হারিয়ে যাচ্ছে গুইসাপ
মোহাম্মদ মহসীন
প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০৬:৫৭
আমাদের বসতঘরের পাশে ঝোপঝাড় ছিল। এতে প্রাণপ্রকৃতি বৈচিত্র্য ছিল, সরীসৃপ প্রাণী গুইসাপের বিচরণও কম ছিল না। খিদে পেলেই ঘরের পিড়াঘেঁষে ওত পেতে ছোট-বড় মুরগি ও হাঁসের ছানা নিয়ে খেতে দেখতাম।
নব্বই দশক পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ঘুরতে বের হলে অনেকেরই গুইসাপের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তখন ওই প্রাণীর নিজস্ব ভঙ্গিমায় অনেক ভয়ও পেতাম। তবে নব্বই দশকের শেষে লোকবসতি বেড়ে যায়। ঝোপঝাড়, জঙ্গল কমেছে। তবে এখনও বেশ কিছু বড় গুই, সোনা গুই পরিত্যক্ত ডোবা-নালা, পুকুর ও খালের ঝোপে দেখা মেলে। এদের কাছে গেলে এক পলকেই দৌড়ে লুকিয়ে যায়।
গুইসাপের বৈজ্ঞানিক নাম ‘ভারানাস স্যালভেটর’। এই বড় প্রাণীটি দেখতে অনেকটা গিরগিটির মতো। ১০-১১ ফুট লম্বাও হতে পারে এই ‘গিরগিটি’। তবে গড় দৈর্ঘ্য ৫ ফুটের মতো। ওজন ৩০ কেজির মতো হতে পারে। বড় গুই দেখতে গাঢ় বাদামি বা কালচে, তাতে হলুদ রঙের রিং দৃশ্যমান। এটি খুব শক্তিশালী প্রাণী। পা ও নখ লম্বাটে, লেজ চ্যাপ্টা। কিন্তু এর চামড়া সাদা নয়। তড়িৎ গতিতে গাছে উঠতে পারে। খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয়ে সাঁতার কেটে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে। এদের প্রধান খাদ্য ইঁদুর, হাঁস-মুরগির ছানা-ডিম, কাঁকড়া, শামুক, মাছ, পাখি, সাপ, ব্যাঙ, ছোট কুমির, কুমিরের ডিম ও কচ্ছপের ডিম, পচা-গলা প্রাণীর দেহ খেতেও তারা দ্বিধা করে না।
বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ইন্দোচীন, আমেরিকায় গুইসাপের আবাসস্থল। তবে পৃথিবীর অনেক দেশে বিচিত্র এই প্রাণীটির ঠাঁই মিলছে না, নিধন চলছে। কোনো কোনো স্থানে বিপন্ন হলেও বড় গুই, কালো গুইসাপ এখনও আমাদের এলাকায় দেখা যায়। বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে প্রাণীটি সংরক্ষিত হলেও অনিরাপদ আশ্রয়স্থল ও মূল্যবান চামড়ার লোভে দিনের পর দিন নিধনে পরিবেশবান্ধব ও লাজুক প্রাণীটি বিপন্নের দ্বারপ্রান্তে।
বাংলাদেশে তিন প্রজাতির গুইসাপ দেখা মেলে– বড় গুই, কালো গুই, সোনা গুই। এরা পাহাড়ি উপকূলীয় অঞ্চলের মিঠাপানি ও নোনাপানি, নদীর বহতায়, সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে থাকতে পছন্দ করে। তবে খাদ্য ও বাসস্থানের অভাবে প্রাণীগুলো নোনাপানি স্বচ্ছ মিঠাপানিতে, নদীঘেঁষা খালে, গ্রামের ডোবায় আশ্রয় নিয়েছে। এক সময় দেশে গুইসাপ ব্যাপক হারে দেখা যেত। এখন খাল-বিল কমেছে, নদী সংকুচিত হয়েছে। গুইসাপের প্রাপ্তিও কমেছে। v