আমার আত্মাখানি এক পুরাতন পদব্রাজক। কত পথ, কানাগলি উঁকিঝুঁকি দিয়ে টুকটুক করে হাঁটছে, দৌড়োচ্ছে আর থামছে। এই যে হারিয়ে যাওয়া দ্রোহ আর প্রেম, গোলাভরা ধান, সোনালী ডানার চিলের দিনগুলো, আমি তো তার সাক্ষী নই, আমার দেহে তার চিহ্ন নেই। কিন্তু আমার মন কেন বলে যে আমিও ছিলাম সেখানে! এই প্রশ্ন আমি করেছিলাম সেই কত পূর্ণিমাদিন আগে, নিজেকেই । উত্তরও মিলেছে। আমার স্বত্বা সেই কোন আদিকালের। হয়তো আমাদের সবারই। নিজের শরীরের বয়সের সাথে জুড়েছে গেলো দুই কি তিন প্রজন্ম থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া হলদেটে পুরোনো গল্পদের বয়স। পাড়ার বাবুলের দোকানে প্রতিদিন চায়ের সাথে জমতে থাকা যে গল্পগুলো শুনি, “আররে আমাগো সময় কী এমন আছিলো নাকি, আমার দাদাজানে এক বসায় আধা গরু সাবাড় করতে পারতো।” সেই সব ঝুড়ি ঝুড়ি গল্পের ভার। ঠাকুরমার ঝুলিতে পড়া প্রথম কল্পনা ভাঙার চাবিগুলো, শাকচুন্নি আর সোনার কাঠি রুপার কাঠি রাজকুমার, গোপালভাড় সকলে মিলে তো এই মনের মধ্যে আসনপিঁড়ি হয়ে আছে। আর বাংলার লেখক হওয়ার কল্যানে, আর প্রয়োজনের চেয়ে এক ছটাক বেশি রোমান্টিক হবার দায়ে, জীবনানন্দ দাশ আর রবীন্দ্রনাথ তাদের সকল স্থাবর অস্থাবর নিয়ে হৃদয়ের একুল অকুল দুকূল জুড়ে রাজত্ব করছে। আর আমার আত্মাটি “কত জন্মের ভুলে যাওয়া স্মৃতি বিস্মৃত অক্ষরে” জড়িয়ে পেঁচিয়ে আছে।
রবীন্দ্রনাথের কথায় মনে পড়লো, বাংলার লেখকদের রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে খানিকটা দুঃখবোধ আছে। নিখাদ খাঁটি অভিমান। আমাদের যা বলার কথা সব নাকি উনি লিখে গিয়েছেন। উনি না লিখলে কি আমরা লিখতাম, প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে — বাঁধন খুলে দাও? আমি ভাবি। নাহ বোধহয়। প্রেমের জোয়ারে সব বাঁধন খুলে পাল তুলে সুর গাঁথা রবীন্দ্রনাথের কাজ। অন্য কোনো লেখকের না। প্রত্যেক লেখকের নিজের বলবার ধরণ আছে, নিজের সুর আছে, ফিসফিসিয়ে কিংবা গর্জনে পৃথিবীকে জানান দিয়ে যায় তার অস্তিত্ব। লেখকের সুর একান্ত, নিজস্ব। প্রত্যেক লেখক তার নিজের গল্প নিয়ে জন্মে ওঠেন। অকৃত্তিম। রবীন্দ্রনাথ যদি না লিখতেন তাঁরটুকু, কেউ আর লিখতোনা। লিখতো অন্য কোন বাঁধন ভাঙা প্রেমের আখ্যান। পাবলো নেরুদা রবীন্দ্রনাথে প্রাণিত হয়ে লিখেছেন,
“In my sky at twilight you are like a cloud
and your form and colour are the way I love them.
You are mine, mine, woman with sweet lips
and in your life my infinite dreams live.”
তাতে কী আদৌ রবীন্দ্রনাথকে লেখা হয়েছে! আমি তো এখানে নেরুদাকেই খুঁজে পাই শুধু। এক বিষণ্ণ প্রেমিকের হুমহুম তিরতিরে হাহাকার। আর রবীন্দ্রনাথ যখন তার ঢঙে সহজাত লিখেছেন,
“তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা, তুমি আমার সাধের সাধনা
মম শূন্যগগনবিহারী
আমি আপন মনের মাধুরী মিশায়ে তোমারে করেছি রচনা-
তুমি আমারি, তুমি আমারি,
মম অসীমগগনবিহারী।।”
আমি আপন মনের মাধুরী মিশায়ে তোমারে করেছি রচনা- প্রেমকে কী অসীম মনে হয়েছে এখানে, আত্মিক এবং দীপ্ত। সেটি রবীন্দ্রনাথের প্রতি ভালোবাসার দায় থেকে হোক, ভাষার ছলচাতুরির কারণে হোক, নেরুদা আর রবি ঠাকুরের ভিন্ন স্বত্বার কারণেই হোক, দুটো লেখা কখনোই একই অনুরণন তোলেনি জাগায়নি অন্তরে। অথচ মূল ভাবের কী মিল!
এই যে ভাবের পিঠে ভাব জেগে ওঠে, এক লেখকের লেখার সূত্র ধরে নতুন চরিত্র জন্মে অন্য লেখকের কলমে, নতুন লেখকের জমিতে জেগে ওঠে পুরনো বিরোধের নতুন মীমাংসা, সে তো এক চলমান যাত্রা। মশাল যাত্রা। কাল আর আজকের লেখকরা সেই যাত্রার ধ্বনি তোলে মশাল হাতে। কেউ সরু হলদে গলি ধরে হাঁটছে, তো কেউ সটান সোজা পথে, কেউ জলে পা ডুবিয়ে পথ খুঁজছে। আমি তো দেখি সবার হাতে মশাল। নতুন মশাল, নিভু নিভু মশাল, এক মহাকাল সমান আলোর মশাল। সেই যাত্রা পথে লেখকের তো সবার সাথে দেখা হয়না, যার সাথে পথ এক হয়ে ওঠে, তার কাছে আলো খোঁজে। সাহিত্য কি তাই নয়? আলোর যাত্রা, আলোর পথে যাত্রা? যার সাথে যার ভালোবাসা হয়ে যায়, সে তার থেকে আলো নেয়, সেই আলোতে এগিয়ে যায়।
তাই যে চরিত্র আর পট লেখক একবার নির্মাণ করে ফেললেন, তাকে স্বয়ং লেখকও কী বধ করতে পারেন? লেখকের এক সময় থামতে হয়, কিন্তু তার চরিত্ররা তো চিরঞ্জীব হয়ে ওঠে। সিল্করুট ধরে যে বণিক আর মুসাফিরেরা হেঁটে বেড়াতেন কিংবা উটের পিঠে চড়ে জীবিকার খোঁজে বের হতেন, রাত হলে সরাইখানায় জমতো তাদের গল্প।আঙুরের রস আর টাটকা পনিরের কামড়ে গল্পেরা করতো ভ্রমণ এর থেকে ওর ঠোঁটে। আফগান গল্প তুর্কর গল্প চীনের গল্প ঝর্ণাধারার মতন তাদের মুখে মুখে প্রবাহিত হয়েছে দেশ দেশান্তরে। তাইতো এখনো দূরদেশের এক তুর্কি লোকগাথা শুনলে মনে হয়, এ গল্প তো আমাদের শোনা বহুবার, আমাদের নিজস্ব। গল্পেরা তো ভ্রমণ করে। এক লেখক থেকে অন্য লেখকে। একই পথে হেঁটে যাওয়া অন্য লেখকের মশালের আলোয়, কিংবা উল্টো গোলার্ধে বাস করা কোন এক যাযাবর কবির লেখায় । যার সাথে হয়তো সেই লেখকের কোন কালে দেখা হবেনা। কিন্তু কোন এক লেখার সূত্র ধরে তারা এ পৃথিবী দেখাবার পথে আলো জ্বালিয়ে দিলেন। দিন শেষে, দৃষ্টিতে শ্রবণে অক্ষরে আমরা যা ধারণ করি, তার সমষ্টিই তো আমাদের স্মৃতি, আত্মার জ্ঞান কিংবা বয়স। সেই স্মৃতির আশ্রয়ে সজ্ঞানে কিংবা অন্যমনে আমরা লিখে যাই, লিখেই যাই। কী অদ্ভুত, নিসর্গ আর মানবিকতার কবি রবার্ট ফ্রস্ট লিখলেন,
“But tree, I have seen you taken and tossed,
And if you have seen me when I slept,
You have seen me when I was taken and swept
And all but lost.”
আর আমাদের দামাল বিদ্রোহী নজরুল, হয়তো কোনো স্মৃতির ভাঁজ থেকে খুঁজে পাওয়া সূত্রে, জানালার ওপারের নয়টি সুপারি গাছকে ভালোবেসে লিখলেন,
“তোমাদের আর আমার আঁখির পল্লব-কম্পনে
সারা রাত মোরা ক’য়েছি যে কথা, বন্ধু, পড়িছে মনে !
জাগিয়া একাকী জ্বালা ক’রে আঁখি আসিত যখন জল,
তোমাদের পাতা মনে হতো যেন সুশীতল করতল
আমার প্রিয়ার!”
দুই পৃথিবীর দুই রোমান্টিক কবি, এক পথে হেঁটেছেন কেমন লেখার সূত্র ধরে। হয়তো সে মশাল যাত্রায় তাদেরও হয়েছিল দেখা।
এত দূরের কথা না বলে নিজের কথা বলি বরং। আমার একটা কল্পনার নগর আছে। পপৌরি। পপৌরীকে নিয়ে আমি গল্প লিখি। আমি দেখতে পাই সে নগর। আমার আঙুলের শিরা, চোখের পাতায়, অন্তরের গভীর থেকে গভীরে পপৌরি খেলা করে। আমি সে নগরকে ধারণ করি। সে নগর আমি সৃষ্টি করেছি একটু একটু করে, বহু বহু দিন ধরে। সেখানে তিন রঙা ফুলের পাপড়ির নির্যাস থেকে থেকে সুগন্ধি তৈরি হয়। পথের ধরে থোকায় থোকায় জন্মে ওঠা টুকটুকে ডালিমের রস দিয়ে সে নগরে রাষ্ট্রীয় অতিথিতদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। পপৌরি, সে নগরে কখনো পাখি মরেনা। কেউ দেখেনি কোনদিন।
আর সেদিন পুরোনো বই এলোমেলো করতে করতে শহীদুল জহিরের সেই “কাঠুরে ও দাঁড়কাক” এ এসে আঙ্গুল থামলো। তিনি লিখছেন, “বহুদিন পূর্বে ঢাকা শহর একবার কাকশূন্য হয়ে পড়ে...” সেই কত আগে পড়েছি। ভুলেছিলাম প্রায়। আবার পড়লাম। আদতে আমার পপৌরি নগরের সাথে কোথাও এক ছটাক মিল নেই। কোথায় কংক্রিটের রুক্ষ ঢাকা শহর, আর কোথায় আমার টসটসে রঙিন পপৌরি নগর! তবু সেদিন মনে হলো, কেমন করে দু’ জীবনের দুই মানুষ, নগরের পাখিদের গল্প লিখছি, ভিন্ন সুরে ।
সুনীলের আত্মজীবনী “অর্ধেক জীবন” আমাকে খুব ভাবিয়েছিলো। দেশভাগ আর লেখক সুনীলের ফুলে জলে বেড়ে ওঠা জীবনের চেয়েও আমি থমকে গেলাম সুনীলের জুতো হারিয়ে যাওয়ার গল্পে। মামার বিয়ের বরযাত্রী হয়ে ছোট্ট সুনীল নৌকায় করে যাচ্ছিলো। কাদামাখা পাম্পশু নদীর জলে ধুতে গিয়ে এক পাটি হারিয়ে যায়। সুনীল বুঝতে পারে না আরেক পাটি জুতো দিয়ে সে কী করবে?
আমি থমকে গিয়েছিলাম। সত্যিই তো এক পাটি জুতো দিয়ে মানুষ কী করে! সুনীলের সেই বিস্ময়কে পরিণতি দেয়ার লোভ জেগেছিলো আমার মধ্যে। সেই লেখার সূত্র ধরে লিখেছিলাম “জাদুকরের জুতা”। জাদুকর যে নিজেকে বিশ্লেষণ করে এভাবে যে,
“আমি রুমালকে কবুতর করে উড়িয়ে দিতে পারি। ডিমকে ছুমন্তর করে সাদা পালকের মুরগি বানিয়ে ফেলতে পারি। আমি ঈশ্বর নই, জাদুকর। এমন কোনো আহামরি জাদুকর নই, আর দশজন যেমন হয়। বিশেষ হওয়ার জন্য মাথায় পাগড়ি বাধি, ঝুলওয়ালা ইয়া লম্বা পাঞ্জাবি পরি, আর নাগরা স্টাইলের নকল চামড়ার জুতা। সে জুতায় ফোসকা পরে। সারাদিন ধরে এ শহর, ওই গ্রামে ঘুরে ঘুরে জাদু দেখানোর পরে বাড়ি ফিরে দেখি, পায়ের কোণার ছোট্ট আঙ্গুল পানি জমা হয়ে ফুলে ওঠে কালো আঙুরের মতন। রাত জেগে গরম পানির সেঁক দিয়ে টিপে টিপে সেই ফোসকার রস বের করি। কোনো জাদু দিয়ে ফোসকা সারাতে পারিনা আমি। এমনই সাধারণ এক জাদুকর আমি।”
ফোসকাওয়ালা পা দুটো টেনেটেনে চলা এক কালো দিনে জাদুকরের মনে পরে, ছোটবেলায় এক জোড়া লাল চামড়ার জুতা ছিল তার। হারিয়ে গিয়েছিলো এক পাটি জুতো। হারিয়ে যাওয়া এক পাটি জুতোর শোক ছাপিয়ে যায় তার ঝলমলে বর্তমানকে, জাদু হারিয়ে যায় তার জীবন থেকে। পথে নামে সে। শেষটুকু তার বয়ানে বলে এমন করে,
“আমি ইস্তফা দেই কোম্পানি থেকে। না দিলে ওরাই বাদ দিত। আমার কারণে মানসম্মান সব গিয়েছে ওদের ।
মালিক বলে, তা এখন কী করবা?
আমি বলি, দোকান দিবো দোকান।
কিসের দোকান?
আমি বলি, সেই দোকানে সবার হারিয়ে যাওয়া এক পাটি জুতা পাওয়া যাবে।”
সুনীলকে তাঁর উত্তরের খোঁজ দিয়ে আমি যেন তৃপ্ত হই। কুলকুল ঝর্ণায় শান্ত হয়ে পা ছড়িয়ে বসি। কত শত বছরের ভাগ ঝোকের গল্প জমিয়ে ছিলাম আত্মার ভাঁজে ভাঁজে। এমন করে একটু একটু করে আত্মা এক পুরাতন পথিক হয়ে হাঁটতে থাকে। আমরা এক গল্পের সূত্র ধরে আরেক গল্প লিখি। জ্ঞাতে, অজ্ঞাতে। চরিত্র নিয়ে খেলা করি আর এক মশাল থেকে আরেক মশাল আলো জ্বালিয়েই, পৃথিবী দেখবার পথ জুড়ে নিরন্তর।
গল্পের সূত্র ধরে অন্য গল্প বেঁচে থাকে “কখনো গাঙর কখনো কোপাই কপোতাক্ষর গানে”। লেখকেরা একে অন্যের স্মৃতির বয়স ভাগাভাগি করে নেয়, লেখার সূত্র ধরে। কিন্তু এক লেখক দ্বিতীয়বার জন্মায় না। আমি দেখিনি কখনো। ওই যে, একজন লেখকের কাজ নির্দিষ্ট, নির্ধারিত আলাদা। তাদের সুর অনুপম, সে সুর একবারই জন্মে। কোন দিনে, কত তাপমাত্রা আর কতখানি রক্তচাপ আর নাড়ির গতিতে, কোন সাহিত্য রচনা হবে, সে তো স্বয়ং লেখকও জানেনা। অন্য কেউ অনুমান করবে কী করে? তাই রবীন্দ্রনাথ আর নজরুল একবারই এসেছেন, লালন কিংবা জীবননান্দ দাশ, সুফিয়া কামাল কিংবা হাসান আজিজুল হক, শহীদুল জহির, সৈয়দ শামসুল হক বা হুমায়ূন আহমেদ একবারই জন্মেছেন। রেখে গিয়েছেন তাঁদের স্মৃতির আলো।
সেই আলো থেকে নতুন মশাল জ্বলবে। কিন্তু আরেকজন হুমায়ূন আহমেদ কিংবা সুফিয়া কামাল সৃষ্টি হবে না। বইয়ের বাজারে প্রায়ই একটা কথা শুনি, অমুক নতুন লেখকের লেখা একদম সেই আমাদের প্রিয় লেখকের মতন। এখানেই বিপত্তি। একজন লেখক শুধু লেখক হয়ে উঠতে চাইবে, লিখতে লিখতে লেখক হয়ে উঠবে সে। কিন্ত একজন লেখক যদি জীবনানন্দ কিংবা বিভূতি’র মতন করে লিখতে চেষ্টা করেন, তবে সেখান থেকে রেপ্লিকা সাহিত্য তৈরি হবে শুধু। রেপ্লিকা লেহেঙ্গা আর রেপ্লিকা সাহিত্যের একটা পার্থক্য আছে। আপনার সিনেমার নায়িকার ওই নীল লেহেঙ্গাটা পরতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ওই লাখ লাখ টাকা দিয়ে আসল ডিজাইনার লেহেঙ্গাটা কিনতে পারছেন না। তখন আপনি চাঁদনীচক বা অনলাইনের বলিউড ফ্যাশন পেজ থেকে কয়েক হাজার টাকায় একটা রেপ্লিকা লেহেঙ্গা কিনতেই পারেন। সাধ্যের মধ্যে মাধুরী হয়ে গেলেন আর দুধের সাধ ঘোলে মিটলো। কিন্তু আপনার আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের উপন্যাস পড়তে ইচ্ছে করছে। ইলিয়াসের উপন্যাস তো আর লাখ টাকা দামে বিক্রি হয়না। তার বদলে ইলিয়াসের মতন করে লেখা অন্য কারো রেপ্লিকা উপন্যাস পড়ার দরকার কী? ইলিয়াসের উপন্যাসের যা দাম, রেপ্লিকা বইটির দামও তো প্রায় তাই। ইলিয়াস ছেড়ে পাঠক কেন ইলিয়াসের মতন লেখে এমন কাউকে বেছে নেবে? আসল নির্যাস ছেড়ে কেউ নকল ঘ্রাণে আনন্দ পায়? পাঠক ঠিকই আসল খুঁজে নেয়। এক লেখকের সাথে আরেক লেখক জুড়ে যায় লেখার সূত্র ধরে, স্মৃতির বয়স ভাগাভাগি করে। অনুকরণে নয়।
আর তাই, “আহা তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা, ওগো আমার ওগো প্রিয়” আর এমন করে কেউ লিখবেনা, লিখতে পারবেও না কখনো। কিন্তু সেই পঙতি পড়তে পড়তে, হয়তো কখনো রচিত হবে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাদময় প্রেম আখ্যান, যা আগে কখনো সৃষ্টি হয়নি। এক পৃথিবী সমান প্রাণের আয়ুতে লেখকেরা আদি পথিকের মতন হাঁটবে পথ, জ্বালাবে আলো, খেলবে প্রাণের খেলা একে অন্যের সাথে, তাদের নির্মাণে আর দর্শনে।
মন্তব্য করুন