মাজহার সাহেব সকাল থেকেই কেমন যেন মুখ ভার করে আছেন। গিন্নির চকিত প্রশ্ন, বিয়েবাড়িতে সবাই আনন্দ করছে, তুমি কিনা মুখ ভার করে আছো!

মাজহার সাহেবের সরল জবাব, আনন্দ তো করছেই, অন্যকে বোকা বানিয়ে আরকি!

গিন্নি এবার বুঝতে পারেন, তাঁর স্বামীকে কেউ না কেউ ঠকিয়েছে। কী হয়েছে খুলে বলো, গিন্নি জানতে চান।

মাজহার সাহেব অত্যন্ত অসহায়ের সুরে বলেন, ছোট ভাবি আমার টুথপেস্ট টিউবের স্থানে ভ্যানিশিং ক্রিমের টিউব রেখে দিয়েছিলেন। আমি তো ওটা দিয়েই দাঁত ব্রাশ...।

গিন্নি তাঁকে থামিয়ে দিয়ে– হয়েছে, আর বলতে হবে না, সেবার বডিলোশনের পটে রং মেশানো আটা গুলিয়ে রেখেছিল, সেটা দিয়ে সারা শরীর মেখেছিলে, আজ তো সে রকম কেলেঙ্কারি হয়নি! লজ্জা ঢাকতে জামা পরেছিলে, সেগুলো থেকে আজও সম্পূর্ণ রং ছাড়াতে পারিনি।

অতীতের ঘটনা সামনে আসায় মাজহার সাহেবের মনটা ঢের খারাপ হয়ে যায়। এলোমেলো ভেবে এক পর্যায়ে তিনি ঘর থেকে বের হয়ে বাগানের দিকে হাঁটা ধরলেন। উঠানে পা ফেলতেই ওত পেতে থাকা ছোট ভাবি অবাক ভঙ্গিতে বলছেন, ভাইজান, আমার স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?

মাজহার সাহেব পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখতে পান, সত্যিই তাঁর পায়ে ছোট ভাবির স্যান্ডেল। বুঝতে পারলেন, এটা আরেক চালাকি। ‘সরি’ বলে তিনি ঘরের ভেতর চলে যান এবং প্রচুর লজ্জা পেয়ে ঘামতে থাকেন।

গিন্নি ঘটনা জানতে পেরে ছুটে আসেন তাঁর কাছে। বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বললেন, বাড়ির সব লোক তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। আমারও বুঝি বাড়ি ছাড়তে হবে, লজ্জায় কাউকে মুখ দেখাতে পারছি না!

মাজহার সাহেব ছোটবেলা থেকেই সরল প্রকৃতির মানুষ। কলেজে যখন পড়তেন তখনকার এক ঘটনা, বাইরে বের হতে গিয়ে জুতা পরে দেখলেন তখনও প্যান্ট পরা হয়নি। জুতা খুলে প্যান্ট পরে বাইরে যেতেই তাঁর কাছে কী যেন নেই নেই মনে হচ্ছিল। খানিক পর মাজহার সাহেব বুঝতে পেরেছিলেন, শার্ট না পরেই ব্লেজার, টাই পরে ফেলেছেন।

মাজহার সাহেবের গিন্নি এবার ছোট ভাবির ওপর প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠলেন। গিন্নির শেখানো মতো নিজের গিন্নির ফেসওয়াশ নিয়ে ছোট ভাবির শ্যাম্পুর সঙ্গে বদল করতে গিয়ে ধরা খান। ছোট ভাবি হাসতে হাসতে বললেন, চোর চোর…

তখন সবাই ছুটে এলো। সবার মধ্যে হাসির রোল পড়ে গেল। ছোট ভাবি এক পর্যায়ে বললেন, বোকামির হ্যাটট্রিক করে এবার জরিমানা গোনেন ভাইজান। এক হাজার টাকা না দিলে চতুর্থ পরাজয়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। মাজহার সাহেব পরবর্তী অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে বাঁচতে জরিমানা গুনছেন আর মনে মনে ভাবছেন, বিয়েবাড়ির আনন্দ বুঝি এমনই হয়, কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ!

সুহৃদ ঢাকা

বিষয় : গল্প

মন্তব্য করুন