরে সদর থানার দেলোয়ার হোসেন জয় (২৭)। এদের মধ্যে রাজিব আজাদ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার রাতে নগরীর নয়াবাজার মোড়ে আজাদুর রহমান ও মফিজুর রহমানের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার পর আসামিরা দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যান। এরপর তারা রাতে হত্যার পরিকল্পনা করেন। মিটিংয়ে আসামি ফয়সাল আহম্মদ চৌধুরী ওরফে রিহান ফয়সাল চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জন হত্যায় অংশ নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগে থেকে কয়েকজন আজাদের বাড়ির সামনে ওত পেতে বসে থাকেন। রোববার ভোরে আজাদকে বের হতে দেখে মূল দলকে খবর দেন তারা। তিনটি মোটরসাইকেলে করে খুনিরা ঘটনাস্থলে আসেন। সরাসরি হত্যাকাণ্ডে ৭ থেকে ৮ জন অংশ নিলেও পুরো পরিকল্পনায় প্রায় ২০ জন জড়িত বলে জানতে পেরেছে র্যাব।
র্যাবের পতেঙ্গা ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড। দীর্ঘদিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। পুরো ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত। এ ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
নিহত আজাদুর রহমান ও তার বড় ভাই মফিজুর রহমান নয়াবাজার মোড়ে রহিম কন্ট্রাক্টরের মালিকানাধীন একটি খালি জায়গার কেয়ারটেকার হিসেবে চাকরি করতেন। গত শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে জায়গাটির গেইটের সামনে এক যুবককে প্রস্রাব করতে দেখে বাঁধা দেন মফিজ। এসময় অপরিচিত ওই যুবক মফিজের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ফয়সালসহ কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে আসেন ওই যুবক। ভাইয়ের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার খবর পেয়ে এগিয়ে আসেন আজাদ। তার সঙ্গে ফয়সাল ও তার অনুসারীদের বাগবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে তারা চলে যান। রোববার ভোরে দোকান থেকে নাস্তা আনতে বাসা থেকে বের হলে বাড়ির সামনে আগে থেকে বসে থাকা সন্ত্রাসীরা তাকে পেটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আজাদকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আজাদের স্ত্রী নাজমা আক্তার চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে লাগানো ব্যানার ছিড়ে ফেলেছেন কাউন্সিলর অনুসারীরা। রোববার আজাদ হত্যাকাণ্ডের পর তার খুনিদের ফাঁসি দাবি করে নয়াবাজার এলাকায় ব্যানার টাঙিয়েছেন এলাকাবাসী। তাতে খুনিদের স্থানীয় ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটনের ছোট ভাই আবদুল মান্নান খোকনের অনুসারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সোমবার বিকেলে এলাকায় দলবল নিয়ে মিছিল করেছেন খোকন। এলাকাবাসীর টাঙানো ব্যানার ছিড়ে ফেলেন তারা।
নিহত আজাদের বোন ফাতেমা আক্তার চম্পা সমকালকে বলেন, ‘আমার ভাইকে খুন করেছে। এখন কাউন্সিলর ও তার ভাইয়ের লোকজন খুনিদের ফাঁসির দাবিতে এলাকার লোকজনের টাঙানো ব্যানার ছিড়ে ফেলেছেন। এতে বুঝা যায়, তারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আমি কাউন্সিলর ও তার ভাইয়েরও বিচার দাবি করছি।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটন কিছু জানেন না বলে জানান। তার ছোট ভাই আবদুল মান্নান খোকনকে ফোন দিলে তার মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
মন্তব্য করুন