দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অপ্রকাশিত ঘটনা নিয়ে গল্প– দ্য আর্ট স্পাই

সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫ | ০৮:৩৭
মিশেল ইয়ং-এর সারা জাগানো বই ‘দ্য আর্ট স্পাই: দ্য এক্সট্রাঅর্ডিনারি আনটোল্ড টেল অফ ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু রেজিস্ট্যান্স হিরো রোজ ভ্যাল্যান্ড’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চুরি যাওয়া ৬০ হাজারের অধিক শিল্পকর্ম উদ্ধারের জন্য লিজিয়ন ডি’অনার পাওয়া রোজ ভ্যাল্যান্ডের অপ্রকাশিত গল্প ঘিরে সাজানো বইয়ে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন দিক এবং গুপ্তচরবৃত্তির পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। গল্পটি মূলত ফ্রান্সের জিউ দে পাউমে জাদুঘরে ঘটে। জাদুঘরে ভ্যাল্যান্ড একজন অবৈতনিক সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে তিনি সংগ্রহশালার প্রধান এবং বেতনভুক্ত কিউরেটরের পদে উন্নীত হন। গুরুত্বপূর্ণ এই সংগ্রহশালা ও শিল্পকর্ম ঘিরে আবর্তিত হয় মূল রচনা।
পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক মিশেল ইয়ংয়ের লেখার ধরন উদ্যমী এবং ঔপন্যাসিক। বইটি ছোট ছোট অধ্যায়ে বিভক্ত; যেখানে নাটকীয় ক্লিফহ্যাঙ্গার এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলিকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও সমালোচকদের মতে, বইটি মাঝে মাঝে হ্যাজিওগ্রাফির দিকে ঝুঁকে পড়ে। যেখানে শুধু ভ্যাল্যান্ডের সুন্দর বস্তুর প্রতি আকর্ষণের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। কিন্তু তাঁকে একজন মানুষ হিসেবে সম্পূর্ণরূপে বিকশিত করা হয়নি।
১৯৮০ সালে বেলজিয়ামে থাকাকালীন ইতিহাসবিদ লিন এইচ. নিকোলাস দ্য ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনে আর্ট কিউরেটর রোজ ভ্যাল্যান্ডের একটি শোকবার্তা পড়েন এবং অপ্রকাশিত নানা বিষয় সম্পর্কে জানেন। কোলাস সংগৃহীত অসংখ্য শিল্পকর্ম দেখে হতবাক হন। বাকি শিল্পকর্মগুলো কোথায়?–এই ভাবনা থেকে গল্পগুলো একত্র করার প্রয়াস চলে প্রায় এক দশক ধরে। ফলে ১৯৯৪ সালে তাঁর ঐতিহাসিক বই ‘দ্য রেপ অফ ইউরোপা’ প্রকাশিত হয়। যার ফলে এমন চুরি সম্পর্কে জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং একটি আন্তর্জাতিক পুনরুদ্ধার আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।
নাৎসি বাহিনী ফরাসি ইহুদি ব্যবসায়ী এবং রাষ্ট্র থেকে বঞ্চিত নাগরিকদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত শিল্পকর্ম ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ফ্রান্স জার্মানির হাতে পতন হলে জাদুঘরটি দখল করে। ফরাসি জাতীয় সংগ্রহশালার প্রধান জ্যাক জাউজার্ড রোজ ভ্যাল্যান্ডকে যে উপায়ে ভবনটিতে থাকতে বলেন এবং জার্মানদের হাতে চলে যাওয়া সমস্ত শিল্পকর্মের তালিকা সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। তিনি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজটি করেন। যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত যেন জার্মানরা তাঁকে সন্দেহ করতে না পারেন তিনি সেই পটভূমি তৈরি করেন।
অনেক বিবরণে ভ্যাল্যান্ডকে একজন লোভী ও প্রতিরোধ কর্মী হিসেবে চিত্রিত করা হলেও মিশেল ইয়ং আরও সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গিতে জাদুঘরের বাইরে ভ্যাল্যান্ডের ব্যক্তিগত জীবন প্রকাশ করেছেন। যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে সচিব জয়েস হিরের সঙ্গে ভ্যাল্যান্ডের দীর্ঘ সম্পর্কের বিষয়ে লিখেছেন। জয়েস বহুভাষী হিসেবে ভ্যাল্যান্ডকে জার্মান নথিগুলো বোঝাতে সাহায্য করতেন; যাকে বহির্মুখী এবং মনোমুগ্ধকর প্রতিপক্ষ বলে উল্লেখ করা হয়। ইয়ং দক্ষতার সঙ্গে ভ্যাল্যান্ডের বিবরণের আবেগপূর্ণ উপাদানগুলো তুলে ধরেছেন মনে হলেও অনেকের মতে এটি ভ্যাল্যান্ড সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন ধারণার জন্য পর্যাপ্ত নতুন উপাদান ও ব্যক্তিগত অন্তর্দৃষ্টি প্রদান এবং তাঁর ব্যক্তিগত জগতে টানতে সক্ষম নয়।
- বিষয় :
- বই