- কালের যাত্রা ২০২২
- শিল্প ও শিল্পী তার নতুন পথ খুঁজে নেবে
শিল্প ও শিল্পী তার নতুন পথ খুঁজে নেবে

বছরের নির্ধারিত ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমির তিনটি মঞ্চে তো নাটকের অভিনয় হয়ই। এ ছাড়া মহিলা সমিতি, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিদিন না হলেও প্রায়ই নাটকের প্রদর্শনী হয়। সারাদেশে পাঁচ শতাধিক নাট্য সংগঠন নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত। এর একটা বড় অংশ নিয়মিত না হলেও বিভিন্ন উৎসব-উদযাপন উপলক্ষে নাটক মঞ্চায়ন করে থাকে। সব সময় যে মঞ্চে ভালো নতুন নাটক আসে, তা নয়। কারণ নাটকের পাণ্ডুলিপি, ভালো নির্দেশক, ভালো অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলীর যেমন অভাব রয়েছে, তেমনি মহড়া কক্ষ ও অনুদান-পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। রয়েছে মিলনায়তন সংকটও। এত সমস্যা নিয়েও দেশের নাট্যপ্রেমীরা নিরলস কাজ করে চলেছেন। মঞ্চে নতুন নতুন নাটক আনছেন।
২০২০ সাল আমাদের থিয়েটারের জন্য ছিল এক অন্ধকারতম সময়। সব আটকে ছিল, নতুন কোনো কাজের বার্তা ছিল না, বেঁচে থাকাটাই তখন মহালড়াই। তবু মানুষ তার প্রচেষ্টা, ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা কোনোটাকেই ফেলতে পারেনি। তাই ইন্টারনেট দুনিয়ার মাধ্যমেও নতুন তরিকায় মঞ্চনাটক বা অন্য পরিবেশনাগুলো মানুষের কাছাকাছি নেওয়ার চেষ্টা করেছে, চালিয়ে গেছে তার শিল্পসাধনা। থিয়েটার বা পরিবেশনার ধরনেও ঘটেছে ভিন্নতা। সেই সময় নাট্যকর্মীদের মনে একটাই কথা চলছিল- এমন দুর্দিন কবে কাটবে? কাটবে তো? সংশয় সন্দেহ নিয়ে সামনের দিনগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলেন সবাই। অতঃপর সব প্রতিবন্ধকতা দূর হলো। সব হতাশা পেছনে ফেলে জ্বলল মঞ্চের আলো। সেই চিরচেনা জৌলুসে ফিরতে চলল মঞ্চনাটক। সেই সঙ্গে জ্বলল মঞ্চকর্মীদের আশার আলোও। করোনার ভয়াল থাবা থেকে থিয়েটার ও মানুষ আবার বেঁচে ফিরতে শুরু করেছে- এটাই এ বছরের থিয়েটার নিয়ে সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক বার্তা।
২০২১ সাল, একে তো স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, তাই নাটকের দলগুলোর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আবার যেন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে প্রাণ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে ঘিরে সরকারি-বেসরকারিভাবে চলেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক চর্চা, বিভিন্ন নামকরা দল ঢাকার মঞ্চে বেশ কিছু নতুন নাটক মঞ্চে নিয়ে এসেছেন, হলগুলো আবার উন্মুক্ত হয়েছে, বিভিন্ন জেলায়ও নতুন নাট্যপ্রযোজনা নির্মিত হচ্ছে, বিভিন্ন সম্ভাবনার পথ তৈরি হচ্ছে, কেউ থিয়েটার করছেন বিরাট পরিসরকে যুক্ত করে [যেমন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার], তেমনি ছোট পরিসরকে নিয়ে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নির্মিত হচ্ছে, মানুষের দ্বারে পৌঁছে যাচ্ছে থিয়েটার [সৈয়দ জামিল আহমেদ স্যারের 'বিস্ময়কর সবকিছু']। সব মিলিয়ে করোনার এই ভয়াল সময়ের পর এটাকে ইতিবাচক বিষয় বলেই মনে হয়। তবে জেলা শহরগুলোতে নারীদের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ অনেক কম পাওয়া যাচ্ছে, যা একটি চিন্তনীয় বিষয় বলে আমি মনে করি। নাটক, সংগীত, নৃত্য সব ক্ষেত্রেই মেয়েদের অংশগ্রহণ কম, সাংস্কৃতিক চর্চায় এটা এখন একপ্রকার হুমকিস্বরূপ। তাদের কীভাবে আবার সাংস্কৃতিক চর্চার সঙ্গে যুক্ত করা যায়, বিষয়টি নতুন বছরে খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে আমাদের অগ্রজ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের।
নিজের দলের কার্যক্রম হিসেবে ২০২১ সালে মণিপুরি থিয়েটারের রজতজয়ন্তী ছিল। অনেক পরিকল্পনা ছিল এ বছরকে নিয়ে কিন্তু করোনার কারণে অনেক কিছুই করা সম্ভব হয়নি, অনলাইনে কিছু অনুষ্ঠান করা হয়েছে। আগামী ২০২২ সালে নাট্য প্রযোজনা দুটি নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে, একটি নাট্যোৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছি। এ ছাড়া ২০২১ সালের শুরুর দিকে মণিপুরি থিয়েটারের তত্ত্বাবধানে একটি থিয়েটার স্কুল খোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেখানে বাচ্চাদের নাচ, গান, অভিনয়, আবৃত্তি ইত্যাদি শেখানো হবে। নতুন বছরের জন্য আপাতত এই পরিকল্পনা। ব্যক্তিগত কাজের তালিকায় মঞ্চের কাজের বাইরে সিনেমার কিছু কাজ করার পরিকল্পনাও চলছে। থিয়েটার কিংবা অন্যান্য শিল্পমাধ্যমের রকম-ধরন-বৈশিষ্ট্য সব সময়ই পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন রূপ ধারণ করে, করোনার পরও কিছু পরিবর্তন এসেছে, আসছে বছর জানি না কেমন হবে; তবে ঠিকই শিল্প ও শিল্পী তার নতুন পথ খুঁজে নেবে। প্রত্যাশা রইল নতুন বছর যেন এক শিল্পমুখর বছর হয়ে আমাদের জীবনে আসে।
লেখক
নাট্যনির্দেশক
২০২০ সাল আমাদের থিয়েটারের জন্য ছিল এক অন্ধকারতম সময়। সব আটকে ছিল, নতুন কোনো কাজের বার্তা ছিল না, বেঁচে থাকাটাই তখন মহালড়াই। তবু মানুষ তার প্রচেষ্টা, ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা কোনোটাকেই ফেলতে পারেনি। তাই ইন্টারনেট দুনিয়ার মাধ্যমেও নতুন তরিকায় মঞ্চনাটক বা অন্য পরিবেশনাগুলো মানুষের কাছাকাছি নেওয়ার চেষ্টা করেছে, চালিয়ে গেছে তার শিল্পসাধনা। থিয়েটার বা পরিবেশনার ধরনেও ঘটেছে ভিন্নতা। সেই সময় নাট্যকর্মীদের মনে একটাই কথা চলছিল- এমন দুর্দিন কবে কাটবে? কাটবে তো? সংশয় সন্দেহ নিয়ে সামনের দিনগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলেন সবাই। অতঃপর সব প্রতিবন্ধকতা দূর হলো। সব হতাশা পেছনে ফেলে জ্বলল মঞ্চের আলো। সেই চিরচেনা জৌলুসে ফিরতে চলল মঞ্চনাটক। সেই সঙ্গে জ্বলল মঞ্চকর্মীদের আশার আলোও। করোনার ভয়াল থাবা থেকে থিয়েটার ও মানুষ আবার বেঁচে ফিরতে শুরু করেছে- এটাই এ বছরের থিয়েটার নিয়ে সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক বার্তা।
২০২১ সাল, একে তো স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, তাই নাটকের দলগুলোর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আবার যেন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে প্রাণ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে ঘিরে সরকারি-বেসরকারিভাবে চলেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক চর্চা, বিভিন্ন নামকরা দল ঢাকার মঞ্চে বেশ কিছু নতুন নাটক মঞ্চে নিয়ে এসেছেন, হলগুলো আবার উন্মুক্ত হয়েছে, বিভিন্ন জেলায়ও নতুন নাট্যপ্রযোজনা নির্মিত হচ্ছে, বিভিন্ন সম্ভাবনার পথ তৈরি হচ্ছে, কেউ থিয়েটার করছেন বিরাট পরিসরকে যুক্ত করে [যেমন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার], তেমনি ছোট পরিসরকে নিয়ে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নির্মিত হচ্ছে, মানুষের দ্বারে পৌঁছে যাচ্ছে থিয়েটার [সৈয়দ জামিল আহমেদ স্যারের 'বিস্ময়কর সবকিছু']। সব মিলিয়ে করোনার এই ভয়াল সময়ের পর এটাকে ইতিবাচক বিষয় বলেই মনে হয়। তবে জেলা শহরগুলোতে নারীদের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ অনেক কম পাওয়া যাচ্ছে, যা একটি চিন্তনীয় বিষয় বলে আমি মনে করি। নাটক, সংগীত, নৃত্য সব ক্ষেত্রেই মেয়েদের অংশগ্রহণ কম, সাংস্কৃতিক চর্চায় এটা এখন একপ্রকার হুমকিস্বরূপ। তাদের কীভাবে আবার সাংস্কৃতিক চর্চার সঙ্গে যুক্ত করা যায়, বিষয়টি নতুন বছরে খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে আমাদের অগ্রজ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের।
নিজের দলের কার্যক্রম হিসেবে ২০২১ সালে মণিপুরি থিয়েটারের রজতজয়ন্তী ছিল। অনেক পরিকল্পনা ছিল এ বছরকে নিয়ে কিন্তু করোনার কারণে অনেক কিছুই করা সম্ভব হয়নি, অনলাইনে কিছু অনুষ্ঠান করা হয়েছে। আগামী ২০২২ সালে নাট্য প্রযোজনা দুটি নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে, একটি নাট্যোৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছি। এ ছাড়া ২০২১ সালের শুরুর দিকে মণিপুরি থিয়েটারের তত্ত্বাবধানে একটি থিয়েটার স্কুল খোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেখানে বাচ্চাদের নাচ, গান, অভিনয়, আবৃত্তি ইত্যাদি শেখানো হবে। নতুন বছরের জন্য আপাতত এই পরিকল্পনা। ব্যক্তিগত কাজের তালিকায় মঞ্চের কাজের বাইরে সিনেমার কিছু কাজ করার পরিকল্পনাও চলছে। থিয়েটার কিংবা অন্যান্য শিল্পমাধ্যমের রকম-ধরন-বৈশিষ্ট্য সব সময়ই পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন রূপ ধারণ করে, করোনার পরও কিছু পরিবর্তন এসেছে, আসছে বছর জানি না কেমন হবে; তবে ঠিকই শিল্প ও শিল্পী তার নতুন পথ খুঁজে নেবে। প্রত্যাশা রইল নতুন বছর যেন এক শিল্পমুখর বছর হয়ে আমাদের জীবনে আসে।
লেখক
নাট্যনির্দেশক
মন্তব্য করুন