অনুগল্প
এলোমেলো ভাবনাগুলো

স্বাধীন আরিফীন
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
আরও একটা পাতা কুচি কুচি করে ছিঁড়ে ঝুড়িতে ছুড়ে ফেলে পরাগ। বিরক্তিতে কিংবা হতাশায় তার চোখের পাতা বন্ধ হয়ে থাকে কিছুক্ষণ। এখন রাত প্রায় ১টা। সেই সন্ধ্যা থেকে সে এই শক্ত টেবিলটাতে বসে আছে। অথচ একটি লাইনও লিখতে পারেনি।
‘সে কি! তুমি জাগলে কখন?’ পরাগের কণ্ঠে বিস্ময়।
‘বেশিক্ষণ হয়নি। আমি জাগার পর আপনি মাত্র তিনটে পাতা ছিঁড়েছেন।’
‘ও’ বলেই অল্প সময়ের জন্য খানিকটা আনমনা হয় পরাগ। তারপর জিজ্ঞেস করে, ‘শরৎ শব্দটা শুনলে তোমার মাথায় কী আসে?’
‘কাশফুল।’ অরিত্রির সহজ স্বাভাবিক জবাব।
‘আর?’
এবার অরিত্রি হাসে। খিলখিল হাসি নয়। কাশফুলের মতো স্নিগ্ধ সেই হাসি। পরাগ অপলক তাকিয়ে থাকে। এই মেয়েটা এত সুন্দর করে হাসে। ‘হাসছ যে?’
অরিত্রি মুখের কোমল হাসিটাকে আরও খানিকটা চওড়া করে বলে, ‘কবি আমি? নাকি আপনি?’
‘তুমি।’
অরিত্রি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, ‘মাথাটা এবার বুঝি খারাপ হয়েই গেল?’ বলে আবারও হাসে।
‘তুমি এভাবে হাসতে থাকলে যেটুকু ভালো আছে, সেটুকু খারাপ হতেও বেশি সময় লাগবে না। অরিত্রি মানুষ যখন হাসে তখন তার কোন অঙ্গটি সবচেয়ে সুন্দর লাগে জান?’
‘চোখ।’
‘একদমই তাই। তুমি কি জান, তোমার চোখ ভীষণ সুন্দর! ভীষণ!’
‘ওমা, তাই! তাহলে কবি সাহেব। আপনি আমার চোখ নিয়ে কবিতা ভাবুন। আমি দুই কাপ চা করে নিয়ে আসি।’
শরতের পরিষ্কার তারা ঝলমলে আকাশ। একটা মস্ত বড় চাঁদ উঠেছে। সেই চাঁদের আলোয় এই নবদম্পতির উঠোন ভরে গেছে। পরাগ আর অরিত্রি পাশাপাশি বসে জোছনার সৌন্দর্য উপভোগ করছে। পরাগের মনে হচ্ছে এত সুন্দর জোছনা সে কোনোদিন দেখেনি। সন্ধ্যা থেকে একটি শব্দও লিখতে না পারার দুঃখ এখন আর তাকে ছুঁতে পারছে না। কী অদ্ভুত সব! কিছু ক্ষুদ্র কারণ সব মন খারাপকে কেমন যেন নিমেষেই দূর করে দিতে পারে।
এখানেই জীবনের সৌন্দর্য।
অরিত্রির চোখেমুখে জোছনা লেপ্টে আছে। তাকে এখন একটা কাশফুলের মতো লাগছে। নদীর ধারে নির্মল বাতাসে বেড়ে ওঠা সাদা ধবধবে, কোমল কাশফুল।
সুহৃদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
- বিষয় :
- অনুগল্প
- এলোমেলো ভাবনাগুলো