ঢাকা শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর শিক্ষার্থীর বোঝা

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর শিক্ষার্থীর বোঝা

আবু বকর ছিদ্দিক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪ | ০০:৪৫

গত ২৭ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হবে বলে রায় দিয়েছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কর আরোপের বিষয়টি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হতাশ করেছে। কারণ, এ কর বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানায় থাকা ব্যক্তিবর্গ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই আদায় করবে।
আমরা জানি, আয়কর আইনে ট্যাক্স অব্যাহতির বিষয় আছে। আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ২-এর উপধারা ৪৩-এ ‘দাতব্য উদ্দেশ্য’র দফা ক-তে বলা হয়েছে, ‘দারিদ্র্যের জন্য ত্রাণ, শিক্ষা ত্রাণ, চিকিৎসা ত্রাণ এবং খ-উপধারায় সাধারণ জন-উপযোগের উদ্দেশ্যও উন্নতি বা প্রসারকে দাতব্য উদ্দেশ্য হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।’
এই ধারা ক-দফার মূল প্রতিপাদ্যে শিক্ষাদানকে ত্রাণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার আয়কর আইন ২০২৩-এর ষষ্ঠ তপশিলে বলা হয়েছে, এই সকল আয় মোট আয় পরিগণনা হইতে বাদ যাইবে; যা ষষ্ঠ তপশিলের ১২ দফায় ধর্মীয় বা দাতব্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত স্বেচ্ছায় প্রদত্ত চাঁদা যা কেবল ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ ও আয়কর আইন ২০২৩-এর এই অধ্যায়গুলো একসঙ্গে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের খাতগুলো করারোপযোগ্য আয় নয়, আবার শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছাব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের দান বা সরকারি অনুদান করারোপযোগ্য আয় নয়। সুতরাং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়কে করযোগ্য আয় হিসেবে গণ্য করা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 
সবচাইতে বড় বিষয় হলো, শিক্ষা খাতটিকে ধরেই নেওয়া হয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। 
একজন নাগরিক কিংবা একটি প্রতিষ্ঠান কেন ট্যাক্স দেয়? কারণ নির্দিষ্ট ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্র থেকে এই ট্যাক্স দেওয়ার জন্য বিশেষ ধরনের সুবিধার আওতায় আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা হবে, কর আরোপের ফলে সেটি কি এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করা গেছে? আর ট্রাস্টের মাধ্যমে চলা প্রতিষ্ঠান থেকে ট্যাক্স না নিয়ে বরং সরকারের নীতিনির্ধারকরা লাভজনক বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ভাবতে পারেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও বেশ কয়েকটি লাভজনক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। লাভজনক হলে করের আওতায় তারা সবাই পড়ে যাবে।      
এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যৌথভাবে বসে আলোচনা করতে পারে। তাদের মনে রাখা জরুরি– বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা এ করের টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই তুলে নেবে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। 

nঅ্যাডভোকেট আবু বকর ছিদ্দিক: গবেষক ও আইন কর্মকর্তা, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ
abubakar.cullb19@gmail.com

আরও পড়ুন

×