আমরা জীবদ্দশায় স্বীকৃতি দিই না

এ. কে. আজাদসংসদ সদস্য, ফরিদপুর–৩, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, হা–মীম গ্রুপ
এ. কে. আজাদ
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪ | ০৮:৩৮
আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত বরেণ্য রাজনীতিক, অর্থনীতিবিদ, সাহিত্যিক, বিচারপতিসহ বিভিন্ন সেক্টর থেকে যারা এখানে উপস্থিত হয়ে দীর্ঘ সময় ধৈর্য ধরে অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমাদের জন্য আনন্দের যে, ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিককে আমরা সকলে মিলে আজ সম্মান জানাতে পারলাম। আমি অভিনন্দন জানাই যারা পুরস্কৃত হলেন, তাদের। যারা পুরস্কৃত হননি, তারা আগামীতে পুরস্কৃত হবেন, এটাই আমার প্রত্যাশা। আমি মনে করি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সাহিত্যিকদের সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে ব্র্যাক ব্যাংকের এটি একটি শ্রেষ্ঠ অবদান। তারা দীর্ঘদিন ধরে এই আয়োজনকে অব্যাহত রেখেছেন, আগামীতেও রাখবেন বলে প্রত্যাশা করি।
সমাজে যারা অবদান রেখেছেন এমন রাজনীতিবিদদের জন্যও একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমরা মূল্যায়ন করতে চাই। অনেক বড় মানুষ আছেন, তাদের সাধারণ জীবনযাপন আমাদের কাছে শিক্ষণীয়। উদাহরণ হিসেবে ডা. জাফরুল্লাহর কথা বলা যায়।
ডা. জাফরুল্লাহর সঙ্গে অনেক দিনের সম্পর্ক আমার। একদিন আমি লক্ষ্য করলাম, উনি একই প্যান্ট, একই শার্ট পরেন। তাই ওনার বাসায় আমি এক কার্টন কাপড় পাঠালাম। তিনি পরলেন না। প্যান্টের কাপড় দিয়ে এলাম, পরলেন না। ওনার বাবা মারা গেলেন, তাঁর জানাজায় গিয়েছিলাম পুরান ঢাকায়। তখন জানলাম, তিনি পৈতৃক সম্পত্তি যা পেয়েছিলেন তা, যে বোন সবচেয়ে বেশি অভাবে ছিলেন, তাঁকে দিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর সম্পত্তি বলতে কিছু ছিল না।
তিনি তাঁর স্ত্রীর বাসায় থাকতেন। সারাজীবন গণস্বাস্থ্যের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। হঠাৎ একদিন ডা. জাফরুল্লাহ আমার অফিসে এসে আমাকে বললেন, ‘আমাকে ১২ কোটি টাকা দাও। আমি একটা ডায়ালাইসিস সেন্টার করব। একটা মানুষের দুইটা কিডনি নষ্ট হলেও নিয়মিত ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে পারবে।’
আমি একটু সময় নিলাম। কেন টাকাটা চাইলেন খোঁজ নিলাম। ওনার দুটো কিডনিই নষ্ট ছিল। কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারে সাধারণ রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসাসেবা নিতেন। পাশের এক মহিলা রোগীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনার ডায়ালাইসিসের পরবর্তী ডেট কবে?’ মহিলা বললেন, ‘আমার স্বামী রিকশা চালায়। তিন হাজার টাকা জোগাড় করতে পেরেছে। আর কবে বাকি তিন হাজার টাকা জোগাড় করতে পারবে জানি না।’ ওখান থেকেই সিদ্ধান্ত নিলেন, ডায়ালাইসিস সেন্টার করার এবং করলেন। আমরা তখন তাঁর পাশে থাকবার চেষ্টা করেছি। বড় মানুষদের এইসব মহান উদ্যোগ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। জাফরুল্লাহ ভাইকে আমরা মৃত্যুর আগে সম্মাননা দিই। মরে যাবার পর আমরা অনেকেরই গুণকীর্তন করি, কিন্তু জীবদ্দশায় আমরা তাঁকে স্বীকৃতি দিই না। আজকের অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধেয় আহমদ রফিক একটি কথা বলেছেন, “আমরা দুনিয়াতে এসেছি নেওয়ার জন্য না, দেওয়ার জন্য।”
আমরা দিয়ে যেতে চাই। সমাজ ও দেশকে যাঁরা অনেক দিয়েছেন, তাদের আমরা সম্মানিত করব– এই প্রত্যাশা রেখে, সবার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আমার বক্তব্য শেষ করছি। v
- বিষয় :
- স্বীকৃতি