একজন আগন্তুকের গল্প

অলংকরণ :: দেওয়ান আতিকুর রহমান
মূল: ইউজেনিও মন্তেল অনুবাদ: ফজল হাসান
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪ | ২২:৩৪
হয়তো আপনারা আমাদের বাড়িতে অ্যামিকো দেলে ফ্যামিগলি দেখার কথা স্মরণ করতে পারেন। প্রতি শনিবার সকালে, আমাদের সামনের গেইটের পাল্লা খুলে, ডাকপিয়ন আমাকে সেই গেজেটের, যা আপত্তিকর ছিল না, কপি দিয়ে যেত (গির্জার যাজকদের নাকি ধর্ম প্রচারকদের, আমি নিশ্চিত নই)। আমাদের আজীবন সদস্য করে দিয়েছিলেন পিয়েত্রসান্তার এক আন্টি। আমি ম্যাগাজিন খুলতাম এবং কম্পিত হাতে এক ঝলক তাকিয়ে ধাঁধার অংশটুকু দেখতাম। তারপর বিজয়ের বেশে ঘোষণা করতাম, ‘বুগানজা!’
তখন অন্তর থেকে আসা বাবার গভীর তৃপ্তির জোর গলা শোনা যেত।
যদিও বাবার এবং আমার মধ্যে সম্পর্কে কোনো ফাঁকফোকর ছিল না, তবুও রেভারেন্ড আর্চবিশপ বুগানজার নামটি প্রতি সপ্তাহে অ্যামিকো-র লোগোগ্রাফ, রিবাবাস এবং অন্যান্য শব্দ ধাঁধাগুলোর ‘সমাধানকারীদের’ (তাদের একজনকে পুরস্কার হিসেবে একটি উপদেশমূলক বই দেওয়ার জন্য এলোমেলোভাবে বেছে নেওয়া হতো) দেখার জন্য আমরা মরিয়া হয়ে চাইতাম। আমাদের চাওয়ার মধ্যে কোনো কমতি ছিল না। বিষয়টি বাবা এবং আমার মধ্যে বন্ধন তৈরি করেছিল, তা এমন এক অদৃশ্য সুতা, আমাকে আমার বাবার সঙ্গে বেঁধে রেখেছিল। বৃদ্ধ ধর্মযাজকের অক্ষতিকর বদ্ধ-সংকল্প ছিল, যিনি স্পষ্টতই সেই সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতার জবাব দিতে কর্তব্য অনুভব করতেন। তার কাছে সব সময় আমাদের আশা ছিল এবং পুরস্কৃত হওয়ার মতো প্রত্যাশা ছিল। সেই সময় শব্দের ধাঁধার, যেমন আজ আমরা জানি, কোনো অস্তিত্ব ছিল না। তবে তখন আমাদের মধ্যে যা ঘটেছিল, তা হলো ক্রিসক্রসিং ভাগ্যের এক নিখুঁত চিত্র। এখন আপনাদের গল্পের বাকিটা বলি।
আমি বলতে পারি না যে, আমার বাবা নাকি আমিই প্রথম এই অদ্ভুত বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম। আমাদের কাছে ধর্মযাজক ছিলেন সম্পূর্ণ অপরিচিত এবং তিনি আমাদের শহরে বাস করতেন না। আমরা তার সম্পর্কে বাড়তি কিছু জানার জন্য কখনই সময় ব্যয় করিনি এবং আমরা শুধু ধারণা করেছি যে, তিনি একজন বয়স্ক লোক। তবে সত্যি ঘটনা হলো কয়েক বছর (কত বছর?) ধরে সেখানে তার নাম দেখা যায় এবং এমন কিছু যে তার উপস্থিতি আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়, যা আমাদের সবচেয়ে ঈর্ষণীয় অভ্যাসগুলোর মধ্যে একটি। তিনি কী ভাবতেন– যদি আবিষ্কার করতে পারতেন যে আমাদের অতল গহ্বরের কিনারায় ঠেলে দেওয়ার জন্য তিনিই দায়ী? তিনি সম্ভবত এটাকে শয়তানের কাজ বলে বিবেচনা করতেন। কিন্তু সেই সময়ে, আমাদের চারপাশে যা ঘটেছিল, তার তুলনায় আমাদের মানসিক যন্ত্রণা ছিল হালকা। শহরটি বদলে গিয়েছিল, নিকৃষ্টতম উপায়ে আরও আধুনিক হয়ে উঠেছিল। ক্যাফে পরিবর্তিত হয়ে পানশালা হয়েছিল, যা অপরিচিত যুবকদের দখলে ছিল, যারা দিনরাত জামা ও কোট পরে টুলে বসে থাকত। তারা আলুর চিপস খেত এবং অনেকে আমেরিকানো কফি ও অন্যান্য মিশ্রিত শক্তিশালী মদিরা পান করত। তখন থিয়েটার দারুণভাবে জমে উঠেছিল। এ ছাড়া ভিয়েনার অপেরাগুলো লা গ্রান ভিয়া, বাক্কাচ্চিও১ এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের সান্ত্বনাদায়ক সেই ধরনের আনন্দমুখর অনুষ্ঠানের জায়গা দখল করে নিয়েছিল। তখন একসঙ্গে অনেক মেয়ে শিল্পীদের দৃশ্যপটে দেখা যায়নি। তবে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী উঠতি তরুণী গায়িকা ও নৈশক্লাবের নৃত্যশিল্পীরা এবং চলচ্চিত্র-প্রদর্শনের যন্ত্র ব্যবহারের প্রথম প্রচেষ্টা তরুণদের দুর্নীতির জগতে প্রবেশ করার জন্য অসংখ্য সুযোগ তৈরি করেছিল। এমনকি আমিও– যে কিনা সচরাচর সেসব জায়গায় যেত না– আমার আয়নায় সেই মায়াবী শিল্পীর একটি ছবি আটকে রেখেছিলাম, যিনি ইউরোপের প্রাচীন সার্বভৌমত্বের নেতৃত্ব দেবেন, যার ডাকনাম ক্লিওপোল্ডো। আমার বাবা যখন ম্যাগাজিনের কাটা অংশ দেখতে পেয়েছিলেন, তখন আমাদের মধ্যে প্রচণ্ড কথা কাটাকাটি হয়েছিল। আমি আমার ব্যাগ গুছিয়ে বাবাকে হুমকি দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার কাছে একটি কানাকড়িও ছিল না। আর্চবিশপকে দেখার আগে আমি কীভাবে কোনো এক শুক্রবারে চলে যেতে পারি? পরদিন সকালে বুগানজা, যিনি সেইন্ট বেনেডিক্ট জোসেফ ল্যাব্রে৩-র জীবন কাহিনি জিতেছিলেন, এসে হাজির এবং ইন হক সিগনো!– বাবা ও আমার মধ্যে সিলমোহর এঁটে পুনর্মিলন ঘটিয়েছিলেন।
আর এভাবেই কোনো পরিবর্তন ছাড়া আমাদের জীবন চলতে থাকে। বুগানজা যেমন কয়েক মাস ধরে আমাদের একসঙ্গে রেখেছেন, তেমনই তিনি বছরের পর বছর আমাদের একত্র করে রেখেছেন। আমার বাবা তার সময়কে বাড়ি এবং অফিসের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছিলেন (যেখানে আমার ভাইয়েরা ছিল প্রকৃত স্বাধীন, যারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল); আমি আমার সময়কে বাড়ি ও নতুন রাস্তার স্তম্ভের মাঝে ভাগ করে নিয়েছি এবং আমি তখনও বেকার। আমি অবশ্যই এমন একটি চাকরি খুঁজছিলাম, যা আমার জন্য অর্থবহ এবং আমার দক্ষতার যোগ্য, যদিও এসব দক্ষতা আসলে কী ছিল, আমার বাবা কিংবা আমি কখনই নিশ্চিত হতে পারিনি। ঐতিহ্যবাহী সব পরিবারে সাধারণত একটি করে ছেলে থাকত– প্রায়শই কনিষ্ঠতম এবং সবার আদরের– যার কাছ থেকে কোনো ধরনের সত্যিকার পেশায় নিয়োজিত থাকার আশা করা হতো না। বিপত্নীকের কনিষ্ঠ পুত্র, শৈশবে অসুস্থ থাকত, কিন্তু সেই পুত্র সব ধরনের অস্পষ্ট ধারণা নিয়ে অলাভজনক পেশায় ব্যস্ত থাকত। আমি ছিলাম পনেরো বয়সের যুবক, তারপর কুড়ি এবং তারও পরে পঁচিশ, কিন্তু কখনই কোনো পেশা বেছে নিইনি। তারপর যুদ্ধ এলো এবং তখনও আমি আমার বাড়ি ছেড়ে যেতে পারিনি। তারপর আসে যুদ্ধ পরবর্তী সময়, আসে অর্থনৈতিক মন্দা এবং সেই মহান বিপ্লব, যা বলশেভিকবাদের ভয়াবহতা থেকে আমাদের রক্ষা করার কথা ছিল। ব্যবসাপাতির অবস্থা খারাপ ছিল: রোমের সুপারিশ করার কর্মচারীদের টেবিলে ভরা খামগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলে না গেলে কারও পক্ষে আমদানি করার অনুমতিপত্র পাওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু বুগানজা নির্ভীকভাবে তার আগমন অব্যাহত রেখেছিলেন। আমাদের জীবনে কিছু একটা অবিচলিত ছিল, যা আঁকড়ে থাকার মতো।
এক শনিবার সকালে আমার বাবা এবং আমার মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কয়েকজন দুর্বৃত্ত আমাকে রাস্তায় মারধর করেছিল, কারণ আমি কালো শার্ট পরিহিত লোকটির দিকে হাত বাড়াইনি। আমার বাবা বলেছিলেন যে, তারা ভালো কাজ করেছে, আমার বোকামির চেয়ে পিটুনি খাওয়া কম কিছু প্রাপ্য ছিল না। অ্যামিকো দেলে ফ্যামিগলি এসেছে। আমি অসতর্কভাবে খুলেছি এবং অবিশ্বাস্য কিছু দেখতে পেয়েছি, এমন কিছু যা আমাদের জীবনের গতিপথ পরিবর্তন করবে: বুগানজার নামটি ছিল না!
‘বিদায়, বুগানজা!’ আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আশ্চর্যান্বিত গলায় বললাম। তারপর আমি আমার ঘরে যাই এবং বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিই। আমার সময় এসে গেছে: বন্ধনের সুতা ছিঁড়ে গেছে, শেকল ছিঁড়ে গেছে। আমাদের জীবন থেকে ‘বাসো কন্টিন্যুও বুগানজা’-র অন্তর্ধানসহ সবকিছু বদলে যেতে পারত এবং তা ঘটেছিল। তখন নতুন জীবন শুরু করার সময় ছিল। কীভাবে কিংবা কোথায়, আমি জানতাম না। তবে আমার সেই না জানার বিষয়টি কোনো ব্যাপার ছিল না। বাবা মন্তব্য না করে বুগানজার নাম না থাকার বিষয়টি সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু আমি লক্ষ্য করেছি যে, তিনি যখন বাগানে ডালিয়া ফুলের গাছে পানি দিচ্ছিলেন এবং তখন তাকে স্বাভাবিকের চেয়ে দুর্বল ও বিষণ্ণ দেখাচ্ছিল, যদিও সেই সময় তিনি আমার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। আমি সারাদিন কাজ করতাম, রাতের খানিকটা অংশ এবং পরের দিনও। আমার কাজ ছিল পুরোনো কাগজপত্র ধ্বংস করে ফেলা (এমনকি ক্লিও ডি মেরোড-এর খবরের কাটা অংশ, যা অনেক বছর পরে পুনরায় আবিষ্কার করা হয়েছিল) এবং অন্যান্য জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা। আমি খুব যত্ন করে দুটি স্যুটকেস গুছিয়েছি। আমি আগের চেয়ে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ– আমার ভয় কিসের? আগামী শনিবারের মধ্যে আমি চলে যাব এবং যাই ঘটুক না কেন, অশরীরী-যাজকের পুনরায় আবির্ভাবের আশঙ্কা ছিল না। বুগানজা বাধা দিয়েছিলেন এবং চুক্তি ভঙ্গ করেছিলেন: তিনি আমার জীবনে অতিরিক্ত হয়ে ফিরে যান এবং এখন আমি তাকে ছাড়া থাকতে পারি। সবকিছু পরিকল্পনা করার পরে আমি সমস্ত লুকানো বিপদ থেকে নিরাপদ অনুভব করছি। আমি আমার ঘর ছাড়ার বিষয়টি দীর্ঘায়িত করে সুন্দর সময় কাটাচ্ছি। আমি শৈশবের প্রতিটি সড়কে আমার পায়ের চিহ্ন খুঁজে পেয়েছি: আমি স্কুলে যাওয়ার জন্য বছরের পর বছর যে পথ বেছে নিয়েছিলাম, তা আবার দেখেছি। আমার কোনো বন্ধু ছিল না, তবে আমি কয়েকটি বিদায় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলাম; চলে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ না করেও আমি আমার অস্বাভাবিক সব মন্তব্য শুনিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলাম। বাবাকে বলেছি যে, আমাকে কয়েক দিনের জন্য বাইরে যেতে হবে। আমি নিশ্চিত হতে পারিনি যে, তিনি কিছু সন্দেহ করেছিলেন কিনা। আমরা সারা সপ্তাহে মাত্র কয়েকটি শব্দ আদান-প্রদান করেছি। তখন যে দিনগুলো আমি পেরিয়ে যেতে সুযোগ দিয়েছিলাম, সেগুলো প্রায় আমার অগোচরেই কেটে যায়। আমি বুঝতে পারিনি যে, আরেকটি শনিবার এসেছে, যতক্ষণ না ডাকপিয়ন সদর দরজায় শিস বাজায় এবং আমি অ্যামিকো-র সবুজ আবরণটি দেখতে পাই। আমি নির্লিপ্তভাবে ম্যাগাজিন খুলি: অশরীরী আবির্ভূত হোক বা না হোক, তাতে কী আসে যায়? নামটি প্রকৃতপক্ষে তার জায়গায় ফিরে এসেছে, তবে ধাঁধা বিভাগের সঙ্গে থাকা একটি মন্তব্য আমাকে অপ্রত্যাশিত নাড়া দেয়। ‘আমরা দুঃখিত,’ মন্তব্যে লেখা ছিল, ‘আমাদের পরিশ্রমী টাইপসেটারের একটি অসাবধানতাবশত ভুলের কারণে গত সংস্করণ থেকে ভেরি রেভারেন্ড আর্চবিশপ ডি. এফ. বুগানজার নাম বাদ পড়েছে। সুতরাং তার কাছে আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করছি, ইত্যাদি … ইত্যাদি …’
আমার হাত থেকে অ্যামিকো দেলে ফ্যামিগলি নিচে পড়ে যায়।
কিছুক্ষণ নীরবতার পর আমি আমার বাবার কাছে যাই, যিনি দ্বিতীয় কাফারো৪ পড়ায় মগ্ন ছিলেন। আমি ঘোষণা করলাম, ‘তিনি ফিরে এসেছেন।’
‘কে? বুগানজা?’
‘হ্যাঁ, তিনি কখনই যাননি। মুদ্রণ ত্রুটি ছিল। বিষয়টা অদ্ভুত লাগছিল ...’
‘আমারও,’ বাবা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন।
আধা ঘণ্টা পর আমি আমার স্যুটকেস খুলতে শুরু করি। এটা ছিল অর্থহীন! যে শৃঙ্খল ভাঙতে পারব ভেবে নিজেকে ধোঁকা দিতে চেয়েছি, তা আগের চেয়ে আরও বেশি তীব্র হয়। এখন বাবা আমাদের সঙ্গে নেই, অ্যামিনো নেই এবং একইভাবে আর্চবিশপ চলে গেছেন, শুধু আমার বাড়িটি দাঁড়িয়ে আছে, তবে একটি বড় বোমা পারে ... কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে আজ নয়, মনে হচ্ছে। আপনি কি তা শুনতে পেয়েছেন? সবকিছু পরিষ্কার। আমরা আবার পেছনে যেতে পারি।
*****
বাইরে থেকে সাইরেনের কর্কশ ও ফ্যাঁসফেঁসে কণ্ঠস্বর, একটু ক্ষয়ে যাওয়া এফ-ফ্ল্যাট, আমাদের কানে এসে পৌঁছে। আমি দেখলাম আগন্তুক উঠে দাঁড়ালেন, তিনি তার বন্ধুর হাত ধরলেন এবং খোলা বাতাসে তার অসমাপ্ত গল্প শেষ করার জন্য যাত্রা শুরু করেন। v
ইংরেজিতে অনূদিত গল্পে অনুবাদকদের টীকা:
১. লা গ্রান ভিয়া একটি জনপ্রিয় স্প্যানিশ অপেরার শিরোনাম, যার কম্পোজার ফেদেরিকো চুয়েকা (১৮৪৬-১৯০৮) এবং জোয়াকিন ভালভার্দে (১৮৪৬-১৯১০)। অপেরাটি উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ইতালীর নাট্যমঞ্চে প্রদর্শিত হতো। বোক্কাচ্চিও একটি অপেরার শিরোনাম, যা কম্পোজ করেছেন ফ্রাঞ্জ ভন স্যুপে (১৮১৯-৯৫)।
২. দ্বিতীয় লিওপোল্ড (১৮৩৫-১৯০৯) ছিলেন বেলজিয়াম এবং কঙ্গো ফ্রি স্টেটের রাজা। তিনি, নৃত্যশিল্পী ক্লিও ডি মেরোডকে (ক্লিওপেট্রা ডায়ান ডি মেরোড, ১৮৭৩-১৯৬৬) অপেরা ডি বোর্দোতে অনুষ্ঠান করতে দেখেছিলেন। লিওপোল্ড শিল্পীর অভিনয়ে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি তাকে ‘ক্লিওপোল্ডো’ ডাকনাম দিয়েছিলেন।
৩. সেইন্ট বেনেডিক্ট জোসেফ ল্যাব্রে (১৭৪৮-৮৩) ছিলেন একজন ফরাসি তীর্থযাত্রী। তিনি রোমে চলে যান। সেখানে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন, কিন্তু দারিদ্র্যের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁকে ১৮৮১ সালে মাহাত্ম্য ঘোষণা করা হয়।
৪. দ্বিতীয় ক্যাফারো জেনোয়ায় ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি রক্ষণশীল সংবাদপত্র। দ্বিতীয় সেকেন্ডো মেস্টিয়ার গ্রন্থে মন্তেল তাঁর বাবার কাগজটি কেনার কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, সম্পাদক একটি মনোকল (এক চোখে চশমা) পরতেন।
গল্পসূত্র: ‘একজন আগন্তুকের গল্প’ ইউজেনিও মন্তেলের ইংরেজিতে ‘অ্যা স্ট্রেঞ্জার’স স্টোরি’ গল্পের অনুবাদ, যা লেখকের ‘বাটারফ্লাই অব ডিনার্ড’ সংকলনে অন্তর্ভুক্ত। ইতালীয় ভাষা থেকে গ্রন্থটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন মারলা মোফা এবং ওনাগ স্ট্রানস্কি।
লেখক পরিচিতি: ইতালীয় আধুনিক কবিতার প্রধান স্থপতি এবং ১৯৭৫ সালে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ইউজেনিও মন্তেল শুধু কবি ছিলেন না, তিনি ছিলেন একাধারে একজন গদ্য লেখক, অনুবাদক এবং সম্পাদক। জেনোয়া শহরের এক ব্যবসায়ী পরিবারে তাঁর জন্ম ১৮৯৬ সালে। তাঁর প্রথম কাব্য সংকলন কাটলফিশ বোনস প্রকাশিত হয় ১৯২৫ সালে। তারপর তিনি একের পর এক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন, যেমন দ্য হাউস অব দ্য কাস্টমস অফিসার অ্যান্ড আদার পোয়েমস (১৯৩২), দ্য অকেশনস (১৯৩৯) এবং ল্যান্ডস অ্যান্ড (১৯৪৩) উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া তাঁর শেষের দিকের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে দ্য স্টর্ম অ্যান্ড আার পোয়েমস্ (১৯৫৬), স্যাতুরা (১৯৬২), হারমনি অ্যান্ড প্যাস্টেলস (১৯৬২), দ্য কালপ্রিট (১৯৬৬) এবং জেনিয়া (১৯৬৬)। তিনি ইতালীয় ভাষায় উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, টি. এস. এলিয়ট এবং জেরার্ড ম্যানলি হপকিন্সের কবিতার পাশাপাশি হারমান মেলভিল, ইউজিন ও’নিল এবং অন্য লেখকদের গদ্য রচনা অনুবাদ করেন। তাঁর সংবাদপত্রে প্রকাশিত ছোটগল্প এবং অসংখ্য স্কেচ (নকশা) গ্রন্থাকারে সংকলিত হয় লা ফারফালা ডি ডিনার্ড (১৯৫৬; দ্য বাটারফ্লাই অব ডিনার্ড) গ্রন্থে। তিনি ১৯৬১ সালে রোম বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাঁর কিছুদিন পরে মিলান, ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ এবং সুইজারল্যান্ডের বাসেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ‘সাহিত্য ও শৈল্পিক ক্ষেত্রে বিশিষ্ট কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ’ তাঁকে আজীবনের জন্য সিনেটর নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি ১৯৮১ সালে মিলানে মৃত্যুবরণ করেন।
- বিষয় :
- গল্প