বাবাকে নিয়ে দীপন বিপদেই আছে, অন্যদিকে বাবার উল্টো দাবি– তিনিই নাকি বিপদে পড়েছেন ছেলেকে নিয়ে! দীপন সময়ে-অসময়ে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করে বসে, যার সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেন না তিনি!

সেদিন বাবা পাঠ্যবইয়ে পড়িয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। অনেক চেষ্টায় বাক্যটা মুখস্থ করেছে দীপন। অথচ পরদিন বাবা ফোনে কাকে যেন বলেছেন, ‘এই জাতীয় চিন্তা ভুলেও করবেন না!’

জাতীয় ফুল শাপলার সঙ্গে ‘এই জাতীয়’ কথাটা মেলাতে পারে না দীপন। তাই বাবাকে পাল্টা প্রশ্ন করল, ‘চিন্তা কোন দেশের জাতীয় কথা?’

উদ্ভট প্রশ্নে বিরক্ত হলেন বাবা। তিনি বিরক্ত হলে চটজলদি কবিতা বানিয়ে ফেলেন। আবৃত্তির ভঙ্গিতে বললেন, ‘জাতীয় ফুল শাপলা/ নেই কোনো ঘাপলা!/ চিন্তা থাকে মাথায়/ বৃষ্টি পড়ে ছাতায়!’

দীপনের দাদার বাড়িতে কৈ মাছ কেজি দরে বিক্রি হয় না, হয় কুড়ি দরে। বইপত্রে ২০টায় এক কুড়ি লেখা থাকলেও গ্রামে ২৪টি কৈ মাছকেই কুড়ি হিসেবে গণনা করা হয়। এমনটে দেখার পর বাবা পড়াতে গিয়ে কেন বললেন, ‘কুঁড়ি থেকে ফুল হয়!’ কুড়ি একটা সংখ্যার নাম, সেটার সঙ্গে ফুলের কী সম্পর্ক! প্রশ্ন করলে বাবা বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘দুটো আলাদা বিষয়।’

আগামাথা বুঝতে না পেরে দীপন বলে, ‘তোমার কথা-কাজে কিন্তু মিল নেই!’ বাবা মৃদু হেসে বলেন, ‘তাহলে আজ থেকে তুমি মায়ের কাছেই পড়বে।’

‘মাও তো ভুল পড়ায়! সেদিন সকালে মা শোনালেন শুক-সারি পাখির গল্প। আর রাতের বেলায় বললেন, পিঁপড়া সারি বেঁধে পথ চলে! সারি যদি পাখির নাম হয়, সেটা পিঁপড়া হয় কীভাবে!’
বাবা বিরক্ত ও বিব্রত। বললেন, ‘দেখো দীপু, এতটা বোঝা আবার ভালো নয়!’
দীপন অভিমানী গলায় বলল, ‘তুমি না সেদিন বললে, বেশি বেশি পড়তে। তাহলে সব বুঝতে পারব। আজ আবার উল্টোটা বলছ কেন?’
মায়ের কাছে পড়তে বসে যথারীতি বেশি এগোতে পারল না। প্রশ্নের জবাব দিতে না পেরে মা কাঁদো কাঁদো চেহারায় চলে এলেন বাবার কাছে। বললেন, ‘আমি কী করব বলো দেখি, দীপু পড়ার চেয়ে ভুল ধরাতেই বেশি ব্যস্ত! কয়েকজন শিক্ষক রাখলাম, তারাও পালিয়ে যায় প্রশ্নের ভয়ে!’
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন বাবা। বললেন, ‘দিতেও তো পারবে না আড়ি/ এবার যাই তবে ডাক্তারবাড়ি!’ দীপন বলল, ‘তোমরাই সেদিন বললে, ছোটখাটো রোগে ওষুধ না খাওয়াই ভালো। আমার কিছুই হয়নি, নিজেদের চিকিৎসা না করিয়ে আমাকেই নিতে চাচ্ছ ডাক্তারের কাছে!’ বর্ণনা শুনে ডাক্তার কাকু বললেন, ‘প্রশ্ন করতে পারা ভালো গুণ। নিঃসন্দেহে দীপন বাবু একদিন আলোকিত মানুষ হবেন।’
মা বললেন– ‘তাই হোক, যেটা ভালো/ দীপু করুক জগৎ আলো!’
দীপন আশ্চর্য হয়ে বলল, ‘আরে মা, তুমিও দেখছি বাবার মতো কবি হয়ে গেলে!’

সুহৃদ ঢাকা 

বিষয় : গল্প

মন্তব্য করুন