দেশের ৩৪ লাখ পথশিশুর দায়িত্ব কে নেবে?
ফাইল ছবি
সেঁজুতি মুমু
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩:৪২
আমাদের দেশের রাজধানী ঢাকায় অনেক পথশিশু দেখা যায়। শুধু ঢাকা কেন; মফস্বল শহরেও পথশিশুদের চোখে পড়ে। যেমন কুড়িগ্রামের ধরলা নদীপারের কথাই ধরা যাক। এখানে পথশিশুরা ঘুরতে যাওয়া মানুষের কাছে ভিক্ষা চায়। কেউ না দিতে চাইলে তাদের পা জড়িয়ে ধরে অশোভন আচরণ করে। তখন তাদের ওপর বিরক্ত হয়ে কেউ কেউ প্রহার করে। এ রকম একটি প্রতিবন্ধী শিশুকে কে বা কারা যেন খুব ভয়াবহভাবে মেরেছে। স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার করে চিকিৎসা করিয়েছেন। নয়তো তার এক চোখ নষ্ট হয়ে যেত। আমি সেদিন ধরলায় গিয়ে দেখি শিশুটা বেলুন বিক্রি করছে। চোখে এখনও কালো দাগ। তাকে জিজ্ঞেস করায় সে বলল, বেলুন বিক্রির টাকা দিয়ে ওষুধ কিনে খাবে। রাস্তাঘাটে মাঝে মাঝে এ ধরনের ঘটনা ঘটে, যা আমাদের ব্যথিত করে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই পথশিশুদের ভবিষ্যৎ কী? এদের জীবনের নিরাপত্তা কি আদৌ আছে?
‘দ্য কোয়ালিটি স্টাডি অন চিলড্রেন লিভিং ইন স্ট্রিট সিচুয়েশনস ইন বাংলাদেশ ২০২৪’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ৩৪ লাখ পথশিশু রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘সার্ভে অন স্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পথশিশুর প্রতি ১০ জনের আটজনই পথচারীদের দ্বারা নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হয়। এই যে ৩৪ লাখ পথশিশু, তাদের খাবারের কোনো নিশ্চয়তা আছে? তাদের শিক্ষার বন্দোবস্ত করা হয়েছে? বাস্তবতা হলো, তাদের দু’বেলা দু’মুঠো অন্নের নিশ্চয়তা যেখানে নেই, সেখানে শিক্ষা তো বিলাসিতা। কোথাও কোথাও তাদের জীবনেরও নিরাপত্তা নেই!
ইউনিসেফের সার্ভে অন স্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই শিশুদের প্রতি তিনজনের মধ্যে প্রায় একজন (৩০ শতাংশের বেশি) জীবনের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যেমন ঘুমানোর জন্য বিছানা এবং নিরাপত্তা ও স্বস্তির জন্য দরজা বন্ধ করে রাখা যায়, এমন একটি ঘর তাদের নেই। তারা খোলা জায়গায় রাত কাটায়। শিশুদের কাউকে কাউকে মাটিতে শুধু একটি পাটের ব্যাগ, শক্ত কাগজ, প্লাস্টিকের টুকরো কিংবা একটি পাতলা কম্বল নিয়ে ঘুমাতে হয়। প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৭ শতাংশ শিশু সম্পূর্ণ একা ঘুমায় এবং ১৭ শতাংশ কয়েকজন মিলে ঘুমানোর মাধ্যমে সুরক্ষা ও স্বস্তি খোঁজে। শিশুদের ক্ষেত্রে সহিংসতার প্রতি তিনটি ঘটনার একটি (৩০ দশমিক ৪ শতাংশ) রাতে তাদের ঘুমের সময় ঘটে। এসব ঘটনার মধ্যে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, এমনকি যৌন নিপীড়ন অন্তর্ভুক্ত।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা যথেষ্ট নয়। ৩৪ লাখ শিশুর মধ্যে কতজনকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও এনজিওগুলো নিরাপত্তা দিতে পারে? ধরলাম ৫ লাখ! বাকিদের কী হবে? পথশিশুদের নিরাপত্তার
সংকট এখন গুরুতর প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ এই শিশুদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। তাদের জনশক্তি থেকে অপশক্তিতে রূপান্তরিত হওয়া থেকে বাঁচান।
সেঁজুতি মুমু: শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
- বিষয় :
- শিশু