ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

ধারাবাহিক

চীন দেশে কয়েকবার

চীন দেশে কয়েকবার

.

হাসনাত আবদুল হাই

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ | ২২:৩৯

পর্ব : ৬

আলী হোসেন বললেন, তোমার বাবা-মা নিশ্চয় বেঁচে আছেন। কোথায় থাকেন তারা? কী করেন? গণচীনে সবাই কোনো না কোনো কাজ করে বলে শুনেছি।
এন লিং বলে, আমার বাবা ক্যান্টনে এক ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। ম্যানেজার ছিলেন। কালচারাল রেভল্যুশনের সময় তাঁকে গ্রামে কমিউনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মা ছিলেন স্কুলশিক্ষক। তাঁকেও কমিউনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারা এখনও কমিউনে আছেন। আমি যাই তাদের দেখতে। ছুটি পেলে তারাও আসেন।
আলী হোসেন বলেন, শহর থেকে গ্রামে কমিউনে গিয়ে তাদের কষ্ট হয়নি?
এন লিং বলে, তারা খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। তারপর সে বলে, তারা তো একা নন। আরও অনেকে গিয়েছে শহর থেকে গ্রামে।
আলী হোসেন বলেন, কালচারাল রেভল্যুশন কি ভালো ছিল? কোনো লাভ হয়েছে তাতে?
শুনে এন লিং খুব সচেতন হয়ে যায়। সতর্ক হয়ে বলে, পার্টির নির্দেশ সবাই মেনে চলে। পার্টি সবার জন্য যা ভালো তাই করে।
আলী হোসেন মোহাম্মদুল্লার সঙ্গে তর্ক হবে মনে করে সাধারণত কথা বলে না। তিনি তার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন, লাভ আর কী হয়েছে? কিছু মানুষকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে বুর্জোয়া আরাম-আয়াশে জীবন কাটানোর জন্য। একটা জেনারেশনের পড়াশোনা বন্ধ করে দেশটার  মেধা-পুঁজির বৃদ্ধি ব্যাহত করা হয়েছে। এখন ভুল বুঝতে পেরে কালচারাল রেভল্যুশন বন্ধ করা হয়েছে। তার সঙ্গে জড়িত বলে কুখ্যাত গ্যাং অব ফোরের বিচার হতে যাচ্ছে। এসব কথা তো মেয়েটা বলতে পারে না। তাই বিব্রত বোধ করছে।
মোহাম্মদুল্লা বলেন, একটা জেনারেশনের পড়াশোনা বন্ধ করার কথাটা একদম ভিত্তিহীন। তাই যদি হবে, তা হলে এই মেয়েটি পড়াশোনা করল কী করে?
আমি বললাম, বেশ তো, ওকেই জিজ্ঞাসা করে দেখা যাক। তারপর এন লিংয়ের দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করি, তোমাকে কমিউনে যেতে হয়নি?
এন লিং বলে, হ্যাঁ। আমি এক কমিউনে ছয় মাস ছিলাম। তারপর ফিরে এসে ক্যান্টনের স্কুলে আবার পড়েছি।
আমি বলি, সব ছাত্রছাত্রীকে কি এভাবে স্বল্প সময়ের জন্য থাকতে হয়েছে কমিউনে?
এন লিং বলে, সবার কথা আমি বলতে পারব না। তবে শুনেছি কমিউনে গিয়ে ভালোভাবে কাজ না করলে বেশিদিন থাকতে হয়েছে।
নুরুল হক এন লিংকে বলেন, তোমার ভাইবোন নেই? তারা কী করে?
এন লিং বলে, আমিই মা-বাবার একমাত্র সন্তান।
মোহাম্মদুল্লা বলেন, জনসংখ্যার চাপ কমানোর জন্য গণচীন প্রতিটি দম্পতিকে জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে বলেছে।
আলী হোসেন ব্যঙ্গের স্বরে বলেন, এর ফলে শিশুহত্যা হয়েছে। পুত্র লাভের জন্য অনেক দম্পতি কন্যাসন্তানকে হত্যা করেছে অথবা রাস্তায় ফেলে গিয়েছে।
মোহাম্মদুল্লা উত্তেজিত হয়ে বলেন, ডাহা মিথ্যা কথা। পশ্চিমা মিডিয়ার ছড়ানো গুজব। তাই যদি সত্যি হবে তা হলে এই মেয়েটি একমাত্র সন্তান হয়েও বেঁচে আছে কী করে? বাজে কথা বলবেন না। রিভিশনিস্ট রাশিয়ার গুণগান করছেন। চীনের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডা করবেন না। আপনারা মার্ক্সিজমের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে পশ্চিমের কাছে পিসফুল কো-এক্সিসটেন্সের নামে ধরনা দিয়ে পড়ে আছেন। থাকুন। গণচীনের ব্যাপারে নাক গলাবেন না।     [ক্রমশ]

আরও পড়ুন

×