ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সোনারগাঁয়ের বউমেলা

সোনারগাঁয়ের বউমেলা

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের জয়রামপুর গ্রামে বউমেলার চিরায়ত দৃশ্য

হাসান মাহমুদ রিপন

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ২৩:২৮

প্রায় দুইশ বছরের আদি বটবৃক্ষের নিচে সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন ফলের ঝুড়ি নিয়ে পূজা-অর্চনার জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন নববধূ থেকে শুরু করে নানা বয়সী নারী। তাদের সঙ্গে রঙিন সাজে দাঁড়িয়ে থাকে সনাতনী কুমারী মেয়েরা। সবার দৃষ্টি বটবৃক্ষের দিকে। সকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে বাড়তে থাকে আবালবৃদ্ধবনিতার কোলাহল। এটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের ভট্টপুর সরকারি মডেল স্কুলসংলগ্ন আদি বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে বউমেলার চিরায়ত দৃশ্য। এ মেলাকে সনাতন ধর্মাবলম্বী অনেকে ‘সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মেলা’ ও বটবৃক্ষকে ‘সিদ্ধেশ্বরী দেবী’ বলে আখ্যায়িত করেন।

স্থানীয়রা জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই বটবৃক্ষ হয়ে উঠেছে পুণ্যের দেবতা। বিশেষ করে হিন্দু নারীরা সারাবছর অপেক্ষায় থাকেন সিদ্ধেশ্বরী কালীতলার এই বউমেলার জন্য। বৈশাখী ফলের ভোগ নিয়ে দলে দলে তারা হাজির হন বউমেলায়। পাশাপাশি দেবতার সন্তুষ্টির জন্য কবুতর ওড়ানো ও পাঁঠা বলি দেওয়া হয় বৃক্ষদেবতার পদতলে। স্বামী-সংসারের বাঁধন যেন অটুট থাকে, সারাবছর সুখ-শান্তিতে যেন কাটে দাম্পত্যজীবন– এই কামনাতেই পূজার আয়োজন করা হয়।

প্রতিবছর পঞ্জিকা অনুযায়ী ১ থেকে ৩ বৈশাখ পর্যন্ত এ মেলা বসে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন এলেও এই মেলা ঐতিহ্য হারায়নি। তবে বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে বউমেলা কবে শুরু হয়েছিল, তার সঠিক তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় না। ৭৫ বছরের বৃদ্ধ হারাধন চন্দ্র জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি বউমেলায় পূজা-অর্চনা দেখে আসছেন। 
মেলায় কারু ও মৃৎশিল্পীদের তৈরি নানা রং ও বর্ণের টেপা পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ময়না, টিয়া, বাঘ-ভালুক, হাঁড়িপাতিল থেকে শুরু করে মণ্ডা-মিঠাইয়ের দোকান বসে। এখানে অনেক ভক্তকে দেবীর নামে পাঁঠা ও কবুতর উৎসর্গ করতে দেখা যায়।

মেলাটি সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীকেন্দ্রিক হলেও এখানে আসেন সব ধর্মের নারী ও পুরুষ। তবে পুরুষের সংখ্যা অনেক কম। আসেন বিদেশি পর্যটকরাও। রমণীরা তরমুজ, কাঁঠাল, কলা, আম, শসা, বাঙ্গিসহ মৌসুমি ফল নিয়ে লাইন ধরে বটবৃক্ষতলে ভোগ দিয়ে পূজা-অর্চনা করেন। মৌসুমি ফলের স্তূপ পড়ে যায় বটতলায়। ফল দিয়ে পূজা-অর্চনা শেষে ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
নববধূরা জানান, সংসারের সুখ-শান্তি ও স্বামী-সন্তানের মঙ্গল কামনায় তারা এখানে পূজা করতে এসেছেন। বড়দের কাছ থেকে শুনেছেন এই মেলায় এসে পূজা-অর্চনায় স্বামী, সন্তান ও সংসারের কল্যাণ হয়।

পুরোহিত চন্দন ভট্টাচার্য জানান, সিদ্ধেশ্বরী বটতলায় এই বউমেলা প্রতিবছরই হয়। মেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীরা ভিড় করেন। আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে। এই পূজা-অর্চনা মূলত এক দিনের। তবে মেলা জমে তিন দিন। 
বউমেলা আয়োজক কমিটির কর্মকর্তা নীলোৎপল রায় বলেন, ‘বর্ষবরণ উৎসবে আমরা প্রতিবছরই সিদ্ধেশ্বরীতে কালীপূজার আয়োজন করি। সোনারগাঁয়ের বউমেলা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর 
মধ্যে একটি।’ 

আরও পড়ুন

×