ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

টেরাকোটা এয়ারকুলার

টেরাকোটা এয়ারকুলার

পোড়ামাটির এয়ারকুলার প্রায় ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমাতে সক্ষম

প্রমিত দেবনাথ

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৪ | ০০:৪৫ | আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ | ১৭:২৮

ভারতে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপে মানুষ যখন নাজেহাল, তখন পোড়ামাটির পাত্রে পানি ঠান্ডা করার প্রাচীন পদ্ধতিকে নতুনভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। দুটি ভিন্ন ধরনের কাদামাটি দিয়ে তৈরি পোড়ামাটির পাত্র, ‘মটকা’ ঘরোয়া এয়ারকুলার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভারতীয় ফুড ব্লগার নন্দিতা আইয়ার বলেন, ‘আমার দাঁত অনেক বেশি সংবেদনশীল হওয়ায় ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করতে আমার কষ্ট হয়। তবে মটকা পানিকে ঠান্ডা রাখে, আবার তা পান করতেও বেশ আরামদায়ক।’ শত শত বছর ধরে গ্রামে পানি ঠান্ডা করতে মাটির পাত্রের ব্যবহার হয়ে আসছে। তিন হাজার বছর আগে হরপ্পা সভ্যতায় এ নিদর্শন দেখা যায়। পানি যখন পোড়ামাটির পাত্রে রাখা হয়, তখন তা পাত্রটির প্রতিটি ছিদ্রে স্পর্শ করে। বাষ্পীভবনে তাপ হারিয়ে একটা সময় পাত্রটি শীতল হয়ে যায়। তখন ভেতরের অবশিষ্ট পানিও ঠান্ডা হয়ে যায়।

প্রাচীন চীনা ও গ্রিক মৃৎশিল্প থেকে শুরু করে মিসরীয় শিল্পকলায় পর্যন্ত টেরাকোটার ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ২০১৪ সালে কুলএন্টের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান স্থপতি মনীশ সিরিপুরাপু টেরাকোটার ব্যবহারকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করেন। মনীশের একজন ক্লায়েন্ট একবার একটি সমস্যায় পড়েন। তাঁর কারখানায় একটি ডিজেল জেনারেটর দুই বিল্ডিংয়ের মাঝখানে গরম বাতাস ছড়াচ্ছিল। মনীশ সে সময় টেরাকোটা স্থাপনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করেন। তিনি বলেন, ‘মটকার পাত্রের পানি স্বাভাবিকভাবেই ঠান্ডা হয়। কারণ পানি বাষ্পীভূত হলে পাত্রের তাপ শুষে নেয়। আমি যদি সেই প্রক্রিয়াটিকে উল্টোভাবে ব্যবহার করি, তখন আমরা সেই পোড়ামাটির চারপাশের বাতাসকে একইভাবে ঠান্ডা করতে পারি।’ মনীশের ডিজাইনে পুনর্ব্যবহৃত পানি পোড়ামাটির ওপর পাম্প করা হয়। পোড়ামাটির ছিদ্রের ভেতর থেকে পানি বাষ্পীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি চারপাশের বাতাসকে ঠান্ডা করে। সে সময় কুলএন্টের পক্ষ থেকে বিহাইব (মৌচাক আকৃতির) নামে একটি স্টেইনলেস স্টিলের কাঠামোর চারপাশে প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০টি পোড়ামাটির কোণ হাতে তৈরি করা হয়। তাদের প্রথম বিহাইব স্থাপনের পর থেকে কোম্পানিটি পুনে থেকে শুরু করে জয়পুরসহ গোটা ভারতে স্কুল, পাবলিক স্পেস, বিমানবন্দর এবং বাণিজ্যিক ভবনে ৩৫টি কুলিং টাওয়ার তৈরি করেছে।

ভারতের আর্কিটেকচার ফার্মগুলো জানায়, তাদের পোড়ামাটির এয়ারকুলার অনেক ক্ষেত্রে প্রায় ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা কমাতে সক্ষম হয়েছে, যা একটি সম্পূর্ণ ভবনকে প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা করতে পারে। কুলএন্ট নিজেদের বিহাইবের মতো ডিজাইন ব্যবহার করে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমিয়েছে। মনীশ বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও এটি অনেক ভালো ফলাফল এনেছে।’

বেঙ্গালুরুভিত্তিক আর্কিটেকচার ফার্ম থ্রেশহোল্ডের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্থপতি অবিনাশ অঙ্কালগে বলেন, ‘আমরা আমাদের সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি প্রজেক্টের জন্য পোড়ামাটির দিকে ঝুঁকছি। এটিকে বেশ কয়েকটি উপায়ে ব্যবহার করা হচ্ছে।’ একটি খামারবাড়িতে থ্রেশহোল্ড প্রথাগত ইটের বিকল্প হিসেবে পোড়ামাটির ইট নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। অবিনাশের মতে, এগুলো পরিবেশের জন্য বেশ উপযোগী। পোড়ামাটির ইট ৬০০ থেকে ৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পোড়াতে হয়; যা প্রথাগত ইট তৈরিতে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রার অর্ধেক।

আরও পড়ুন

×